বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উত্তর; ভুল ও সংশোধন

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উত্তর; ভুল ও সংশোধন

২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে।

১. প্রশ্ন: বাংলা ভাষায় কোন স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে জিহ্বা উচ্চ অবস্থানে থাকে?

(ক) আ
(খ) এ
(গ) উ
(ঘ) ও
.
২. প্রশ্ন: বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে অনার্য জাতির ব্যবহৃত শব্দ—
(ক) তৎসম
(খ) তদ্ভব
(গ) দেশি
(ঘ) বিদেশি
[‘ভান্ডার’ বানান ভুল লেখা হয়েছে। শব্দটির বানাণে ‘ণ’ হবে না। ‘ন’ হবে। 
অনার্য জাতির ব্যবহৃত শব্দ হলো তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি। আর্য ছাড়া বাংলার সবাই ছিল অনার্য।] 
৩. প্রশ্ন: ‘ধ্বনি বিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব’ গ্রন্থের রচয়িতা—
(ক) মুহম্মদ আবদুল হাই
(খ) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
(গ) মুনীর চৌধুরী
(৩) মুহম্মদ এনামুল হক
.
৪. প্রশ্ন: বাংলা বর্ণমালার যৌগিক স্বর কয়টি?
(১) ১টি।
(২) ২টি।
(৩) ৩টি
(৪) ৪টি
.

৫. প্রশ্ন: যোগরূঢ় শব্দ কোনটি?

(ক) কলম
(খ) মলম
(গ) বাঁশি
(ঘ) শাখামৃগ
.

৬. প্রশ্ন: উপসর্গযুক্ত শব্দ—

(ক) বিদ্যা
(খ) বিদ্রোহী
(গ) বিষয়
(ঘ) বিপুল
.

৭. প্রশ্ন: বিভক্তিযুক্ত শব্দ কোনটি?

(ক) সরোবরে
(খ) চশমা
(গ) সরোজ
(ঘ) চম্পক
.
৮. প্রশ্ন: কোনটি প্রত্যয়সাধিত শব্দ?
(ক) ভাইবোন
(খ) রাজপথ
(গ) বকলম
(ঘ) ঐকিক (এক+ইক; ইক-প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে)।
.
৯. প্রশ্ন: শিরশ্ছেদ শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ—
(ক) শির+ছেদ
(খ) শিরঃ+ছেদ
(গ) শিরশ্+ছেদ
(ঘ) শির+উচ্ছেদ
.
১০. প্রশ্ন: ‘নীলকমল’ কোন সমাসের দৃষ্টান্ত?
(ক) দ্বন্ধ
(খ) বহুব্রীহি
(গ) নিত্য
(ঘ) উপপদ তৎপুরুষ
.
১১. প্রশ্ন: Pedagogy শব্দের পরিভাষা
(ক) সহশিক্ষা
(খ) নারীশিক্ষা
(গ) শিক্ষাতত্ত্ব
(ঘ) শিক্ষানীতি
.
১২. প্রশ্ন: ‘বঙ্কিম’ এর বিপরীত শব্দ কোনটি?
(ক) বন্ধুর
(খ) অসম
(গ) সুষম
(ঘ) ঋজু
শুদ্ধীকরণ: ‘বঙ্কিম’ এর> ‘বঙ্কিম’-এর
.

১২. প্রশ্ন: বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম কত সালে প্রণীত হয়?
(ক) ১৯৯০
খ) ১৯৯২ (সূত্র: বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পুস্তিকা)
(গ) ১৯৯৪
(ঘ) ১৯৯৬

১৩. প্রশ্ন: ‘নদী’-র সমার্থ শব্দ কোনটি?
(ক) সিন্ধু
(খ) হিল্লোল
(গ) তটিনী
(ঙ) নির্ঝর

১৩. প্রশ্ন: চর্যাপদের কবিরা ছিলেন
(ক) মহাযানী বৌদ্ধ
(খ) বজ্রযানী বৌদ্ধ
(গ) বাউল
(ঘ) সহজযানী বৌদ্ধ

বিকল্প উত্তর দুটি হতে পারে। কারণ, চর্যাপদের কবিরা 
বজ্রযানী বৌদ্ধ ও সহজযানী বৌদ্ধ উভয় প্রকার ছিলেন।

বাকি অংশ দেখুন নিচের সংযোগে:
বিসিএস-বিষয়ক অন্যান্য পোস্ট

Leave a Comment

জুয়া জুয়াড়ি জুয়াদার ও  ক্যাসিনো

জুয়া জুয়াড়ি জুয়াদার   ক্যাসিনো

ইংরেজি Gambling শব্দের বাংলা কথা জুয়া। মহাভারতে কথাটি ছিল দূত্য। বাংলায়, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত দ্যূত শব্দ থেকে উদ্ভূত  জুয়া শব্দের মানে হলো : অর্থের বিনিময়ে বাজি রেখে প্রতিযোগিতামূলক খেলা। অন্যদিকে, সংস্কৃত দ্যূতকার হতে উদ্ভূত জুয়াড়ি শব্দের অর্থ বিশেষ্যে- যে জুয়া খেলে এবং বিশেষণে- যে জুয়া খেলায় আসক্ত।

যারা জুয়া খেলায় বা জুয়া খেলার আয়োজন করে বা জুয়ার সংগঠক তাদের বলা যায় জুয়াদার বা জুয়াকার। যে স্থানে জুয়া খেলা হয় তাকে বলা হয় ক্যাসিনো। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান মতে, ইতালীয় ক্যাসিনো (Casino) শব্দের অর্থ, জুয়াখেলার নির্দিষ্ট গৃহ, পানশাল ইত্যাদি।সুতরাং ক্যাসিনোকে বাংলায়  জুয়াঘর বলা যায় এবং যারা ক্যাসিনো চালায় তারাই জুয়াদার।

জুয়া পৃথিবীর আদিম খেলা। মহাভারতে জুয়া নিয়ে ভীষণ-বিশাল বর্ণনা রয়েছে। কুরুক্ষেত্র জুয়ার অন্যতম পটপাত্র। জুয়ার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত পুরুষের যৌনবাজার গমনাগমন এবং যৌনকর্মীদের কাছে আত্মবিক্রির খেলা। প্রকাশ্যে- অপ্রকাশ্যে পৃথিবীর সব দেশে জুয়া এবং যৌনবাজার রয়েছে। মানুষ যতদিন থাকবে এ দুটিও ততদিন থাকবে। কেননা যৌনক্রিয়া আর দ্যূতক্রিয়া মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনোভাবে জুয়া খেলে– সংসার নিয়ে, বিয়ে নিয়ে, পরিবার নিয়ে, কর্ম  নিয়ে, রাষ্ট্র নিয়ে, জীবন নিয়ে- আসলে কী নিয়ে নয়? তাই মলমূত্রের মতো জুয়া আর যৌনবাজার মানুষের জন্য অনিবার্য। 

কয়েক দিন যাবৎ বাংলাদেশে ক্যাসিনোসমূহের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। দেশের বিভিন্ন  এলাকা থেকে অনেক ক্যাসিনো সিলগালা করার খবর আসছে। পত্রিকায় লেখা হচ্ছে জুয়াড়িদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু তা ঠিক নয়, উপরের বর্ণনা হতে প্রতিভাত যে- যারা জুয়া খেলায়, জুয়ার সংগঠক তাদেরই ধরা হচ্ছে, জুয়াড়িদের ধরা হচ্ছে না। জুয়াদারদের টাকা জব্দ করা হচ্ছে; কিন্তু যারা জুয়া খেলে অর্থাৎ যারা জুয়াড়ি  তারা এবং তাদের টাকা বহাল তবিয়তে আছে।

জুয়া পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক নেশা। এই নেশায় ধরলে কেউ সহজে ছাড়তে পারে না। ক্যাসিনোর সংখ্যা  এবং উদ্ধারকৃত সামগ্রী ও অর্থ দেখে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রচুর জুয়াড়ি রয়েছে। একজন জুয়াড়িকেও গ্রেফতার করা যায়নি বা গ্রেফতার করা হয়নি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হচ্ছে- জুয়াদার। জুয়াড়ি বা জুয়ায় আসক্তরা জুয়ার মতো মারাত্মক নেশবহুল খেলা বন্ধ করে থাকতে পারবে না। তাদের খেলতেই হবে। তাই  এই জুয়াড়ি বা জুায়ায় আসক্তরা জুয়া খেলার জন্য এখন ছুটবে সিঙ্গাপুর-নেপাল- থাইল্যান্ড-চিন এবং কেউ কউ ইউরোপ আমেরিকা। দেশের টাকাগুলো চলে যাবে বিদেশে। জুয়াদারদের  ধরার সঙ্গে সঙ্গে এদেরও থামানো দরকার। যদিও তা বেশ কঠিন।  খেয়াল রাখতে হবে, আগে যে জুয়াড়িদের টাকা বাংলাদেশের ক্যাসিনোগুলোয় খরচ করা হতো- সে টাকা যেন দেশের বাইরে চলে না-যায়।

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

সপরিবার আমন্ত্রিত বনাম সপরিবারে আমন্ত্রিত

ড. মোহাম্মদ আমীন

সপরিবার আমন্ত্রিত বনাম সপরিবারে আমন্ত্রিত

পোস্ট:https://draminbd.com/সপরিবার-আমন্ত্রিত-বনাম-স/

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত সপরিবার (সহ+পরিবার) অর্থ (বিশেষণে) দারাপুত্রকন্যাদি-সহ। এটি বিশেষণ। তাই বিশেষ্যকে বিশেষায়িত করার জন্য সপরিবার শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন: সপরিবার বেঁচে থাক যুগযুগ। সপরিবার উচ্চশিক্ষিত হওয়া বড়ো কঠিন।

সপরিবারে: সপরিবারে (স.সপরিবার+ বা.এ) তৎসম নয়। এটি সংস্কৃত ‘সপরিবার’ এবং বাংলা ‘এ’ সহযোগে গঠিত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সপরিবারে অর্থ স্ত্রী-পুত্রকন্যা সমবিভ্যহারে। যেমন: সপরিবারে আমন্ত্রিত। সপরিবারে তিনি জাপান গিয়েছেন। অনেক মনে করেন, সপরিবারে শব্দটির প্রয়োগ ব্যাকরণসম্মত নয়। এমন ধারণা নিতান্তই অজ্ঞতাপ্রসূত। প্রথমে মনে রাখতে হবে, সপরিবার বিশেষণ, কিন্তু সপরিবারে ক্রিয়াবিশেষণ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান উভয় শব্দকে ভিন্নার্থে ও ভিন্ন পদে প্রমিত নির্দেশ করেছে। ওই অভিধানে উদাহারণ দিয়েছে: সপরিবারে আমন্ত্রিত। সুতরাং ‘সপরিবারে আমন্ত্রিত’ কথাটি শুদ্ধ। বরং বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে ‘সপরিবার আমন্ত্রিত’ কথাটি অশুদ্ধ ধরা যায়। কারণ বিশেষণকে আহ্বান করা হয় না। বিশেষণধারীকে আহ্বান করা হয়।

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

কুশপুত্তলিকা, পোয়াবারো, বিরাদারানে ইসলাম, রোজনামচা, খেরো ও খেরো খাতা

ড. মোহাম্মদ আমীন

কুশপুত্তলিকা, পোয়াবারো, বিরাদারানে ইসলাম, রোজনামচা, খেরো ও খেরো খাতা

কুশপুত্তলিকা: কুশ+পুত্তলিকা। কুশ দিয়ে তৈরি হয় যে পুতুল। কুশতৃণে বা শরপত্রে রচিত পুত্তলিকা। যার দাহ হয়নি বা মুখাগ্নি পর্যন্ত হয়নি এবং যার অস্থি পাওয়া যায়নি তার কুশপুত্তলিকা দাহ করতে হয়। কুশপুত্তলিকা শব্দটি এখন রাজনীতির ক্ষেত্রে বেশ প্রচলিত। তবে যারা কুশুপুত্তলিকা দাহ করেন তারা জানেন না যে, এটি প্রাচীন মানুষের নিদান।

পোয়াবারো: ‘পোয়াবারো’ শব্দের অর্থ— সম্পূর্ণ অনুকূল, পরম সৌভাগ্য। পাশা খেলার একটা দান হতে শব্দটির উদ্ভব। পাশা খেলার একটা দান হল ‘পোয়াবারো’। ছক্কার গুটি ফেলে কোনো চালে যদি পরপর ৬+৫+১ অথবা ৬+৬+১ দান পড়ে সেটাই ‘পোয়াবারো’ দান নামে পরিচিত। পাশা খেলায় ‘পোয়াবারো’ দান পাওয়া হলো জয়সূচক দান পাওয়া। জয় ও সৌভাগ্যের সঙ্গে জড়িত বলে পোয়াবারো দানটি ‘পোয়াবারো’ শব্দরূপে বাংলা বাগ্‌‌ভঙ্গিতে উঠে এসেছে।

বিরাদারানে ইসলাম: শব্দটা হলো— বিরাদারানে ইসলাম। ফারসি বিরাদার শব্দের অর্থ— ‘ভাই’। ফারসিতে প্রাণীবাচক শব্দের শেষে ‘আন’ যুক্ত করে তাকে বহুবচনে রূপান্তর করা হয়।  শব্দটির অর্থ দাঁড়ায়— ‘ইসলামের ভাইয়েরা’।

রোজনামচা: ফারসি রোজনামচা অর্থ (বিশেষ্যে) প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার লিখিত বিবরণ, দিনলিপি, দিনপঞ্জি, রোজনামা, ডায়ারি। যার ইংরেজি প্রতিশব্দ diary।

খেরো: হিন্দি খারুয়া হতে পাওয়া খেরো অর্থ মোটা সুতোয় বোনা লাল রঙের কাপড়বিশেষ যা সাধারণত লেপ তোশক তৈরি ও বই খাতা বাঁধাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়। শিশুদের হাত বা পায়ের অলংকারকেও খেরো বলা হয়।

খেরো খাতা: বাংলা খেরো খাতা অর্থ (বিশেষ্যে) লাল কাপড়ে বাঁধাই-করা খাতা। নানান বিষয় টুকে রাখার খাতা। দোকানে এমন খাতা দেখা যায়। কথাটির দুটি বানান দেখা যায়- খেরোখাতা ও খেরো খাতা। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান [প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬] লিখেছেখেরো খাতা‘। অশোক মুখোপাধ্যায়ের সংসদ বানান অভিধান [পরিবর্ধিত তৃতীয় সংস্করণ ২০০৯-এর তৃতীয় মুদ্রণ ২০১৩] লিখেছে খেরোখাতা। আমরা বাংলা একাডেমির খেরো খাতা লিখব।

#subach

Leave a Comment

গোঁড়া গোড়া; ভিড় ভীড়: ভিড় বানান নিমোনিক

ড. মোহাম্মদ আমীন

গোঁড়া গোড়া; ভিড় ভীড়: ভিড় বানান নিমোনিক

গোঁড়া: বাংলা গোঁড়া শব্দের অর্থ— (বিশেষণে) কোনো বিষয়ে অন্ধবিশ্বাসী, রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন, একগুঁয়ে, অত্যধিক পক্ষপাতযুক্ত। যে নিজের মতবাদ ছাড়া

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি

অন্য সবার মতবাদকে বাতিল করে দেয়; কারো মতবাদকে সহ্য করে না, ভিন্ন মতাবলম্বীকে ঘৃণা করে, হেয় করে, অপস্থ করে, অকল্যাণ কামনা করে তাদের— গোঁড়া বলে। ইংরেজিতে যাদের orthodox বলা হয়। গোঁড়া শব্দের আর একটি অর্থ স্ফীত নাভিযুক্ত। এর বানানে চন্দ্রবিন্দু অনিবার্য।

গোড়া: বাংলা গোড়া অর্থ— (বিশেষ্যে) মূল, সূত্রপাত, ভিত্তিমূল, মূল কারণ, সান্নিধ্য প্রভৃতি। এই গোড়ায় চন্দ্রবিন্দু নেই।

নিমোনিক: কীভাবে মনে রাখবেন কোনটায় চন্দ্রবিন্দু? গোড়া গাছের নিচে থাকে, কিন্তু চাঁদ থাকে আকাশে। তাই মূল বা গাছের গোড়া অর্থদ্যোতক গোড়া বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই।

ভিড় বানান নিমোনিক

ভিড় দেশি শব্দে। দেশি শব্দে ঈ-কার হয় না। তাই ভিড় বানানে ই-কার। দেশি না বিদেশি তা জানব কীভাবে? ফলে ই-কার আর ঈ-কার নিয়ে গন্ডগোল লেগে যায়। তাই একটা নিমোনিক লাগে। ভিড় অর্থ বহু লোকের বিশৃঙ্খল সমাবেশ, লোকসমাগম, জটলা। এমন ভিড়ে এগিয়ে যেতে হলে সামনে হাত দুটো ছাতার মতো প্রসারিত করে রাখতে হয়। মনে করুন ভিড় বানানের সামনের ই-কার ভিড়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সামনে প্রসারিত হাত বা ছাতা। তাই ভিড় বানানের আগে ছাতারূপী ই-কার দিতে হয়। পেছনের ঈ-কার নয়। 

উৎস: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

 

 

Leave a Comment

ম-ম বনাম মম: মম চিত্তে

ড. মোহাম্মদ আমীন

ম-ম বনাম মম: মম চিত্তে

: বাক্যে অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত  অর্থ— গন্ধে আমোদিত এমন ভাব। বিশেষণে ম-ম শব্দের অর্থ— গন্ধে আমোদিত।

ফুলের গন্ধে - করছে চারদিক।
- গন্ধ,
ইচ্ছেমতো পোলাও খাব দরজা করে বন্ধ।

মম:মম’ হচ্ছে সংস্কৃত অস্মদ্‌ শব্দের ষষ্ঠী বিভক্তির প্রথমার রূপ। বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত মম অর্থ— আমার। মম শব্দটি কাব্যে ব্যবহৃত হয়। গদ্য রচনায় আদৌ এর ব্যবহার নেই।

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে (রবীন্দ্রনাথ)।
মম একহাতে বাঁকা বাঁশের বাশঁরী, আর হাতে রণতূর্য (নজরুল)

প্রয়োগ:

“ম-ম গন্ধে, স্নিগ্ধ এই সন্ধে
মম হাতে হাত রেখে প্রিয় মোর বন্ধে।”

#subach

 

Leave a Comment

ব্যাবহারিক না কি ব্যবহারিক: ব্যাবহারিক বনাম ব্যবহারিক

ড. মোহাম্মদ আমীন

ব্যাবহারিক না কি ব্যবহারিক: ব্যাবহারিক বনাম ব্যবহারিক

প্রসঙ্গ: ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. থেকে সদ্যপ্রকাশিত ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র গ্রন্থের ব্যাবহারিক বানান। ব্যবহারিক নয় কেন, কেন ব্যাবহারিক? বাংলা ব্যাকরণমতে, প্রারম্ভে ‘অ-কার’-যুক্ত কোনো শব্দের সঙ্গে ‘ইক-প্রত্যয়’ যুক্ত হলে সাধারণত ওই শব্দের

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

বানানের প্রথম বর্ণের ‘অ-কার’ পরিবর্তিত হয়ে ‘আ-কার’ হয়ে যায়। যেমন:

  • অর্থ+ইক= আর্থিক।
  • বর্ষ+ইক= বার্ষিক।
  • পরিশ্রম+ইক= পারিশ্রমিক।
  • নন্দন+ইক= নান্দনিক।
  • সময়+ইক= সাময়িক।
  • তেমনি, ব্যবহার+ইক= ব্যাবহারিক।

আগে ব্যবহারিক বানান প্রমিত ছিল, তৎসঙ্গে ব্যাবহারিক বানানও প্রমিত হিসেবে অভিধানে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, ‘ব্যবহারিক’ বানানটি অধিক প্রচলিত ছিল। কিন্তু, বাংলা একাডেমির সর্বশেষ অভিধান (প্রথম প্রকাশ: ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ) ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ গ্রন্থে একমাত্র ব্যাবহারিক শব্দকে প্রমিত করা হয়েছে; ব্যবহারিক শব্দকে ওই অভিধানে স্থানই দেওয়া হয়নি। অতএব, বাংলা একাডেমি হতে প্রকাশিত সর্বশেষ অভিধানমতেে, এই প্রসঙ্গে একমাত্র প্রমিত বানান হলো, ব্যাবহারিক

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

আকাশ পাতাল না কি আকাশপাতাল

ড. মোহাম্মদ আমীন

আকাশ পাতাল না কি আকাশপাতাল

আকাশপ্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে – – -। ‘আকাশ পাতাল’ নয়, আকাশপাতাল। আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, আকাশপাতাল শব্দই প্রমিত। কেন তা নিচে নিমোনিক বিধিতে দেখুন—
.
সাধারণ বিধি: সমাসবদ্ধ হলে ‘আকাশ’ শব্দটি সাধারণত ক্রিয়া বা ক্রিয়াবিশেষ্য ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শব্দ/পদ বা শব্দাংশের সঙ্গে সেঁটে বসবে। যেমন: আকাশকুসুম, আকাশচারী, আকাশচিত্র, আকাশচুম্বী, আকাশছোঁয়া, আকাশজাত, আকাশদীপ, আকাশদুহিতা, আকাশপট, আকাশপথ, আকাশপ্রদীপ, আকাশবিহার, আকাশভ্রমণ, আকাশকণ্ডল, আকাশযান, আকাশযুদ্ধ প্রভৃতি।
.
বাক্য: আকাশপ্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে, আমার নয়ন দুটি –
বিশেষ বিধি: তবে আকাশ শব্দের পর ক্রিয়া বা ক্রিয়াবিশেষ্য কিংবা ক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শব্দ বা পদ থাকলে তা ফাঁক রেখে বসবে। যেমন: আকাশ থেকে পড়া, আকাশ ধরা, আকাশ ভেঙে পড়া, আকাশ হাতে পাওয়া, আকাশে তোলা প্রভৃতি।
.
বাক্য: আকাশ মেঘে ঢাকা শাওন ধারা ঝরে – – -।
এখানে মেঘ শব্দটি ঢাকা ক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই আকাশ শব্দের সঙ্গে সেঁটে না বসে পৃথক বসেছে।

উৎস: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

উপরোক্ত উপরিউক্ত এবং উর্পযুক্ত

ড. মোহাম্মদ আমীন

উপরোক্ত উপরিউক্ত এবং উর্পযুক্ত

‘উপরি’ থেকে ‘উপর’ এবং তা থেকে উপরিউক্ত এবং উপর্যুক্ত। বাক্যে অব্যয় ও ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘উপরি (ঊর্ধ্ব+রি) শব্দ হতে ‘উপর

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

শব্দের উদ্ভব। কাজেই ‘উপরি’ সংস্কৃত শব্দ নয়, বাংলা শব্দ। ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধির ফলে ‘উপরোক্ত’ শব্দ গঠিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত “উক্ত (√বচ্ + ক্ত)” শব্দটি তৎসম।

সংস্কৃতঘেষা বৈয়াকরণগণ মনে করেন, একটি অতৎসম শব্দের সঙ্গে আরেকটি তৎসম শব্দের সন্ধি বিধেয় নয়। যেমন : বিধেয় নয় ব্রাহ্মণ শূদ্র সামাজিক সম্পর্ক, প্রেম-পিরিত। তাই বৈয়াকরণগণ এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বাংলা তথা শূদ্র ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত তথা ব্রাহ্মণ ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি না-করে সংস্কৃত ‘উপরি’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি করাই সমীচীন। সেক্ষেত্রে এই সন্ধির ফলে জাত শব্দটি হয় : উপরি-উক্ত বা উপরিউক্ত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে কেবল এই উপরিউক্ত শব্দটিকে প্রমিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সংস্কৃত ‘উপরি’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ‘যুক্ত (√যুজ্+ত)’ শব্দের সন্ধি করলে পাওয়া যায় : “উপরি+যুক্ত= উপর্যুক্ত’’। তাই বৈয়াকরণগণ, উপরোক্ত শব্দের পরিবর্তে উপরিউক্ত বা উপর্যুক্ত লেখা সমর্থন করে এই শব্দটিকে প্রমিত নির্দেশ করেছে। যদিও বাংলামতে, উপরোক্ত লেখা দূষণীয় হবে না। কারণ, বাংলা সংস্কৃত ভাষা নয়; আলাদা একটি ভাষা।

তাই বাংলা ব্যাকরণ এবং সংস্কৃত ব্যাকরণও এক নয়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “সংস্কৃত সন্ধির নিয়ম বাঙ্গালার পক্ষে খাটে না- বাঙ্গালা সন্ধির অন্য নিয়ম আছে”

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

অতলান্তিক থেকে আটলান্টিক, অপেরা, অয়ি-অয়ে, ওডিকোলন, আইওয়াশ

ড. মোহাম্মদ আমীন

অতলান্তিক থেকে আটলান্টিক, অপেরা, অয়ি-অয়ে, ওডিকোলন, আইওয়াশ

অতলান্তিক: অতলান্তিক সংস্কৃত শব্দ। এর ব্যুৎপত্তি হচ্ছে, অতল+ আন্তিক। সংস্কৃত ‘অতল’ শব্দের অর্থ— বিশেষণে তল নেই এমন, গভীর, অথৈ, অগাধ এবং বিশেষ্য পুরাণে বর্ণিত সাতটি পাতালের প্রথমটির তলদেশ। সুতরাং অতলান্তিক অর্থ যার তলদেশ অত্যন্ত গভীর। পৃথিবীতে এখনো এ নামের একটি মহাসাগর আছে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় Atlantic Ocean, এই সাগরের তলদেশ অত্যন্ত গভীর। মূলত ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত অতল + আন্তিক = অতলান্তিক সাগরই ইউরোপে Atlantic নামে পরিচিত। সংস্কৃত অতলান্তিক থেকে ইংরেজি Atlantic এবং তা থেকে Atlantic মহাসাগর নামের উদ্ভব।এর অর্থ: যার তলদেশ অত্যন্ত গভীর। 

অপেরা: ইতালীয় অপেরা (Opera) শব্দের বাংলা গীতিনাট্য। এর উদ্ভব ইতালিতে। পরবর্তীকালে তা সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এটি পাশ্চাত্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় গীতিনির্ভর বিশেষ ধরনের নাটক। এটি পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি প্রধান শাখা। অভিনয়, পোশাকসজ্জা এবং কখনো কখনো নৃত্য সহকারে মঞ্চে গীতিনাট্য পরিবেশন করা হয়। সহজ কথা, সংগীত-প্রধান নাটককে অপেরা বা গীতিনাট্য বলা হয়।অপেররার কাহিনি ও চরিত্রের সঙ্গে সমন্বয় করে সংগীত চয়ন করা হয়। শকুন্তলা বাংলা ভাষার প্রথম অপেরা বা গীতিনাট্য।

অয়িঅয়ে: ফারসি অয়ি থেকে অয়ি-অয়ে কথার উদ্ভব। এর অর্থ— (অব্যয়ে) ভক্তি, প্রেম বা স্নেহসূচক সম্বোধনবিশেষ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:

অয়ি ভুবনমনোমোহিনী, মা,
অয়ি নির্মলসূর্যকরোজ্জ্বল ধরণী জনকজননিজননী।

ওডিকোলন: সুগন্ধি সুরাসার বিশেষ। ওডিকোলন শব্দের অর্থ কোলন নদীর জল। ফরাসি ভাষায় নামকরণ হলেও এ সুরভিত নির্যাসটি প্রথম জার্মানির কোলন নদীর কোলন শহরে প্রস্তুত হয়। তাই নাম ওডিকোলন বা কোলন নদীর জল। কথিত হয়, কোলন নদীর জল ছাড়া এটি হয় না।

আইওয়াশ: ইংরেজি আইওয়াশ অর্থ (বিশেষ্যে) প্রতারণা, ছলনা, বাগাড়ম্বর, তালিকার অন্তর্ভুক্ত স্বতন্ত্র বস্তু।

#subach

 

Leave a Comment

You cannot copy content of this page