ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে: পুরো ছড়া: ছড়ার ইতিবৃত্ত

ড. মোহাম্মদ আমীন

ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে: পুরো ছড়া: ছড়ার ইতিবৃত্ত

ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো

ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো
বর্গী এল দেশে,
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে।।

ধান ফুরালো, পান ফুরলো
খাজনার উপায় কী?
আর টা দিন সবুর কর
রসুন বুনেছি।।

ধনিয়া পিয়াজ গেছে পচে
সইরষা ক্ষেতে জল,
খরাবন্যায় শেষ করিল
বছরের ফসল।।

ধানের গোলা, চালের ঝুড়ি
সব শুধু আজ খালি,
সবার গায়ে ছেঁড়া কাপড়
শত শত তালি।।

গোরুছাগল, হাঁসমুরগিমাছ
যা কিছু  মোর ছিল
নদীর টানে বাঁধটি ভেঙে
সবই ভেসে গেল।।

বারেতে পাঁচ গাঁয়েতে
দিছি আলুর সার
আর কটা দিন সবুর করো
মশাই জমিদার।।

ছড়াটির লেখক কে তা আমি জানি না। আমার পিতামহ গোলাম শরীফের অনেক পুরানো একটা ডায়েরিতে পেয়েছি।  এটি তাঁর লেখা কি না তাও আমি জানি না।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

তবে তিনি ছড়া লিখতেন। তিনি ছিলেন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার আরবি ভাষার শিক্ষক। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের বন্ধু আত্মীয়। আহমদ ছফা, আহমদ হোসেন প্রমুখ ছিলেন তাঁর ভক্ত। তাঁর একটা ডায়েরিতে বিভিন্ন লোকালয়ে প্রচলিত কিছু ছড়া, কবিতা, প্রবাদ, প্রবচন, ধাঁধাঁ রয়েছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ছড়াটি তার পুরানো ডায়েরি হতে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে প্রকাশ করা হয়েছিল। পুরানো ডায়েরি ছিল বলে শব্দের বানান শব্দসজ্জায় কিছুটা ভুল হয়েছিল। এখন তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় প্রকাশ করা হলো। সেসময় ছড়াটি শুবাচের জনালায় যযাতি হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার পর শুবাচি খুরশেদ আহমেদ মন্তব্য জানালায় লিখেছিলেন,‘ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো/ বর্গী এল দেশেছড়াটির মধ্য দিয়ে বাংলার ইতিহাস কথা কয়! এই ছড়াটি :

) ১৭৪০এর দশকে বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী গ্রামাঞ্চলে অশ্বারোহী মারাঠা বর্গিদের পৌনঃপুনিক অতর্কিত আক্রমণ, লুণ্ঠন সন্ত্রাস থেকে গ্রামবাঙলার অধিবাসীদের রক্ষা করায় বাংলার তৎকালীন নবাব আলিবর্দি খাঁএর পূর্ণ ব্যর্থতার নিদর্শন;
) নবাবের পক্ষে পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক শাসকদের পক্ষে খাজনা আদায়ে জমিদারের নানান বাহিনীর চাপপ্রয়োগ অত্যাচারের নিদর্শন;
) সেকালেও কৃষকের ভাগ্যে খরাবন্যাজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিদ্যমানতার নিদর্শন;
) সেকালের গ্রামবাসীদের দারিদ্রের নিদর্শন;
) খাজনা দেওয়াসহ জীবনধারণের জন্য আলু রসুন চাষসহ বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলার তৎকালীন কৃষকদের অব্যাহত সংগ্রামের, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখায় তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতাররেজিলিয়েন্সেরনিদর্শন; এবং
) ছড়ার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে বর্গি, খাজনা, খরাবন্যা, চাষবাস জীবনসংগ্রামের বিষয়ে অবগত দীক্ষিত করে তোলার ঐতিহ্যের নিদর্শন।

ছড়াটি পড়ে প্রবীণ শুবাচি বিধুভূষণ ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, “কিন্তু এতো কিছু থাকতে রসুন দিয়েই কেন খাজনা শোধ করতে হবে সেই ব্যাখ্যা কেন কেউ দিচ্ছেন না বুঝতে পারছি না। নিশচয়ই এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে।আসলেই আছে। এখন পিঁয়াজের দাম প্রচণ্ড বেড়ে গেছে। রাতে মানুষ পিঁয়াজের খেত পাহারা দেয়। ছড়াটি যখন লেখা হয়ে তখন হয়তো এই সময়ের পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মতো রসুনের দামও বেড়ে গিয়েছিল।

#subach

Leave a Comment

রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কূটনৈতিক সমসাময়িক প্রশাসনিক প্রাশাসনিক 

ড. মোহাম্মদ আমীন

রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কূটনৈতিক সমসাময়িক প্রশাসনিক প্রাশাসনিক 

রাজনৈতিক অর্থনৈতিক: কেন্দ্র+ইক = কৈন্দ্রিক, কেশ+ ইক = কৈশিক, গিরি+ইক = গৈরিক, চিত্ত+ ইক= চৈত্তিক, চৈত্রী+ ইক= চৈত্রিক, চীন+ইক = চৈনিক, জীবন+ইক = জৈবনিক, বিষয়+ইক = বৈষয়িক, বিচার+ ইক= বৈচারিক; তেমনি নীতি +ইক = নৈতিক। সুতরাং,

  • রাজ + (নীতি + ইক) = রাজ+ নৈতিক = রাজনৈতিক।
  • আবার রাজনীতি+ ইক = রাজনীতিক। যেমন ঃ মাস+ইক = মাসিক, সাহিত্য+ইক = সাহিত্যিক।
  • সেভাবে; অর্থ + (নীতি+ ইক) = অর্থ+ নৈতিক = অর্থনৈতিক।
  • আবার অর্থনীতি + ইক= আর্থনৈতিক। যেমন : বর্ষ + ইক = বার্ষিক।

অতএব, রাজনৈতিক, রাজনীতিক, অর্থনৈতিক, আর্থনীতিক সবকটি শুদ্ধ।

কূটনৈতিক : উৎপাত +ইক =ঔৎপাতিক, উৎসর্গ+ইক= ঔৎসর্গিক, উত্তরপদ+ইক = ঔত্তরপাদিক, ওদন+ইক = ঔদনিক, উদর+ইক = ওদরিক, উদ্‌বাহ+ইক =

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ঔদ্‌বাহিক, ‍উদ্ধার+ইক = ঔদ্ধারিক, উপকূল+ইক= ঔপকূলিক, উপাচার+ইক = ঔপাচারিক, উপদেশ+ইক = ঔপদেশিক, উপন্যাস+ইক = ঔপন্যাসিক, উপনিবেশ+ ইক = ঔপনিবেশিক, উপমা+ইক = ঔপমিক, উপায়+ইক= ঔপয়িক, ‍উপসর্গ+ইক= ঔপসর্গিক। সে হিসেবে কূটনীতি + ইক = কৌটনীতিক হওয়ার কথা, কিন্তু অভিধানে এমন শব্দ আমি পাইনি। অভিধানে পায়, কূটনৈতিক। কূট শব্দের সঙ্গে নৈতিক যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে কূটনৈতিক। অর্থাৎ কূট + নীতি+ ইক = কূট + নৈতিক = কূটনৈতিক। লিখুটন কূটনৈতিক, কূটনীতিক নয়।

সমসাময়িক না কি সামসময়িক : সমসময় (একই সময়) + ষ্ণিক (ইক) = সামসময়িক। এর অর্থ একই সময়ের বা সমকালীন। ব্যাকরণ অনুযায়ী সামসময়িক শুদ্ধ, তবে সমসাময়িক অধিক প্রচলিত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানেও সমসামিয়ক শব্দটাকে সামসময়িক শব্দের অশুদ্ধ প্রচলিত ‍রূপ নির্দেশ করা হয়েছে। অতএব লিখুন, সামসময়িক।

প্রশাসন প্রশাসনিক ‘প্রশাসন’ শব্দের সঙ্গে ‘ইক’ প্রত্যয় যুক্ত করলে হয়, ‘প্রশাসন+ ইক = প্রাশাসনিক’। যেমন : সময় + ইক = সাময়িক, বর্ষ+ ইক = বার্ষিক, প্রত্যহ + ইক = প্রাত্যাহিক, নন্দন+ইক = নান্দনিক, সমষ্টি + ইক = সামষ্টিক ইত্যাদি। এ হিসেবে ‘প্রাশাসনিক’ শব্দটি শুদ্ধ। ‘শাসন’ শব্দের সঙ্গে ইক প্রত্যয় যুক্ত করলে হয়, ‘শাসন + ইক =শাসনিক’। যেমন : মাস+ ইক = মাসিক, কাল + ইক = কালিক, আত্মন্ + ইক = আত্মিক, জাল+ ইক = জালিক ইত্যাদি। এভাবে শাসন শব্দের সঙ্গে ‘ইক’ প্রত্যয় যোগে প্রাপ্ত ‘শাসনিক’ শব্দের সঙ্গে ‘প্র’ উপসর্গ যোগ করলে হয় ‘প্র+ শাসনিক= প্রশাসনিক’।

অতএব, ব্যাকরণগতভাবে ‘প্রশাসনিক’ এবং ‘প্রাশাসনিক’- দুটোই শুদ্ধ। ‘সমসাময়িক’ এবং ‘সামসময়িক’ শব্দদ্বয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

পটল বনাম পটোল: পটল পটোল তুলেছে 

ড. মোহাম্মদ আমীন

পটল বনাম পটোল: পটল পটোল তুলেছে 

‘পটল’ ও ‘পটোল’ উভয় বানানই শুদ্ধ তবে অর্থ ভিন্ন। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, তৎসম পটল (√পট্+অল) শব্দের অর্থ পরিচ্ছেদ, অধ্যায়, বিভাগ, অংশ, সমূহ, রাশি, ছাদ, চাঁদোয়া, চোখের ছানি প্রভৃতি। অন্যদিকে, একই অভিধানমতে, তৎসম পটোল(=√পট্+ওল) শব্দের অর্থ হচ্ছে, ভারতীয় উপমহাদেশে চাষ করা হয় এবং বসন্তকালে ফোটে এমন একলিঙ্গ সাদা ফুল ও দীর্ঘায়ত মসৃণ সবুজাভ ফল, যা সব্জিরূপে রেঁধে খাওয়া হয় বা তার ভেষজগুণসম্পন্ন বর্ষজীবী রীরুৎশ্রেণির লতানে উদ্ভিদ, পাণ্ডুফল, রাজফল ইত্যাদি।

অর্থের মতো উভয় শব্দের ব্যুৎপত্তিও ভিন্ন। অভিধানকারগণ সব্জিফল অর্থে ‘পটোল’ শব্দটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এই পার্থক্য তেমন কেউ মানেন

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

বলে মনে হয় না। ‘পটোল’ বানান খুব একটা প্রচলিতও নয়। তাই জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস ও হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পটোল তোলা’ ও ‘পটল তোলা’ উভয় কথাই স্বীকার করে নিয়েছেন। মণীশ ঘটকের একটি বহুপঠিত গল্পগ্রন্থের নাম ‘পটলডাঙার পাঁচালী’। কিন্তু বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সবজি অর্থে কেবল ‘পটোল’ বানানই প্রমিত। তাই এখন সব্জি অর্থে আর পটল লেখার সুযোগ নেই। লিখতে হবে ‘পটোল। তেমনি, লিখতে হবে ‘পটোল তোলা’ ও ‘পটোলচেরা’।

’পটোল তোলা’ একটি ব্যঙ্গার্থক বাক্যভঙ্গি। এর অর্থ মরে যাওয়া। ‘পটোল’ শব্দের অনেকগুলো অর্থ আছে; যেমন: রাশি, অধ্যায়, সমূহ, চোখেরপাতা, একপ্রকার চক্ষূরোগ, ঘরের চাল ও একটি সুস্বাদু সব্জি বা আনাজ। তবে ‘পটোল তোলা’ বাক্যভঙ্গির ‘পটোল’ কিন্তু সুস্বাদু সব্জি বা আনাজ নয়। তা যদি হতো তাহলে প্রতিদিন হাজার হাজার কৃষক, যারা পটোল তুলেন তারা কেউ জীবিত বাড়ি ফিরতেন না। অনেকে বলেন, ‘পটোল তোলা’ বাক্যভঙ্গির ‘পটোল’ অর্থ চোখের পাতা; যা মৃত্যুর পর উপরের দিকে উঠে থাকে। অতএব ‘পটোল তোলা মানে চোখের পাতা উপরের দিকে উঠে থাকা; অর্থাৎ মারা যাওয়া। আবার কেউ কেউ মনে করেন, ’পটোল তোলা’ বাক্যভঙ্গির ‘পটোল’ অর্থ ঘরের ছাউনি বা চাল। অতএব ‘পটোল তোলা’ বাক্যভঙ্গির অর্থ ‘বাস উঠানো’ বা মরা/ মারা যাওয়া। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে বলা হয়েছে- একবার ফলনের পর পটললতা মরে যয়ে বলে ব্যাঙ্গে ‘পটোল তোলাা’ অর্থ মরে যাওয়া। অনেকে এই ব্যাখ্যটি সর্বজনীন ও যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করেন।

পটল পটোল তুলেছে: চার-পাঁচ বছর আগেও বাজারে পটল ছিল। বহুবার পটল খেয়েছি, অনেককে পটল তুলতেও (পটল তোলা) দেখেছি। সেকালের পটল ছিল চর্বিহীন ষোড়শীর মতো চিকন আর নিখাদ সবুজে পটলচেরা মোহন। কেবল তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করত। এখন বাজারে পটল পাওয়া যায় না, পটোল

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

পাওয়া যায়। এরা অতি ধনীর আদুরে কন্যার চর্বিভরা পেটের মতো বেঢপ। পটোল, পটলের চেয়ে মোটা। বাংলা একাডেমির বদৌলতে ‘পটল’ এখন ‘পটোল’; যা আগের চেয়ে মোটাসোটা। সব্‌জির এমন দুর্দিনে এমন একটি বরকতজনক কাজ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। আগে ‘পটলচেরা’ চোখের বাঁকা চাহনির চন্দ্রমুখী বদন আর চোখে পড়ে না। এখন চারিদিকে কেবল নাদুসনুদুস ‘পটোলচেরা’ চোখ যেন পটোল ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে।। ‘পটলচেরা’ চোখ ‘পটোল’ থেকে ‘পটোলচেরা’ হওয়ার পর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারি পটল বেচারা লজ্জায় পটোল তুলেছে ( ইন্নালিল্লাহে— রাজেউন)। এই মোটা পটোল খেয়ে বাংলার চিকন গরু মোটা ‘গোরু’ হয়ে ‘বড়’ গলা ছেড়ে ‘বড়ো’ গলায় হাম্বা হাম্বা করছে।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান ( ১ ফেব্রুয়ারি. ২০১৬) অনুযায়ী ‘গরু’ বানান ‘গোরু’ ‘ব্যবহারিক’ বানান ‘ব্যাবহারিক’ [ বাংলা ব্যাকরণমতে ‘ব্যবহারিক’ বানান ভুল ছিল।]। ‘উপলক্ষ’ বানান ‘উপলক্ষ্য’ [ লক্ষ্য থেকে উপলক্ষ্য, তাই ‘উপলক্ষ’ বানান প্রমিত নয়]। ‘পটল’ বানান ‘পটোল’ এবং ‘খ্রিস্টাব্দ’ বানান ‘খ্রিষ্টাব্দ’ লিখতে হবে। ব্যবহারিক, সমসাময়িক ও বিচারিক এখন ভুল বানান। শব্দগুলোর শুদ্ধ বানান হবে যথাক্রমে ‘ব্যাবহারিক’, ‘সামসময়িক’ ও ‘বৈচারিক’। শুবাচের অনেক প্রবীণ সদস্যও ‘ব্যাবহারিক’ শব্দে আকার দেন না। আকারহীন ‘ব্যাবহারিক’ শুদ্ধ নয়, তবে প্রচলিত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘ব্যবহারিক’ পরিত্যাজ্য। তাই লিখুন :ব্যবহার + ইক = ব্যাবহারিক, সমসময় + ইক = সামসময়িক এবং বিচার + ইক = বৈচারিক। যেমন লিখে থাকি : অর্থ + ইক = আর্থিক, সময় + ইক = সাময়িক; দিন + ইক = দৈনিক প্রভৃতি।

  • উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
  • উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

 

 

Leave a Comment

বাসা বাড়ি ঘর

ড. মোহাম্মদ আমীন

বাসা বাড়ি ঘর

‘বাড়ি’ ও ‘বাসা’ দুটোই বাসস্থান। অভিধানেও এমন উল্লেখ আছে। তবে উভয় শব্দের আভিধানিক অর্থে কিছু পার্থক্য আছে। মানুষের ক্ষেত্রে যা বাসা তা বাড়ি হলেও পাখিদের বাসস্থান সবসময় বাসা। তাদের বাসস্থানকে বাড়ি বলা হয় না। অতএব একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেল, পাখিদের বাসস্থানকে বাসা বলা হয়। ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী ‘বাড়ি’ অর্থ, ‘বাসস্থান’, ‘আদিনিবাস’। সমার্থক: ঘর। এবং ‘বাসা’ অর্থ,(১)‘পৈতৃক ভিটা ভিন্ন বাসস্থান’, ‘শহরের ভাড়া

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

করা বাড়ি’ এবং (২) ‘কুলায়’, ‘নীড়’। অভিধানিক অর্থ বিচারে পাখির বাসস্থানকে কোনোরূপ সংশয় ছাড়া ‘বাসা’ বলা যায় কিন্তু মানুষের বাসস্থানকে নিঃসশয়ে বাসা বলা যায় না। মানুষের জন্য বাসা হচ্ছে পৈতৃকভিটা ছাড়া অন্যকোনো বাসস্থান বা আদিনিবাস। এ হিসেবে শুধু শহরের ভাড়া করা বাড়ি নয়, কেউ তার আদিনিবাস বা পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে অন্যকোথাও বাসস্থান নির্মাণ করে বসবাস করলে সেটিও বাসা হয়ে যায়। আবার অভিধান অনুযায়ী বাড়ি হচ্ছে, আদিনিবাস, পৈতৃক বাসস্থান এবং নিজের বাড়ি। হয়তো এজন্য বাড়ির মালিক অন্যকে ভাড়া-দেওয়া বাসস্থানকে সাধারণত বাড়ি বলেন। তবে নিজে যে বাসস্থানে থাকে সেটি স্বমালিকানাধীন হলেও সাধারণত ‘বাসা’ বলেন।

অভিধানে যা-ই লেখা থাকুক না কেন, এখন শব্দ দুটোর প্রায়োগিক অর্থ শুধু আভিধানিক অর্থে সীমাবদ্ধ নেই। বড়ো বড়ো আবাসন এলাকাসমূহে নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্বিচারে বাসা নম্বর বা বাড়ি নম্বর উল্লেখ করা হচ্ছে। শহরাঞ্চলে লোকমুখে এবং দাপ্তরিক দলিলপত্রেও অভিধানের মতো ‘বাসা’ ও ‘বাড়ি’র কোনো পার্থক্য লক্ষ করা যায় না। এখানে যা বাসা, তাই বাড়ি। আসেলে, শহুরেদের অধিকাংশ বাসস্থানই পাখির নীড়ের মতো ক্ষুদ্র, অস্থায়ী এবং অনিরাপদ। এসব বাসা পাখির বাসার মতোই, আজ এখানে কাল ওখানে, বস্তি তো পুরো শহরই – হয়তো এজন্য শহরে মানুষের বাস্থানকে বলা হয় বাসা।

শুবাচি খুরশেদ আহমেদের ভাষায়, “বাড়ি এবং বাসা এ দুটির মধ্যে পার্থক্য ঠিক ততটুকু, যতটুকু পার্থক্য নিচের দুটি প্রশ্নে আপনার জবাবের মধ্যে : আপনার বাড়ি কোথায়? আপনার বাসা কোথায়?” তবে গ্রামাঞ্চলে ‘বাড়ি’ এবং শহরাঞ্চলে ‘বাসা’ শব্দটির প্রচলন বেশি। যাই হোক, ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী বাসা অর্থ, (১)পৈতৃক ভিটা ভিন্ন বাসস্থান, (২) শহরের ভাড়া করা বাড়ি এবং (৩) পাখির বাসস্থান।

#subach

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment

ধারণ শব্দে মূর্ধন্য-ণ; ধরন শব্দে নেই কেন

ড. মোহাম্মদ আমীন

ধারণ শব্দে মূর্ধন্য-ণ; ধরন শব্দে নেই কেন

‘ধরন’ শব্দে দন্ত্য-ন কিন্তু ‘ধারণ’ শব্দে মূর্ধন্য-ণ, কিন্তু কেন? শুবাচ গ্রুপে এবং শ্রেণিকক্ষে অনেকে এর কারণ জানতে চেয়েছেন। বিষয়টি সংক্ষেপে বলে ফেলার মতো নয়। কেননা, এ বিষয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। তাই একটু বিস্তৃত ব্যাখ্যার দাবি রাখে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধিকাংশ শিক্ষক এবং বৈয়াকরণ মনে করেন, ণত্ববিধির কারণে ‘ধরন’ বানান ‘মূর্ধন্য-ণ’ মুক্ত। বাংলা বানানে সাধারণত শুধু তৎসম শব্দে ‘মূর্ধন্য-ণ’ বজায় আছে। তদ্ভব, অর্ধতৎসম, দেশি ও বিদেশি শব্দে /মূর্ধন্য-ণ/ এর প্রয়োগ নেই। /ধরন/ শব্দটি তৎসম নয়; সে জন্য এর বানানে /দন্ত্য-ন/।

আর একদল বলেন, ‘সংস্কৃত /ধৃ/ ধাতুর সঙ্গে /অন/ যোগে গঠিত /ধরন/ শব্দটি বরাবরই তৎসম। ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে’ও শব্দটিকে তৎসম

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

বলা হয়েছে। ওই অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত এবং পদ্ধতি, প্রণালি, বর্ষণবিরতি, আকৃতি, ভঙ্গি, চালচলন প্রভৃতি অর্থ দ্যোতক /ধরন/ শব্দটি সংস্কৃত; যার ব্যুৎপত্তি— /√ধৃ+অন/। সুতরাং, ণত্ববিধি অনুযায়ী শব্দটির বানান হওয়া উচিত /ধরণ/। তারপরও শব্দটির বানান /ধরন/ হলো কেন?

সুভাষ ভট্টাচার্য আধুনিক বাংলা প্রয়োগ অভিধানে লিখেছেন, “সংস্কৃতে ধরণ শব্দের একটি অর্থ ধারণ। শব্দটির এই অর্থে প্রয়োগ বাংলায় হয় না। অর্থাৎ শব্দটি অর্থের দিক থেকে তৎসম নয়। আর এই কারণেই ণত্ববিধান এতে প্রয়োগ করার কারণ নেই।”

এবার /ধরন/ শব্দটির জন্মবৃত্তান্ত  এবং বানানে ‘দন্ত্য-ন’ এর ঐতিহাসিক যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করা যাক। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাশের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’ গ্রন্থে /ধরন/ শব্দটি নেই, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষেও শব্দটি পাওয়া যায় না। অথচ এই দুটি অভিধান সর্বপণ্ডিতস্বীকৃত বিশুদ্ধ বাংলা শব্দকোষ। এই দুই গ্রন্থে কেবল /ধরণ/ শব্দটি স্থান পেয়েছে। তার মানে, ওই দুটি অভিধান প্রণয়নকালে বাংলায় বর্তমানে প্রচলিত অর্থে /ধরন/ শব্দটির অস্তিত্ব ছিল না। সংগত কারণে বলা যায়, /ধরণ/ শব্দটিই /ধরন/ হয়ে বাংলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অথবা /ধরণ/ শব্দ থেকে নতুন অর্থে /ধরন/ শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে।  যেটিই হোক না কেন, শব্দটি (ধরন) ব্যুৎপত্তিগতভাবে সংস্কৃত হলেও অর্থের উৎস বিবেচনায় তৎসম নয়। তাই  বৈয়াকরণগণ /ধরন/ বানানে  ‘দন্ত্য-ন’ সিদ্ধ বলে মনে করেছেন।

এখান থেকে আমরা আর একটি বিষয় পাই এবং সেটি হলো : ভিন্ন অর্থ প্রদানের কারণেও কোনো শব্দ তার তৎসমত্ব হারাতে পারে।  আসলে /ধরণ/ শব্দের দুটি রূপ। একটি হলো /ধরণ/ এবং অন্যটি /ধরন/। /ধরণ/ শব্দের অর্থ ধরে রাখা, ধারণকারী, ধরণি এবং /ধরন/ শব্দের অর্থ প্রকার, রকম, পদ্ধতি ইত্যদি। উপর্যুক্ত আলোচনায় এটিই প্রতীয়মান হয় যে, /ধরন/ শব্দটি উৎসগতভাবে সংস্কৃত হলেও অর্থগতভাবে সংস্কৃতকে অনুসরণ না-করে অন্য অর্থ ধারণ করায় তার তৎসমত্ব হারিয়ে ফেলেছে। বিষয়টাকে অনেকটা পিতামাতার অবাধ্য ত্যাজ্যপুত্রের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ত্যাজ্যপুত্র ত্যাজ্য হলেও পিতামাতার নাম হতে চ্যুত হতে পারে না। তাই ‘ধরন’ সংস্কৃত হতে চ্যুত হলেও অভিধানে উৎস হিসেবে সংস্কৃত পরিচয় রেখে দেওয়া হয়েছে। এখানেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

কথা— ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না: কথার অপর নাম অযথা

#subach

 

 

 

Leave a Comment

টিকা ঠিকা; টিকাদার ও ঠিকাদার

ড. মোহাম্মদ আমীন

টিকা ঠিকা; টিকাদার ও ঠিকাদার

বাংলা ক্লাসে এক  শিক্ষার্থী প্রশ্ন করলেন, “টিকা শব্দের অর্থ কী?”  সরাসরি এবং এককথায় তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘টিকা’ শব্দের চারটি পৃথক ভুক্তিতে চারটি ভিন্ন অর্থ পাওয়া যায়। শিক্ষার্থী কোন ‘টিকা’র অর্থ জানতে চেয়েছে তা আমি কী করে বুঝব? বাক্যে পদ হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়া পর্যন্ত কোনো শব্দের সঠিক ও স্পষ্ট অর্থ জানানো সম্ভব নয়। কেননা একই বানানের শব্দ বাক্যে ভিন্নার্থে ব্যবহারের  অনেক নজির রয়েছে। বললাম,

টিকা পরে টিকা হাতে আসে টিকাদার
টিকা নিলে টিকে  যাবে বলে ডাক্তার

উপরের দুই লাইনের ছড়াটায় চারটি টিকা আছে এবং একটি আছে টিকাদার। চার ‘টিকা’র অর্থ চার রকম। বাক্যে শব্দকে বসিয়ে নির্দিষ্ট করে না দিলে উত্তরদাতা কোন টিকা বুঝবে? আসলে বাক্যে না বসলে শব্দের অর্থ সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব হয় না।  কারণ,  একটি শব্দের একাধিক ভিন্নতাদ্যোতক অর্থ থাকতে পারে। টিকাতে যেমন হয়েছে :

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

টিকা যখন সংস্কৃত গুটিকা শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়ে বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ — রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সৃষ্টির জন্য দেহে প্রতিষেধক বীজ প্রয়োগ। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় vaccination. বাংলা ‘টিকা’ এবং ফারসি ‘দার’ এর মিলনে সৃষ্ট ‘টিকাদার’ শব্দের অর্থ প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত কর্মী।তবে ‘ঠিকাদার’ অন্য বিষয়।

টিকা যখন সংস্কৃত ‘তিষ্ঠন’  থেকে উদ্ভূত হয়ে বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন এর অর্থ : থাকা, অবস্থান করা; তিষ্ঠানো (টিকে থাকা), বজায় থাকা ( ধোপে টিকা), স্থায়ী হওয়া (জামার রংটা টিকে গেল), জীবিত থাকা (রোগিটা শেষপর্যন্ত টিকে গেল) প্রভৃতি।

টিকা যখন দেশি এবং বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন শব্দটির অর্থ – হুঁকোর তামাকে আগুন দেওয়ার জন্য ভাতের মাড়ের সঙ্গে কাঠকয়লার গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি রোদে শুকানো চাকতিবিশেষ)।

টিকা যখন সংস্কৃত তিলক শব্দ থেকে উদ্ভূত এবং বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন টিকা শব্দের অর্থ- কপালের টিপ, তিলক, রাজচিহ্ন।

এবার আমার বর্ণিত দু-লাইনের ছড়ায় বর্ণিত চার ‘টিকা’র অর্থ আপনারাই  বলতে পারবেন।

ঠিকাদার: বাংলা ঠিকা ও ফারসি দার শব্দের সমন্বয়ে গঠিত ঠিকাদার অর্থ—(বিশেষ্যে) যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চুক্তিপত্রে বর্ণিত শর্তানুসারে অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ কোনো পণ্য সরবরাহ বা কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ইংরেজিতে— contractor.

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

নেত্রকোণা না কি নেত্রকোনা

ড. মোহাম্মদ আমীন

 নেত্রকোণা না কি নেত্রকোনা

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘কোণ’ শব্দের অর্থ (১) পরস্পর মিলিত দুটি সরলরেখার মধ্যবর্তী স্থান, কোনা; (২) দুই পার্শ্বের মিলনস্থান (ঘরের কোণ), (৩) সূক্ষ্ণ প্রান্ত (আঁখিকোণ), (৪) অস্ত্রাদির অগ্রভাগ (ছুরির কোণ), (৫) খুঁট (কাপড়ের কোণ), (৬) গৃহাভ্যন্তর, অন্তঃপুর প্রভৃতি।

অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘কোনা’ শব্দের দুটি পৃথক ভুক্তি পাওয়া যায়। প্রথম ভুক্তিমতে, সংস্কৃত ‘কোণ’ থেকে উদ্ভূত ‘কোনা’

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

শব্দের অর্থ  বিশেষ্যে প্রান্ত, ধার (কোনাকুনি), এবং বিশেষণে কোণযুক্ত, কোণবিশিষ্ট প্রভৃতি। দ্বিতীয় ভুক্তি অনুযায়ী ‘কোনা’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে (১) তিনশত পানপাতার গুচ্ছ, (২) ধান মাপর পাত্র, (৩) ঘরের চাল ধরে রাখার জন্য মাটিতে পোঁতা খুঁটি প্রভৃতি। তবে দ্বিতীয় ভুক্তির অর্থগুলো আলোচ্য বর্ণনায় প্রাসঙ্গিক নয়। বর্ণিত ‘কোণ’ ও ‘কোনা’ শব্দের অভিধার্থ হতে দেখা যায়, ‘কোণ’ শব্দের একটি অর্থ কোনা। সুতরাং ‘কোণ’ ও ‘কোনা’ ক্ষেত্রবিশেষে সমার্থক। তবে ‘কোণ’ তৎসম এবং ‘কোনা’ অতৎসম শব্দ। এবার দেখা যাক, নেত্রকোণা না কি নেত্রকোনা। অভিধানে ‘কোণ’ শব্দ পাওয়া যায়, কিন্তু ‘কোণা’ শব্দ পাওয়া যায় না। কিন্তু ‘কোনা’ শব্দ পাওয়া যায়, যা ‘কোণ’ শব্দের সমার্থক।

এ আলোচনা থেকে বলা যায়, অভিধার্থ মতে ‘নেত্রকোণ’ হতে পারে, কিন্তু নেত্রকোণা হতে পারে না। কারণ, কোণা’ শব্দটির কোনো অভিধার্থ নেই। অধিকন্তু, অতৎসম শব্দের বানানে সাধারণত মূর্ধন্য-ন বসে না। অতএব, অভিধার্থ বিবেচনায় ‘নেত্রকোনা’ হওয়াই যুক্তিযুক্ত। যদিও সংস্কৃত ‘নেত্র’ শব্দের সঙ্গে অতৎসম ‘কোনা’ যুক্ত হওয়াটা কিছুট অস্বাভাবিক। কিন্তু আলোচ্য নাম বর্ণনায় নেত্রকোনা শব্দটির উৎপত্তিতে সংস্কৃত বা তৎসম-অতৎসম কোনো বিবেচনা ছিল না। কেন ছিল না তা নেত্রকোনা জেলার নামকরণ বিবেচনা করলে বোঝা যায়। এখন দেখা যাক, নামকরণ ইতিহাস বিবেচনায় জেলার নাম হিসেবে সার্বিক বিবেচনায় ‘নেত্রকোনা’ নামটি কতটুকু যৌক্তিক।

নেত্রকোনা হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা। একসময় এটি থানা এবং মহকুমা ছিল। ইংরেজ আমলে ইংরেজদের কাছে এলাকাটি ‘নাটোরকোনা’ নামে পরিচিত ছিল। যার অপভ্রংশ নেত্রকোনা। এটি তৎসম নয়। নেত্রকোনা থানা সদর মগরা নদীর বাঁকে অবস্থিত। নদীর বাঁক স্থানীয় ভাষায় নদীর কোনা নামে পরিচিত। মগরা নদীর কোনায় এলাকাটি অবস্থিত ছিল। তাই স্থানীয় লোকজন এলাকাটিকে ‘নদীর কোনা’ নামে অভিহিত করে। যা আস্তে আস্তে নদীরকোনা> নতেরকোনা> নেতেরকোনা>নেতরকোনা এবং অবশেষে নেত্রকোনা নামে স্থিতি পায়। নেত্রকোনা নামকরণের আর একটি প্রবাদ নেত্র প্রবাদ নামে পরিচিত। কথিত হয় মগড়া নদীর যে বাঁকে এলাকাটি গড়ে উঠে সেটি এক সময় অনেকটা নেত্র বা চোখের কোনার মত ছিল। তাই লোকজন মজা করে এলাকাটিকে নেত্রের কোনা নামে ডাকত। যা আস্তে আস্তে  ‘নেত্রকোনা’ নামে স্থিতি পেয়ে যায়। সুতরাং ব্যাকরণ, অভিধান এবং নামকরণ ইতিহাস প্রভৃতি বিবেচনায় ‘নেত্রকোনা’ নামই যৌক্তিক।

#subach

Leave a Comment

জেনে নিন আপনার নামের অর্থ

ড. মোহাম্মদ আমীন

জেনে নিন আপনার নামের অর্থ

আমি বাংলা বানান শিখি, শেখাই; পড়ি এবং পড়াই। প্রমিত বাংলা বানান নিয়ে গবেষণা করা আমার শখ, বলা যায় নেশা।  শ্রেণিকক্ষে, সভা সেমিনারে  আমাকে প্রায়শ একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় — ‘আমীন’ বিদেশি শব্দ। আপনিই বলে থাকেন বিদেশি শব্দে ‘ঈ-কার’ হয় না। তো, আপনার নামের বানানে ‘ঈ-কার’ কেন? বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানান-বিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম কী  হবে সেটি ওই নাম যারা রাখে বা ধারণ করে তাদের উপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠানের নামের

বানান নিয়ে প্রশ্ন তোলা গেলেও ব্যক্তির নামের বানান নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রমিত বানানবিধি অনুযায়ী অর্থহীন। যদিও আমার নাম রাখার সময় আমি বর্তমান

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

সময়ের মতো অভিজ্ঞানের অধিকারী হলে হয়তো বলতাম, আমার নামের বানানে দীর্ঘ ‘ঈ-কার’ দিও না, ‘হ্রস্ব ই-কার’ দাও। ‘আমীন’ ব্যক্তিনাম না-হয়ে শব্দ হলে বাংলা বানানে ‘ঈ-কার’ ভুল হতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিনামের ক্ষেত্রে নয়। এবার আসে দ্বিতীয় প্রশ্ন, আপনার নামের অর্থ কী? উত্তরে আমি বলতাম, “আমি শুধু আমার নয়, পৃথিবীর সবার নামের অর্থ বলতে পারি।”  

প্রকৃতপক্ষে, আমিই আমার নামের অর্থ। আমার নাম, আমার পরিচায়ক। তাই ব্যক্তিনামের কোনো আক্ষরিক অর্থ নেই। আমার নাম অদ্বিতীয়, যেমন আমি অদ্বিতীয় এবং পৃথিবীতে আমি ছাড়া আমার সত্তায় অধিষ্ঠিত আর কোনো আমি ‘আমীন’ নেই। বাবা-মা, পূর্বপুরুষ, ডিএনএ প্রভৃতি বিবেচনায় আমি বিশ্বের এক অদ্বিতীয় সত্তা। তাই আমীন শব্দের অর্থ আমি আমীন, অন্য কিছু নয়, অন্য কেউ নয়।  তবে ‘মোহাম্মদ/মুহাম্মদ ’ ও ‘ আমীন/ আমিন’ শব্দের অর্থ আছে। এগুলোর অর্থ অভিধানে পাওয়া যায়, কিন্তু তা শব্দ হিসেবে, কারো নাম হিসেবে নয়। আমীন নামের অর্থ মেনে নিলে পৃথিবীর সব আমীন আমি ‘আমীন’ হয়ে যাবে।

ব্যক্তিনাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব এবং অদ্বিতীয় প্রত্যয়। ওই ব্যক্তিকে প্রকাশ এবং চিহ্নিত করার জন্যই কেবল নাম রাখা হয়। তাই ব্যক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ওই ব্যক্তি ছাড়া নামের কোনো  অভিধার্থ থাকে না, থাকা উচিতও নয়। তাহলে আমাদের পাড়ার বড়ো ভাই নিউটন আর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কারক বিজ্ঞানী নিউটন অভিন্ন হয়ে যাবে। নন্না মিয়ার ছেলে আজাদ ‘ফ্রিডম’ শব্দে অনূদিত হয়ে,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আজাদ হয়ে যাবে। ব্যক্তিই ব্যক্তিনামের অর্থ এবং ব্যক্তিনাম কেবল একজন ব্যক্তিকেই শনাক্ত করে। তাই আমিই আমার নামের অর্থ। আমার নামই আমার পরিচায়ক। সংগত কারণে আমার নামের কোনো অভিধার্থও নেই। অভিধার্থ নেই বলে ব্যক্তিনামের কোনো ভাষান্তর  হয় না। অভিধার্থ থাকলে আইনস্টাইন-এর বাংলা নাম হতো একটি পাথর। কেননা ‘আইন’ মানে একটি এবং ‘স্টাইন’ মানে পাথর। kohl মানে বাধাকপি। নামের যদি অর্থ থাকত, তাহলে ‘ kohl’ অনূদিত হয়ে বাঁধাকপি হয়ে যেত।  সেক্ষেত্রে জার্মানির চ্যান্সেলর ‘হেলমুট কোল’ হয়ে যেতেন জার্মানির বাঁধাকপি।

শব্দার্থের অভিধানে শেক্সপিয়র,  সক্রেটিস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কারো নামের কোনো অর্থ পাওয়া যায় না। চরিতাভিধানে তাঁদের নামের পাশে যে বর্ণনা থাকে, তাতে তাঁদের পরিচয়, কর্ম, কৃতিত্ব প্রভৃতি বিধৃত থাকে। ব্যক্তির নাম সংশ্লিষ্ট জনের একান্ত নিজস্ব এবং অদ্বিতীয় প্রত্যয়। এর অর্থ ওই ব্যক্তিকে প্রকাশের জন্য, চিহ্নিত করার জন্যই কেবল রাখা হয়। তাই কাউকে ‘আপনার নামের অর্থ কী?’ প্রশ্ন করা সমীচীন বলে মনে হয় না। বরং বলা যেতে পারে “আপনার নাম যে শব্দ/ শব্দগুচ্ছ দিয়ে গঠিত সে শব্দ/ শব্দগুচ্ছের অর্থ কী?”

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

মোগল মুগল এবং মুঘল মোঘল: কোনটি শুদ্ধ কোনটি প্রমিত

ড. মোহাম্মদ আমীন

মোগল মুগল এবং মুঘল মোঘল: কোনটি শুদ্ধ কোনটি প্রমিত

মোগল কী? বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, মঙ্গোলিয়া থেকে বাবরের নেতৃত্বে ভারতে আগত সাম্রাজ্য স্থাপনকারী জাতিবিশেষ। একই অভিধানে উল্লেখ আছে, মঙ্গোলিয়ার অধিবাসীকেও মোগল বলা হয়। অর্থাৎ ‘মোগল’ হচ্ছে মঙ্গোলিয়ার অধিবাসী বা মঙ্গোলিয়া থেকে আগত ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনকারী একটি জাতি। ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন : বাবর; তিনি হুমায়ুনের পিতা এবং আকবরের পিতামহ। মঙ্গোলিয়া, পূর্ব এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। যার রাজধানী উলানবাটোর। মঙ্গোলিয়ার উত্তরে রাশিয়া; দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিমে গণচীন। মঙ্গোলিয়ার বেশির ভাগ লোক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।

মোগল শব্দটিকে মুগল, মুঘল, মোঘল প্রভৃতি নামে লিখতে দেখা যায়। ইংরেজি বানান (mughal) এর জন্য অনেকে শব্দটিতে ‘ঘ’ ব্যবহার করেন। আসলে কোনটি প্রমিত বানান? বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ‘মোগল’ই ইংরেজি ‘mughal’ শব্দের একমাত্র প্রমিত বানান। এর কোনো বিকল্প বানান নেই। এই অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত তুর্কি ‘মোগল’ শব্দের অর্থ মঙ্গোলিয়া থেকে বাবরের নেতৃত্বে ভারতে আগত সাম্রাজ্য স্থাপনকারী জাতিবিশেষ এবং মোঙ্গলিয়ার অধিবাসী। এবার ‘মোঙ্গল’ শব্দের অর্থ কী তা দেখা যাক। এবং দেখা যাক, মোগলাই কী জিনিস। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ফারসি ‘মোগল’ শব্দ থেকে ‘মোঙ্গল’ শব্দর উদ্ভব। ‘মোঙ্গল’ হচ্ছে এশিয়ার একটি জাতি। মোঙ্গলিয়ার অধিবাসীদেরও মোঙ্গল বলা হয়।

মোগল ছাড়াও অভিধানে মোগলাই বলে একটি শব্দ পাওয়া যায়। এর অর্থ: মোগলসুলভ বা মোগলের মতো। ‘মোগলাই’ শব্দের পরে পরোটা বসালে হয় ‘মোগলাই পরোটা’- এ শব্দ জোড়টির সঙ্গে মোগলদের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানা যায় না। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে — পুর দেওয়া পরোটা বিশেষ। অনেকে মনে করেন, ‘মোগলাই পরোটা’র সঙ্গে মোগলদের সম্পর্ক আছে। বাবর ডিমের পুর দেওয়া পরোটা খুব পছন্দ করতেন। মোগল দরবারেও মোগলদের রসনায় এই পরোটার একটা ভালো ইজ্জত ছিল।

 উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

 

Leave a Comment

কথা— ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না: কথার অপর নাম অযথা

ড. মোহাম্মদ আমীন

কথা— ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না: কথার অপর নাম অযথা

১. প্লিজ, আপনার স্ত্রীর নাম্বারটা দিন।

আমার স্ত্রী কি গাড়ি, যে নাম্বার থাকবে?

সরি।

২. মা বললেন, তোমার ডিমটা অনেক্ষণ ধরে টেবিলে পড়ে আছে। ঠান্ডা হয়ে যাবে, খেয়ে নাও।

ছেলে বলল,  ওটা আমার ডিম নয়। 

কার ডিম?

মুরগির ডিম। মানুষ কি ডিম পাড়ে?

সরি।

৩. অনেক দিন পর আমেরিকা থেকে রিং করল জাভেদ, কেমন আছ?

বাংলাদেশ থেকে বন্ধু আরিফ বলল, তুমি ফোন দাও না কেন? ফোন দেওয়ার কথা ছিল না?

ফোন দেব, চিন্তা করো না।

তাহলে একটা আইফোন দিও। আমেরিকায় নাকি আইফোন বেশ সস্তা।

সরি। ফোন নয়, রিং দেব।

রিং মানে আংটি, আংটি দেবে?

না।

ফোন করব।

তাই বলে।

৪. স্বামী বললেন, এত চিল্লাচিল্লি করছ কেন?

স্ত্রী বললেন, তোমার মেয়ের সব মাংস কুকুরে খেয়ে ফেলেছে।

পড়ার রুম থেকে মেয়ে বলল, বাবা, আমার মাংস নয়, গোরুর মাংস।

সরি।

৫. হোটেল বয় বললেন, আপনি গোরু, খাসি, মুরগি না কি মাছ?

ক্রেতা বললেন, আমি গোরু, খাসি, মুরগি-মাছ কিছুই না।

তাহলে আপনি কী?

মানুষ।

বয় বললেন, সরি, স্যার — আমাদের হোটেলে নরমাংস পাওয়া যায় না।

৬. প্রকাশক শ্যামল পালের অফিসে দুপুরের খাওয়ার খাচ্ছিলাম। এক টুকরো মুরগির মাংস আমার পাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, মাংসটা নিন।

ধন্যবাদ, খাব না, আমি বললাম।

খুব স্বাদ পাবেন। শ্যামল পাল বললেন, “আপনার ভাবির হাতের মাংস।

আমি বললাম, আমি ভাবির হাতের মাংস খাই না।

এমন আরও আছে। জানা থাকলে বলুন।

৭. দরজার কড়া নড়ছে – টক টক টক। নিশ্চয় কোনো আগন্তুক।

গৃহস্বামী চিৎকার দিলেন, কে?
আমি, বাহির থেকে আগন্তুকের গলা ভেসে এল।
গৃহস্বামী বললেন,  আমি কে?
 আগন্তুক বললেন, তুমি কে তার আমি কি জানি? 

৮. ভাত খেয়েছ?

 খেয়েছি।

কী দিয়ে খেয়েছ?

হাত দিয়ে ।

আরে ভাই, আমি জানতে চাইছি- মানে কী কী দিয়ে খেয়েছ?

আমার হাত, আমার আঙুল, আমার দাঁত, আমার জিহ্বা – এসব দিয়ে আর কী!

৯.  বাবা বললেন, ওই শোনো ঘণ্টা পড়ে গেছে, তাড়াতাড়ি করো। 

কী পড়ে গেছে?

ঘণ্টা।

ঘণ্টা  পড়ে না, ঘণ্টা বাজে।

সরি।

১০.  নজরুল কোথায়? কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ (১৮৮৯-১৯৭৩) হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে বললেন।

 শৈলজানন্দ বললেন, পায়খানায় গেছে।

নজরুল পেছন থেকে এসে বললেন, পায়খানায় নয়, যায়খানায় গিয়েছি।

এরপর কোথায় যাবে?

পায়খানায়, মানে খাবার টেবিলে। 

কী বলো, এসব?

নজরুল বললেন, যেখানে শরীরের খানা  যায় সেটি পায়খানা আর শরীর যেখানে খানা  সেটি পায়খানা।

১১. আপনি কী করেন?
পাশের সিটে বসা ছেলেটি  বলল, আমি গাই।
ও আপনি গাই! তো কতটুক করে দেন?
কতটুকু করে দিই মানে?
 বললেন আপনি গাই, তাই কতটুক করে দুধ দেন জানতে চাইছি।
আমি গাই মানে,গান করি।

সরি।

১২. বাবা ঢাকা যাবেন।  ছেলে গেছে বাবার জন্য টিকেট আনতে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল ছেলে আসে না।

বাবা বিরক্ত হয়ে মোবাইল করল ছেলেকে, তুমি এখন  কী করছ?

টিকেট কাটছি।

খবরদার, তুমি আমার টিকেট কেটো না।

তোমার  টিকেট যে আমি কেটে ফেলেছি।

হারামজাদা, টিকেট কেটে ফেললে আমি ঢাকা যাব কীভাবে?

১৩. কোথায় যাচ্ছ?

বিয়ে খেতে?

কী খেতে? 

 বিয়ে খেতে।

মানুষ ধান খেতে যায়, পাট খেতে যায়, কচু খেতে যায়, শসা খেতে যায়; বিয়ে খেতে যায় কীভাবে?

এই খেত শস্য খেত নয়। বলছি বিয়ে খবি।

বিয়ে কী করে খাবে?

বিয়ে খাব না।

কী খাবে?

বিয়ের  নেমন্তন্ন খাব।

তাই বলো।

১৪.  তোমার বাবা কোথায়? 

চুল কাটতে গেছেন।

 তোমার বাবা নাপিতগিরি শুরু করল কখন থেকে?

সরি, না মানে – বাবা চুল কাটাতে গেছেন।

তাই বলো।

১৫.   রহিম চেয়ারম্যান  পাড়ার ভবঘুরে ছেলেটাকে থানায় এনে ওসি সাহেবকে বললেন, একে আটকান।

 এ কী করেছে?

নদীতে কুলি ফেলে দিয়েছে, একটা নয়, তিন তিনটা।

ওসি সাহেব ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি নদীতে কয়টা কুলি ফেলেছ?

তিনটা।

ওরা কোথায়?

নদীর জলে ভেসে গেছে।

তাহলে তোমার মৃত্যুদণ্ড অবশ্যম্ভাবী। কুলিগুলো নিশ্চয় এতক্ষণে মরে গেছে।

ভবঘুরে জসিম বলল, আমার কুলি মানুষ কুলি নয়।

কী কুলি?

মুখের কুলি।

১৬. আমার কথাটা ধরো। আখেরে লাভ হবে।

কথা কি ধরা যায়?

 ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না।

১৭. মজনু তুমি এখন বাজারে যাবে?

হ্যাঁ, বাবা।

এখন যেয়ো না।

কেন?

সূর্যটা এখন তো ঠিক মাথার ওপর।

কই, আমার মাথায়  কোনো সূর্য নেই। বাবা, ইদানীং তুমি বেশ মিথ্যুক হয়ে গেছ।

১৮. হ্যালো !

– হ্যালো !
– সরি, দোস্ত, মনে হয় রিং করে ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।
ঘুম কি  ভঙ্গুর কাচের পাত্র যে, ভেঙে যাবে। 

১৯. স্যার, ঘণ্টা পড়ে গেছে। 

ঘণ্টা কী সিঁদুর গাছে আম যে, পড়ে যাবে। বলো, ঘণ্টা বেজেছে ।

 

 ২০. বাবা: তাড়াতাড়ি খেয়ে পড়ার টেবিলে বোসো।

ছেলে: টেবিলে কি বসা যায়?
২১. অনেক হয়েছে, এবার ঘুমিয়ে পড়ো।
ঘুমিয়ে কি পড়া যায়?
২২. ধরো x=৫ y=৬।।
এগুলো কীভঅবে ধরব?
২৩. আজানা পড়েছে।
কোথায় পড়েছে?

Leave a Comment