অমিতাভ বচ্চন ট্রাম্প এবং বাংলাদেশের মদন

অমিতাভ বচ্চন ট্রাম্প এবং বাংলাদেশের মদন

ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলাদেশ কোথায় ট্রাম্প তা জানেন না- এটি শুনে আমার এক বন্ধু অবাক হয়ে গেলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, বেশ খ্যাত। ট্রাম্পকে গালাগাল দিয়ে বললেন, এমন মূর্খ লোক কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়?

ড. মোহাম্মদ আমীন

তুমি বামনা চেন? প্রফেসর বন্ধুর কাছে জানতে চাইলাম।

এটা কী? নিশ্চয় বামন থেকে বামনা? তুমি তো আবার বাংলার মানুষ।

না, বরগুনা জেলার একটি উপজেলা।

বোচাগঞ্জ, মদন?

গালি দিলে কেন? একটা উপজেলা চিনিনি বলে গালি দিতে হয়?

গালি নয়, আমি বললাম, “ বোচাগঞ্জ দিনাজপুর জেলার এবং মদন নেত্রকোণা

জেলার একটি উপজেলা।”

তাই নাকি? বিস্ময়ের গলায় প্রফেসর বন্ধু বললেন, এমন গালি গালি নাম?

বোদা চিনো তুমি? আমি বললাম।

বাজে গালি দিও না তো, বন্ধু রেগে গেল হঠাৎ

আমি বললাম, বাজে গালি নয়, বোদা হচ্ছে পঞ্চগড় জেলার একটা উপজেলা।

০০০০

সরকারি কাজে ইস্তাম্বুল গিয়েছি ছয় জন। হোটেলের অনতিদূরে মার্কেট। এক দিন বিকেলে কেনাকটার জন্য একসঙ্গে রওয়ানা দিলাম। আমি শুধু টার্কিস টুপি কিনব। বিশাল এক দোকানে ঢুকলাম। আমার সঙ্গে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, প্রকৌশলী মাহফুজ। বাকি তিন জন্য অন্য দোকানে ঢুকেছেন। মুসলিম জানতে পেরে দোকানদার খাতির করে বসতে দিলেন। খেতে দিলেন অনেক কিছু।

বললেন, আপনাদের দেশের নাম?

আমি বললাম, বাংলাদেশ, আপনার দেশ?

তুর্কমেনিস্তান, চিনেন?

চিনি।

বাংলাদেশ কোথায়? দোকানদার জানতে চাইলেন।

আপনি বাংলাদেশ চিনেন না?

না।

তুর্কমেনিস্তানের কাছাকাছি, মাঝখানে মাত্র দুটো দেশ। চিনতে পেরেছেন?

দোকানদার বললেন, কোনো দিন নামই শুনিনি, চিনব কীভাবে?

আজমত উল্লাহ খান বললেন, বাংলাদেশ চিনেন না, কী চিনেন আপনি?

অমিতাভ বচ্চনকে চিনি। আপনার দেশ বুঝি তার কাছাকাছি?

দোকান থেকে বের হয়ে আজমত উল্লাহ খান মুখটা মলিন করে বললেন, কী গণ্ডমূর্খ লোক, আর কী হতাভাগা আমরা; ব্যাটা ষোলো কোটি লোকের বাংলাদেশ চিনে না, অমিতাভ বচ্চন চেনে।

০০০

ঢাকা শহর।

রিকশাওয়ালাকে বললাম, আপনার বাড়ি?

রংপুর।

রংপুরের কোথায়?

কুড়িগ্রাম।

কুড়িগ্রাম বললেই তো হতো, এটা তো একটা জেলা। রংপুর বললেন কেন?

একশ জন প্যাসেঞ্জারের পঁচানব্বই জন লোক কুড়িগ্রাম বললে চিনে না। আবার জানতে চায় এটা কোথায়। রিকশা চালাব, না কি তাদের প্রশ্নের জবাব দেব? তাই রংপুর বলি।

০০০

আগামী প্রকাশনীর মালিক ওসমান গণি বিখ্যাত এক লেখকের সঙ্গে গল্প করছিলেন তার অফিসে। এসময় ঢুকলাম আমি। ওসমান গণি আমাকে স্বাগত জানিয়ে লেখকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ড. আমীন, বিখ্যাত লেখক, চিনেন তো?

লেখক মুখটা বিকৃত করে বললেন, চিনি না, কোনো-দিন নামও শুনিনি। হাজার হাজার লেখক, কয় জনের নামই বা জানব। বাংলাদেশে কাউয়া আর লেখক গুণে শেষ করা যায় না। কাগজ পেলেই লেখা শুরু করে। লেখকের জন্য বইমেলায় হাঁটাই যায় না।

আমি কিন্তু আপনাকে চিনি, বিনয়ের সঙ্গে বললাম।

লেখক বললেন, আপনার বাড়ি?

চন্দনাইশ।

এটা কোথায়?

চেনেন না?

কোনো-দিন নামও শুনিনি।

তার কথা শুনে আমার ট্রাম্পের কথা মনে পড়ে গেল। এই লেখককে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করে দিলে কেমন হয়? মনে মনে প্রশ্ন করলাম মনকে। কিন্তু মুখে বললাম, সত্যি চন্দনাইশ চিনেন না?

না, লেখকের গলায় প্রবল জোর, না-জানা আর না-চেনা যেন মহাকৃতিত্ব।

আমি বললাম, এটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার একটি উপজেলা। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম, সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নেলী সেন গুপ্তা, কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জে এম সেন, আহমদ ছফা এ উপজেলায় জন্ম নিয়েছেন। আপনি চন্দনাইশ চেনেন না, আমাকে কীভাবে চিনবেন? আমি তো আপনার উপজেলার নাম জানি, গালি গালি নাম। বিখ্যাত হতে হলে কম জানতে হয় বুঝি?

তিনি মুখটা গোমড়া করে রইলেন।

আমি বুঝতে পারলাম, বিখ্যাত হতে হলে কম জানতে হয় এবং কম জানলে বিখ্যাত হওয়া যায় -এই বিখ্যাত লেখক, বাংলাদেশের নব্বই ভাগ মানুষ এবং ট্রাম্প সবাই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা বানান: অতিরিক্ত সচিব-এর বাংলা বানান: ভুল কেবল ভুল: বাংলা আমার ভালো নেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভুলে ভুলে সয়লাব: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও রেজিস্ট্রারের বাংলা বানান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভুল আর ভুল

#subach