প্রেসক্রিপশনে RX কেন লেখা হয়

. মোহাম্মদ আমীন

প্রেসক্রিপশনে RX কেন লেখা হয়

প্রেসক্রিপশন বা চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রের সূচনায় চিকিৎসকগণ সাধারণ ‘Rx’  লিখে থাকেন। কেন এটি লেখা হয় এ নিয়ে কয়েকটি মতবাদ প্রচলিত আছে। কয়েকটি মতবাদ নিচে দেওয়া হলো।

প্রথম মতবাদটি জুপিটার বা বৃহস্পতি মতবাদ নামে পরিচিত। এই মতবাদিগণের মতে, Rx হচ্ছে বৃহস্পতি বা জুপিটার (jupitar) গ্রহের

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

জ্যোর্তিবৈদ্যিক(Astrological) চিহ্ন।এই গ্রহটি রোমান দেবতাদের রাজা এবং সবচেয়ে ক্ষমতাবান। তাই প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লেখার পূর্বে Rx চিহ্নটি লেখা হয়। যাতে প্রেসক্রিপশনে বিবৃত পথ্যের ওপর তথা রোগীর উপশমে দেবরাজ জুপিটার শুভদৃষ্টি দেন। কথিত হয়, Rx চিহ্ন থাকলে ওই প্রেসক্রিপশন অতি কার্যকর হয়।

দ্বিতীয় মতবাদ, অনেকে বলেন, প্রাচীন একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে RX প্রতীকটি এসেছে। এই শব্দটি হলো Recipe, যার অর্থ, ‘আপনি নিন বা আপনি গ্রহণ করুন’। প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে ‘উটচাট’ বা ‘হোরাসের চোখ’ নামে এক ধরনের কবচের প্রচলন ছিল। হোরাস ছিলেন স্বাস্থ্য দেবতা। ‘হোরাসের চোখ’ নামে যে কবচ প্রচলিত ছিল তা অনেক রোগ প্রতিরোধ করত বলে বিশ্বাস করা হতো। এ কবচের প্রাথমিক আকৃতি অনেকটা হেরাসের চোখের মতো ছিল। তবে এটা নানান জিনিস দিয়ে তৈরি করা হতো। এভাবে এটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে এবং কালক্রমে ব্যবস্থাপত্রে চলে আসে। তবে চিহ্নটি ব্যবস্থাপত্রে ব্যবহৃত হওয়ার পেছনে দেবতার অনুগ্রহের ওপর বিশ্বা্সই যে অন্যতম নিয়ামক ছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

তৃতীয় মতবাদকে জেসাস মতবাদ বলা হয়। এই মতানুসারে, Rx = R = Refer to এবং X = Jesus Christ, অর্থাৎ Rx = Refer to Jesus Christ। এর অর্খ হলো‘ জিশুর (যিশুর) নামে পড়া শুরু করুন’ বা জিশুর নামে গ্রহণ করা শরু করুন বা জিসুর নামে শুরু করুন। ‘X’ দ্বারা জেসাস ক্রাইস্ট বা জিশু খ্রিস্টকে বোঝানো হয়। যেমন Xmas দ্বারা বোঝানো হয় ক্রিসমাস। উল্লেখ্য, X দিয়ে গ্রিক অক্ষর ‘Chi’ কে নির্দেশ করে। এর দ্বারা মূলত গ্রিক ভাষায় সংক্ষেপে ক্রাইস্ট বা যিশুকে বোঝানো হয়ে থাকে।

চতুর্থ মতবাদটি যৌক্তিকার্থ মতবাদ নামে পরিচিত। চিকিৎসাশাস্ত্রের অভিধান মতে, Rx ল্যটিন শব্দ যার অর্থ উপায়, কৌশল, পদ্ধতি এবং লওয়া বা গ্রহণ করা (recipe ও to take) প্রভৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়।

এ বিষয়ে আর একটি মতবাদ আছে। এটাকে অনেকে আধুনিক মতবাদ বল থাকেন। তাদের মতে, Rx মানে Report extended। শরীরের রোগ নির্ণয়পূর্বক এমন একটি ‘এক্সটেন্ডেড’ প্রতিবেদন করা হয় যেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ বর্ণিত থাকে। এজন্য প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লেখার সূচনায় Report extended-এর পরিবর্তে সংক্ষেপে Rx লেখা হয়

বিদ্যুদায়ন বিদ্যুতায়ন; বৈদ্যুতিক; বিদ্যুদায়িত বিদ্যুতায়িত

স্ত্রীবাচক শব্দে পুরুষাধিপত্য

প্রেসক্রিপশনে Rx লেখা হয় কেন; শুবাচ?

#subach

Leave a Comment

স্ত্রীবাচক শব্দে পুরুষাধিপত্য

. মোহাম্মদ আমীন

স্ত্রীবাচক শব্দে পুরুষাধিপত্য

বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত তৎসম ‘আত্মোপজীবী’ শব্দের ব্যুৎপত্তি (আত্মন্‌+উপ+√জীব্‌+ইন)। এর অর্থ দৈহিক পরিশ্রম দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে এমন। অন্যদিকে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত তৎসম ‘আত্মোপজীবিনী’ শব্দের ব্যুৎপত্তি হচ্ছে (আত্মন্‌+উপ+√জীব্‌+ইন+ঈ)। শব্দটির অর্থ যৌনকর্মী। অভিন্ন ব্যুৎপত্তি, অভিন্ন গঠন, অভিন্ন বৈশিষ্ট্য। তারপরও শুধু স্ত্রীবাচক করে দিয়ে তৎকালীন বৈয়াকরণবৃন্দ একটি শব্দের অর্থকে নির্মম নীচতায় কদর্থে পরিণত করে দিয়েছে। আত্মোপজীবী শব্দটি লিঙ্গ পরিবর্তন করায় তাকে কামনার ঘৃণ্য লালসায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের আত্মকর্মকে কী হেয়ভাবে দেখা হতো শব্দটি তার একটি দৃষ্টান্ত। এরকম আরো অনেক শব্দ আছে। শব্দে পুরুষের এরূপ একপেশে আধিপত্য তাদের মানসিক দীনতার পরিচয় বহন করে।

পুরুষ-লিখিত শাস্ত্রমতে, ‘পুৎ’ নামক নরক থেকে উদ্ধার করে বলে ছেলে সন্তানকে পুত্র বলা হয়। এবার দেখা যাক, কন্যার ব্যুৎপত্তি কী? সে কাউকেই ত্রাণ বা

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

উদ্ধার করতে পারে না, বরং তার কাছ থেকে জন্মদাতা ত্রাণ চায়। আত্মোপজীবিনীর মতো কন্যা শব্দটিকেও কামনার রেশ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মহাভারতে ব্যাসদেবের ব্যাখ্যা দেখলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে: সর্বান্ কাময়তে যস্মাৎ (৩.৩০৬.১৩)। এর অর্থ ‘কন্যা মানে ‘কাম্যা’। কন্ আর কম্ কুটুম্ব ধাতু। এখানে দেখা যায় কামনা।

‘ভগিনী’ শব্দটির অর্থ ভগাযুক্ত, অনেকে সরাসরি স্ত্রীচিহ্ন-ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করেন। আলংকারিক কবি দণ্ডী ‘ভগিনী’ শব্দকে জুগুপ্সাব্যাঞ্জক বলে অবিহিত করেছেন। তিনি সাহিত্যে শব্দটির ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ বিধৃত করে বলেছেন – ভগিনী-ভগবত্যাদি গ্রাম্যকক্ষাং বিগাহতে। পুরুষের সমকক্ষ হয়েও কন্যা কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদের দাবিদার হবে তা ছিল কল্পনারও বাইরে। এ জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ, প্রেসিডেন্ট, চেয়ারম্যান, মন্ত্রী ইত্যাদি শব্দের স্ত্রীলিঙ্গের কথা ভাবাই হয়নি।

এবার স্ত্রী শব্দে চলে আসা যাক। ‘স্ত্রী’ শব্দে গর্ভধারণের বিষয়টাই ছিল মুখ্য। ‘স্তৈ’ ধাতুর মূলে, স্ত্যায়তে শুক্র শোণিতে য়ম্যাস্, যার অর্থ ‘শুক্রশোণিত যেখানে বা যাতে কাঠিন্য পায়’। স্ত্রীর একটি বহুল প্রচলিত প্রতিশব্দ ভার্যা। ‘ভার্যা’ নামটাই অবমাননাকর। বলা হয়েছে, “পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা”। অর্থাৎ স্ত্রী, পুত্র উৎপাদনের যন্ত্র। স্ত্ররি মতো অর্ধাঙ্গিনীর উপর যৌনতা আরোপিত হওয়ায় ‘ভার্যা’ যখন পুত্র উৎপাদনের যন্ত্র হয়ে দাঁড়ায় তখন ভার্যার সন্তানদের মনে কি কষ্ট জাগে না? কত জঘন্য ছিল তৎকালীন সমাজপতি এবং শিক্ষিত জনরা।

অঙ্গনা, রমণী, কামিনী, ললনা, প্রমদা, যোযা, যোযিৎ, বনিতা এরূপ অসংখ্য নামেই নারীদের ডাকা হয়। কিন্তু কোনটায় ‘নারী’ হিসেবে নারীকে সম্মান এবং মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এটি নারীদের প্রতি প্রাচীন পুরুষ-শাসিত সমাজের নির্লজ্জ জুলুম ও চরম আধিপত্যবাদী মনোবৃত্তির পরিচায়ক। এখনও অনেকের মধ্যে এরূপ ঘৃণ্য আচরণ লক্ষণীয়।

‘অঙ্গনা’ শব্দে অঙ্গসৌষ্ঠবের আকর্ষণ লোলুপতাকে প্রকট করে তোলা হয়েছে। ‘রমণী’ শব্দটি যে রমণের ঈঙ্গিতবাহী তা সবার জানা। এ প্রসঙ্গে কবিকঙ্কণের একটি লাইন প্রাসঙ্গিক মনে হলো। তিনি বলেছেন, ‘রমণে রমণী মরে কোথাও না শুনি।’ ‘কামিনী’ শব্দ কম্ -ধাতুজ্। এর কামনারই ধন। শব্দটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে অত্যন্ত কামুকী হিসেবে। কাশীরাম লিখেছেন, ‘কামিনী দেখিয়া কামে হইল বিভোর।’ ‘ললনা’ মানে বিলাসিনী। পুরুষকে যে নানাভাবে ছলাকলায় (লালয়িত পুমাংসম) লুব্ধ করে তাদের বলা হয়েছে ললনা। নারীর আর একটি প্রতিশব্দ ‘প্রমদা’। এই শব্দের ব্যাখ্যা বলা হয়েছে মাদকতার কথা। মাদক যেমন মত্ত করে দেয়, তেমনি প্রমাদারাও মত্ত করে দেয়। ‘যোযা’ ও যোযিৎ’ ললনার অর্থবাহী অর্থাৎ বিলাসিনী, পুরুষকে যে প্রলুব্ধ করে প্রভৃতি।

যে পুরুষ, স্ত্রীর একান্ত অনুগত, বউকে ভয় করে, শ্রদ্ধা বা সমীহ করে তাকে বলা হয় স্ত্রৈণ। শব্দটা সবসময় নেতিবাচক এবং নিকৃষ্টতা প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ কোনো পুরুষ, স্ত্রীর অনুগত হলে সে আর পুরুষ আর উৎকৃষ্ট থাকে না; কাপুরুষের চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে যায়। অতএব উৎকৃষ্ট পুরুষ কখনো স্ত্রৈণ হতে পারে না। সুতরাং উৎকৃষ্ট পুরুষ হতে হলে তাকে সবসময় তার স্ত্রীর অবাধ্য হতে হবে। যে নারী, স্বামীর একান্ত অনুগত এবং স্বামীকে ভয় করে, শ্রদ্ধা বা সমীহ করে করে তাকে বলা হয় পতিব্রতা। শব্দটি ইতিবাচক এবং উৎকৃষ্ট নারী প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ যে নারী স্বামীর একান্ত অনুগত সে উৎকৃষ্ট নারী এবং যে নারী স্বামীর অনুগত নয়, সে নারী নিকৃষ্ট নারী। অতএব অভিধানমতে, কোনো নারীকে উৎকৃষ্ট হতে হলে তাকে পতিব্রতা হতে হবে।তার স্বামীর সর্বাদেশ বিনাবাক্যে মেনে চলতে হবে।

স্ত্রৈণ যদি নেতিবাচক হয় তাহলে পতিব্রতা শব্দও নেতিবাচক হওয়াই ছিল সমীচীন। কিন্তু হয়নি, কারণ কর্তারাই এই কর্মটি করেছে। বস্তুত প্রাত্যহিক জীবনে নারীর ওপর নিজেদের আধিপত্য সৃষ্টির জন্য ধূর্ত পুরুষকর্তারা হীনম্মন্যতার সঙ্গে এমন নিকৃষ্ট-উৎকৃষ্ট অনেক অনেক শব্দ সৃষ্টি করে গেছেন। এই আলোচনা হতে বোঝা যায়, স্ত্রৈণ শব্দের লিঙ্গাত্বক বিপরীত শব্দ ‘পতিব্রতা’। প্রসঙ্গত, ‘স্ত্রীবশ্য’ এবং ‘স্বীয়া’ স্ত্রৈণ শব্দের দুটি সমার্থক শব্দ।

শুধু সংস্কৃত ভাষায় নয়, ইংরেজি ও ল্যাটিন ভাষাতেও নারীদের প্রতি এমন ন্যাক্কারজনক আচরণ করা হয়েছে। ল্যাটিন sator শব্দের সঙ্গে স্ত্রীর উচ্চারণ-সাম্য লক্ষণীয়। ল্যাটিন শব্দটির অর্থ begetter । অন্যদিকে, স্ত্রীবাচক ‘দার’ শব্দটির মূল অর্থ কৃষ্টভূমি। কর্ষণের জন্য নির্ধারিত ভূমি। নারীকে বলা হয়েছে ভূমিকল্পা, বীজ-বপনে সন্তান-শস্য উৎপাদিকা।

ইংরেজিতে , woman, mistress, madam প্রভৃতি শব্দের ব্যুৎপত্তিগত ইতিহাস নারী-পুরুষ সাম্য ও মর্যাদা বিবেচনায় শোভনীয় নয়। প্রকৃতপক্ষে woman শব্দটি এসেছে wifeman থেকে। যেখানে নারীর কোনো স্বতন্ত্র পরিচয় কিংবা আত্মবোধ বা মর্যাদা তুলে ধরা হয়নি। বরং পুরুষের লীলাসঙ্গী হিসেবে পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এখানেও নারীর পরিচয় কারো স্ত্রী হিসেবে। mistress শব্দের আদি অর্থ ছিল অবৈধ প্রেমিকা। শব্দটা বর্তমান গ্রহণযোগ্য অর্থে আসতে বেশ সময় নিয়েছে। madam (<ma dam = my lady) শব্দটি, আগে স্ত্রীলোকের প্রতি প্রণয় সম্বোধন প্রকাশে ব্যবহৃত হতো। চসার (Geoffrey Chaucer) এর সময়েও শব্দটির অর্থের অবনতি ঘটেনি। Restoration বা পুনরুদ্ধারকালীন ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শব্দটির অর্থের অবনতি ঘটে এবং অর্থ দাঁড়ায় বেশ্যাবাড়ির মালকিন। সাধারণভাবে যাকে আমরা মাসি বলে থাকে। এখন শব্দটির যথেষ্ট অর্থোৎকর্ষ ঘটেছে। বর্তমানে madam অসম্মানসূচক শব্দ নয়। অনেকে খ্যাতিমান মহিলাও শব্দটিকে মর্যাদাকর মনে করেন। তাই madam বর্তমানে সম্মানসূচক সম্বোধনে ব্যবহৃত একটি বহুল প্রচলিত মর্যাদাকর শব্দ।

বাংলাদেশে স্বাধীনতা পূর্বকালে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে একটি জাতীয়তাবাদী শ্লোগান উঠেছিল- জিয়ে সিন্ধ। এটি উচ্চকিত হয়েছিল জয় বাংলার আগে। ঢাকায় তখন শ্লোগান উঠেছিল “বাঙালি – সিন্ধি ভাই ভাই!” বোনদের কথা ভাবা হয়নি। ধর্মীয় শিক্ষা অনুসারে আমরা বলি সকল মুসলমান ভাই ভাই। এখানেও বোনরা নেই।বাংলা ভাষায় একটি শব্দ আছে ‘পতিতা’। এর বিপরীত লিঙ্গে ‘পতিত’ হতে পারে। কিন্তু যে অর্থে আমরা ‘পতিতা’ ব্যবহার করি সেই অর্থে ‘পতিত’ ব্যবহার করি না। বেশ্যাবৃত্তি এখন আর কেবল দৈহিক অর্থেই ব্যবহার হয় না। কিন্তু তবু এর লিঙ্গান্তর হয় না।সাহস, শৌর্য, বীরত্ব এগুলোর লিঙ্গায়নও একচেটিয়া করা হয়েছে পুরুষের অনুকূলে। “সিংহ-পুরুষ আছে কিন্তু সিংহী নারী নেই।

প্রেসক্রিপশনে RX কেন লেখা হয়

#subach

Leave a Comment

তৎসম শব্দ চেনার কৌশল: শব্দ দেখামাত্র তৎসম শব্দ চেনার উপায়

ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম শব্দ চেনার কৌশল: শব্দ দেখামাত্র তৎসম শব্দ চেনার উপায়

বাংলায় ৫৫ ভাগের মতো শব্দ তৎসম। এগুলো চেনার কয়েকটি সহজ কৌশল নিচে দেওয়া হলো। তবে বাংলায় এমন অসংখ্য তৎসম শব্দ আছে যা নিচে লিখিত নিয়মের আওতায় পড়ে না। সেগুলো অধ্যয়নের মাধ্যমে চিনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। এবার নিয়মকটি দেখে নেওয়া যাক :

১. প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ঈ ঊ এবং ঋ আর এসব বর্ণের কারচিহ্ন (ী, ‍ূ, ‍ৃ) যুক্ত সকল শব্দ তৎসম।

২. মূর্ধন্য-ণ যুক্ত সব শব্দ তৎসম।মূর্ধন্য-ষ যুক্ত শব্দ সাধারণত তৎসম হয় কিন্তু কিছু কিছু শব্দ আছে যেগুলোর বানানে মূর্ধন্য-ষ থাকলেও তৎসম নয়। যেমন : খ্রিষ্টাব্দ, খ্রিষ্ট, পোষা, ষোলো, বোষ্টম প্রভৃতি তৎসম নয়।

৩. যেসব শব্দের পূর্বে প্র, পরা, অপ, সম, অব, অনু, নির(নিঃ), দুর(দুঃ), উৎ, অধি, পরি, প্রতি, উপ, অভি, অতি শব্দগুলো যুক্ত থাকে সেগুলো তৎসম।

৪. ক্ত্র, ক্ম, ক্ষ, ক্ষ্ণ, ক্ষ্য, ক্ষ্ম, ক্ষ্ম্য, গ্ধ, গ্ন্য, গ্ম, ঘ্ন, ঙ্ক্ষ, ঙ্ম, চ্ছ্ব, চ্ছ্র, জ্ঝ, জ্ঞ, ঞ্ছ, ঢ্র, ত্ত্ব, ত্ম্য, ত্র্য, দ্ব্য, দ্ম, ধ্ন, ধ্ম, ন্ত্য, ন্ত্ব, ন্ত্র, ন্ত্র্য, ন্দ্ব, ন্ধ্য, ন্ধ্র, ন্ন্য, ল্ম, শ্ছ, শ্ম, ষ্ক্র, ষ্ট্য, ষ্ট্র, ষ্ব, ষ্ম, স্ত্য, স্থ্য, হ্ন্য, হ্ম, হ্ল প্রভৃতি যুক্তবর্ণ শুধু তৎসম শব্দে দেখা যায়।

৫. বিসর্গযুক্ত এবং বিসর্গসন্ধিসাধিত শব্দসমূহ তৎসম।

৬ . বহুবচনবাচক গণ, বৃন্দ, মণ্ডলী, বর্গ, আবলি, গুচ্ছ, দাম, নিকর, পুঞ্জ, মালা, রাজি, রাশি প্রভৃতির যে কোনো একটি থাকলে ওই শব্দ তৎসম হয়।

৭. সমাসবদ্ধ পদের একটি অংশ তৎসম হলে অপর অংশ এবং সমস্তপদটিও তৎসম হয়। যেমন চন্দ্রমুখ শব্দে চন্দ্র অংশটি তৎসম সুতরাং ‘মুখ’ এবং ‘চন্দ্রমুখ’ শব্দদুটোও তৎসম।

৮. উপমান কর্মধারয়, উপমিত কর্মধারয় এবং রূপক কর্মধারয় সমাস গঠিত শব্দ সাধারণত তৎসম হয়।

৯. অব্যয়ীভাব এবং প্রাদি সমাস দ্বারা গঠিত পদগুলো সাধারণত তৎসম হয়।

১০. শব্দের শেষে তব্য ও অনীয় থাকলে তা তৎসম হয়। যেমন কর্তব্য, মন্তব্য, বক্তব্য, দ্রষ্টব্য, ভবিতব্য, করণীয়, দর্শনীয়, বরণীয়, রমণীয় প্রভৃতি তৎসম।

১১. শব্দের শেষে তা, ত্ব, তর, তম, বান, মান, এয়, র্য প্রভৃতি থাকলে সাধারণত ওই শব্দগুলো তৎসম হয়।

১২. অব্যয়পদের শেষে ত থাকলে (প্রথমত, অন্তত, জ্ঞানত) তা তৎসম হয়।

স্মর্তব্য : বাংলায় এমন কিছু শব্দ আছে যে শব্দগুলোর সংস্কৃত বানানে নাসিক্য বর্ণ ছিল কিন্তু নাসিক্য বর্ণ ছেড়ে তৎপরিবর্তে চন্দ্রবিন্দু ধারণ করে সংস্কৃত হতে পুরোপুরি বাংলায় চলে এসেছে। তাই চন্দ্রবিন্দুযুক্ত কোনো শব্দই তৎসম নয়। যেমন : চন্দ্র হতে চাঁদ, গ্রাম হতে গাঁও, বংশ হতে বাঁশ, অংশ হতে আঁশ প্রভৃতি তৎসম নয়।

সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

তৎসম চেনার কৌশল।

#subach

Leave a Comment

অণ্ডকোষ লিঙ্গ এবং জ্ঞানচর্চা

. মোহাম্মদ আমীন

অণ্ডকোষ লিঙ্গ এবং জ্ঞানচর্চা

অর্কিড একটি ফুল। এটি সৌন্দর্য, আনন্দ, পরিচর্যা, নান্দনিক রসবোধ এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। অনেকের কাছে নামটি নিজেই একটি মাধুর্য। গ্রিক orchis থেকে অর্কিড শব্দের উদ্ভব। যার অর্থ অণ্ডকোষ (লিঙ্গমূল)। ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে অণ্ডকোষ বা অর্কিড, ফুলের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়। গ্রিক ভাষার অর্কিড, মধ্যযুগে ইংরেজি ভাষায় বলকওয়ার্ট নামে পরিচিত ছিল। ইংরেজি bullocks থেকে শব্দটি এসেছে। এর অর্থ অণ্ডকোষ বা লিঙ্গমূল। আধুনিক ইংরেজি শব্দ balls এর প্রাচীন রূপ beallucas। এর অর্থও অণ্ডকোষ বা লিঙ্গ।

অ্যাভোকাডো বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি ফল। বাংলাদেশেও ফলটি পরিচিত। স্পেনিশ aquacate থেকে অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে অ্যাভোকাডো শব্দের উদ্ভব। স্পেনিশরা, মেক্সিকান ahuakati থেকে শব্দটি গ্রহণ করে। এর অর্থও অণ্ডকোষ বা লিঙ্গ (penis)। ফলটি দেখতে অণ্ডকোষের মতো। তাই আজটেকরা এর নাম দেন ahuakati বা অণ্ডকোষ।

পেন্সিল (pencil) শব্দের প্রাচীন অর্থ উটের পশমে তৈরী নরম তুলি, যা দিয়ে শিল্পীরা ছবি আঁকেন। এর সঙ্গে pen ও penis শব্দের গঠনগত এবং অর্থগত মিল রয়েছে। pencil কিন্তু ইংরেজি শব্দ নয়। চতুর্দশ শতকের প্রথম দিকে ফরাসি pincel থেকে ইংরেজি pencil শব্দের সৃষ্টি। ল্যাটিন penicillus থেকে pencil শব্দের

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

উদ্ভব। এর প্রায়োগিক অর্থ রংতুলি বা পেনসিল হলেও প্রকৃত অর্থ penicillus। বাংলায় যার অর্থ, ক্ষুদে লেজ। স্মতর্ব্য, ল্যাটিন ভাষায় ‘ছোট লেজ’ মানে ‘শিশ্ন’ বা লিঙ্গ। কারণ এটি দেখতে ছোটো লেজের মতো।

অতএব, জ্ঞানের বাহন পেনসিল শব্দের মুল অর্থ শিশ্ন বা লিঙ্গ। ইংরেজি ভাষার শব্দ penis এর বাংলা শিশ্ন বা লিঙ্গ। শব্দটিকে দুই ভাগ করলে হয় pen is । যার সোজা বাংলা, এটি একটি কলম এবং অন্তর্নিহিত অর্থ জ্ঞান, সৃষ্টির ধারক, জ্ঞানচর্চা, জ্ঞানের সাধনা প্রভৃতি। কারণ কলম ছাড়া জ্ঞানের সাধনা ও সৃষ্টির বিকাশ সম্ভব নয়, যেমন সম্ভব নয় লিঙ্গ ছাড়া। অতএব জ্ঞানসাধনার মৌলিক দণ্ড pencil/ pen শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থও শিশ্ন, লিঙ্গ বা অণ্ডকোষ।

ইংরেজি musk শব্দটি বাংলায় বহুল প্রচলিত কস্তুরী শব্দের তুল্য। musk সংস্কৃত ‘মুষ্ক’ শব্দের পরিবর্তিত রূপ। সংস্কৃতে মুষ্ক অর্থ অণ্ডকোষ বা লিঙ্গ। ইংরেজিতে pick শব্দের অর্থ ‘বাছাই’।বাছাই মানে চিন্তা ভাবনা করে গ্রহণ করা। তাই এর গুঢ়ার্থও জ্ঞানসাধনা। নরওয়েজিয়ান ভাষায় শব্দটির অর্থ ‘শিশ্ন’ বা লিঙ্গ। ইংরেজি fitter ফিটার শব্দের অর্থ এমন একজন দর্জি যিনি মাপানুযায়ী কাপড় কাটেন। কিন্তু নরওয়েজিয়ান ভাষায় ফিটার শব্দের অর্থ ‘নারীর যৌনাঙ্গ’।

যিশু খ্রিষ্টের কাছে যে তিন জ্ঞানী বক্তি উপহার আনিয়েছিলেন, তাদের মাগি বা magi বলা হয়। প্রাচীন পারসিক পুরোহিতমণ্ডলকেও মাগি বলা হতো। শব্দটির উৎসার্থ, সৃষ্টি তাড়নায় বিধৌত নান্দনিক পরিজ্ঞান। যার সাধারণ অর্থ শিশ্ন। বাংলায় মাগি শব্দের মূল অর্থ নারী কিন্তু এখন যৌনকর্মী।

প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে বুদ্ধিকে ‘লিঙ্গজ্যেষ্ঠ’ বলা হয়েছে। তাই বুদ্ধি মানে লিঙ্গ এবং লিঙ্গ মানে বুদ্ধি। ‘লিঙ্গপুরাণ’ নামে একটি পুরাণ আছে। যাতে জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় সবিস্তার বিবৃত। ল্যাটিন লিঙ্গ (lingua) হতে ফরাসি (langage) শব্দের উদ্ভব এবং তা হতে মধ্যযুগে ইংরেজি (language) শব্দটি এসেছে। বাংলা `লিঙ্গ’ শব্দের সঙ্গে ল্যাটিন লিঙ্গ (lingua) এবং বর্তমান ইংরেজী language শব্দের মিল রয়েছে। কারণ language বা আদি লিঙ্গই হচ্ছে সৃষ্টি বা জ্ঞানসাধনের উপায়।বাংলায় লিঙ্গ শব্দটি অনেকের মনে প্রথমেই নিয়ে আসে শিশ্ন (penis)। তারপর আনে বাংলা ব্যাকরণে ব্যবহৃত gender ধারণা বা স্ত্রীলিঙ্গ-পুংলিঙ্গ। যেভাবেই আসুক লিঙ্গ শব্দটি বরাবরই জ্ঞান ও সৃষ্টিকে নির্দেশ করে।

প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে এবং বর্তমান বহু অভিধানে লিঙ্গ শব্দের প্রথম অর্থ ‘জ্ঞানসাধন, সৃষ্টি, সৌন্দর্য এবং দ্বিতীয় অর্থ চিহ্ন, লক্ষণ, প্রতীক ইত্যাদি। তাই লিঙ্গার্চনা মানে জ্ঞানের চর্চা, সুন্দর এবং সৌকর্ষের বন্দনা। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে শিবলিঙ্গের পূজা জ্ঞানচর্চার একটি প্রতীকী রূপ। কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর বঙ্গীয় শব্দার্থকোষে উল্লেখ আছে, শিব = শিখা বহনকারীে। যা বর্তমান অর্কিড-এর সঙ্গে তুল্য। তারা মনে করেন, শিবের মূর্তি জ্ঞানীদের চিন্তা-চেতনায় ফুটে ওঠা জগৎময় বিস্তৃত নান্দনিক অর্কিড। যা জ্ঞান, সৌন্দর্য ও সৃষ্টির অনন্ত উৎস।

সূত্র: বাংলা ভাষার মজা. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment

বাল-আবাল, আবালবৃদ্ধবনিতা

. মোহাম্মদ আমীন

বাল-আবাল, আবালবৃদ্ধবনিতা

বাল: ‘বাল (√বল+অ)’ বাংলায় ব্যবহৃত একটি তৎসম শব্দ। এর আভিধানিক ও প্রায়োগিক অর্থ বালক, শিশু, কিশোর, প্রভৃতি। শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ হচ্ছে : বালা ও বালি। বালা শব্দের অর্থ অল্পবয়সি মেয়ে, বালিকা, কন্যা, দুহিতা, যুবতী প্রভৃতি।‘বালি’ শব্দের অর্থ কিশোরী, বালিকা প্রভৃতি। ‘বাল’ শব্দ নিয়ে গঠিত শব্দরাশির কয়েকটি হলো : বালচর্চা (শিশুপালন),

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

বালবাচ্চা (ছোটো ছেলেমেয়ে), বালবিধবা (যে কন্যা বালিকা অবস্থায় বিধবা হয়েছে), বালবৈধব্য (বালিকা অবস্থায় বৈধব্যদশা), বালভোগ (বালক কৃষ্ণকে প্রদত্ত প্রাতঃকালীন ভোগ, বালভোগ্য (শিশুদের উপভোগের যোগ্য), বালসুলভ (বালকোচিত), বালসূর্য (নবোদিত সূর্য), বালশশী (শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ার চাঁদ) প্রভৃতি।

বালক: ‘বালক (বাল+ক)’ শব্দের অর্থ অল্পবয়স্ক পুরুষ সন্তান, অনূর্ধ্ব ষোলো বছরের পুরুষ, শিশু, অর্বাচীন, নির্বোধ, অপক্ব, অনভিজ্ঞ প্রভৃতি। ‘বালক’ শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ হচ্ছে বালিকা।

আবাল: আ+বাল = আবাল। ‘বাল’ শব্দের ‘আ’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘আবাল’ শব্দ গঠিত হয়েছে। বিস্তৃতি, পর্যন্ত, ব্যাপকতা প্রভৃতি প্রকাশে ‘আ’ উপসর্গটি ব্যবহৃত হয়। যেমন : আ + মৃত্যু = মৃত্যু পর্যন্ত। সে বিবেচনায় ‘আবাল’ শব্দের গঠনের সঙ্গে আকণ্ঠ, আপাদমস্তক, আমরণ, আসমুদ্রহিমাচল, আজীবন, আজন্ম প্রভৃতি শব্দের গঠনের মিল রয়েছে। গঠন অনুযায়ী আবাল শব্দের আভিধানিক অর্থ বাল্যাবধি, বাল্যকাল থেকে, অল্পবয়স থেকে, শিশুকাল থেকে প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, আবাল শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ হচ্ছে আবালি।

আবালবৃদ্ধ: ‘আবালবৃদ্ধ (আবাল+√বৃধ্+ত)” শব্দের অর্থ হচ্ছে বালক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলে। এখানে শুধু বালিক ও বৃদ্ধের কথা বলা হয়েছে। কাজেই এটি পুঃলিঙ্গ জ্ঞাপক।

আবালবৃদ্ধবনিতা: আবালবৃদ্ধবনিতা শব্দটি আবাল, বৃদ্ধ ও বনিতা শব্দ নিয়ে গঠিত। সংস্কৃত বনিতা(=বনিত+আ) শব্দের অর্থ নারী, স্ত্রী, পত্মী, প্রেয়সী প্রভৃতি।বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, আবালবৃদ্ধবনিতা (=আবালবৃদ্ধ+√বন্+ইত+আ)’ শব্দের অর্থ বালক থেকে বৃদ্ধ এবং নারী পর্যন্ত সকলে।

অনেকে মনে করেন, ‘বাল’ শব্দের অর্থ ‘গোপনাঙ্গের কেশ’, এমন মনে করা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা । অন্য ভাষার শব্দকে নিজ ভাষার শব্দার্থের সঙ্গে একীভূত করে ফেলা হীনম্মন্যতাও বটে। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের কোথাও ‘বাল’ শব্দের অর্থ হিসেবে ‘গোপনাঙ্গের কেশ’ উল্লেখ নেই। তবে কেউ কেউ শব্দটিকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। শুবাচে অপ্রাসঙ্গিকভাবে গালি হিসেবে শব্দটি উত্থাপন না-করার অনুরোধ রইল।

সূত্র: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, . মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment

চিকা মারা ও চিকা: চিকা মারো মারে রে

. মোহাম্মদ আমীন

চিকা মারা ও চিকা: চিকা মারো মারে রে

‘চিকা’ একটি দেশি শব্দ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে ‘চিকা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, ছোটো চোখ ও সুচালো মুখবিশিষ্ট ঘন কোমল লোমাবৃত গাঢ় ধূসরবর্ণের স্তন্যপায়ী গায়ে দুর্গন্ধযুক্ত নিশাচর ইঁদুরজাতীয় প্রাণী, ছুঁচা, ছুঁচো, গন্ধমূষিক প্রভৃতি। চট্টগ্রাম এলাকায়ও  ‘চিয়া’ নামে পরিচিত। ‘চিকা’ শব্দের আর একটি অর্থ- গুণচিহ্ন (x)বা ঢ্যারাচিহ্ন। ‘চিকা’ ও ‘মারা’ শব্দ হতে ‘চিকা মারা’ কথার উদ্ভব। বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ‘চিকা মারা’ কথাটির আভিধানিক অর্থ দেওয়ালে লিখে বিজ্ঞাপিত করা, ছাপ মারা, ঢ্যারাচিহ্ন দেওয়া প্রভৃতি।

‘দেওয়াল লিখন’ বা দেওয়ালে লিখে বিজ্ঞাপিত করা কথাগুলো এখন ‘চিকা মারা’ কথাটির আড়ালে হারিয়ে গেছে। দেওয়াল লিখন বলিতে এখন ‘চিকা মারা’

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

বোঝায়। ‘চিকা’ বিশেষ্য হলেও ‘চিকা মারা’ কিন্তু ক্রিয়াবিশেষণ। চিকার বয়স যতই হোক, ‘চিকা মারা’ কথার বয়স বেশি দিনের নয়। তাহলে শব্দটির উৎপত্তি কখন এবং কীভাবে? এ নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন, এই গল্পের সূত্রে ‘চিকা মারা’ কথাটির উদ্ভব। আবার অনেকে মনে করেন, এটি নিছক গল্প। আগে গল্পটি কী দেখা যাক :

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাছের ছোটো ছোটো ডাল ভেঙে ডালের আগা থেঁতলিয়ে ব্রাশের ন্যায় তুলি বানাত। নিচে দাঁড়িয়ে দেওয়ালের উপরের অংশেও যাতে স্লোগান লেখা যায় সে জন্য তুলিগুলোকে লাঠির মতো লম্বা করে বানানো হতো। সে সব ব্রাশ বা তুলিতে আলকাতরা লাগিয়ে দেওয়ালে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের পক্ষে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হতো। স্লোগানসমূহে কড়া ভাষায় হুমকি দেওয়া হতো সরকারকে। এখনকার মতো তখনও সরকার-বিরুদ্ধ স্লোগান লেখা ছিল নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ কাজ করলে গ্রেফতার করা হতো। গ্রেফতারের ভয়ে শিক্ষার্থীরা সাধারণত রাতের বেলা টর্চ জ্বালিয়ে দেওয়ালে এ সব স্লোগান লিখতেন।

কথিত হয়, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের কোনও এক রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী  গাছের ডাল দিয়ে তৈরি লাঠি-আকৃতির লম্বা ব্রাশ দিয়ে দেওয়ালে স্লোগান লিখছিলেন। এ সময় একদল টহল পুলিশকে এগিয়ে আসতে দেখে শিক্ষার্থীরা ঝোপের আড়ালে আলকাতরার টিন লুকিয়ে লাঠির মতো লম্বা তুলি দিয়ে ঝোপঝাড়ে এলোপাথারি আঘাত করতে শুরু করে।টহল পুলিশ এগিয়ে এসে বলল, এত রাতে তোমরা বাইরে কী করছ?শিক্ষার্থীরা বলল, হলে চিকার জ্বালায় থাকতে পারছি না। ঝোপ দিয়ে হলে চিকা ঢুকে। আমরা লাঠি দিয়ে চিকা মারছি।

শিক্ষার্থীদের কথায় পুলিশের সন্তুষ্ট না-হয়ে কোনও উপায় ছিল না। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ছিল একতলা এবং অধিকাংশ টিনসেডে ও স্যাঁতস্যঁতে মেঝে। পাশে ছিল ঝোপঝাড়, সেখান থেকে চিকা হলে হানা দিত। শুধু হলে নয়, পুলিশের ব্যারাকেও চিকার উপদ্রব ছিল। পুলিশ দল সন্তুষ্টচিত্তে চলে যায়। শিক্ষার্থীরা এবার দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল চিকা মারার ভানে ঝোপঝাড়ে আঘাত করতে থাকে আর এক দল দেওয়াল লিখন শুরু করে। এরপর থেকে ‘দেওয়াল লিখন’ লিখতে গেলে শিক্ষার্থীরা বলত চিকা মারতে যাচ্ছে। অনেকে আগে থেকে কয়েকটা চিকা মেরে সঙ্গে নিয়ে যত। এভাবে ‘দেওয়াল লিখন’ বাগভঙ্গিটি ‘চিকা মারা’ শব্দে পরিণত হয়। এখন শুধু দেওয়ালে নয়, রাস্তাতেও ‘চিকা মারা’ হয়, গাড়িতে এমনকি শরীরেও ‘চিকা মারা’ হয়।

‘চিকা মারা’ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে উপরে বর্ণিত গল্পটির সত্যতা নিয়ে অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ‘চিকা’ শব্দের দুটি অর্থ। একটি হচ্ছে- ছুঁচা, ছুঁচো, গন্ধমূষিক প্রভৃতি এবং অন্যটি হচ্ছে- গুণচিহ্ন বা ঢ্যারাচিহ্ন।বৈয়াকরণিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছুঁচো অর্থ প্রকাশক ‘চিকা’ হতে নয়, বরং গুণ চিহ্ন বা ঢ্যারাচিহ্ন প্রকাশক ‘চিকা’ শব্দ হতে ‘চিকা মারা’ কথার উদ্ভব।

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach/

 

Leave a Comment

অহংকার ও ব্যক্তিত্ব; ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব; অহংকার বনাম অহঙ্কার— কোনটি সঠিক

ড. মোহাম্মদ আমীন

অহংকার ও ব্যক্তিত্ব; ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব; অহংকার বনাম অহঙ্কার— কোনটি সঠিক

অহংকার ও ব্যক্তিত্ব:অহংকার’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ— গর্ব, বড়াই, অহমিকা, হামবড়ামি। অহমিকা, অহমহমিকা প্রভৃতি অহংকার শব্দের সমার্থক। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে,অহংকার (অহম্+√ কৃ+অ) অর্থ অহমিকা, গর্ব, দম্ভ, বড়াই; আত্মচেতনা, অহংজ্ঞান, অভিমান। ব্যক্তিত্ব: তৎসম ‘ব্যক্তিত্ব (ব্যক্তি+ত্ব)’ অর্থ— (বিশেষ্যে) ব্যক্তিবিশেষের বৈশিষ্ট্য, স্বাতন্ত্র্য, ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তির প্রকৃতি, ব্যক্তির সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য। ইংরেজিতে personality।যেমন: আমার বাবার ব্যক্তিত্ব আমার খুব প্রিয় ছিল। করিম নামের শিক্ষকটির ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করে। এই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব আমাকে মোহিত করে দিয়েছে।

ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব: “বাবা আমার প্রিয় ব্যক্তি। বাবাআমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। কোন বাক্যটি শুদ্ধ? বাবা আমার প্রিয় ব্যক্তি’’ বাক্যটি সঠিক। ব্যক্তি: সংস্কৃত ব্যক্তি (বি+√অন্‌জ্+তি) অর্থ— (বিশেষ্যে) লোক, মানুষ; প্রকাশ (অভিব্যক্তি); ইংরেজিতে individual। যেমন: আমার বাবা আমার প্রিয় ব্যক্তি। ব্যক্তিটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। ব্যক্তিবিশেষের প্রতি আমার কোনো অবহেলা নেই। ব্যক্তিত্ব: সংস্কৃত ব্যক্তিত্ব (ব্যক্তি+ত্ব) অর্থ— (বিশেষ্যে) ব্যক্তিবিশেষের বৈশিষ্ট্য, স্বাতন্ত্র্য, ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তির প্রকৃতি, ব্যক্তির সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য। ইংরেজিতে personality। যেমন: আমার বাবার ব্যক্তিত্ব আমার প্রিয়। করিম নামের ব্যক্তিটির ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করে এই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব আমাকে মোহিত করে দিয়েছে। ব্যক্তি হচ্ছে বস্তুগত বিষয়— স্পর্শ করা যায়, ধরা যায়, দেখা যায়। এটি মানুষ বা লোক অর্থ প্রকাশ করলে গণনা করা যায়। ব্যক্তিত্ব অদৃশ্য বিষয়— ধরা যায় না; কেবল অনুভব করা যায়। ব্যক্তিত্ব কখনো গণনা করা যায় না। যদি কেউ বলেন, “বাবা আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব”। বাক্যটি আভিধানিক অর্থে সঠিক নয়। সঠিক বাক্যটি হবে, “বাবা আমার প্রিয় ব্যক্তি।”

অহংকার ও ব্যক্তিত্বের পার্থক্য: মূলত সংস্কৃত অহমহমিকা শব্দ হতে অহমিকা শব্দের উৎপত্তি। অহমহমিকা অর্থ দুজনের মধ্যে পরস্পর আমিই বড়ো, আমিই শ্রেষ্ঠ, আমিই উত্তম— এমন হামবড়া ভাব ও অযৌক্তিক দাবি। সর্বক্ষণ নিজেকে বড়ো ভাবা এবং অন্যকে নিজের তুলনায় ছোটো মনে করাই হচ্ছে অহংকার। যার মনে এমন বোধ ও চেতনা থাকে সে অহংকারী। অহংকার সর্বক্ষণ একজন মানুষকে আত্মশ্রেষ্ঠত্বে বিভোর রাখে বলে সে কখনো শান্তি পায় না। অহংকার নিয়ে বাংলা ভাষায় অনেক চমৎকার ও হৃদয়গ্রাহী কবিতা রয়েছে। ‘কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে, ভাই বলে যদি ডাকো গলা দেব টিপে’; আনারস কাঁঠালকে বলে তুমি বড়ো খসখসে; ছালুনি বলে সুঁই, তোমার মাথায় ছ্যাঁদা। এগুলো সব অহংকারীর স্বভাব-প্রকাশক উক্তি।

প্রাত্যহিক জীবনে অহংকার কী? সহজ কথায়, ব্যক্তিত্বের বাজে অংশটাই অহংকার। গৃহীত খাদ্যের বাজে অংশটা যেমন মল, তেমনি ব্যক্তিত্বের বাজে অংশটা অহংকার। ইংরেজিতে যাকে বলে ইগো। ইগো আর গু দুটোই একই। তাই উভয়কে বর্জ্য-ব্যবস্থাপনার মতো অতি সাবধানে নড়াচড়া করতে হয়। জীবের জন্য গু অপরিহার্য। তাই বলে কেউ এটি শরীর-মাথায় কিংবা জামা-কাপড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় না। গু নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষকে কেউ সহ্য করতে পারে না। তেমনি পারে না ইগো বা অহংকার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষকে। দুজনই হতভাগা ও বন্ধুহীন। শিক্ষা মানুষকে নিরহংকার,কিন্তু ব্যক্তিত্ববান করে তুলে। শিক্ষা যদি অহংকারকে ব্যক্তিত্বে পরিণত করতে না পারে তাহলে সে শিক্ষা বৃথা। শিক্ষার চেয়ে শিক্ষিত হওয়ার অহংকার যার মধ্যে প্রবল তার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কে হতে পারে? কেউ না। অনেক অফিসারদের মধ্যে প্রচণ্ড অহংকার দেখা যায়। পদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অহংকারের মাত্রাও বেড়ে যায়।  অফিসার হওয়ার পর যার মধ্যে অমায়িক আর সেবাপরায়ণ হওয়ার চেয়ে অহমিকাবোধ প্রবল হয়ে উঠে তার চেয়ে ইতর আর কেউ হতে পারে না। এমন বোধ জন্ম নেওয়ায় তারা সাধারণ মানুষকে মনে করে দাস। নিজেদের মনে করে তাদের প্রভু।

“এরা শক্তের ভক্ত, এরা নরমের যম;
দুর্বলকে পিষ্ট করে, সবল পূজে পরম।
নিরীহদের তুই-তুকারি, বসকে বলে হুজুর,
সাধারণকে মনে করে বিড়াল-মাছি-কুকুর।
এদের ফুটানি বেশি, জানে কম—
এরা শক্তের ভক্ত, নরমের যম।” — লেখক কেন মরে, ড. মোহাম্মদ আমীন

অহংকার বনাম অহঙ্কার: অহঙ্কার কি অশুদ্ধ: প্রমিত বানানবিধি অনুযায়ী, সংস্কৃত নিয়মে ম্-এর স্থলে অনুস্বার লেখা বিধেয়। যেমন: সম্‌+গীত= সংগীত; বিকল্পে সঙ্গীত; অলম্‌+কার= অলংকার; বিকল্পে অলঙ্কার। অনুরূপ: অহংকার ও বিকল্পে অহঙ্কার। সুতরাং, অহংকার ও অহঙ্কার (বিকল্পে ) দুটোই শুদ্ধ। তবে, বাংলা বানানের সমতা ও আদর্শ মান রক্ষার স্বার্থে অহংকার লেখা সমীচীন। বিকল্পে না যাওয়াই উত্তম। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে কেবল ‘অহংকার’ শব্দকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে।

#subach

Leave a Comment

প্রতিভা ও মেধা: প্রতিভা ও মেধার পার্থক্য

ড. মোহাম্মদ আমীন

প্রতিভা ও মেধা: প্রতিভা ও মেধার পার্থক্য

বাক্যে সাধারণত বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘প্রতিভা’ শব্দের অর্থ হলো : প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, প্রজ্ঞা, উদ্ভাবনী জ্ঞান, উদ্ভাবনী বুদ্ধি, তীক্ষ্ণবুদ্ধি প্রভৃতি। ক্ষেত্র বিশেষে প্রভা বা ঔজ্জ্বল্য প্রকাশেও `প্রতিভা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।  প্রতিভা আছেন এমন কাউকে প্রতিভাধর বা প্রতিভাবান বলা হয়। অর্থ হতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিভাবানগণ একই সঙ্গে সৃজনশীল ও বুদ্ধিমান। শব্দটির কয়েকটি পদার্থ দেখুন :

  • (১) ভাষা মানুষের প্রতিভার উজ্জ্বল দৃ্ষ্টান্ত।
  • (২) চাকা প্রতিভাবান মানুষের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার।
  • (৩) জামাল নজরুল ইসলাম বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম প্রতিভার অধিকারী একজন বাংলাদেশি।

‘প্রতিভা’ শব্দে প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, প্রজ্ঞা এবং উদ্ভাবনী জ্ঞান বা উদ্ভাবনী বুদ্ধির অনিবার্যতা রয়েছে। একজন লোক বা বস্তুকে প্রতিভাবান হতে হলে তার

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

সৃজনশীলতা থাকতে হবে। এখানে স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি কিংবা মুখস্থশক্তির প্রয়োজন নেই। কেউ কোনো কিছু আবিষ্কার করে মুহূর্তের মধ্যে ভুলে যেতে পারে, কারো কোনো কিছু মনে না-ও থাকতে পারে এজন্য তাকে মেধাবী বলা না-গেলেও প্রতিভাবান বা প্রতিভাধর বলা যায়। আবার কেউ যদি কোনো কিছু স্মরণশক্তিতে ধরে রাখতে পারে, কিন্তু সামান্য সৃজনশীলতাও না থাকে, তো তাকে মেধাবী বলা যায়; কিন্তু প্রতিভাধর বলা যাবে না। সে হিসাবে প্রশিক্ষিত পশু, তোতপাখি, ডলফিন, কম্পিউটার, ক্যালকুলেটের প্রভৃতিকেও মেধাবী বলা যায়। বর্ডার কলি (Border collie) জাতের কুকুর তো রীতিমতো মেধা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে।

বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘মেধা’ শব্দের অর্থ স্মরণশক্তি, স্মৃতিশক্তি, ধীশক্তি, বোধশক্তি; সহজ কথায় মুখস্থশক্তি । সংস্কৃত ‘ধীশক্তি’ শব্দের অর্থ বুদ্ধিশক্তি। বুদ্ধি শব্দের অর্থ বোধ, জ্ঞান, বিচারশক্তি প্রভৃতি। সবগুলো অর্থ বিশ্লেষণ করে একিভূত করা হলে মেধা শব্দের অর্থ হয় : স্মরণশক্তি, স্মৃতিশক্তি, মুখস্থশক্তি, বুদ্ধিশক্তি, বোধশক্তি, জ্ঞানশক্তি, বিচারশক্তি প্রভৃতি। অর্থাৎ যার স্মরণশক্তি বা বুদ্ধি আছে, তাদের মেধাবী বলা হয়। এদের মধ্যে যারা বুদ্ধি বিক্রি করে খায়, তাদের বলা হয় বুদ্ধিজীবী (Intellectuals)। এবার মেধা ও প্রতিভার পদার্থ কী জানা যাক :

  • (৫) মেধাশক্তির (স্মরণশক্তি) উপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে বাংলাদেশি শিশুরা প্রতিভাচ্যুত হয়ে পড়ছে।
  • (৬) মেধাবী ছেলেটি প্রতিবছর প্রথম হয়ে পাস করে, তবে প্রতিভার অভাবে পাঠ্যপুস্তুকের বাইরের কিছুই জানে না।
  • (৭) মেধা দিয়ে ভালো নম্বর পাওয়া যায়, কিন্তু ভালো কিছু সৃষ্টি করার জন্য শুধু নাম্বার যথেষ্ট নয়, প্রতিভা আবশ্যক।

মেধা শব্দের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার যোগসূত্র থাকলেও ‘মেধা’র জন্য সৃজনশীলতা অনিবার্য নয়, কেউ সৃজনশীল না-হলেও কেবল স্মরণশক্তি বা বুদ্ধি থাকলে মেধাবী হয়ে যেতে পারে। যেমন : বাংলাদেশের অধিকাংশ শিশু, যারা প্রতিবছর জিপিএ-ফাইভ নিয়ে পাস করে তাদের সিংহভাগেরই প্রতিভা নেই, তবে মেধা আছে; কারো কারো বুদ্ধিও আছে। তারা মেধার জোরে ভালো সনদ অর্জন করে, কিন্তু প্রতিভাতে অনেকেই শূন্য। মেধাবীরা স্মরণশক্তির জোরে অর্জিত সনদ নিয়ে ভালো চাকুরি পায়, তবে তাদের মধ্যে সৃজনশীল হওয়ার নজির সংখ্যা, পরিমাণ এবং গুরুত্বের দিক থেকে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। বর্ডার কলি (Border collie) জাতের কুকুর মেধা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে, শিক্ষা তাকে আরও মেধাবী করে তোলে, কিন্তু প্রতিভাধর করতে পারে না।কারণ তাকে যা শেখানো হয় কেবল সেটাই পারে, ওই শেখানো দিয়ে নতুন কিছু করতে পারে না। 

যেসব মেধাবীরা সৃজনশীল তারা একই সঙ্গে প্রতিভাধরও, কারণ সৃজনশীলতাই হচ্ছে আসল মেধাত্ব। সারা পৃথিবীর প্রসিদ্ধ জ্ঞানী-বিজ্ঞানী আর কবিসাহিত্যিকদের দিকে তাকালে বোঝা যায়, মেধাবীরা অর্থাৎ ভালো নাম্বরদারীরা নয়, বরং প্রতিভাধরেরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারসমূহ করেছেন। নিউটন-আইনস্টাইন, এডিসন, জগদীশচন্দ্র প্রমুখ বিজ্ঞানীগণ স্মরণশক্তিতে এতই দুর্বল ছিলেন যে, নিজের বাড়ির ঠিকানা, স্ত্রীর নাম, সন্তানের চেহারা, মেয়ের বিয়ের তারিখ পর্যন্ত মনে রাখতে পারতেন না। নিউটন তো ‘নয় পাঁচে’ কত তার হিসাব কষতেই ঘেমে যেতেন; বলতেন- এত কঠিন হিসাব আমি কীভাবে করব?  তারা

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

মেধাবী নন, প্রতিভাধর। বিশ্বখ্যাত সৃজনশীলদের ৮৯.৭ ভাগই ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলেন না, তাঁদের স্মরণশক্তি ছিল দুর্বল। এই প্রসঙ্গে, নিউটন, আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, আরজ আলী মাতুব্বর, এডিসন, মোহিতলাল মজুমদার এবং তেসলা-সহ আরো অনেকের কথা উল্লেখ করা যায়। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী গ্রেগর মেন্ডেল (Gregor Mendel), ডোনাল্ড জি হার্ডেন (Donald G. Harden), শ্রীনিভাস রামানুজান (Srinivasa Ramanujan) ও মাইকেল ফ্যারাডে (Michael Faraday) অশিক্ষিত ছিলেন। স্বশিক্ষায় ছিল তাদের বিশ্বপাল্টানো আবিষ্কারের মুল।

অর্থ বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিভা ও মেধা সমার্থক শব্দ নয়। যদি (১) নম্বর বাক্য পরিবর্তন করে লেখা হয় : ভাষা মানুষের মেধার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তা ঠিক হবে না। পশু-পাখিরও মেধা থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিভা থাকা অবিশ্বাস্য। যেমন : পশুপাখির চিৎকার ইঙ্গিতবাহী বা অনুধাবনযোগ্য হলেও ভাষা নয়। কারণ তাদের ইঙ্গিতে সৃজনশীল কিছু নেই, কেবল স্মরণশক্তিই কাজ করে। এর বাইরে সে যেতে পারে না। উপরের আলোচনা হতে বলতে পারি, সংকীর্ণ বিবেচনায় বুদ্ধিমান, প্রতিভাধর আর মেধাবী সমার্থক, কিন্তু কার্যকরণগত তফাত যোজন যোজন। অনেকে আটপৌরে কথায় প্রতিভা আর মেধাকে সমার্থক বলললে তা আদৌ ঠিক নয়। তাহলে প্রতিভা ও মেধার কার্যকরণগত পার্থক্য কী?

এককথায়, মেধাবীরা সমস্যার সমাধান করে, প্রতিভাবানেরা ওই সমস্যাকে প্রতিহত করে। আমার মতে এটাই উভয় শব্দের কার্যকরণগত পার্থক্য। ভবনে অগ্নিকাণ্ডের আগমন বন্ধ করা মেধাবীর কাজ, কিন্তু অগ্নিকাণ্ড যাতে আঘাত না করে তা ভবন নির্মাণের সময় থেকে প্রতিহত করার কৌশল দিয়ে অগ্রসর হওয়া মেধাবীর কাজ। অতএব, মেধাবী উত্তম না কি প্রতিভাধর – এই প্রশ্নে না গিয়ে ভাবুন, দুটোই আমাদের প্রয়োজন। তবে প্রতিভার শক্তি মেধাবীদের প্রয়াসকে আরো কার্যকর এবং শানিত করে তোলে।

#subach/

Leave a Comment

কাচ পচা যাবৎ তফাত দাঁড়ি দাড়ি গাঁ গা সাধারণ ও পর্যবেক্ষণ: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান

ড. মোহাম্মদ আমীন

  • কাচ: কাচ বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই। কাচের জিনিস ভেঙে গেলে চন্দ্রও ভেঙে যেতে পারে। তাই কাচ বানানে চন্দ্রবিন্দু দেবেন না। একটা মাত্র চাঁদ, ভেঙে গেলে জ্যোৎস্না আপুর কী হবে?
  • পচাপচা বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই। যেমন: পচা মাছ। পচা জায়গায় চন্দ্র থাকে না। পচা মাথায় চন্দ্রবিন্দু দেবেন না। পাঁচ-এর মাথায় দেবেন।
  • পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি

    যাবৎ: যাবৎ বানানে ত নেই, ৎ দিতে হবে। যাবৎ বানানে আস্ত-ত দিলে ‘যাব ত’ হয়ে যাবে। যাবৎ আর ‘যাব ত’ এক জিনিস নয়।

  • এযাবৎ: এযাবৎ লিখুন, এযাবত লিখবেন না।
  • তফাত: তফাত বানানে ৎ নেই, দুটোই আস্ত-ত। কাউকে আস্ত-ত আবার কাউকে খণ্ড-ৎ দিলে পাপ হবে। ন্যয়বিচার করুন। আল্লাহ দয়া করবেন।
  • উচিত: উচিত বানানে ৎ দেবেন না। প্রিয়জনের জন্য খণ্ড জিনিস নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। উচিত মানুষ কখনো অনুচিত কাজ করে না।
  • দাড়ি, দাঁড়ি: মুখের দাড়িতে চন্দ্রবিন্দু নেই, কিন্তু বাক্যের দাঁড়িতে চন্দ্রবিন্দু লাগবে। মুখের দাড়ি ঝুলে থাকে। তাই চন্দ্রবিন্দু পড়ে যায়। বাক্যের দাঁড়ি, দাঁড়িয়ে থাকে। তার মাথায় দাঁড়া বানানের চন্দ্রবিন্দু দিলে পড়ে না।
  • গা গাঁ: গা যদি শরীর হয় চন্দ্রবিন্দু দেবেন না। গাঁ যদি গ্রাম হয়, চন্দ্রবিন্দু দিতে হয়। শরীরের ওপর চন্দ্রবিন্দু থাকে না; গ্রামের ওপর চন্দ্রবিন্দু থাকে।
    কোনো এক গাঁয়ের বধূর কথা তোমায় শোনাই শোনো রূপকথা নয় সে নয়—। হেমন্ত বাবুর গানটি মনে রাখবেন।
  • সাধারণ: ‘সাধারন’ নয়, ‘সাধারণ’। তৎসম শব্দে র-এর পরের ন, ণ হয়ে যায়।
  • পর্যবেক্ষণ: ‘পর্যবেক্ষন’ নয় লিখুন ‘পর্যবেক্ষণ’। তৎসম শব্দে ষ বা ক্ষ (ক্‌+ষ)-এর পরের ন, ণ হয়ে যায়।
উৎস: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment

প্রয়োগ বনাম ব্যবহার: প্রয়োগ এবং ব্যবহার শব্দের পার্থক্য

. মোহাম্মদ আমীন

প্রয়োগ বনাম ব্যবহার: প্রয়োগ এবং ব্যবহার শব্দের পার্থক্য

বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘প্রয়োগ’ শব্দের অর্থ প্রযুক্তির ব্যবহার, ব্যবহারের ধরণ, নিয়োগ, দৃষ্টান্ত, ব্যবহার, উল্লেখ প্রভৃতি। ‘প্রয়োগ’ শব্দের ছয়টি অর্থ দেওয়া হলেও সাধারণত ‘প্রয়োগ’ শব্দটি প্রযুক্তির ব্যবহার, ব্যবহারের ধরণ, দৃষ্টান্ত, উল্লেখ এবং কার্যকারতা প্রভৃতি অর্থে অধিক ব্যবহৃত হয়। আমি মনে করি, ‘প্রয়োগ’ শব্দটি প্রযুক্তি, ব্যবহারের ধরণ, বাক্যবিশেষে ব্যবহার প্রভৃতি অর্থে স্থাপন করা অধিক সমীচীন। অর্থ প্রকাশে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কা থাকার কারণ ঘটে বলে ইংরেজি use অর্থ প্রকাশে  ‘প্রয়োগ’ শব্দটি যত কম ব্যবহার করা যায় তত ভালো। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘প্রয়োগ’ এবং ‘ব্যবহার’ অভিন্নার্থে ব্যবহার করলেও বাক্যের গুণগত মান বা অর্থের তারতম্য হবে না। যেমন : “বল শব্দের তিনটি ভিন্নার্থক প্রয়োগ দেখান।” এই বাক্যে আপনি ‘প্রয়োগ’ শব্দের স্থলে ‘ব্যবহার’ লিখতে পারেন।এবার শব্দটির পদার্থ দেখা যাক :

  • ১. বানরের উপর এই ওষুধটি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।
  • ২. তোমার ব্যবহার ভালো ছিল, কিন্তু প্রয়োগটা শোভনীয় ছিল না।
  • ৩. প্রয়োগটি (দৃষ্টান্ত) যথার্থ ছিল।

বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘ব্যবহার’ শব্দের অর্থ – আচরণ (মার্জিত ব্যবহার), স্বভাব, মামলা-মোকাদ্দমা, আইন(ব্যবহারজীবী), কাজে প্রয়োগ (ব্যবহার করা), বিষয়কর্ম, বাণিজ্য। ‘ব্যবহার’ ‘শব্দের’ এতগুলো অর্থ থাকলেও বাক্যে এসব অর্থ পেতে হলে আপনাকে বাক্য বুঝে তা বসাতে হবে। ‘ব্যবহার’ শব্দটি সাধারণত আচরণ, আইনজীবী, কাজে প্রয়োগ, সাধারণ স্বভাব প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে অধিক ব্যবহৃত হয়। যেমন :

  • ৪. তার ব্যবহার (আচরণ) ভালো ছিল না।
  • ৫. ব্যবহারজীবী (আইনজীবী) হিসেবে তিনি ব্যবহারে (মামলা-মোকাদ্দমা) বেশ দক্ষ।
  • ৬. যন্ত্রটির ব্যবহার (প্রয়োগ) তুমি জানো কি?
  • ৭. এটিই তার জন্মগত ব্যবহার (স্বাভাবিক আচরণ)।

‘প্রয়োগ’ শব্দের একটি অর্থ ‘ব্যবহার’ হিসেবে উল্লেখ থাকায় অনেকে বলেন, ‘প্রয়োগ’ ও ‘ব্যবহার’ শব্দকে সমার্থক মনে করা যায়। কিন্তু এই সমার্থকতা সব বাক্যে সর্বস্থানে বসানোর চেষ্টা করলে বাক্যের অর্থে ভীষণ অনর্থ ঘটতে পারে। যেমন : “তুমি আমার গাড়িটা কিছুদিন ব্যবহার করতে পারো।” বাক্যটি যদি আপনি এভাবে লিখেন, “ তুমি আমার গাড়িটা কিছুদিন প্রয়োগ করতে পারো”, তাহলে বিষয়টা হাস্যকর হয়ে যাবে। যেখানে ‘ব্যবহার’ শব্দটি কারো আচরণকে প্রকাশের জন্য প্রয়োগ করা উচিত , সেখানে ‘প্রয়োগ’ শব্দ দিয়ে তা করতে গেলে আপনি অজ্ঞতার পরিচয় দেবেন। যেমন: “বয়স্ক লোকটার সঙ্গে তোমার এমন ব্যবহার করা উচিত হয়নি।” বাক্যটি যদি আপনি লিখেন “বয়স্ক লোকটার সঙ্গে তোমার এমন প্রয়োগ করা উচিত হয়নি”। কেমন হবে? ‘ব্যবহার’ শব্দের আর একটি প্রয়োগ আইনজীবী নির্দেশে। আইনজীবীর অপর নাম ব্যবহারজীবী, ‘ব্যবহার’ এবং ‘প্রয়োগ’ সমার্থক ধরে নিয়ে যদি লিখেন, আমার বাবা একজন প্রয়োগজীবী, তাহলে অনর্থ অনিবার্য।

অতএব, ‘প্রয়োগ’ এবং ‘ব্যবহার’ শব্দের প্রয়োগ ও ব্যবহারে সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। আচরণ, স্বভাব, আইনজীবী, প্রকাশে ব্যবহার শব্দটি নিশ্চিত ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু কার্যকারত, প্রযুক্তি কিংবা ব্যবহারের ধরণ প্রভৃতি। প্রকাশে ‘প্রয়োগ’ শব্দের ব্যবহার অধিকতর নিরাপদ। যে যাই বলুন,  ‘প্রয়োগ’ ও ‘ব্যবহার’ বড়ো হতভাগা।  আমরা প্রত্যহ কতভাবে শব্দদুটো ব্যবহার করছি,  কত কৌশল-অকৌশলে প্রয়োগ করে যাচ্ছি; তবু বেচারদ্বয়র উপস্থিতি কবিতায় আর গানে নেই বললেই চলে। কাজের লোকের মতো কাজের শব্দও ভালো আসনে বসতে পারে না, সবাই অপাঙ্‌ক্তেয় রেখে দেয়।

“রাগ করো না ‘প্রয়োগ’ তুমি, রাগ করো না ‘ব্যবহার’

অপাঙ্‌ক্তেয় নও তোমরা পঙ্‌ক্তি-ভরা রূপ বাহার।” 

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment