ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র: বইটির নাম ‘ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র’ কেন; ‘ব্যবহারিক’ হলো না কেন

ড. মোহাম্মদ আমীন

ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র: বইটির নাম ‘ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র’ কেন; ‘ব্যবহারিক’ হলো না কেন

বাংলা একাডেমির সর্বশেষ অভিধান, ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান। এই গ্রন্থে ব্যবহারিক বানানের কোনো শব্দ কেউ পাবেন না। ওই অভিধানমতে, এই অর্থে একমাত্র শুদ্ধ ও প্রমিত বানান— ‘ব্যাবহারিক। আপনি ব্যবহারিক শব্দটি যেখানেই পেয়ে থাকুন না কেন,যতবারই লিখে থাকুন না কেন, বাংলা একাডেমির সর্বশেষ

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

সিদ্ধান্তমতে, এটি প্রমিত নয়— ভুল, অসিদ্ধ ও অশুদ্ধ ঘোষিত পরিত্যক্ত শব্দ। তাই তাদের সর্বশেষ অভিধানে ব্যবহারিক শব্দটিকে স্থান না-দিয়ে একমাত্র ব্যাবহারিক’ শব্দটিকে শুদ্ধ ও প্রমিত ঘোষণা করা হয়েছে। আগের বহুল প্রচলিত ব্যবহারিক এখন পরিত্যক্ত— ক্ষমতায় ব্যক্তি পরিবর্তনের কারণে প্রশাসনে ব্যক্তির পদহরণরীতি শব্দকেও রেহাই দিল না। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মন্তব্য কিন্তু অযৌক্তিক নয় বেশ যৌক্তিক। তাদের মতে— ইক-প্রত্যয় যুক্ত হলে শব্দের প্রথম বর্ণের অ-কার পরিবর্তন হয়ে আ-কার হয়ে যায়। যেমন: বর্ষ+ইক = বার্ষিক; মঙ্গল+ইক= মাঙ্গলিক।

প্রশ্ন আসতে পারে— ব্যবহারিক অশুদ্ধ হলে এতদিন বাংলা একাডেমির অভিধানে ছিল কেন? হঠাৎ ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে এসে কেন তাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলো? ইক-প্রত্যয়ের অনেক ব্যতিক্রম তো রয়েছে, এটিও তো থাকতে পারত— অন্তত অভিধানে রাখা যেত। এর উত্তরে বাংলা একাডেমির বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাকাতুয়ার মতো বলতে পারি — ব্যবহারিক বানান ভুল ছিল। ভুল না-হলে বাংলা একাডেমি ‘ব্যবহারিক’ শব্দটিকে তাদের সর্বশেষ অভিধানে রাখত।”

বাংলা একাডেমি কি কাজটি ঠিক করেছে? আমি এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারি, সমালোচনাও করতে পারি, কিন্তু গ্রাহ্য উত্তর বা সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। কারণ, এখানে শুধু ব্যাকরণের বিষয় নয়, কর্তৃত্বের বিষয়টিও জড়িত। জড়িত আছে— ব্যক্তির ইচ্ছা এবং ব্যাকরণিক ব্যাখ্যার ব্যক্তিক (ব্যক্তি+ক) ধরন ও মনোবৃত্তি। আবার নিজের মত প্রতিষ্ঠা কিংবা নতুন কিছু করার বা দেখানোর মাধ্যমে সস্তা বাহবা পাওয়ার বাঙালি ইচ্ছাকেও হেসে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাংলা একাডেমি বাংলা বানান ও বানানরীতি নির্ধারণে সরকারের যাবতীয় কর্তৃত্বপ্রাপ্ত একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। তার বিস্তৃত পরিসরের রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানেই ব্যক্তিবিশেষের নেতৃত্বে বাংলা বানানবিধি রচিত হয়, শব্দ প্রমিত হয় কিংবা পরিত্যক্ত হয়। তাই এখানে ব্যক্তির মনোভাবের প্রতিফলন ঘটলেও রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক কারণে প্রত্যেকে মান্য করে। অমান্যকারীগণ হাতেগোনা ব্যতিক্রম, ব্যতিক্রম তো আর উদাহরণ হতে পারে না! বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চাকুরির সমুদয় পরীক্ষা, এনসিটিবি, বিচারালয় এবং সকল সরকারি-আধাসরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাংলা একাডেমি নির্দেশিত বানানরীতি অনুসরণ করার নির্দেশনা রয়েছে। এমনকি প্রাত্যহিক ব্যক্তিগত যোগাযোগও বাংলা একাডেমি নির্দেশিত বানানরীতি অনুসরণ করা হয়।

গ্রন্থ লেখার পেছনে প্রত্যেকের উদ্দেশ্য থাকে। ‘ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র বইটি সর্বস্তরের শিক্ষালয়, চাকুরির পরীক্ষা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিচারালয়, গবেষণা, ব্যক্তিগত ব্যবহার ও যোগাযোগের কাজে প্রমিত বানান ব্যবহারের সুবিধার্থে লেখা হয়েছে। তাই বইটিতে বাংলা একাডেমির সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী— ব্যাবহারিক বানান দেওয়া হয়েছে। তেমনি লেখা হয়েছে— ঘুস, গোরু, পটোল, ছোটো, খ্রিষ্টাব্দ, পরি, রানি, শিহরন, রূপসি – – – ইত্যাদি। ব্যাবহারিক বাংলা বানান সমগ্র গ্রন্থটি বাংলা একাডেমি নির্দেশিত সর্বশেষ সিদ্ধান্তের আলোকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের শিক্ষালয়-সহ সকল প্রতিষ্ঠান, গবেষণা এবং বিসিএস-সহ সব ধরনের চাকুরির পরীক্ষায় যেভাবে বাংলা লেখার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে ঠিক সেভাবে প্রণীত হয়েছে। তাই ব্যাবহারিক লেখা হয়েছে।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment