জনাব ও জনাবা

জনাব জনাবা

ড. মোহাম্মদ আমীন

‘জনাব’ সম্মানজ্ঞাপক শব্দ। ব্যক্তির নামের পূর্বে শব্দটি সম্মান ও ভদ্রতা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেকে মহিলাদের নামের পূর্বে ‘জনাব’ এর স্ত্রীবাচক পদ হিসাবে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মানুসারে ‘আ’ যুক্ত করে ‘জনাবা’ লিখে থাকেন। এটি রীতিমতো অপমানজনক। ‘জনাবা’ শব্দের অর্থ ঋতুমতী নারী। এ
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
অবস্থায় কোনো নারীর নামের আগে ‘জনাবা’ লেখা ওই নারীর পক্ষে কত লজ্জাকর ও অপমানজনক তা সহজে অনুমেয়। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা
অভিধান’ অনুযায়ী ‘জনাব’ শব্দটি নারীপুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তির নামের পূর্বে ব্য
বহার করা যায়। তবে কারও নামের পূর্বে সৈয়দ, খান, খন্দকার বা অন্য কোনো পদবি থাকলে ‘জনাব’ লেখা সমীচীন নয়। আমরা বাংলাতে কোনো পুরুষকে ‘জনাব’ বলে সম্বোধন করব, একইভাবে কোনো মহিলার নামের পূর্বেও সম্মানসূচক শব্দ হিসাবে ‘জনাব’ ব্যবহার করব। তবে কোনো অবস্থাতে ‘জনাবা’ নয়। ‘জনাব’ এর পরিবর্তে ‘বেগম’ লেখা যায়। স্মর্তব্য, আরবি বা ফারসি ভাষার লিঙ্গান্তরের নিয়ম বাংলা ভাষার মতো নয়।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ) অনুযায়ী ‘জনাব’ অর্থ : ব্যক্তিনামের পূর্বে ব্যবহৃত সম্মানসূচক শব্দ, মহাশয়, শ্রী। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’-এ জনাব সম্পর্কে লেখা আছে : “জনাব [জনাব্] বি সম্মানসূচক ‘মি.’ ও ‘শ্রী’-র পরিবর্তে সাধারণভাবে নারীপুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তিনামের পূর্বে ব্যবহৃত; সম্মানসূচক সম্বোধনবিশেষ; মহাত্মা; মহাশয়; মাননীয়; ভদ্রলোক; sir। জনাবে আলি, ~ আলী বি (সম্বোধনসূচক) মান্যবর; মহামান্য; Your Excellency। {শব্দটি মূলত আরবি হলেও ফারসি ভাষাতেই এটি বহুল ব্যবহৃত, আ. জনাব جــنــب}”। বর্ণিত অভিধান দুটোর কোনোটাতে ‘জনাবা’ শব্দ নেই।

http://www.alokitobangladesh.com/tasauf/2015/01/24/119592 ] – সাইটে উল্লেখ আছে, “জনাবের স্ত্রীরূপ জনাবা হয় না; তাই জনাবা অন্য শব্দ হবে, যার অর্থ হবে নাপাক বা অপবিত্র।” http://www.ittefaq.com.bd/…/pathok-ov…/2014/11/29/17425.html ] সাইটে বলা হয়েছে : আরবি ভাষায় ‘জনাবা’ একটি সুনির্দিষ্ট শব্দ।যার অর্থ গর্ভবতী শূকর। অতএব এবার ভেবে দেখুন, কোনো মহিলার নামের আগে ‘জনাবা’ লিখবেন কি না। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর ‘যথাশব্দ’ নামের ভাব-অভিধান (২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ) পুস্তকে ‘জনাবা’ শব্দকে মিজ, মোসাম্মাৎ, শ্রী, -মতী, -যুক্তা প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে অভিন্ন দেখিয়েছেন। তিনি ভুলবশত এটি করেছেন। যা আদৌ যথার্থ্য নয়।

 #subach

সূত্র : বাংলা ভাষার মজা, . মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment

আম জাতীয় ফল কেন

আম জাতীয় ফল কেন

ড. মোহাম্মদ আমীন

আমাদের জাতীয় বৃক্ষ কী?

শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তরে প্রমিতা বলল, আম গাছ।

কিন্তু কেন? শিক্ষক জানতে চাইলেন।

প্রমিতা বলল : আম, শিশুদের, যুবদের, বুড়ো-বুড়ি আর কচাকচি সবার প্রিয়। যেমন মিষ্টি তেমন সর্বলভ্য; সারা দেশে পাওয়া যায়। খেলে কোনো অসুখ হয় না। জসীম উদ্দীন “আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা” কবিতায়, আম খেয়ে সুখ পাওয়ার জন্য মামার বাড়ি যাবার কথা বলেছেন আমাদের :

“ঝড়ের দিনে মামার দেশে

আম কুড়াতে সুখ

পাকা জামের শাখায় উঠি

রঙিন করি মুখ।”

শিক্ষক বললেন, এ তো ‘আম’-এর কৃতিত্ব। আম গাছ কী করল?

প্রমিতা বলল : আমটা তো স্যার জন্মই দিয়েছে “আম গাছ”।

শিক্ষক বললেন, ছেলের দায় তো বাপকে দেওয়া যায় না। তোমরা দুনিয়াটা উলটে দেবে বুঝি, মা?

ফরিদ বলল: মেয়েরা, স্যার, সববময় দুনিয়াটা উলটে দিতে চায়; যত্তো সব!

প্রমিতা বলল : ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই এপ্রিল যশোর জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার ভবেরপাড়া গ্রামের আমের বাগানে, মুকুলিত আম গাছের ছায়ায়, আম গাছ থেকে ঝরে-পড়া শুকনো পাতার উপর বসে, আম গাছের পাতার হাওয়া খেয়ে আমাদের কৃতি সন্তানগণ বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করেছিলেন। আম গাছ আমাদের দেশের প্রথম সরকার গঠনে ছায়া দিয়েছিল, আশ্রয় দিয়েছিল, বাতাস দিয়েছিল, বিছানা দিয়েছিল, অন্য গাছ কি দিয়েছে? এখন ওই আমবাগানই মুজিবনগর, জাতির পিতার নামে নামায়িত। তাই “আম গাছ’ আমাদের জাতীয় বৃক্ষ। সৃষ্টি, ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধের ঐশ্বর্য।

ফরিদ বলল : না স্যার; সে ঠিক বলেনি। আমার বাবা বলেন —-

শিক্ষক : তোমার বাবা কী বলেন?

মেয়েরা সবসময় বেশি কথা বলে। আম গাছ নিয়ে মাজেদা যা করল-এত কথা কী স্যার!

তুমি বলো, তাহলে? শিক্ষক বললেন।

ফরিদ বলল : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”- গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত। এখানে, “আম গাছের” কথা আছে। বিশ্বকবি কিন্তু, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বহু আগে আম গাছের গুণকীর্তন করে গেছেন। কেবল আম-বনের ঘ্রাণই বিশ্বকবিকে পাগল করে দিয়েছিলেন। গাইব কি স্যার, ক-লাইন?

গাও, শিক্ষক বললেন।

“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,

মরি হায়, হায় রে—।”

প্রমিতা বললেন, রবীন্দ্রনাথ আরও গেয়েছেন :

“ও মঞ্জরী, ও মঞ্জরী, আমের মঞ্জরী ,

আজ হৃদয় তোমার উদাস হয়ে

পড়ছে কি ঝরি

ঝরি ঝরি ঝরি।”

শিক্ষক বললেন : তোমাদের সবার কথা ঠিক; তবে, আরও কারণ আছে।

কী স্যার? শিক্ষার্থীরা সমস্বরে চিৎকার দিলেন।

শিক্ষক বললেন : মুক্তিযুদ্ধে শপথেও আম গাছের কথা উল্লেখ আছে। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩জুন জুন পলাশির আমের বাগানে লর্ড ক্লাইভের কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর আমাদের স্বাধীনতার সূর্য অস্ত গিয়েছিল। এই অস্তমিত সূর্যই আবার ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগরে জেগে ওঠার হাসিতে চোখ মেলেছিল উদয়মান সূর্যের লালাভ মাধুর্যে। তাই, আম গাছ আমাদের জাতীয় বৃক্ষ।

ফরিদ বলল : তখন ছিল জুন মাস। গাছে-পাকা আম। আমগুলো ঝরে পড়ছিল গাছ থেকে, আম নয়, যেন পলাশির যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী একেক জন সৈন্য।

প্রমিতা বলল, আর স্যার দেখুন, এপ্রিল মাসে গঠিত হয়েছিল মুজিবনগর সরকার; তখন আম গাছ ছিল মুকুলে মুকুলে ছেয়ে, নুইয়ে। মুকুল নয়, যেন আমাদের স্বাধীনতার সূর্যের অগণিত পরিস্ফুটন।

 #subach

Leave a Comment

দেয়া নেয়া: দেয়া শব্দের অর্থ মেঘ: নেয়া; নেয়ার নেয়ে

দেয়া নেয়া: দেয়া শব্দের অর্থ মেঘ: নেয়া; নেয়ার নেয়ে

দেয়া

দেয়া শব্দের অর্থ দেওয়া (give) নয়, দেয়া শব্দের অর্থ মেঘ, আকাশ প্রভৃতি। 

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : 
ছায়া ঘনাইছে বনে বনে,গগনে গগনে ডাকে দেয়া
কবে নবঘন-বরিষণে, গোপনে গোপনে এলি কেয়া।”

কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন :

রিম্ ঝিম্ রিম্‌ঝিম্‌ ঘন দেয়া বরষে
কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে।”

এসো হে সজল শ্যাম-ঘন দেয়া
বেণু-কুঞ্জ-ছায়ায় এসো তাল-তমাল বনে
এসো শ্যামল ফুটাইয়া যূথী কুন্দ নীপ কেয়া।” 

বাক্যে ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃতদেওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে :  give, কোনোকিছু প্রদান করা, উপহার প্রদান প্রভৃতি। যেমন: তাকে একটি বই দেওয়া হলো। আঞ্চলিক বা কথ্য ভাষায় দেওয়া অর্থে  দেয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়। তবে তা প্রমিত রীতিতে ব্যবহার করা আদৌ সংগত নয়। কোনোকিছু বহন করা বা গ্রহণ করা, ক্রয়া করা প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে নেওয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়।  যেমন :  আমার কিছু বই নেওয়া দরকার। বিমানের টিকেট নেওয়া হলো। অন্যদিকে নেয়া হচ্ছে নেওয়া শব্দের আঞ্চলিক রূপ, যা প্রমিত রীতিতে ব্যবহার করা অসংগত।

অসংগত হলেও চলিত রীতিতে  দেওয়া অর্থে দেয়া এবং নেওয়া অর্থে নেয়া শব্দের প্রয়োগ  এত বহুল যে, অনেক খ্যতিমান কবি-সাহিত্যিকদের লেখাতেও  এই অসংগত বানান হরদম দেখা যায়। বিখ্যাত ‘দেয়া নেয়া’ ছবির কথা এখনো মনে ভাসে, হার্দিক মমতায়, এখনো আমি দেখি সেই গভীর আবেগে। এই নিবন্ধে আমি দেয়া ও  নেয়া শব্দের ব্যাকরণিক  অর্থের বিশ্লেষণ করেছি মাত্র। তবে, প্রচলন ব্যাকরণের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অনেক বেশি প্রভাবশালী। অধুনা দেয়ানেয়া বহুল প্রচলিত  শব্দ। তাই এদের এখন অশুদ্ধ বলে দাবিয়ে রাখা যাবে বলে মনে হয় না। যাকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, তাকে অশুদ্ধ বলে লাভ কী?

নেয়ার নেয়ে নেয়ে
নেয়ার: নেয়ার দেশি শব্দ। উচ্চারণ— নেআর্‌। অর্থ— খাটের পৃষ্ঠদেশে বুননের জন্য কাঠের পাটাতনের পরিবর্তে ব্যবহৃত মোটা সুতোয় বোনা চওড়া ফিতে; যেমন: নেয়ার খাট। পাজামা, সালোয়ার প্রভৃতি কোমরে আটকানোর জন্য ব্যবহৃত ফিতাকেও ‘নেয়ার’ বলা হয়।সুতরাং, “তিনি নেয়ার জন্য এসেছেন।” কথার অর্থ — তিনি খাটের ফিতের/ কোমরে পোশাক বাঁধার ফিতের জন্য এসেছেন।
নেয়ে: অভিধানে নেয়ে শব্দের দুটি ভুক্তি। একটি এসেছে সংস্কৃত স্নান থেকে এবং অন্যটি এসেছে নাবিক থেকে। সংস্কৃত স্নান থেকে উদ্ভূত নেয়ে হলো— ‘স্নান করার পর’ বাগ্ভঙ্গির অসমাপিকা ক্রিয়ার একটি রূপ। নেয়ে খাও বাবা, ঘাম ঝরছে গা থেকে। সংস্কৃত নাবিক থেকে উদ্ভূত নেয়ে অর্থ (বিশেষ্যে)— নৌকার মাঝি, যে নৌকা চালায়, নৌকা চালানো যার পেশা।
“খরবায়ু বয় বেগে, চারি দিক ছায় মেঘে,
ওগো নেয়ে, নাওখানি বাইয়ো।” (রবীন্দ্রনাথ)

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

উপর বনাম ওপর

উপর বনাম ওপর

ড. মোহাম্মদ আমীন

 উপরওপর উভয় শব্দের অর্থ অভিন্ন। অর্থে ভিন্নতা না থাকলেও প্রয়োগ নিয়ে ব্যবহারকারীগণ অনেক সময় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। কবি-সাহিত্যিক, পণ্ডিত ও বৈয়াকরণগণের অভিমত, সাধু ভাষায় রচিত কিংবা চিন্তামূলক প্রবন্ধে উপর বা উপরে শব্দ ব্যবহার করাই দীর্ঘ রীতি। ওপরওপরে শব্দ দুটো যথাক্রমে উপরউপরেশব্দের কথ্যরূপ, অধুনা চলিতরূপ। ইদানীং অনেকে গল্প উপন্যাস এমনকি চিন্তামূলক প্রবন্ধেও ওপর লিখছেন। অনেকে আবার চলিত গদ্যেও উপর বা উপরে লেখার পক্ষপাতি। অনেকের মধ্যে গম্ভীর বা হালকা যে-কোনো রচনায়ওপরবা ওপরে লেখার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অনেকে মনে করেন, সাধুরীতিতে ব্যবহৃত উপর বানানটি ধ্বনি পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বরসঙ্গতির নিয়মানুসারে চলিত রীতিতে ওপর হয়েছে। উপর শব্দটি অবিকল সংস্কৃত নয়।  সংস্কৃত উপরি শব্দ থেকে তদ্ভবউপর শব্দের এবং এইউপরশব্দ থেকে বাংলা ওপর শব্দের উদ্ভব। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬) অনুযায়ী সংস্কৃত উপরি থেকে উদ্ভূত অতৎসম উপর শব্দের অর্থ বিশেষ্যে ঊর্ধ্বভাগ, ঊর্ধ্বদিক, ঘরের ছাদ; বিশেষণে ঊর্ধ্ব স্থিত, উচ্চ, অতিরিক্ত এবং অব্যয়ে প্রতি।

আসলে বাংলা ভাষায় এখনও অনেক শব্দের বানান ও ব্যবহারে আদর্শ মান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি। বৈয়াকরণ ও কবিসাহিত্যিকগণের নিজস্ব মত ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আদর্শ ভাষা রীতি প্রতিষ্ঠায় বৈয়াকরণ কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এ জন্য দায়ী। এতক্ষণ যা বললাম, তার সারবত্তা হলো : ওপর এবং উপর সমার্থক শব্দ। উপর হচ্ছে ওপর শব্দের কথ্যরূপ এবং চলিত রূপ।বাক্যে ব্যবহারের সময় এ বিষয়টি খেয়াল রাখলে চলবে। অন্যকিছু ভাবার প্রয়োজন নেই। যেমন: মাথার উপর বোঝা আছে। মাথার ওপর বোঝা আছে। উপরে আকাশ, নিম্নে বাতাস। ওপরে আকাশ, নিম্নে বাতাস।

ওপরকথ্য এবং উপর সাধু শব্দ। তবে এখন ওপর শব্দটি চলিত ও কথ্য উভয় ভাষায় ব্যবহৃত হয়। তেমনি উপর কথাটিও সাধু ও চলিত উভয় ভাষায় ব্যবহৃত হয়। সুতরাং উপর এবং ওপর দুটোই শুদ্ধ। তবে একই লেখায় উভয় শব্দের প্রয়োগ  বিধেয় নয়।অতএবউপর লিখবেন না ওপর লিখবেন এ নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে যে কোনো একটি লিখুন।

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

আওয়ামী লীগ, আওয়ামি, আওয়ামি লিগ: আরবি না উর্দু; আমলা, বানর এবং  আমলকী

আওয়ামী লীগ, আওয়ামি, আওয়ামি লিগ: আরবি না উর্দু; আমলা, বানর এবং  আমলকী

 #subach

ড. মোহাম্মদ আমীন

আওয়ামী লীগ, আওয়ামি, আওয়ামি লিগ

‘আওয়ামি’ আরবি হতে বাংলায় আগত শব্দ। বাক্যে আওয়ামি শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘আওয়ামি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ জনগণের, সাধারণ মানুষের প্রভৃতি। বিদেশি বলে শব্দটির বানানে ‘ই-কার’ দিতে হয়। এর কোনো বিকল্প রাখা হয়নি। কিন্তু, ‘আওয়ামী লীগ’ হিসেবে পরিচিত রাজনীতিক সংগঠনটির নাম লিখতে হলে ‘আওয়ামি’ শব্দের ম-য়ে অবশ্যই ‘ঈ-কার’ দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যতদিন সংগঠনটি তার নাম পরিবর্তন না-করে ততদিন ওভাবেই লিখে যেতে হবে। কারণ ‘আওয়ামী লীগ’ একটি সংগঠনের নাম। নামের কোনো লিপ্যন্তর হয় না। নামের কোনো আভিধানিক অর্থও হয় না। নামের অর্থ কেবল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বস্তুর অদ্বিতীয় পরিচয়কে ঘিরে আবর্তিত হয়। এজন্য ‘আজাদ খান’ নামের কোনো ব্যক্তির ইংরেজি Freedom eat, কিংবা Mr. White Moon নামের কোনো ব্যক্তির বাংলা ‘সাদা চন্দ্র’ হয় না।
আওয়ামি আরবি হতে বাংলায় আগত একটি শব্দ। অর্থাৎ এটি আরবি শব্দ। এটি উর্দু শব্দ নয়। বাক্যে আওয়ামি শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘আওয়ামি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ জনগণের, সাধারণ মানুষের, সবার প্রভৃতি। অন্যদিকে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত লাতিন ‘লিগ (league)’ শব্দের অর্থ দল, সংঘ প্রভৃতি। অতএব ‘আওয়ামিলিগ/ আওয়ামি লিগ’ অর্থ জনগণের দল। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষেণ হিসেবে ব্যবহৃত আরবি আওয়ামি শব্দের অর্থ আওয়ামি অর্থ জনগণের।

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। যখন দলটির নাম রাখা হয় তখন বাংলা বানানে ই-কার বা ঈ-কার নিয়ে তেমন বাধ্যবাধকতা ছিল না, বাংলা একাডেমি প্রমিত বানান রীতিও ছিল না। বরং আরবি-প্রভাবের কারণে ঈ-কার-এর প্রতি সবার একটা আলাদা টান ছিল। তাই দলটির নামের বানান লেখা হয় ‘আওয়ামী লীগ’। প্রসঙ্গত, ‘বাংলা একাডেমি প্রমিত বানান রীতি’ অনুযায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ভুল নেই।তবে আওয়ামী অর্থ জনগনের  ধরে নিলে বানান হওয়া উচিত, “আওয়ামি লিগ’।

আমলা বানর  আমলকী

সংস্কৃত আমলক> প্রাকৃত আমলঅ> এবং বাংলা আমলা শব্দের অর্থ আমলকী গাছ, আমলকী, সরকারি কর্মচারী, মুহুরি, কেরানি প্রভৃতি। শব্দটি বর্তমানে bureaucrat অর্থে

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

সমধিক প্রচলিত। অনেকে বলেন, আমলা আরবি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে, যার অর্থ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী, কেরানি, মুহুরি ইত্যাদি। কিন্তু ‘বেদ’-এ আমলা শব্দটি রয়েছে। প্রাচীন অভিধানসমূহেআমলাঅর্থ বানর এবং বানরঅর্থে আমলা বলা আছে। সুতরাং আমলা আরবি শব্দ এটি ঠিক নয়। আসলে প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে আমলা অর্থ বানর। তবে আধুনিক অভিধানকারদের এই অর্থটা  পছন্দ হয়নি। তাই তাঁরা তাঁদের অভিধান থেকে হয় শব্দটি বাদ দিয়েছেন এবং শব্দটিকে আরব থেকে আমদানি দেখিয়ে এর বর্তমানে প্রচলিত অর্থটিই বসিয়ে দিয়েছেন।

এবার দেখা যাক, আমলা অর্থ কেন বানর এবং কেন আমলকী। প্রাচীনকালেও অধিকাংশ আমলা স্বভাবচরিত্র ও আচার আচরণে বানরের মতো  বেহায়া প্রকৃতির ছিল। যত খেত নষ্ট করত তার অধিক। ভালোমন্দ বিবেচনাবোধ ছিল খুবই কম, সারাক্ষণ শুধু নিজের চিন্তা করত। বস্তুত এ থেকেবানরের পিঠাভাগপ্রবাদটির উৎপত্তি। বানরের ন্যায় আমলারাও ফল হওয়ার আগে মুকুলগুলো খেয়ে ধ্বংস করে দিত। অধিকন্তু কয়েকদিনের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পেয়ে বাপের সম্পত্তি মনে করে বসত। যা থেকেবানরের বনভাগপ্রবাদটির উৎপত্তি। আমলাদের স্বাদ আমলকীর ন্যায় তিক্ত কিন্তু চিবিয়ে খেয়ে ধ্বংস করে দিলে শরীরের উপকার হয়। যেমন আমলাদের যত চাপে রাখা যায় দেশে ও জাতির তত কল্যাণ সাধিত হয়। তাই আমলা অর্থে আমলকীও বোঝায়। এর মানে আমলা থেকে উপকার পাওয়া যাবে। কিন্তু কখন? যদি তাদের প্রচণ্ড শাসনে ও চাপে রাখা হয়। আমলাদের কোনো স্বাধীনতা দেওয়া যাবে না। তা হলে বানরের ন্যায় আচরণ পেতে হবে তাদের কাঁছ থেকে।

নিচের সংযোগে দেখুন:
বিনীত   বিনত : কোনটি লিখবেন এবং কেন

Leave a Comment

মহেন্দ্রক্ষণ বনাম মাহেন্দ্রক্ষণ; কাঁচা কাচা কচি কাচ; ও সাগর কন্যারে কাঁচা সোনা গায়

মহেন্দ্রক্ষণ বনাম মাহেন্দ্রক্ষণ; কাঁচা কাচা কচি কাচ; ও সাগর কন্যারে কাঁচা সোনা গায়

ড. মোহাম্মদ আমীন

মহেন্দ্রক্ষণ’ বানানের কোনো শুদ্ধ শব্দ বাংলায় নেই। বাংলা ব্যাকরণমতে মহেন্দ্রক্ষণ বানানের কোনো শব্দ অর্থপূর্ণভাবে গঠিত হতে পারে না। এটি অর্থহীন। শব্দটির শুদ্ধ, ব্যাকরণিক ও অর্থপূর্ণ রূপ— মাহেন্দ্রক্ষণ। কেন মহেন্দ্রক্ষণ হতে পারে না দেখুন— মহেন্দ্র বিশেষ্য। এর অর্থ— পৌরাণিক চরিত্রবিশেষ,

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ব্যক্তিনাম, নামবিশেষ। সাধারণভাবে মহেন্দ্র অর্থ— ‘দেবরাজ ইন্দ্র’। ক্ষণ শব্দটিও বিশেষ্য। একটি বিশেষ্য আরেকটি বিশেষ্যকে সরাসরি বিশেষায়িত করতে পারে না। মহেন্দ্র‘ শব্দটি ক্ষণ শব্দের সঙ্গে যুক্ত করে ‘মহেন্দ্রক্ষণ বানালে অর্থ হবে— ‘দেবরাজ ইন্দ্র ক্ষণ’, দেবরাজ ইন্দ্র সময়; যা অর্থহীন এবং হাস্যকর। তাই, সময় নির্দেশক বিশেষ্য ‘ক্ষণ’-এর পূর্বে ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য ‘মহেন্দ্র’ সরাসরি যুক্ত না-করে বিশেষণ বানিয়ে যুক্ত করতে হয়৷ তাহলে এটি অর্থসমৃদ্ধ হয়। এটিই বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম। তৎসম বিশেষ্যকে বিশেষণে পরিণত করার একটি সহজ উপায়— ‘ষ্ণ (অ)’ প্রত্যয় যুক্ত করা। মহেন্দ্র শব্দের সঙ্গে ‘ষ্ণ’ প্রত্যয় যুক্ত করলে কেমন হয় দেখুন— মহেন্দ্র+ষ্ণ = মাহেন্দ্র (বিশেষণ )। এখানে বৃদ্ধির সূত্রানুসারে প্রথম অ-স্বর, আ-স্বরে পরিণত হয়েছে। তৎসম মাহেন্দ্রক্ষণ শব্দের অর্থ— শুভক্ষণ, উপযুক্ত সময়; জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী কল্পিত শুভযোগ।

কাঁচা কাচা কচি কাচ: ও সাগর কন্যারে কাঁচা সোনা গায় —। কাঁচা: কাঁচা অর্থ (বিশেষণে) অপক্ব (ক্-য়ে ব), অপরিণত, অস্থায়ী, অশুষ্ক, পারদর্শী নয় এমন। এটি দেশি শব্দ। কাঁচা ফল পাকা ফলের চেয়ে শক্ত। তাই কাঁচা ফল খেতে ছুরি লাগে। চন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ছুরি। এজন্য কাঁচা বানানে ছুরির প্রতীক চন্দ্রবিন্দু দিতে হয়। কাঁচার মতো কাঁচা-যুক্ত সব শব্দে চন্দ্রবিন্দু।বীন্দ্রনাথের ভাষায়, ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা- – -। কাঁচা আম, কাঁচা কাজ, কাঁচাগোল্লা, কাঁচা ঘুম, কাঁচা চুল, কাঁচা টাকা, কাঁচাপাকা, কাঁচা বয়স, কাঁচাবাজার, কাঁচা বুদ্ধি, কাঁচামাল, কাঁচামিঠা, কাঁচা রসিদ, কাঁচা লেখা, কাঁচা মাংস, কাঁচা ইট, কাঁচা বুদ্ধি, কাঁচা ঘর, কাঁচা হাতের কাজ, কাঁচা বয়স, কাঁচা হিসাব, কাঁচা সোনা, কাঁচা কাঠ, কাঁচা সের, কাঁচা রাস্তা- সব কাঁচায় চন্দ্রবিন্দু।

  • কাপড় কাচা: তবে কাপড় কাচতে গেলে চন্দ্রবিন্দু পড়ে যেতে পারে। তাই কাপড় কাচার কাচা বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই।
  • কচি: কচি বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই কেন? কচি মানে কাঁচা নয়, শিশু, নবজাত, কোমল, নরম। যেমন: কচিখোকা, কচিকাঁচার আসর। কচিদের মাথায় চন্দ্রবিন্দুর বোঝা দিতে নেই। পিঠ তাদের এমনই বইয়ের ভারে ন্যুব্জ।
  • গ্লাসের কাচ: কিন্তু গ্লাসের কাচে চন্দ্রবিন্দু নেই কেন? কাচ একটি ভঙুর জিনিস। হঠাৎ পড়ে গেল কাচের সঙ্গে চন্দ্রবিন্দুটাও ভেঙে যাতে পারে। একটামাত্র চন্দ্র ভেঙে গেলে জোছনা আপুর কী হবে? তাই কাচের গ্লাসের কাচ বানানে চন্দ্রবিন্দু দিতে নেই।

Leave a Comment

চক্ষুদান নচিকেতা: চক্ষুদান অর্থ চুরি করা কেন; নচিকেতা শব্দের অর্থ

চক্ষুদান নচিকেতা: চক্ষুদান অর্থ চুরি করা কেন; নচিকেতা শব্দের অর্থ

ড. মোহাম্মদ আমীন

‘চক্ষুদান করা’ অর্থ চুরি করা কেন: চক্ষুদান করা বাগ্‌ভঙ্গির শাব্দিক অর্থ দৃষ্টিশক্তি দান করা, দিব্যজ্ঞান প্রদান করা, দিব্যজ্ঞান দিয়ে মূর্খ বা জড় বস্তুকেও সচল করা, কিন্তু চক্ষুদান করা কথার আলংকারিক অর্থ চুরি করা। এটি বাক্যে সাধারণত বাগ্‌ধারা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।তাই অর্থটি আলংকারিক। চক্ষুহীনকে চক্ষু দিলে সে চলাফেরায় সক্ষম হয়, দিব্যজ্ঞান লাভ করে। ফলে চক্ষুলাভকারী ব্যক্তি বা বস্তু অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারে; অন্যের অগোচরেও স্থানান্তর হতে পারে। চুরি করতে হয় দ্রব্যের মালিক বা

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

অন্য কারো অগোচরে। কোনো দ্রব্য যখন চুরি হয়ে যায় তখন ধরে নেওয়া হয়, চোর দ্রব্যটিকে চক্ষুদান করেছে কিংবা দিব্যজ্ঞান প্রদান করে জড় বস্তুকেও অন্যের অগোচরে তার ইচ্ছা দ্বারা চালিত করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে দ্রব্যটি চক্ষু পেয়ে সবার অগোচরে চোরের দখলে চলে এসেছে, বেহাত হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে। সুতরাং চক্ষুদান করা মানে— যে দ্রব্যটা চুরি গেছে বা চুরি হয়েছে তাকে চক্ষুদান করা, দিব্যজ্ঞান প্রদান করা, চোরাই মালের চক্ষুলাভ প্রভৃতি। দ্রব্যটি যেন চক্ষু পেয়ে বা দিব্যজ্ঞান পেয়ে মালিক-সহ সংশ্লিষ্ট সবার অগোচরে চলে এসেছে চোরের কাছে। আবার চক্ষুদান কথার অর্থ— নজর দেওয়া, দৃষ্টি রাখা। চোর কোনো কিছু চুরি করতে গেলে ওই জিনিস এবং একই সঙ্গে মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি/নজর দিয়ে থাকে। যাতে সবার অগোচরে জিনিসটি চুরি করতে পারে। এভাবে চক্ষু দিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রেখে চুরি করতে হয় বলে চক্ষুদান করা বাগ্‌ভঙ্গির আলংকারিক অর্থ হয়েছে চুরি করা।

নচিকেতা: নচিকেতা অর্থ কী? সংস্কৃত নচিকেতস্ থেকে নচিকেতা। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, শব্দটির অর্থ (বিশেষ্যে) উদ্দালক ঋষির পুত্র; অগ্নি। উপনিষদ মতে, নচিকেতা ছিলেন বাজশ্রবস মুনির (উদ্দালক) পুত্র। উদ্দালক আয়োধধৌম্য ঋষির শিষ্য ছিলেন। উদ্দালকের আসল নাম আরুণি।আইল থেকে উত্থিত হয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন বলে, তাঁর নামকরণ করেন উদ্দালক। মহাভারতের অনুশাসনপর্বের ৭১-অধ্যায়ে আছে: মহর্ষি উদ্দালক একদিন নদীর তীরে একটি নিয়মানুষ্ঠান সেরে বাড়ি এসে, পুত্র নচিকেতাকে ভুলে ফেলে আসা অনুষ্ঠানের কাঠ, কুশ, ফুল, কলস ও খাদ্যদ্রব্যাদি নিয়ে আসার আজ্ঞা দিলেন। নচিকেতা গিয়ে দেখেন, নদীর স্রোতে সব ভেসে গেছে। ফিরে এসে জানালে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর উদ্দালক রেগে বললেন, তোমার ‘যমদর্শন’ হোক। এরপর নচিকেতার মৃত্যু হয়। পুত্রের মৃত্যুতে উদ্দালক বিলাপ করতে থাকেন। এক দিন এক রাত্রি পর্যন্ত তাঁকে কুশাসনে শুইয়ে রাখা হয়। ভোর বেলায় নচিকেতা আবার বেঁচে উঠেন। নচিকেতা যমালয়ের বিবরণ দেন এবং উদ্দালকের প্রতি যমের প্রগাঢ় শ্রদ্ধাবশত নচিকেতাকে কিরূপ সম্মান দেখানো হয়েছে তার বর্ণনা দেন। আসলে নচিকেতার মৃত্যু হয়নি। উদ্দালক ‘যমদর্শন হোক’ বলেছিলেন। তাই তাঁর প্রতি সম্মানবশত যমালয় দর্শনের জন্য নচিকেতাকে যমালয়ে নেওয়া হয়েছিল।

উৎস: পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

 

 

Leave a Comment

অপরূপ: অপরূপ অর্থ অপ যে রূপ; খারাপ রূপ; দ্বন্দ্বার্থক দ্ব্যর্থক সাংঘর্ষিক বা বিপরীত অর্থদ্যোতক শব্দ

অপরূপ: অপরূপ অর্থ অপ যে রূপ; খারাপ রূপ; দ্বন্দ্বার্থক দ্ব্যর্থক সাংঘর্ষিক বা বিপরীত অর্থদ্যোতক শব্দ

#subach

ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘অপ’ শব্দের দুটি ভুক্তি। একটি বিশেষ্য এবং অন্যটি অব্যয়। বিশেষ্য, ‘অপ’ মানে জল। অব্যয় ‘অপ’ হচ্ছে অপকর্ষ, নিন্দা, বিরোধ, প্রতিকূল প্রভৃতিসূচক সংস্কৃত উপসর্গ। যখনই কোনো বিষয়ের সঙ্গে ‘অপ’-যুক্ত হয়েছে, তখনই বিষয়টি ভালো হলেও খারাপ হয়ে গেছে।

কর্ম স্বভাবতই ভালো, কিন্তু খারাপ হলে তা অপকর্ম। কীর্তি মহাগৌরবের, কিন্তু খারাপ হলে তা অপকীর্তি হয়ে যায়। যা ‘অপ’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। ঠিক তেমিন

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

অপচিকীর্ষু, অপব্যবহার, অপব্যয়, অপভাষা, অপভ্রষ্ট প্রভৃতি। এই শব্দগুলো বাক্যে সাধারণত নিন্দার্থে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ‘অপরূপ’ এমন একটি শব্দ, যেটি ‘অপ’ হয়েও কৃষ্ট এবং আকর্ষণীয় অর্থ ধারণের বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছে। এটি ব্যবহৃত হয় প্রশংসার্থে। ‘অপরূপ’ শব্দের আদি অর্থ কদাকার। আধুনিক অভিধানেও ‘অপরূপ’ শব্দের অর্থ কদাকার রয়ে গেছে। এরূপ একটি কদাকার শব্দ দিয়ে বলা হচ্ছে, মেয়েটি অপরূপ, মানে মেয়েটি কাদাকার, মেয়েটি কুৎসিত, মেয়েটি অপয়া, মেয়েটি রূপবান, মেয়েটি রূপসি, মেয়েটি সুন্দরী। আসলে মেয়েটি কী? বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত অপূর্ব শব্দ হতে উদ্ভূত ‘অপরূপ’ শব্দের অর্থ অপূর্ব, অতুলনীয়, কদাকার, বেয়াড়া, অদ্ভুত, বিস্ময়কর, আশ্চর্য প্রভৃতি। কাজেই দেখা যাচ্ছে, ‘অপরূপ’ শব্দের অন্যতম অর্থ কদাকার, বেয়াড়া প্রভৃতি এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। এবার দেখা যাক, কদাকার ও বেয়াড়া শব্দের অর্থ কীভাবে অপূর্ব, অতুলনীয়, সুন্দরী ও রূপবান হয়ে গেল।

‘রামরাজত্ব’একটি দ্বন্দ্বার্থক বা বিপরীত অর্থদ্যোতক শব্দ। যেসব শব্দের অর্থ একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক কিংবা বিপরীত অর্থও ধারণ করে তাদের দ্বন্দ্বার্থক বা বিপরীত অর্থদ্যোতক শব্দ বলে। যেমন: অপরূপ। এর অর্থ অতি সুন্দর এবং অতি কুৎসিত। অনুরূপ, অগণ্য, দারুণ, পর্যাপ্ত, ফাজিল।
রাম হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। হিন্দু ধর্মগ্রন্থসমূহে তাঁকে অযোধ্যার রাজা বলা হয়েছে। রাম সূর্যবংশে (ইক্ষ্বাকুবংশ; পরবর্তীকালে রাজা রঘুর নামানুসারে রঘু বংশ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একদল বলে, রামের শাসন ছিল সুখ ও শান্তিতে পূর্ণ। আরেক দল বলে, সুখ-শান্তি ছিল রাম ও তাঁর অনুগতদের জন্য, বিরোধীদের জন্য নয়। বিরোধীদের মতে, রামের শাসন ছিল স্বেচ্ছাচারের শাসন।
‘রাম’ ও ‘রাজত্ব’ মিলে রামরাজত্ব (রাম+রাজত্ব)। এর শাব্দিক অর্থ রামের রাজত্ব। বাংলা একাডমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, তৎসম ‘রামরাজত্ব’ অর্থ (বিশেষ্যে) ১. সুখ ও শান্তিপূর্ণ রাজত্ব। ২. (আল.) স্বেচ্ছাচারের রাজত্ব।
  • দেশ সুখ আর শান্তিতে ভরপুর, কোথাও কোনো অভাব নেই— এ যেন রামরাজত্ব। আহ্ কী শান্তি!
  • যার যেমন ইচ্ছে তেমন করছে; কোনো প্রতিকার নেই; অসহ্য এক রামরাজত্ব চলছে।
  • জিনিসপত্রের দাম বেড়ে আগুন, নিশ্বাসের মতো বিদ্যুৎ যায় আর আসে; রাস্তায় হাঁটা যায় না হকারের জ্বালায়; কী এক অসহনীয় রামরাজত্ব চলছে দেশে! হে রাম, কোথায় তোমার সেই ঐশ্বর্যভরা রামরাজত্ব থেকে এক চিলতে শান্তি ছুড়ে দাও-না!
তৎসম ‘গণ্ডগ্রাম (গণ্ড+গ্রাম)’ অর্থ (বিশেষ্যে) ১. জনাকীর্ণ বড়ো গ্রাম, জনাকীর্ণ সমৃদ্ধ গ্রাম। ২. দূরবর্তী ক্ষুদ্র গ্রাম। শব্দটির উচ্চারণ /গন্‌ডোগ্‌গ্রাম্‌/।
‘গণ্ডগ্রাম’একটি দ্বন্দ্বার্থক/দ্ব্যর্থক/সাংঘর্ষিক অর্থদ্যোতক বা বিপরীত অর্থদ্যোতক শব্দ। যেসব শব্দের অর্থ একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক কিংবা বিপরীত অর্থও ধারণ করে তাদের দ্বন্দ্বার্থক/দ্ব্যর্থক/সাংঘর্ষিক অর্থদ্যোতক বা বিপরীত অর্থদ্যোতক শব্দ বলে। যেমন: অপরূপ। এর অর্থ অতি সুন্দর এবং অতি কুৎসিত। অনুরূপ, অগণ্য, দারুণ, পর্যাপ্ত, ফাজিল, রামরাজত্ব…।

অপরূপ শব্দের আদি অর্থ কদাকার। শারীরিক সৌন্দর্যের মতো আর্থিক সম্পদও একপ্রকার রূপ। সঞ্চয় ব্যবস্থাকে ঘৃণা করা হতো বলে, একসময় রূপই ছিল সব

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

নিকৃষ্টতা ও অবজ্ঞার মূল। “আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী” কথাটির মধ্যেও ‘রূপ’-এর নিকৃষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভুসুকুর কথায় রূপের কদর্যতাই ঘোষিত হয়েছে।এখনও অনেককে রূপের জন্য হেয় হতে হয় নানাভাবে।সমাজ ব্যবস্থায় সম্পদ সঞ্চয়ের স্বীকৃতি, রূপের প্রতি কিছু লোকের আগ্রহ এবং তা সংরক্ষণে সীমিত হলেও নানা ব্যবস্থা গড়ে উঠায় ‘অপরূপ’ এর কদর্য অর্থ পরিবর্তন হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধর্মেও বিশেষ করে নারীর রূপসজ্জাকে কদর্য অথে দেখানো হয়েছে। অন্যতম প্রাচীন বাঙালি কবি ও চর্যকার ভুসুকু সৌরাষ্ট্রের রাজপুত্র ছিলেন। মহাযান বৌদ্ধমতে শান্তিদেবের অপর নাম ভুসুকু। পিতার মৃত্যুর পর ইনি সিংহাসন ত্যাগ করে নালন্দায় চলে আসেন। এখানে তিনি বৌদ্ধাচর্য জয়দেবের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন।সেখান থেকে রাজনীতিক নিরাপত্তার কারণে চলে যান, চট্টগ্রামের দেয়াঙ পাহাড়ে। ইনি নিজের কুটিরে সর্বক্ষণ গোপনে অধ্যায়ন করতেন। এজন্য অন্যান্য ভিক্ষুরা মনে করতেন যে, ইনি সব সময় আহার এবং নিদ্রায় সময় কাটান।তাই ভিক্ষুরা তাকে ভুসুকু (ভু=ভক্ষণ, সু=সুপ্তি, কু=কুটির) নামে ডাকতেন।।

বর্তমানকালের মতো প্রাচীনকালে  রূপের এমন বেসাতি ছিল না। রূপকে নানাভাবে ঢেকে রাখা হতো। এখনও তেমন দেখা যায়। কদর্যতা বা অবাঞ্ছিত কিছু রোধ করার জন্য এমন করা হতো বা হয়। বোরকা এর একটি উদাহরণ হতে পারে। রাস্তায় স্বাভাবিক চলাফেরায় মহিলাদের হয়রানি কদর্যতার প্রমাণক। কর্ম —–অপকর্ম …………রুপ —অপরূপ । অপরূপ [ aparūpa ] বিণ. 1 অপূর্ব; অতুলনীয় রূপবিশিষ্ট (অপরূপ শিল্পসম্পদ); 2 (ব্যঙ্গে) আশ্চর্য, কিম্ভূত; 3 কদাকার, কুরূপ; বেয়াড়া। [(1)সং. অপূর্ব > প্রাকৃ. অপরূব > (2) সং. অপ (=অপগত) + রূপ (=সৌন্দর্য বা তুলনা)]।

কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী রচিত “বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ” গ্রন্থে বর্ণিত, ‘অপরূপ’ শব্দের অর্থ জানার আগে ‘অলঙ্কার’ শব্দের অর্থ জানা দরকার। অলঙ্কার = অলম+/কৃ+অ(ঘঞ্‌); যে করণ (কাজ করা) অলম্‌ (নিষিদ্ধ); নিষেধ সত্ত্বেও যা করা হয়েছে। যার দ্বারা মণ্ডন সাধিত হয় । অলম্‌ শব্দের অর্থ ‘করিও না’ । অহঙ্কার,

অলঙ্কার, সত্যঙ্কার, – ‘কার’ যুক্ত এই তিনটি শব্দই যৌথসমাজের উদ্বৃত্ত সম্পদকে ব্যক্তিগত করার প্রাচীন চেষ্টার নিদর্শন । প্রজাপতিতন্ত্রের আগে, উদ্বৃত্ত জমানো নিষিদ্ধ ছিল, ফেলে দেওয়া হয়ত আবর্জনা রূপে। যে আবর্জনা ভাগাড়ে যেত তাকে অবজ্ঞা করে ‘কিরাত’ বলা হতো । কারণ সামাজিক উৎপাদনের ‘অবশেষ’ থেকে সমাজদেহে পুঁজ (abscess) জমতে পারে । তাই এই উদ্বৃত্ত ছিল ‘ভূষা’ পদবাচ্য, যা খাদ্যবস্তুর ছোবড়ার সঙ্গেই ফেলে দেওয়া হতো । ‘ভূষা’ কথাটি বর্তমানেও খুব ভালো কথা নয় । এজন্য গহনাদি ‘ভূষা’ পদবাচ্য হয়ে যায় ।

পরে সমাজে সম্পদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হলে, অলঙ্কারের মর্যাদা বেড়ে যায় । যদিও ভারতবর্ষে ‘অহঙ্কার’-এর (আমার দ্বারা কৃত, অতএব এটি আমার) মর্যাদা তেমন

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং নিন্দিতই রয়ে গেছে। আর একটি দিক থেকেও বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে, ‘অল’ মানে ‘নিবারণ’ ও ‘ভূষণ’ । ভূষণের দ্বারা নিজেকে গোপন করে শত্রুনিবারণ করা যায়। হয়তো এজন্য ‘অল’ শব্দের আরেকটি অর্থ ‘শত্রুনিবারক’। অন্যথায় প্রকৃষ্টরূপ সাধন বা প্রসাধনের সঙ্গে ভূষণের সম্পর্ক থাকত না । অপরূপ = অপকৃষ্ট রূপ যাহার। এর অন্য অর্থ অদ্ভুত, অনুপম, অদৃষ্টপূর্ব্ব, পরমসুন্দর, অলৌকিকরূপসম্পন্ন, অচিন্তিতপূর্ব্ব, অতর্কিত । ‘অপ’ শব্দটি নিন্দাসূচক, সবাই জানেন । অথচ রূপের আগে ‘অপ’ থাকা সত্ত্বে ‘অপরূপ’ কথাটি বর্তমানে ‘অতি সুন্দর’ অর্থে প্রচলিত। এটা হওয়ার কারণ আছে। ‘অলঙ্কার’ শব্দটি থেকে জানা যায়, গহনাদি একসময় নিষিদ্ধ ছিল । শারীরিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেখানোও সেকালে মন্দকাজ বলে মনে করা হতো । বঙ্গীয় শব্দকোষ উল্লেখ করছে, ‘বাচস্পত্যে’ ‘আশ্চর্য্যরূপ’ অর্থে সংস্কৃত ‘অপরূপ’ ধৃত হয়েছে । অর্থাৎ ‘আশ্চর্য’ শব্দের ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায়, কারো কারো আশামূলক আচরণ (সবাই মিলে চাষ করার ফলে যে ফলগুলি ফলেছে, তার মধ্যে যে-লতায় ওই বড় ফলটি ফলেছে, তাতে আমি জল ঢালতাম, অতএব ভাগের সময় আমি যেন ওই ফলটি পাই – এইরূপ আচরণকে আশামূলক আচরণ বলা যায়।) দেখে সবাই অবাক হয়ে যেত, সেরকম নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে (অপকৃষ্ট করে) অন্যদের দেখিয়ে আকর্ষণ করার মধ্যেও লোকে সেকালে এইরূপ ‘আশামূলক আচরণ’ দেখত এবং ঘৃণায় মূখর হয়ে উঠত । সেজন্য রূপসজ্জা অপকর্ম বলে নিন্দিত ছিল । পরবর্তীকালে সেটা সমাজে গ্রহণীয় হয়ে গৌরবজনক হয়ে যায়। যেমন হয়েছে ‘অলঙ্কার’-এর ক্ষেত্রে, যেমন হয়েছিল ‘মৎসগন্ধ্যা’র ক্ষেত্রে – দুর্গন্ধবতী হয়ে গিয়েছিল সুগন্ধবতী । তাই অপরূপ শব্দের শব্দগত অর্থ ‘মন্দ রূপ’ হলেও সমাজ-ইতিহাসের বিচারে প্রাচীন কালে তা মন্দই ছিল । পরে সমাজ ব্যবস্থা যতই ব্যক্তিমালিকানার দিকে এগোতে থাকে, ততই শব্দটির অর্থ ক্রমশ ‘অতি সুন্দর রূপ’ হয়ে যায় ।

সূত্র:

  • কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ অপপ্রয়োগ, . মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
  • পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
  • বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

 

Leave a Comment

Amazing English Words

Amazing English Words

Dilly-dally (ডিলি ড্যালি) = হেলায় ফেলায় সময় কাটানো, ফালতু কাজে সময় কাটানো
Higgledy-piggledy (হিগল্‌ডি পিগল্‌ডি) = হযবরল, বিতিকিচ্ছি
Hoity-toity (হয়টি টয়টি) = দেমাকি, স্ত্রৈণ বড়ো সাহেবের দজ্জাল বউ
Hotch-potch (হচপচ) = জগাখিচুড়ি

Hub-bub (হাব বাব) = চিল্লাচিল্লি, মাছ-বাজারের কোলাহল
Hubble-bubble (হাবল বাবল) = আলবোলা, গড়গড়া, হুঁকো
Humpty-dumpty (হামটি ডামটি) = কুমড়োপটাশ, বেটে মানুষ

Hanky panky = ভোজবাজি, লুকোচুরি কাজ, গুপ্ত কলাকৌশল, ফাঁকিবাজি
Niminy-piminy (নিমিনি পিমিনি) = উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট, ভড়ংদার

Damn weed (ড্যাম উইড ) : ধ্যাৎ শালা

দুই

Willy-nilly (উইলি নিলি) = ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, করার জন্য করা
Wishy-washy (উইসি অয়োশি) = ভাবপ্রবণ, চাঁদ-সোহাগি
Cat fish (ক্যাট ফিশ) = মাগুর মাছ
Cat kin (ক্যাট কিন) = কাশফুল

তিন

Sparkling = দ্বীপ্তমান, বুদ্ধিমান ও সেয়ানা

Sparking = স্ফুলিঙ্গ
Sparing = মিত্যব্যয়ী, সংযমী
Spring = বসন্তকাল
Sprig =গাছের ছোটো ডাল
Prig = ছিচকে চোর
Pig = শূকর
Pi = ধার্মিক
I = আমি

Some Important English Words

  1. Amphibious (এ্যাম্ ফিবিয়াস) – উভচর
  2. Oyster (ওয়েস্টার) – ঝিনুক
  3. Alligator (এ্যালিগেটর) – কুমির
    03. Crab (ক্রাব) – কাঁকড়া
    04. Lizard (লিজার্ড) – টিকটিকি
    05. Leech (লীচ্) – জোঁক
  4. Python (পাইথন) – অজগর
    08. Snail (স্নেল) – শামুক
    09. Slough (স্লোফ) – সাপের খোলস
    10. Tadpole (ট্যাডপোল) – ব্যাঙ্গাচি
  5. Gall (গল) – মাছের পিত্ত
    12. Fins (ফিন্ স) – মাছের ডানা
    13. Roe (রো) – মাছের ডিম
    14. Scule (স্কাল) – মাছের আঁশ
  6. Shrimp (শ্রিম্প) – কুচো চিংড়ি
  7. Lobster (লব্-স্টার) – গলদা চিংড়ি
    17. Eel (ইল্) -বাইন মাছ
    18. Carp (কার্প) – পোনা মাছ
  8. Climbing fish (ক্লাইম্বিং ফিশ) – কৈই মাছ।
    20. Fish- monger (ফিশ মোঙ্গার) – মাছ বিক্রেতা

 

 

Leave a Comment

শুভ রাত্রি কিন্তু শুভ রাত নয় কেন; নওমুসলিম, নবমুসলিম নয় কেন

শুভ রাত্রি কিন্তু শুভ রাত নয় কেন; নওমুসলিম, নবমুসলিম নয় কেন

ড. মোহাম্মদ আমীন

শুভ রাত্রি কিন্তু শুভ রাত নয় কেন? কারণ, সংস্কৃতভাষীর কাছে বাংলা ছিল নীচ জাতের ভাষা। সাধারণ ও প্রাকৃতরা ছিল তাদের কাছে জানোয়ার তুল্য। শুভ’ ও ‘রাত্রি’ দুটোই তৎসম, কিন্তু ‘রাত্রি’ থেকে উদ্ভূত ‘রাত’ অতৎসম। তাই জাতচ্যুত অতৎসম ‘রাত’ শব্দকে উঁচুজাত বলে কথিত সংস্কৃত ‘শুভ’ তার পাশে বসতে

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

দেয় না— জাত যাওয়ার ভয়ে। ছোটো জাতের পাশে বসবে কেন সে? এজন্য ‘শুভ রাত্রি’, ‘শুভরাত্রি’। পাশে বসালে বলা হয়— গুরুচণ্ডালী। বাংলা হচ্ছে চণ্ডাল, সংস্কৃত হচ্ছে গুরু। বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণের প্রত্যেকটি স্তরে এখনও মৃত ভাষা সংস্কৃতের ঘৃণার্হ রীতি লক্ষণীয়। অনেকে আবার বলে বসবেন— ঘৃণার বিষয় নয়, কানে যেটা শুনতে ভালো লাগে। ভালো আবার কী! যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা; আমাদের ওভাবে অভ্যস্ত করে তোলা হয়েছে। ‘শুভ রাত্রি’ কিন্তু ‘শুভ রাত’ নয় কেন? এর কারণ শব্দের জাতপ্রথা। সংস্কৃত ভাষা প্রবল জাত্যভিমান নিয়ে সৃষ্ট ও পরিচালিত একটি প্রচন্ড পণ্ডিতম্মন্য ও অহংকারীদের ভাষা। এ ভাষায় কেবল উচ্চবংশীয়দের প্রবেশাধিকার ছিল। বৈয়াকরণগণ সংস্কৃতকে এমনভাবে লালন করেছেন যাতে উচ্চবংশীয় সংস্কৃত ছাড়া নীচু বলে কথিত প্রাকৃত বা বাংলা ভাষার সঙ্গে তার কোনো শব্দ না-মেশে। এটাকে এককথায় ঘৃণা বলা যায়।

একসময় সংস্কৃত ভাষার কোনো কথা নীচুজাত বলে কথিত কেউ শুনে ফেললে কানে গরম সিসা ঢেলে দেওয়া হতো। কানে গরম সিসা যাওয়ার ভয়ে তৎসম বা সংস্কৃত কোনো শব্দ আজও সহজে অতৎসমের সঙ্গে মিশে না এবং মিশে সুখের শব্দবন্ধন বা বাক্য-সংসার রচনা করতে পারে না। যদিও এখন কানে সিসা যাওয়ার ভয় নেই, কিন্তু মৃত সংস্কৃতপ্রেমী বুদ্ধিজীবীদের দাপটকে আমরা কতটুকু উপেক্ষা করার সামর্থ্য রাখি? তাঁদের সম্মিলিত স্বার্থ আছে, তাই ঐক্য আছে। আমাদের নেই। বাংলায় বাংলায় ‘শুভ রাত’ বা ‘শুভরাত’ বললে কোনো অসুবিধা হবে কি না। কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ, বাংলা সংস্কৃত ভাষা নয়, সংস্কৃত হতে আলাদা একটি সম্পূর্ণ নতুন ভাষা। কিন্তু আমাদের দীর্ঘকালের সংস্কার ও অভ্যস্ততা এবং সংস্কৃতসেবী পণ্ডিতগণ তা কি হতে দেবে সহজে? তেমনি ‘শুভ সকাল’ বলা হয়, কিন্তু ‘শুভ ভোর’ বলা হয় না। কারণ ‘ভোর’ অতৎসম।বাংলাকে এভাবে অপদস্থ দেখতে চাই না আর। আমি শুভরাত্রি বলব না, শুভ রাত বলব। আমি যেখানে সেখানে সমাস করব না। শহিদ মিনার লিখব, শহিদমিনার লিখব না।

অর্থ অভিন্ন হলেও বাংলায় এমন কিছু শব্দ আছে যেগুলো শুধু অতৎসম হওয়ার কারণে তৎসম শব্দের পাশে বসতে দেওয়া হয় না, অপাঙ্‌ক্তেয় গণ্য করা হয়। বাংলার পাশে বসলে জাত যাবে। যেমন: ‘বাঘ’ ও ‘শার্দুল’ একই অর্থ বহন করে; তবু ‘বাঘের বাচ্চা’ হয়, কিন্তু ‘শার্দুলের বাচ্চা’ বা ব্যাঘ্র-বাচ্চা হয় না। বলতে হয় শার্দুলশাবক বা ব্যাঘ্রশাবক। ‘মড়া’ ও ‘শব’ অভিন্ন অর্থ-দ্যোতক। তারপরও ‘মড়া-পোড়ানো’ বলে, ‘শবপোড়ানো’ বলে না। অভিধানের কোথাও পাওয়া যায় না।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

বলতে হয় শবদাহ। তেমনি বলা যায় না ‘মড়াদাহ’।মড়াকে পোড়াতে হয়, শবকে দাহ করতে হয়। এমন আরও কিছু উদাহরণ: কুকুরের বাচ্চা, কিন্তু সারমেয়শাবক; সাদাকাপড়, কিন্তু শ্বেতবস্ত্র; ফুলের তোড়া কিন্তু পুষ্পস্তবক; খবরের কাগজ, কিন্তু সংবাদপত্র; সাগরপাড়ি কিন্তু সমুদ্রযাত্রা; লালরঙ, কিন্তু লোহিতবর্ণ; কালোরঙ, কিন্তু কৃষ্ণবর্ণ; বিয়েবাড়ি, কিন্তু বিবাহবাসর; ফুলের বাগান, কিন্তু পুষ্পোদ্যান; শুয়োরের বাচ্চা, কিন্তু বরাহশাবক। জলপ্রপাত, জলযোগ, জলখাবার হয়; কিন্তু পানিপ্রপাত, পানিযোগ ও পানিখাবার হয় না।

এগুলো শব্দের জাতপ্রথা। সংস্কৃত শব্দ ব্রাহ্মণদের মতো। তারা যার-তার সঙ্গে বসে না, নিজ জাত ছাড়া ছোটো জাত বলে কথিতদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় না।আমরা এমন জাতপ্রথা ভাঙতে চাই। ভাষার আবার জাত কী? প্রবীণ যদি নবীনকে অবহেলা করে, ঘৃণা করে তাহলে প্রবীণ শেষ পর্যন্ত নাশ হয়ে যায়। যা ঘটেছে সংস্কৃতের কপালে। সে এখন মৃত ভাষা। কিন্তু বাংলা জীবিত হয়েও কেন ‍মৃতবৎ, কারণ ভাষাভাষীর অজ্ঞতা। বাংলা কোনো ভাষাকে অবহেলা করে সংস্কৃতের মতো তাড়াতাড়ি মরে যেতে চায় না। সে সংস্কৃত-সহ সব ভাষাকে যথামর্যাদা প্রদান করবে। প্রয়োজনমতে সব ভাষা থেকে নেবে, ঋণ স্বীকার করবে; মূল্যায়ন করবে । তবে কারো কাছে চণ্ডাল হয়ে থাকবে কেন?

নওমুসলিম, নবমুসলিম নয় কেন? নবমুসলিম না লিখে নওমুসলিম কেন লেখা হয়? নও এবং নব উভয়ে বিশেষণ। এরা পরস্পর সমার্থক হলেও নও ফারসি উৎসের (বিদেশি) শব্দ এবং নব তৎসম শব্দ। অন্যদিকে, মুসলিম আরবি উৎসের শব্দ। সংস্কৃত রীতিতে উপযুক্ত বিদেশি বা অতৎসম বিশেষণ থাকলে কোনো বিদেশি বা অতৎসম পদকে বিশেষায়িত করার জন্য সাধারণত বিদেশি উৎসের বিশেষণই ব্যবহৃত হয়। নইলে নাকি জাত যায়। তাই লেখা হয়, নওমুসলিম; লেখা হয় না ‘নবমুসলিম’। অনুরূপ, ‘শুভ’ ও ‘রাত্রি’ দুটোই তৎসম, কিন্তু ‘রাত্রি’ থেকে উদ্ভূত ‘রাত’ অতৎসম। তাই জাতচ্যুত অতৎসম ‘রাত’ শব্দকে সংস্কৃত ‘শুভ’ তার পাশে বসতে দেয় না— জাত যাওয়ার ভয়ে। এজন্য বলা হয় ‘শুভ রাত্রি’ বা ‘শুভরাত্রি’; বলা হয় না— ‘শুভ রাত’ বা ‘শুভরাত’। অনুরূপভাবে লেখা হয়, শুভসকাল বা শুভ সকাল; লেখা হয় না শুভ ভোর। প্রভাত অর্থদ্যোতক ভোর হিন্দি উৎসের শব্দ।

সূত্র:

  • কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ অপপ্রয়োগ, . মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
  • বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

 

Leave a Comment