কারক: বাংলা ব্যাকরণ

ড. মোহাম্মদ আমীন

কারক: বাংলা ব্যাকরণ

বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক থাকে, তাকে কারক বলে। কারক প্রধানত ছয় প্রকার। ছয় প্রকার কারকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং নির্ণয়ের সহজ কৌশল নিয়ে এই ছোটো লেখা:

. কর্তৃকারক: বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে কর্তৃকারক বলে।
নির্ণয়ের কৌশল: ক্রিয়াকে ‘কে’ বা ‘কারা’ যোগে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই হচ্ছে কর্তৃকারক। যেমন:
ক. ছোটো বন্ধু বার্তা পড়ে। কে পড়ে? ছোটো বন্ধু— কর্তৃকারক।
খ. আমরা গান গাই। কারা গায়? আমরা— কর্তৃকারক।

. কর্মকারক: যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে কর্মকারক বলে।
নির্ণয়ের কৌশল: ক্রিয়াকে ‘কী’ বা ‘কাকে’ কিংবা ‘কার’ যোগে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই হচ্ছে কর্মকারক। যেমন:

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ক. তাহাসিন ছবি আঁকছে। কী আঁকছে? ছবি— কর্মকারক।
খ. ছাফিয়াকে বকো না। কাকে বকো না? ছাফিয়াকে— কর্মকারক।
গ. ধোপাকে কাপড় দাও। কাকে দাও? ধোপাকে— কর্মকারক।
ঘ. টমের দেখা পেলাম না। কার দেখা পেলাম না? টমের— কর্মকারক

. করণ কারক: যে যন্ত্র বা উপকরণ কিংবা মাধ্যমের সাহায্যে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে করণ কারক বলে।
নির্ণয়ের কৌশল: ক্রিয়াকে ‘কী/কীসের দিয়ে/দ্বারা’ বা ‘কী উপায়ে’ যোগে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই হচ্ছে করণ কারক। যেমন:
ক. আমি কলম দিয়ে লিখি। কী দিয়ে লিখি? কলম— করণ কারক।
খ. পরিশ্রমে সফলতা মিলে। কীসের দ্বারা সফলতা মিলে? পরিশ্রম— করণ কারক।
গ. টাকায় সব মেলে। কীসের দ্বারা সব মেলে? টাকায়— করণ কারক।
ঘ. আলোয় অন্ধকার দূর হয়। কীসের দ্বারা অন্ধকার দূর হয়/কীসের দ্বারা দূর হয়? আলোর— করণ কারক।

. সম্প্রদান কারক  যখন কাউকে কোনো কিছু স্বত্ব ত্যাগ করে দান করা হয় কিংবা নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করা হয়, তখন ঐ ব্যক্তিকে(যাকে দান বা সাহায্য করা হয়) সম্প্রদান কারক বলে। যেমন: দরিদ্রকে খাদ্য দাও। দরিদ্রকে খাদ্য দিলে তা ফেরত পাওয়ার আশায় দেওয়া যাবে না, স্বত্ব ত্যাগ করে দিতে হবে। তাই এখানে ‘দরিদ্রকে’ হচ্ছে সম্প্রদান করক।

অপাদান কারক: বাক্যে যা থেকে কোনো কিছু গৃহীত, বিচ্যুত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত, রক্ষিত ইত্যাদি বোঝায় অথবা যাকে দেখে কেউ ভয় পায়, তা-ই হচ্ছে অপাদান কারক।
নির্ণয়ের কৌশল: ক্রিয়াকে ‘কী/কোথা থেকে/হইতে/হতে’ বা ‘কাকে'(ভয়-এর ক্ষেত্রে) যোগে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যা, তা-ই হচ্ছে অপাদান কারক। যেমন:
ক. গাছ থেকে আম পড়ে। কোথা থেকে আম পড়ে? গাছ থেকে— অপাদান কারক।
খ. বিপদ থেকে রক্ষা করো। কী থেকে রক্ষা করো? বিপদ— অপাদান কারক।
গ) ফ্যান্টমকে সবাই ভয় পায়। কাকে ভয় পায়? ফ্যান্টমকে— অপাদান কারক।

. অধিকরণ কারক  বাক্যে ক্রিয়া সম্পাদনের কাল(সময়) এবং আধার(স্থান)-কে অধিকরণ কারক বলে।
নির্ণয়ের কৌশল: ক্রিয়াকে ‘কোথায়’ বা ‘কখন’ যোগে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই অধিকরণ কারক। যেমন:
ক. সন্ধ্যায় ছোটো বন্ধুকে কারক নির্ণয়ের সহজ কৌশল সম্পর্কে বার্তা পাঠাতে হবে। কখন পাঠাতে হবে? সন্ধ্যায়— অধিকরণ কারক।
খ. ছাফিয়া স্কুলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে? স্কুলে— অধিকরণ কারক।
গ. পুকুরে মাছ আছে। কোথায় মাছ আছে? পুকুরে— অধিকরণ কারক।

জ্ঞাতব্য: ১. ‘কে’ ও ‘রে’ বিভক্তি সম্প্রদান কারকের ক্ষেত্রে চতুর্থী এবং অন্যান্য কারকের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়া হিসেবে উল্লেখ করতে হবে।
২. নিমিত্তার্থেও সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি হবে। যেমন: বেলা যে পড়ে এল জলকে(জলের নিমিত্তে) চল। কীসের নিমিত্তে চল? জলের— নিমিত্তার্থে চতুর্থী বিভক্তি।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

ঈদ ইদ: ইদ হবে না কেন: ঈদ ও ইদ বানানের ইতিহাস আদি-অন্ত

ড. মোহাম্মদ আমীন

ঈদ ইদ: ইদ হবে না কেন: ঈদ ও ইদ বানানের ইতিহাস আদি-অন্ত

ইদ ঈদ 
বাংলা একাডেমি আধুনি বাংলা অভিধানমতে ইদ ঈদএর অর্থ
ইদ: ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব (ইদুল ফিতর বা ইদুল আজহা); খুশি, উৎসব; ঈদ-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ইদগাহ: যে স্থানে একত্র হয়ে ইদের নামাজ পড়া হয়। ঈদগাহ-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।
ইদি : ইদ উপলক্ষ্যে ছোটোদের দেয় সালামি; ঈদি-র সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।
ইদুজ্‌জোহা: ইদুল আজহা।
ইদুল-আজহা: হিজরি পঞ্জিকার জিলহজ মাসের দশম দিনে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পালনীয় উৎসব ( যে উৎসবে পশু কোরবানি দেওয়া হয়); ঈদুল-আজহা-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।
ইদুলফিতর: ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মাসব্যাপী নির্জলা উপবাসব্রত পালনের পর হিজরি পঞ্জিকার শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে উদ্‌যাপিত উৎসব; ঈদুলফিতর-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।

ঈদ: ইদ-এর প্রচলিত ও অসংগত বানান।
ঈদি: ইদি-র প্রচলিত ও অসংগত বানান।
ঈদগাহ: হদগাহ-এর প্রচলিত ও অসংগত বানান।
ইদুজ্‌জোহা: ‘ইদুজ্‌জোহা’-র প্রচলিত অসংগত বানান।
ঈদুলফিতর: ‘ইদুলফিতর’-্এর অসংগত ও প্রচলিত বানান।

বাংলায় ধ্বনিমূলগত বা উচ্চারণগত কোনো দীর্ঘস্বর নেই। তাই ‘ইদ’ ও ‘ঈদ’ উভয় শব্দের উচ্চারণ অভিন্ন। প্রশ্ন আসতে পারে, তা হলে বানান পরিবর্তনের কারণ কী? কারণ আছে এবং তা অনেকের মতে যথেষ্ট যৌক্তিক। শব্দের অর্থ দ্যোতনা, বানানে আদর্শমান প্রতিষ্ঠা ও সমতা রক্ষার স্বার্থে বাংলা একাডেমি, বিদেশি শব্দ হিসেবে আরবি عيد শব্দের বানান ‘ইদ’ করেছে। তবে কেউ ‘ঈদ’ লিখলে সেটির উচ্চারণও হবে ‘ইদ’। অবশ্য কেউ যদি আরবি উচ্চারণ করেন সেটি অন্য বিষয়। আবার অনেকের প্রশ্ন, তাহলে ইংরেজি হতে আগত Keyboard শব্দের বানান  কেন ‘কী-বোর্ড’ করা হলো? চিন বানান কেন প্রচলন বিবেচনায় ‘চীন’ রেখে দেওয়া হলো? এমন আরও অনেক সাংঘর্ষিক বানান বাংলা একাডেমি করেছে।

‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (২০১৬)’ ও ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (২০১৫)’ অনুযায়ী عيد (Eid) শব্দের প্রমিত ও সংগততর বাংলা বানান ‘ইদ’। عيد (Eid) বিদেশি শব্দ। তাই প্রমিত বানানরীতি অনুসারে শব্দটির প্রমিত ও সংগততর বাংলা বানান ‘ইদ’, ‘ঈদ’ নয়। শব্দটির বানানে ‘ঈ’ বা ‘ই’ যা-ই দেওয়া হোক না কেন; উচ্চারণের, সম্মানের বা গাম্ভীর্যের কোনো পরিবর্তন হবে না, কিন্তু ‘ই’ দিলে প্রমিত বানানরীতি প্রতিষ্ঠা ও ভাষার আদর্শমান এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। যা ভাষাকে করবে আরও সর্বজনীন, বোধগম্য, অভিন্ন ও প্রমিত। কিন্তু তা কীভাবে হবে? সামান্য ব্যাঙ বানানেও একাডেমির সাংঘর্ষিকতা দেখা যায়। তৎসম আর অতৎস নিয়েও আছে দ্বন্দ্ব।

বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান [প্রথম খণ্ড (অ-ঞ) প্রথম প্রকাশ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০/জুন ২০১৩] মতে, ‘ঈদ’ শব্দের প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় আলাওলের লেখায়। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আলাওল লিখেছেন, ‘জুম্মা দুই ঈদ আর আরফা সিনান’। ‘ইদ’ শব্দের প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে অক্ষয়কুমার দত্তের ‘কি ইদ, কি মহরম কোন মোসলমান …’ লেখায়।

২০০০ সংস্করণের বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান [পরিমার্জিত সংস্করণ ডিসেম্বর ২০০০-এর অষ্টাদশ পুনর্মুদ্রণ: মাঘ ১৪২১/জানুয়ারি ২০১৫]-এ ‘ইদ’ বানান সম্পর্কে লেখা হয়েছে, “ইদ, ইদগাহ ⇒ ঈদ”। বাংলা একাডেমি বাংলা বানান-অভিধান [পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত তৃতীয় সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০০৮-এর পঞ্চম পুনর্মুদ্রণ জানুয়ারি ২০১৫]-এ লেখা আছে, “ইদ /id ইদ্/ (ঈদ-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান)।” ২০১২ সংস্করণের বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম ২.১ [পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১২ (মুদ্রণ-২০১৫)] উল্লেখ করা হয়েছে, “সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কারচিহ্ন হ্রস্ব ই-কার, হ্রস্ব উ-কার ব্যবহৃত হবে।” সে হতে ‘ইদ’ বানান আরো পোক্ত এবং বিধিবদ্ধ হয়ে যায়।

ভাষা বহমান নদীর মতো নয়, চলমান প্রকৃতির মতো, নদী প্রকৃতির একটি উপাদান মাত্র। ভাষার পরিধি তার চেয়েও ব্যাপক। প্রত্যেক ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয় পরিক্রমা রয়েছে। প্রাচীনত্বের অজুহাতে ভাষার স্বকীয়তা এবং ভাষাপ্রকৃতির সাবলীল পরিবর্তনে বাধা দিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা সমীচীন হবে বলে মনে হয় না।

অনেকে বলেন, ‘ইদ’ বানান এখনও ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি। সম্মানিত শুবাচি জনাব Khurshed Ahmed এর ভাষায় বলা যায়, “আপনি-আমি শুরু করলেই সংগততর ‘ইদ’ বানানটি প্রচলিত হতে শুরু করবে।” শব্দটির বাংলা বানান নিয়ে বির্তকের এক পর্যায়ে একাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী শুবাচি জনাব Minha Siddika মন্তব্য করেছেন : “আমাদের ঐকমত্য দূরহ বিষয়, যে কোনো ক্ষেত্রে। ঈদ বানান ইদ হলে ‘Kyeboard’ বানান কেন ‘কি-বোর্ড’ না-করে ‘কী-বোর্ড’ করা হলো?

#subach

 

Leave a Comment

বিসিএস বাংলা: মঙ্গলকাব্য ও মনসামঙ্গল: একনজরে বাংলা সাহিত্য

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিসিএস বাংলা: মঙ্গলকাব্য ও মনসামঙ্গল: একনজরে বাংলা সাহিত্য

মনসামঙ্গল
সর্পের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনসার কাহিনী নিয়ে রচিত কাব্য মনসামঙ্গল কাব্য। ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের মতে, কমপক্ষে ৬২ জন কবি ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য রচনা করেছেন। নারায়ণ দেব, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপিলাই, দ্বিজ বংশীদাস, কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ, ষোড়শ শতকের কবি গঙ্গাদাস সেন, সপ্তদশ সতকের রামজীবন বিদ্যাভূষণ, বাণেশ্বর, জীবন মৈত্র প্রমূখ মনসামঙ্গল কাব্য ধারার উল্লেখযোগ্য কবি।

মনসামঙ্গল ধারার আদিকবি
কানা হরিদত্ত ছিলেন মনসামঙ্গল কাব্যের আদিকবি। চতুর্দশ শতকের প্রথম দিকে পূর্ববঙ্গে কবি কানা হরিদত্ত জন্মগ্রহণ করেন। পঞ্চদশ শতকের শেষভাগের কবি বিজয়গুপ্ত কানা হরিদত্তকে মনসামঙ্গল কাব্যের আদিকবি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আগামী প্রকাশনী

মনসামঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি
মনসামঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি নারায়ণ দেব। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার বোরগ্রামে পঞ্চদশ শতকের শেষভাগে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কাব্যের নাম ‘পদ্মপুরাণ’। কাব্যগ্রন্থটি তিন খ-ে বিভক্ত। তাঁকে মনসামঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি বলা হয়।

সুস্পষ্ট সনযুক্ত মনসামঙ্গল কাব্য
বাংলা সাহিত্যে সুস্পষ্ট সনযুক্ত মনসামঙ্গল কাব্যের প্রথম রচয়িতা বিজয়গুপ্ত। তিনি গৌড়েশ্বর সুলতান হুসেন শাহের আমলে ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেন। বরিশাল জেলার গৈলা গ্রামে কবি বিজয়গুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন। মনসামঙ্গল কাব্যের আরেক জন কবি বিপ্রদাস পিপিলাই। তার রচিত কাব্য ‘মনসাবিজয়’ ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

বিপ্রদাস পিপিলাই
বিজয়গুপ্তের সামসময়িক কবি বিপ্রদাস পিপিলাই। বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল রচনার এক বছর পর ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মনসাবিজয়’ কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন। কথিত হয় যে, বিপ্রদাস পিপিলাই স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে গৌড়ের সুলতান হুসেন শাহের আমলে ‘মনাসবিজয়’ কাব্য রচনা করেন।

দ্বিজ বংশীদাস
কবি চন্দ্রাবতীর পিতা দ্বিজ বংশীদাস সপ্তদশ শতকের শেষভাগে, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, তিনি ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য রচনা করেছিলেন। কাব্যে কবি দ্বিজ বংশী, বংশীধর, বংশীবাদন প্রভৃতি ভণিতা ব্যবহার করেছেন।

সূত্র: বাংলা সাহিত্য ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহা, ড. মোহাম্মদ আমীন, আগামী প্রকাশনী।

#subach

Leave a Comment

বাংলা সাহিত্যে প্রথম ও প্রধান: বিসিএস বাংলা: প্রিলি ও ভাইভা

ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলা সাহিত্যে প্রথম ও প্রধান: বিসিএস বাংলা: প্রিলি ও ভাইভা

গদ্য আছে এমন একটি পুরাণ
রামাই পণ্ডিত রচিত ‘শুণ্য পুরাণ’ গ্রন্থে কিছু গদ্য আছে। তবে গদ্য হলেও গদ্যগুলো অনেকটা ছড়ার মতো। তবু এগুলোকে বাংলা পুরাণের গদ্য বলা হয়।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম কাব্যগ্রন্থ
রঙ্গলালের ‘পদ্মিনী উপন্যাস’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। উল্লেখ্য রঙ্গলাল ওমর খৈয়ামের কবিতা রুবাইয়াতের বঙ্গানুবাদও করেছিলেন।

আলাওলের শেষ কাব্যগ্রন্থ
সেকান্দরনামা’ কবি আলাওলের শেষ কাব্যগ্রন্থ। এটি আলাওলের ষষ্ঠ গ্রন্থ। গ্রন্থটি নিজামী গঞ্জভির ফারসি গ্রন্থ ‘সেকান্দরনামা’রঅনুবাদ। আরাকানরাজ চন্দ্রসুধর্মার আমাত্য নবরাজ মজলিসের অভিপ্রায় ও আদেশে ১৬৭৩ (মতান্তরে ১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দ ) খ্রিষ্টাব্দে আলাওল গ্রন্থটি রচনা করেন। আলাওল বাংলা ও ব্রজবুলিতে বৈষ্ণব পদাবলিও রচনা করেছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দে লিখিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ
মাইকেল মধুসূদনের ‘তিলোত্তমা সম্ভব’ বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দে লিখিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ।

আগামী প্রকাশনী

আধুনিক জীবনের মহাকাব্য শ্রেষ্ঠ কাব্যোপন্যাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখেরবালি’ উপন্যাসকে আধুনিক জীবনের মহাকাব্য বলা হয়। ‘শেষের কবিতা’ তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যোপন্যাস।

রবীন্দ্র সংগীত প্রচার নিষিদ্ধকরণ
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ শে জুন পাকিস্তান সরকার রেডিও পাকিস্তান হতে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

বাংলা সাহিত্যে প্রথম তুলনামূলক কাব্য সমালোচক
রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায় (১৮১৭-১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দ ) রচিত ‘বাঙ্গালা কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ’ বাংলা সাহিত্যে প্রথম তুলনামূলক কাব্য সমালোচনা গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে ইংরেজি ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার তুলনামুলক আলোচনা করে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করা হয়েছে।

উনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি
ঊনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি কামিনী রায়। তাঁর প্রথম কাব্য ‘আলো ও ছায়া’।

বাংলা সাহিত্যের ছন্দের রাজা ছন্দের যাদুকর
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তকে বাংলা সাহিত্যের ছন্দের রাজা এবং ছন্দের যাদুকর বলা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে এ উপাধি প্রধান করেন।

সূত্র: বাংলা সাহিত্য ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ড. মোহাম্মদ আমীন, আগামী প্রকাশনী।

#subach

Leave a Comment

জাতীয় পতাকা বিধিমালা: বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

ড. মোহাম্মদ আমীন

জাতীয় পতাকা বিধিমালা: বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

জাতীয় পতাকা বিধিমালা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২ অনুযায়ী জাতীয় পতাকার সুনির্দিষ্ট আকার, আকৃতি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয়। ‘জাতীয় পতাকা’ গাঢ় সবুজ রঙের হবে এবং ১০:৬ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আয়তক্ষেত্রাকার সবুজ রঙের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত থাকবে। লাল বৃত্তটি পতাকার দৈর্ঘ্যেরে এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট হবে। পতাকার দৈর্ঘ্যরে নয়-বিংশতিতম অংশ হতে অঙ্কিত উলম্ব রেখা এবং পতাকার প্রস্থের মধ্যবর্তী বিন্দু হতে অঙ্কিত আনুভূমিক রেখার পরস্পর ছেদ

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিন্দুতে বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দু হবে। অর্থাৎ পতাকার দৈর্ঘ্যরে বিশ ভাগের বাম দিকের নয় ভাগের শেষ বিন্দুর ওপর অঙ্কিত লম্ব এবং প্রস্থের দিকে মাঝখান বরাবর অঙ্কিত সরল রেখার ছেদ বিন্দু হলো বৃত্তের কেন্দ্র। পতাকার সবুজ পটভূমি হবে প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট গ্রিন এইচ-২ আর এস ৫০ পার্টস এবং লাল বৃত্তাকার অংশ হবে প্রতিহাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ এইচ-২ আর এস ৬০ পার্টস।

পতাকা অর্ধনমিত
২১ শে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্য যে-কোন দিবসে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। প্রসঙ্গত, পতাকা অর্ধনমিত হবে খুঁটির ওপর থেকে পতাকার প্রস্থের সমান নিচে।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন
মহানবীর জন্ম দিবস বা ইদ-এ-মিলাদুন্নবি, ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস; ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস; সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোনো দিবসে বাংলাদেশের সর্বত্র সরকারি ও বেসরকারি ভবনসমূহে এবং বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের অফিস ও কনস্যুলারসমূহে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হয়।

বাসভবনে পতাকা উত্তোলনের অধিকারী
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, প্রতিমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, উপমন্ত্রী, উপমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, বিদেশে বাংলাদেশের কূটনীতিক এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারেন।

গাড়ি বা জলযানে পতাকা উত্তোলন
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং বিদেশে বাংলাদেশের কূটনীতিকবৃন্দ নিজেরা অবস্থানকালীন গাড়ি বা জলযানে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারেন।

ভবন, বাসস্থান, মোটরগাড়ি ইত্যাদিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন
প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও দপ্তর, যেমন রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রী ভবন, জাতীয় সংসদ ভবন ইত্যাদিতে কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হবে। সকল মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, হাইকোর্ট ভবন, জেলা আদালত ও সেসন জজের আদালত এবং বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার/কালেক্টর, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগার, থানা, শুল্ক ঘাঁটি এবং সময়ে সময়ে সরকারের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক এ ধরনের অন্যান্য ভবনে প্রতিটি কার্যদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ চ্যান্সারি ও দূতাবাসভবনে জাতীয় পতাকা উড্ডীন থাকবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, জাতীয় সংসদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, চীফ হুইপ, সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাস প্রধানদের সরকারি বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হবে। এদের প্রত্যেকে নিজস্ব গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন।

#subach

Leave a Comment

আমন্ত্রণ বনাম নিমন্ত্রণ: কোথায় কোনটি লিখবেন

ড. মোহাম্মদ আমীন

আমন্ত্রণ বনাম নিমন্ত্রণ: কোথায় কোনটি লিখবেন

সংস্কৃত আমন্ত্রণ (+√মন্ত্র্+অনশব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্ববান, নিমন্ত্রণ ও সম্বোধন এবং সংস্কৃত নিমন্ত্রণ (নি+ √মন্ত্র্+অনশব্দের আভিধানিক অর্থ দাওয়াত, ভোজনের আহ্বান, কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আহ্বান বা আমন্ত্রণ। কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর বঙ্গীয় শব্দার্থকোষেও উভয় শব্দের উৎস

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

অভিন্ন ক্রিয়মূল (মন্) নির্দেশ করা হয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, অভিধানে নিমন্ত্রণ ও আমন্ত্রণ শব্দের অর্থগত কোনো পার্থক্য নেই। তবে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে অনির্ধারিত কিছু সুক্ষ্ণ পার্থক্য রয়েছে। অনেকে মনে করেন, যে সকল দাওয়াত বা আহ্বানে আহ্বানকারীর পক্ষ থেকে ভূরি-ভোজের ব্যবস্থা থাকে তাকে নিমন্ত্রণ এবং যেখানে আহ্বানকারীর পক্ষ থেকে সাধারণত ভোজের ব্যবস্থা থাকে না বা মাঝে মাঝে থাকলেও তা ভূরিভোজ নয়- তাকে আমন্ত্রণ বলে। এ ব্যাখ্যা কিয়দংশ ঠিক হলেও পুরোপুরি ঠিক নয়।

সাধারণত ব্যক্তিগত পারিবারিক পর্যায়ে ছোটখাটো সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা অন্যান্য বিশেষ উৎসবসমূহে অভ্যাগতদের দাওয়াতের ক্ষেত্রে নিমন্ত্রণ শব্দটির অধিক ব্যবহার দেখা যায়। এ সকল দাওয়াতে সধারণত ভূরিভোজের ব্যবস্থা থাকে। অন্যদিকে বড়ো আকারের রাজনীতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াতের বেলায় আমন্ত্রণ শব্দটির অধিক ব্যবহার লক্ষণীয়। তবে এখানেও অনেক সময় ভূরিভোজের ব্যবস্থা না হলেও হালকা ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের অনেক আমন্ত্রণে ভূরিভোজের ব্যবস্থা থাকে। নিমন্ত্রণের আর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অভ্যাগতরা সাধারণত বিভিন্ন রকমের উপহার সামগ্রী নিয়ে আসেন, কিন্তু আমন্ত্রণের ক্ষেত্রে সাধারণত উপহার আনার রেওয়াজ নেই। আনা হলেও তাতে ব্যক্তি উদ্যোগের চেয়ে সমষ্টিগত বা আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ অধিক পরিলক্ষিত। নিমন্ত্রিত অতিথিদের আমন্ত্রিত অতিথিও বলা যায়। আমন্ত্রিত অতিথিদের অনেক সময় উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়, কিন্তু নিমন্ত্রিত অতিথিদের ক্ষেত্রে তা সাধারণত দেখা যায় না। যেমন : অনেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথিগণকে উপহারসামগ্রী প্রদান করা হয়। আমার এ ব্যাখ্যা সাধারণের জন্য, বিশেষজ্ঞদের জন্য আরো কিছু রয়েছে।

আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণ বিষয়ে কলিম খান রবি চক্রবর্ত্তী লিখেছেন, “আজকাল ইংরেজির প্রভাবে প্রতীকী (লোগো-সেন্ট্রিক) প্রথায় ‘আমন্ত্রণ’=Invitation, এবং নিমন্ত্রণ=Invitation; অর্থাৎ দুটো বাংলা শব্দ একই অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে । অথচ “বর্ণভিত্তিক-ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি” অনুযায়ী এই শব্দ-দুটিরই অর্থভেদ ছিল । ইংরেজির প্রভাবে আমরা এই শব্দদুটির বাকি অর্থগুলো ফেলে দিয়ে শুধু Invitation (‘ভোজনার্থ আহ্বান)-এ পরিণত করেছি ।আগে তা ছিল না । মন্ত্রণা করার জন্য ডাকলে সে-ডাককে বলা হত ‘আমন্ত্রণ’ এবং ‘মন্ত্র’ দেওয়ার জন্য ডাকলে, তেমন ডাককে বলা হত ‘নিমন্ত্রণ’ । ‘আমন্ত্রণে’ ‘মন্ত্রের’ আয়োজন ছিল, ‘নিমন্ত্রণে’

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

মন্ত্রের নিয়োজন ছিল । একালের মতো করে বললে বলতে হয় – মন্ত্রী যখন জেলায় জেলায় বন্যা-পরিস্থিতি বিষয়ে ‘মন্ত্রণা’ করার জন্য জেলাশাসকদের ডেকে পাঠান, সেটি ‘আমন্ত্রণ’ । কিন্তু যখন বন্যা-মোকাবিলার উপায় বা ‘মন্ত্র’ তিনি নিজেই ঠিক করে রেখেছেন, শুধু সেটি রূপায়ণের উদ্দেশ্যে জেলাশাসকদের বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যদি তিনি তাঁদের ডেকে পাঠান, সেটি ‘নিমন্ত্রণ’ ।

আর যখন তিনি (১) মন্ত্রণা করার জন্য ডেকে পাঠান এবং অবশেষে একটা মন্ত্রে উপনীত হয়ে, (২) সেই মন্ত্র রূপায়ণ করার নির্দেশও দান করেন (অর্থাৎ দুটো কাজই একসঙ্গে পালন করেন) ফেরত পাঠালে, তাকে ‘আমন্ত্রণ’ ও ‘নিমন্ত্রণ’ দুইই বলা যায় । আর ‘মন্ত্রী’ তো ‘মন্ত্রণা’ করবেনই । কেননা, ‘মন’-কে ত্রাণ করে যে তাকেই তো ‘মন্ত্র’ বলে । এবং সেই ‘মন্ত্রের ধারক ও বিকাশসাধনকারী’কেই তো ‘মন্ত্রী’ বলে । মন, মন্ত্র, মন্ত্রী, আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণ এই সব শব্দের ক্রিয়ামূল হলো ‘মন্‌’।”

শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্রের ভাষায়, “ আমন্ত্রণে মন্ত্র আসে, নিমন্ত্রণে মন্ত্র নির্গত হয়। এই দিক থেকে বিচার করলে ওরা পরস্পরের বিপরীত শব্দ। উভয় ক্ষেত্রে মন্ত্রনাই আসল, খাওয়া-দাওয়া গৌণ। তবে কথা হলো, খালি পেটে মন্ত্র ভালো কাজ করে না। আমার এক শিক্ষক মহাশয় বলতেন, ”Without eating there is no meeting.” সুতরাং আমন্ত্রণ আর নিমন্ত্রণ যাই হোক, সঙ্গে খাওয়াদাওয়াও হয়। যারা মন্ত্র নেওয়া বা দেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে খাওয়াটাকেই বেশি গুরুত্ত্ব দেন, তারা আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণকে সমার্থক শব্দ বলেও বিবেচনা করতে পারেন। তবে আমি বলব মন্ত্রের ব্যাপারটি ভুল গেলে চলবে না। আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণ শব্দে খাওয়ার ব্যাপারটিই বরং নেই, উভয় ক্ষেত্রে আ ও নি উপসর্গের সঙ্গে মন্ত্রণ শব্দটিই আছে। সুতরাং এখানে মন্ত্রকে ভুলে গেলে চলবে না। কেউ তা করলে ব্যাকরণবিদদের মন খারাপ হয়।”

প্রয়োগ : (১) আলোচন শেষ হওয়ার পর মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিমন্ত্রিত অতিথিবর্গকে চা পানের আমন্ত্রণ জানালেন। (২) রশিদ সাহেবের মেয়ের বিয়েতে তাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। (৩) শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। (৪) আমন্ত্রিত প্রধান অতিথিকে সম্মানস্বরূপ এক সেট গ্রন্থ প্রদান করা হয়েছে।

উৎস:

  • কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।
  • পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

মত বনাম মতো; হত হতো; ভাল ভালো: কোথায় কোনটি লিখবেন এবং কেন লিখবেন

#subach

Leave a Comment

চোখ মারা, পকেট মারা: গণপিটুনি এবং জামিন অযোগ্য অপরাধ

ড. মোহাম্মদ আমীন

চোখ মারা, পকেট মারা এবং গণপিটুনি

বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত এবং জামিল চৌধুরী সম্পাদিক “বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান”-এ “চোখ মারা” শব্দের একটাই অর্থ এবং সেটি হচ্ছে, “এক চোখ বন্ধ করে অশালীন ইঙ্গিত করা”। তার মানে, ইঙ্গিত অন্ধকারে করলেও এমনকি নিজে নিজে করলেও অশালীন হয়ে যাবে। আমি আমার মেয়েকে শিশুকালে ‘চোখ মারা’ দিয়ে আদর দিতাম, কাছে ডাকতাম; রাস্তায় কখনও কখনও শিশু দেখলে ওই লক্ষে ‘চোখ মারা’ দিতাম; এখন দিই নাতি-নাতনিদের। জামিল চৌধুরীর অভিধান মতে, এসব অশালীন। তাহলে“চোখ মারা” কি বন্ধ করে দিতে হবে? তা যদি হয় তো চোখ রেখে লাভ কী? 

 অন্যের অলক্ষে কাউকে কিছু ইঙ্গিত করার জন্য ‘চোখ মারা’ বহুল প্রচলিত একটা মধুর, শালীন এবং ধ্রুপদী বিষয়। এমন করেননি এমন কেউ নেই। জামিল চৌধুরী নিজেও করেছেন, এখন বুড়ো বয়সে এসে এগুলোকেও অশালীন করে দিলেন! এজন্য অনেক ভাষাবিদ ও বৈয়াকরণের কাছে “বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান” একটি “অবিধান”।পৃথিবীতে এমন কোনো খ্যাত লোক নেই, যারা চোখ মারেননি, কিন্তু এজন্য তাদের অশালীনত্বে পড়তে হয়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওমাবা আর জর্জ বুশের চোখ মারা তো ভূবনজয়ী। কই তাদের কি এজন্য অশালীন অপবাদ পেতে হয়েছে? তার মানে, “ চোখ মারা”কে কেবল অশালীনত্ব দিয়ে প্রকাশ করা সমীচীন হয়নি।

পৃথিবীর অন্যান্য ভাষায় ‘চোখ মারা’ কথার অনেকগুলো অর্থ; যেমন : বাঁকা চাউনি, কটাক্ষ করা, কামাতুর বা লালসাপূর্ণ চাহনি, শিশুদের প্রতি আদুরে ইঙ্গিত, অন্যের অলক্ষে কাউকে কিছু ইঙ্গিত করা, ইশারা হানা, শিশুদের সঙ্গে আনন্দ করা, প্রেমময়তা,অনুভূতির মুগ্ধ প্রকাশ, বিহ্বল হয়ে পড়ার ইঙ্গিত, প্রেমের আহ্বান ইত্যাদি ছাড়াও আরও অনেক বিষয় যুক্ত দেখা যায়। বাংলায় কেন ‘চোখ মারা’ কথাটাকে কেবল অশালীন ইঙ্গিতে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা জানি না। বাঙালিরা বুঝি ক্রমশ বুড়ো, অথর্ব, নপুংসক, একরোখা এবং বৈচিত্র্যহীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দশ-পনের বছর আগেও “চোখ মারা” ছিল অনেক মজার কাণ্ডকারখানায় ভরপুর একটি বহুমুখী প্রৈমিক বিষয়। “চোখ মারা” না-থাকলে তো চলচ্চিত্রই হতো না, চোখেরই বা কী প্রয়োজন? জামিল চৌধুরীর অর্থ অনুযায়ী আকাশ লক্ষ করে “চোখ মারা”ও অশালীন, কোথায় যাবেন এখন? চোখ খুলে ঘরে রেখে যান।

একসময় “পকেট মারা” অপরাধ ছিল, সাধারণত “চোখ মারা” নয়। ‘চোখ মারা’ দিয়েই শুরু হতো প্রেম। এখন অবশ্য প্রেমের সুচনার জন্য ‘চোখ মারা’র প্রয়োজন পড়ে না, সোজা ‘শরীর মারা’ দিয়ে শুরু করার ইচ্ছা ও সুযোগ প্রবল। তাই “চোখ মারা” এখন অপরাধ; নীতিমতো- পকেট মারার চেয়ে জঘন্য। অবশ্য মেয়েদের

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

“চোখ মারা” অপরাধ নয়, কেবল মেয়েদেরকেই “চোখ মারা” অপরাধ। “চোখ মারা” নিয়ে কত কবিতা হয়েছে, গান হয়েছে, সিনেমা হয়েছে, কিন্তু কোনো মামলা হয়নি। এখন “চোখ মারা” নিয়ে মামলাও হয় বিস্তর, অহরহ।

চিরন্তন বাংলা সিনেমায় “চোখ মারা” একসময় অশীতিপর বুড়োবুড়িকেও জাগিয়ে তুলত, কিছুক্ষণের জন্য হলেও। এখন মানুষ সভ্য হচ্ছে, যত সভ্য হচ্ছে তত বেশি চোখ ফুটছে। যত বেশি চোখ ফুটছে ‘‘চোখ মারা’’ তত ভয়ঙ্কর অপরাধে পরিণত হচ্ছে। এখন হাওয়ায় “চোখ মারা” নয়, সোজা লক্ষ শরীর। তাই ‘চোখ মারা’ এখন পকেট মারা, বারি মারা, লাথি মারা, হাতি মারা, গুলি মারা, ধাক্কা মারা , এমনকি কখনও কখনও মানুষ মারার চেয়েও মারাত্মক। যদি কাজটি মেয়েদের, বিশেষ করে যুবতী, আরও বিশেষ করে সুন্দরী যুবতী, আরও বিশেষ-বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত ধনেমানে শ্রেষ্ঠ যুবতী-সুন্দরী মেয়েদের লক্ষ করে বর্ষিত হয়।

সাবধান, আগে যতই চোখ মারুন না কেন, এখন কিন্তু ভুলেও চোখ মারবেন না। প্রয়োজন হলে, চোখ দুটো অন্ধ করে দিন, নিজেকে মেরে ফেলুন। চোখ মারালে যে-কোনো মুহূর্তে নারী নির্যাতন হয়ে যেতে পারে, মামলা হয়ে গেলে নব্বই দিনের আগে জামিন নেই। অতএব, আপনিই যাই মারুন, মেয়েদেরকে “চোখ মারা” থেকে বিরত থাকুন। মেয়েরা আপনাকে যতই “চোখ মারা” দিক না কেন। কী অভাগ্য আমাদের ভাগ্য! আমরা আমাদের আচরণ দিয়ে ‘চোখ মারা’র মতো রোমান্টিক একটা বিষয়কে জামিন-অযোগ্য অপরাধ বানিয়ে ফেলেছি।

ড্রাইভিং, ড্রাইভিং-লাইসেন্স: ড্রাইভিং-লাইসেন্স সনদ নয় কেন

#subach

Leave a Comment

চার: চার সংখ্যার জাদু, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে চার সংখ্যার প্রভাব

ড. মোহাম্মদ আমীন

চার: চার সংখ্যার জাদু, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে চার সংখ্যার প্রভাব

গণিতে চার (৪) অঙ্কটি বেশ মজার। এটিই প্রথম স্বপরিচিত ক্ষুদ্রতম বর্গ সংখ্যা। ৪-এর অর্ধাংশ ২ হচ্ছে ৪-এর বর্গমূল। ৪ নামের অঙ্কটির অর্ধেককে যোগ করলে যা হয়, গুণ করলেও তা হয়, এমনকি বর্গ করলেও। অন্য অঙ্ক বা সংখ্যার সঙ্গে মেশার গুণ তার প্রবল। এজন্য চারকে মিশুকে অঙ্ক বলা হয়। ভূগোলে চার-এর প্রভাব সীমাহীন। কেবল চারটা দিক দিয়ে বিশ্বের পূর্ণ বিস্তৃতি ও পরিচয় নির্দেশ করা যায়। বাংলা ভাষাতেও চার মিশুকে শব্দ হিসেবে পরিচত। ‘চার’ শব্দটি বাংলায় চৌ হয়ে কত আর্য-অনার্যের সঙ্গে মিলিত হয়ে কত শব্দ-সন্তানের যে জন্ম দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।

সংস্কৃত ‘চতুর্‌’ শব্দ থেকে উদ্ভূত চৌ সাধারণভাবে বিশেষণ। এর অর্থ চার। কিন্তু বাংলায় ‘চৌ’ শব্দটির স্বাধীন ব্যবহার নেই। এটি অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চার-প্রাধান্যজ্ঞাপক নানা জাতের বৈচিত্র্যময় শব্দ গঠন করে। বৈয়াকরণগণ ‘বৌ’ শব্দের ঘোমটা খুলে ‘বউ’ করে দিতে সক্ষম হলেও ‘চৌ’ শব্দের ঘোমটায় হাত দেওয়ার সাহস পাননি। যদিও আধুনিক ‘বৌ’ ঘোমটা পরে না বলে, ‘বউ’ বানানই সংগত। ‘চৌ’ অন্য শব্দের সঙ্গে বসে কীভাবে এবং কত রকমের  বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ক্রিয়াবিশেষণ গঠন করে তা দেখা যাক :

  1. চৌকশ: হিন্দি ‘চৌকশ’ শব্দের অর্থ – বিশেষণে চারদিকে দৃষ্টি আছে এমন, চতুর, সব বিষয়ে অভিজ্ঞ।
  2. চৌকা: সংস্কৃত চতুষ্ক হতে আগত চৌকা শব্দের অর্থ : বিশেষণে চার কোণবিশিষ্ট, বিশেষ্যে চার ফোটাযুক্ত তাস, উনুন, চুলা প্রভৃতি।
  3. চৌকাঠ: বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা চৌকাঠ শব্দের অর্থ চৌবাহুবিশিষ্ট যে কাঠামোর সঙ্গে দরজা লাগানো হয়। সাধারণত এই কাঠামোটি কাঠের হয়ে থাকে। তাই শব্দটি চৌকাঠ।
  4. চৌকি: সংস্কৃত চতুষ্কী থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌকি’ শব্দের অর্থ চারটি পায়াযুক্ত খাট, তক্তপোশ; প্রহরী, ফাঁড়ি, কর আদায়ের ঘাঁটি। চৌকি হতে ‘চৌকিদার। বাংলা চৌকি ও ফারসি দার মিলিতি হয়ে চৌকিদার। এর অর্থ চারদিক যে পাহারা দেয়, প্রহরী, কর আদায়কারী প্রভৃতি।
  5. চৌকুনে, চৌকো চৌকোণা : বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত এই শব্দগুলোর অর্থ চারটি কোণ আছে এমন, চারকোণবিশিষ্ট, চতুষ্কোণ।
  6. চৌখণ্ড: বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা চৌখণ্ড শব্দের অর্থ চারভাগে বিভক্ত, চারটি চালবিশিষ্ট। চৌখণ্ড থেকে চৌখণ্ডিয়া। চৌখণ্ডিয়া শব্দের অর্থ বিশেষণে চার পায়াযুক্ত, বিশেষ্যে চারটি পায়াযুক্ত পিঁড়ি।
  7. চৌখুপি: শব্দটি বাংলা। এর অর্খ বিশেষণে চারটি খোপবিশিষ্ট, চেককাটা এবং বিশেষ্যে চৌকো ছককাটা নকশা।
  8. চৌখুরি: শব্দটি বাংলা এবং অর্থ বিশেষ্যে চারটি খুর বা পায়াযুক্ত কাঠের আসন, চৌকি।
  9. চৌগুণ, চৌগুনা, চৌগুনো : তিনটি শব্দই বাংলা এবং বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শব্দগুলো সমার্খক এবং অর্থ হচ্ছে : চারগুণ, চর্তুগুণ। যেমন : তিন এর চারগুণ বারো।
  10. চৌগপ্পোঁ: বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা চৌগপ্পোঁ শব্দের অর্থ চেয়ালের দাড়ি দুদিকে ভাগ করে গোঁফের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন। এরূপ দাড়ি দেখতে চার এর মত লাগে।
  11. চৌঘাট: বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা ‘চৌঘাট’ শব্দের অর্থ চার দিকের ঘাট; চারঘাট, চতুর্দিক।
  12. চৌঘুড়ি: বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা ‘চৌঘুড়ি’ শব্দের অর্থ চার ঘোড়ায় টানা গাড়ি।
  13. চৌচাকা, চৌচাক্কা : সংস্কৃত চতুশ্চক্র হতে উদ্ভূতি ‘চৌচাকা’ ও ‘চৌচাক্কা’ শব্দের অর্থ বিশেষণে চারটি চাকাবিশিষ্ট।
  14. চৌচাপট, চৌচাপড় : বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা ‘চৌচাপট’ ও ‘চৌচাপড়’ শব্দের অর্থ চতুর্দিকের স্থান, চতুর্দিকের বিস্তার, সমচতুর্ভুজ প্রভৃতি।
  15. চৌচাপটে: বাংলা ‘চৌচাপটে শব্দের অর্থ ক্রিয়াবিশেষণে চারদিকে, যথাযথভাবে, সর্বতোভাবে এবং বিশেষণে পূর্ণমাত্রায়।
  16. চৌচালা: বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা ‘চৌচালা শব্দের অর্থ চারটি চালবিশিষ্ট।
  17. চৌচির: চৌচির বাংলা শব্দ। এর অর্থ বিশেষণে চারটি খণ্ডে বিভক্ত, খণ্ডবিখণ্ড।
  18. চৌঠা: সংস্কৃত তুতর্থ থেকে উদ্ভূত বাক্যে বিশেষ্য ও বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌঠা’ শব্দের অর্থ মাসের চতুর্থ দিন, মাসের চার তারিখ (চৌঠা বৈশাখ)।
  19. চৌতলা: বাংলা ‘চৌতলা’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে চতুর্থ তলা এবং বিশেষণে চারটি তলবিশিষ্ট।
  20. চৌতারা: সংস্কৃত চত্বর থেকে উদ্ভূত বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌতারা’ শব্দের অর্থ চত্বর, অঙ্গন, উঠান। বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ফারসি ‘চৌতারা’ শব্দের অর্থ মেঝের ‍ওপর খাড়া করে রেখে চেয়ারে বসে টোকা দিয়ে বাজানো হয় এমন বেহালাসদৃশ বৃহদাকার তারযন্ত্র।
  21. চৌথ: সংস্কৃত ‘চতুর্ ‘ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌথ’ শব্দের অর্থ এক চতুর্থাংশ, চারভাগের একভাগ, প্রজার উপস্বত্বের চতুর্থ ভাগ; মারাঠা শাসক কর্তৃক আদায়কৃত পরাজিত রাজা বা কৃষকের উৎপাদিত ফসলের এক চতুর্থাংশ বা তার সমপরিমাণ মূল্য।
  22. চৌদিক, চৌদিশ : সংস্কৃত ‘চতুর্দিক থেকে উদ্ভূত ‘চৌদিক’ এবং সংস্কৃত ‘চতুর্দিশ’ শব্দ থেকে উদ্ভূত ‘চতুর্দিশ’ শব্দের অর্থ যথাক্রমে সবদিক ও চারটি দিক। এটি বিশেষ্য।
  23. চৌদুলি: বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা ‘চৌদুলি শব্দের অর্থ চর্তুদোলা বহন করার বৃত্তি, চতুর্দোলা বহনকারী জাতিবিশেষ।
  24. চৌদোল : বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘চর্তুদোল’ শব্দ থেকে আগত ‘চৌদোল’ শব্দের অর্থ সামনে দুজন এবং পিছনে দুজন মোট চারজনের কাঁধে বহন করা হয় এমন ডুলি, পালকি, শিবিকা।
  25. চৌদোলা: সংস্কৃত ‘চতুর্দল’ শব্দ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌদোলা শব্দের অর্থ চারজনে কাঁধে বহন করা হয় এমন ডুলি, পালকি, শিবিকা।
  26. চৌধুরি: বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হিন্দি ‘চৌধুরি’ শব্দের অর্থ নৌ, হস্তী, অশ্ব ও পদাতিরূপ চার শক্তির অধিকারী সামন্ত রাজা, গ্রামের মোড়ল, পদবিবিশেষ।
  27. চৌপথ: বাংলা ‘চৌ’ ও সংস্কৃত ‘পথ’ শব্দের মিলনে ‍সৃষ্ট ‘চৌপথ’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে চারটি পথের সংযোগস্থল, চৌরাস্তা, চৌমাথা।
  28. চৌপদ: সংস্কৃত ‘চতুষ্পদ’ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌপদ’ শব্দের অর্থ চার পা-বিশিষ্ট, চতুষ্পদ। চৌপদ থেকে চৌপদী।
  29. চৌপদী: সংস্কৃত ‘চতুষ্পদী’ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌপদী’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে চার চরণবিশিষ্ট ছন্দ এবং বিশেষেণ চার পা-বিশিষ্ট, চতুষ্পদ
  30. চৌপর, চৌপহর, চৌপ্রহর: সংস্কৃত চতুঃপ্রহর থেকে উদ্ভূত ‘চৌপর’, ‘চৌপহর’ ও ‘চৌপ্রহর’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে চার প্রহরকাল, ক্রিয়াবিশেষণে সর্বদা, সর্বক্ষণ, দিনরাতব্যাপী।
  31. চৌপল: বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হিন্দি ‘চৌপল’ শব্দের অর্থথ চারটি কোণবিশিষ্ট।
  32. চৌপাটি, চৌপাঠি, চৌপাড়, চৌপাড়ি, চৌবাড়ি : সংস্কৃত ‘চতুষ্পঠী’ হতে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থথ চতুর্বেদ বা চার-বেদ অধ্যয়নের স্থান, টোল, যে পাঠশালায় সংস্কৃত পড়ানো হয়।
  33. চৌপায়া: সংস্কৃত ‘চতুষ্পদী’ থেকে উদ্ভূত ‘চৌপায়া’ শব্দের অর্থ বিশেষণে চারটি পায়াবিশিষ্ট; বিশেষ্যে চৌকি, খাট।
  34. চৌপাশ: সংস্কৃত ‘চতুপার্শ্ব’ থেকে উদ্ভূত এবং বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত এ শব্দের অর্থ চারদিক।
  35. চৌবাচ্চা: বাক্যে বিশেষ্য হিসেব ব্যবহৃত ফারসি চৌবাচ্চা শব্দের অর্থ চারকোণবিশিষ্ট জলাধারা।
  36. চৌবে: সংস্কৃত ‘চতুর্বেদ ‘ থেকে উদ্ভূত ‘চৌবে’ শব্দের অর্থ বিশেষণে চারটি বেদে অভিজ্ঞ এমন, চৌবেদি এবং বিশেষ্যে পদবিশেষ।
  37. চৌমহলা: বাংলা ‘চৌমহলা’ শব্দের অর্থ বিশেষণে চারটি মহলে বিভক্ত এমন এবং বিশেষ্যে চারমহলা বাড়ি।
  38. চৌমোহনা: বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত, বাংলা ‘চৌমোহনা শব্দের অর্থ চারটি নদীর সংগমস্থল।
  39. চৌযুগ: সংস্কৃত ‘চতুর্যুগ’ থেকে উদ্ভূত ‘চৌযুগ’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে পুরাণে কল্পিত চারটি যুগ(সত্য ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি) এবং ক্রিয়াবিশেষণে চিরকাল, সর্বকাল।
  40. চৌয়ারি : হিন্দি চৌয়ারি শব্দের অর্থ বিশেষ্যে চার চালবিশিষ্ট ঘর, চারদুয়ারি ঘর এবং বিশেষেণে চৌচালা।
  41. চৌরাস্তা: বাংলা ‘চৌ’ এবং ফারসি ‘রাস্তা’ শব্দের মিলনে সৃষ্ট এবং বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌরাস্তা’ শব্দের অর্থ চারটি রাস্তার সংযোগস্থল, চৌমথা।
  42. চৌরস: সংস্কৃত চতুরশ্র থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌরস’ শব্দের অর্থ চারকোনা, চওড়া, প্রশস্ত, সমান, মসৃণ প্রভৃতি।
  43. চৌরি: বাংলা চৌরি শব্দের অর্থ বিশেষ্যে চৌচালা ঘর এবং বিশেষণে চৌচালা।
  44. চৌশাল: সংস্কৃত চতুঃশাল হতে আগত চৌশাল শব্দের অর্থ বিশেষ্যে চতুষ্কোণ উঠান ঘরে নির্মিত অট্টালিকাশ্রেণি এবং বিশেষণে চক-মিলানো।
  45. চৌশিঙা: বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা চৌশিঙা শব্দের অর্থ বিশেষণে চারটি শিং আছে এমন এবং বিশেষ্যে চার শিং বিশিষ্ট হরিণ।
  46. চৌহদ্দি: বাংলাে ‘চৌ’ ও ফারসি ‘হদ্দ’ শব্দের মিলনে গঠিত ও বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘চৌহদ্দি’ শব্দের অর্থ চারদিকের সীমানা, চতুঃসীমা, চার সীমা।

ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল

#subach

Leave a Comment

বেশি ও বেশী: কখন কোনটি

ড. মোহাম্মদ আমীন

বেশি ও বেশী: কখন কোনটি

 ‘বেশি’ ও ‘বেশী’ ভিন্নার্থক শব্দ। বাংলায় উচ্চারণগত দীর্ঘস্বর নেই। তাই দীর্ঘস্বরের জন্য উচ্চারণের কোনো পরিবর্তন হয় না। এজন্য বানান ভিন্ন হলেও ‘বেশি’ ও

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

‘বেশী’ উভয় শব্দের  উচ্চারণ অভিন্ন। তবে উচ্চারণ অভিন্ন হলেও উভয় শব্দের অর্থ ভিন্ন। অনেকে শব্দদুটোর বানান গুলিয়ে ফেলেন।

বেশি ফারসি শব্দ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ফারসি বেশি শব্দের অর্থ অধিক এবং বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বেশিশব্দের অর্থ প্রাচুর্য। জগজিৎ সিং গেয়েছেন :  বেশি কিছু আশা করা ভুল, বুঝলাম আমি এতদিনে—।  আরো কয়েকটি প্রয়োগ দেখুন : 

তরকারিতে লবণ বেশি হলে কী করবেন? 
বেশি দিন আগের কথা নয়।
বেশি কথা বলা ভালো নয়। 

অন্যদিকে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত “ – বেশী” শব্দের অর্থ বেশধারী। তবে বাংলায় ‘‘-বেশী’’ শব্দটি স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয় না। অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়। যেমন:

ভদ্রবেশী লোকটাকে চিনতে পারলে এমন ক্ষতি হতো না।
বেশি লোকই ছদ্মবেশী।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

বিদ্যুদায়ন বিদ্যুতায়ন; বৈদ্যুতিক; বিদ্যুদায়িত বিদ্যুতায়িত

স্ত্রীবাচক শব্দে পুরুষাধিপত্য

ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল

প্রেসক্রিপশনে RX কেন লেখা হয়

#subach

Leave a Comment

প্রেসক্রিপশনে RX কেন লেখা হয়

. মোহাম্মদ আমীন

প্রেসক্রিপশনে RX কেন লেখা হয়

প্রেসক্রিপশন বা চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রের সূচনায় চিকিৎসকগণ সাধারণ ‘Rx’  লিখে থাকেন। কেন এটি লেখা হয় এ নিয়ে কয়েকটি মতবাদ প্রচলিত আছে। কয়েকটি মতবাদ নিচে দেওয়া হলো।

প্রথম মতবাদটি জুপিটার বা বৃহস্পতি মতবাদ নামে পরিচিত। এই মতবাদিগণের মতে, Rx হচ্ছে বৃহস্পতি বা জুপিটার (jupitar) গ্রহের

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

জ্যোর্তিবৈদ্যিক(Astrological) চিহ্ন।এই গ্রহটি রোমান দেবতাদের রাজা এবং সবচেয়ে ক্ষমতাবান। তাই প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লেখার পূর্বে Rx চিহ্নটি লেখা হয়। যাতে প্রেসক্রিপশনে বিবৃত পথ্যের ওপর তথা রোগীর উপশমে দেবরাজ জুপিটার শুভদৃষ্টি দেন। কথিত হয়, Rx চিহ্ন থাকলে ওই প্রেসক্রিপশন অতি কার্যকর হয়।

দ্বিতীয় মতবাদ, অনেকে বলেন, প্রাচীন একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে RX প্রতীকটি এসেছে। এই শব্দটি হলো Recipe, যার অর্থ, ‘আপনি নিন বা আপনি গ্রহণ করুন’। প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে ‘উটচাট’ বা ‘হোরাসের চোখ’ নামে এক ধরনের কবচের প্রচলন ছিল। হোরাস ছিলেন স্বাস্থ্য দেবতা। ‘হোরাসের চোখ’ নামে যে কবচ প্রচলিত ছিল তা অনেক রোগ প্রতিরোধ করত বলে বিশ্বাস করা হতো। এ কবচের প্রাথমিক আকৃতি অনেকটা হেরাসের চোখের মতো ছিল। তবে এটা নানান জিনিস দিয়ে তৈরি করা হতো। এভাবে এটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে এবং কালক্রমে ব্যবস্থাপত্রে চলে আসে। তবে চিহ্নটি ব্যবস্থাপত্রে ব্যবহৃত হওয়ার পেছনে দেবতার অনুগ্রহের ওপর বিশ্বা্সই যে অন্যতম নিয়ামক ছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

তৃতীয় মতবাদকে জেসাস মতবাদ বলা হয়। এই মতানুসারে, Rx = R = Refer to এবং X = Jesus Christ, অর্থাৎ Rx = Refer to Jesus Christ। এর অর্খ হলো‘ জিশুর (যিশুর) নামে পড়া শুরু করুন’ বা জিশুর নামে গ্রহণ করা শরু করুন বা জিসুর নামে শুরু করুন। ‘X’ দ্বারা জেসাস ক্রাইস্ট বা জিশু খ্রিস্টকে বোঝানো হয়। যেমন Xmas দ্বারা বোঝানো হয় ক্রিসমাস। উল্লেখ্য, X দিয়ে গ্রিক অক্ষর ‘Chi’ কে নির্দেশ করে। এর দ্বারা মূলত গ্রিক ভাষায় সংক্ষেপে ক্রাইস্ট বা যিশুকে বোঝানো হয়ে থাকে।

চতুর্থ মতবাদটি যৌক্তিকার্থ মতবাদ নামে পরিচিত। চিকিৎসাশাস্ত্রের অভিধান মতে, Rx ল্যটিন শব্দ যার অর্থ উপায়, কৌশল, পদ্ধতি এবং লওয়া বা গ্রহণ করা (recipe ও to take) প্রভৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়।

এ বিষয়ে আর একটি মতবাদ আছে। এটাকে অনেকে আধুনিক মতবাদ বল থাকেন। তাদের মতে, Rx মানে Report extended। শরীরের রোগ নির্ণয়পূর্বক এমন একটি ‘এক্সটেন্ডেড’ প্রতিবেদন করা হয় যেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ বর্ণিত থাকে। এজন্য প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লেখার সূচনায় Report extended-এর পরিবর্তে সংক্ষেপে Rx লেখা হয়

বিদ্যুদায়ন বিদ্যুতায়ন; বৈদ্যুতিক; বিদ্যুদায়িত বিদ্যুতায়িত

স্ত্রীবাচক শব্দে পুরুষাধিপত্য

প্রেসক্রিপশনে Rx লেখা হয় কেন; শুবাচ?

#subach

Leave a Comment