ভিআইপি কথার অর্থ: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি; অত্যন্ত নপংসুক ব্যক্তি

ভিআইপি কথার অর্থ

ড. মোহাম্মদ আমীন

ভিআইপি (VIP) শব্দের পূর্ণরূপ কী? প্রশ্ন করেছিলেন, গাছবাড়ীয়া নি. গৌ. উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী অমরনাথ ভট্টাচার্য। স্যারের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম, “Very Impotent Person”. সে অনেক দিন আগের কথা। তবে, এখনো মনে আছে। উত্তর শুনে অমরনাথ স্যার, চোখমুখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে বাঘের মতো গর্জন করে আবার জানতে চেয়েছিলেন, পিচ্চি, কী বললি তুই? আমি আগের মতো শব্দে, কিন্তু সংশিত গলায় বলেছিলাম, “Very Impotent Person”, স্যার। “কে বলেছে?” স্যারের দ্বিতীয় প্রশ্ন। ‘‘বাবা।’’ আমার সহজ-সত্য উত্তর।

‘বাবা’ শুনে অমরনাথ স্যারের চোখ মগডালে। তিনি নিশ্চিত, আমার বাবা অমন কথা বলতে পারেন না। আমি মিথ্যা বলেছি, নয়তো ভুল বলেছি। এরপর অমরনাথ স্যার, ক্লাসে আর কখনো এই প্রশ্নটি কাউকে করেননি। তখন বুঝতে পারিনি, কেন করেননি। তবে, স্যারের চোখমুখ দেখে বুঝেছিলাম, উত্তরটা তাঁর মনঃপুত হয়নি, কিন্তু উত্তরটা শুদ্ধ ছিল কি না, তাও বলেননি। অবশ্য আমার উচ্চারণের শুদ্ধতা নিয়ে আমার নিজেরই যথেষ্ট সন্দেহ ছিল এবং এখনো আছে। ‘ভাত খাব’ বাক্যটাকে উচ্চারণ করি, “বাত খাব”। ছেলেমেয়ে হেসে বলে, কাব্বি, ‘ভাত’ কিন্তু ‘বাত’ নয়।

আমার ডান পাশে বসা সহপাঠী রঞ্জন কানে কানে বলেছিল, “আমীন, ভিআইপি মানে “Very Idiot Person”, তুমি ভুল বলেছ।” রঞ্জনের ব্যাখ্যা শুনে সংশয়টা আরো জোরালো হয়ে উঠেছিল। তাই মনে হলো, আমার উত্তরটা ভুল। এজন্যই স্যার বাঘের মতো গর্জন করেছেন, কিন্তু বাবা যে বললেন–মনে মনে ভাবতে থাকি অনুশোচনায়। বাম পাশে বসা কাদের যখন বলল, “ভিআইপি শব্দের পূর্ণরূপ, “Very Isolated Person”, ওই যে, অ্যাবনরমালগণ যেমন আইসোলেটেড থাকতে চান।” তখন সন্দেহটা আরো প্রবল হলো। 

চুপে চুপে বলছি, ছাত্র হিসেবে আমি ছিলাম তৃতীয় স্তরের। কখনো ভালো ছাত্র ছিলাম না। কুমকুম স্যার ছাড়া সব শিক্ষক মনে করতেন, আমি বড়ো হয়ে বড়োজোর সদাগরি অফিসের পিয়ন হতে পারব। তারপরও নিজের উত্তর থেকে নড়িনি। Impotent বলেই তারা প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধী বলেই সাধারণ ও স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনধারণ করতে পারে না। তাই আগেভাগে রাস্তা পরিষ্কার করে রাখতে হয়, তারা উলটো পথে চলে, তাদের জন্য ফেরিকেও থেমে থাকতে হয়। রঞ্জন এখনো বলে, VIP কথার পূর্ণরূপ, Very Idiot Person, তা না হলে কি VIP- দের জন্য সাধারণ মানুষকে এত ভোগান্তিতে পড়তে হয়? বোকাদের জন্যই তো সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়, না কি? তাই তো! তাহলে, কাদেরের কথাও সত্য। ভিআইপিগণ মানসিক রোগির মতো সর্বদা আইসোলেটেড থাকতে চায়।

আমার এক চাচা বলতেন, ‘Important; অর্থ গুরুত্বপূর্ণ আর `Impotent’ অর্থ নপুংসক। যারা গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে কিংবা স্টিকার পরিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক গর্দভের মতো উলটো বা ভুল পাশে (wrong side) গাড়ি চালিয়ে সাধারণ জনগণের সাবলীল চলাচলকে দুর্বিষহ করে দিলেও পথশৃঙ্খলারক্ষাবাহিনীর বাধার সম্মখুীন হতে হয় না তাঁদের ভিআইপি বা VIP বা অত্যন্ত নপুংসক ব্যক্তি (Very Impotent Person) বলা হয়। একদিন দেখি চাকুরিসূত্রে আমার নামের সঙ্গেও ভিআইপি লেগে গেছে। হায়, হায়! আমি কী Impotent হয়ে গেলাম? না। তখন এর পূর্ণরূপ দিলাম, Very Important Person. অধুনা, চারিদিকে লাখ লাখ ভিআইপি-মানুষ এবং হাজার হাজার গাড়ি-ভিআইপি দেখে মনে হয়, পুরো দেশটাই বুঝি ভিআইপি হয়ে যাবে। তাদের কাণ্ড দেখে মনে হয়, ভিআইপি অর্থ “Very Impotent Person”। ভিআইপি লাখ লাখ হলেও এরা প্রকারন্তরে সংখ্যালঘু। এদের আচরণ দয়া বা সহানুভূতির অধিকার রাখে না, করুণা আর ঘৃণাই এদের পাওনা।

#subach

Leave a Comment

হাইপাতিয়া: ধর্মের কারণে গণপিটুনিতে নিহত বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ; ধর্মমৃত্যু, ধর্মের মৃত্যু: ধর্মের কারণে মৃত্যু

হাইপাতিয়া: ধর্মের কারণে গণপিটুনিতে নিহত বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ; ধর্মমৃত্যু, ধর্মের মৃত্যু: ধর্মের কারণে মৃত্যু

ড. মোহাম্মদ আমীন

প্যাগান ধর্মানুসারী বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ এবং গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক-বক্তা হাইপাতিয়া বিশ্বের প্রথম মহিলা গণিতজ্ঞ, যার কার্যাবলি সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়। হাইপাতিয়া ৩৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের অর্ন্তগত মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।হাইপাতিয়ার বাবা তিয়ন; তিনিও ছিলেন গণিতজ্ঞ । তিয়ন ইউক্লিডের “ইলামেন্টস (Elements) গ্রন্থের টীকা-ভাষ্যকার ও সম্পাদনার কাজ করেছিলেন। দর্শন, বিজ্ঞান ও গণিতের উপর হাইপাতিয়ার প্রবল দখল ছিল। এসব বিষয় তিনি অনেকগুলো বই লিখেছেন। ত্রয়োদশ খণ্ডে রচিত দায়োফান্তাস ( Diophantus)-এর আর্থমেটিকা (Arithmetica) গ্রন্থের যথার্থ মন্তব্য ও টীকা লেখক হিসেবে হাইপাতিয়া আধুনিক গণিত জগতেও খ্যাত। এখনো পরম শ্রদ্ধায় স্মরিত হন তিনি। উল্লখ্য, টলেমির (Ptolemy) আলগেমিস্ট (Almagest) গ্রন্থের ভাষ্যকার হিসেবেও হাইপাতিয়া খ্যাত। অ্যাস্ট্রোবেল এবং হাইড্রোমিটার-এর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বর্তমানে ব্যবহৃত হাইড্রোমিটার হাইপাতিয়ার হাতে এমন উন্নত হওয়ার পথ খুঁজে পায়।

হাইপাতিয়া ছিলেন তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ এবং অবিসংবাদিত দার্শনিক বক্তা। মাতবাদিক দ্বন্দ্বে বির্যস্ত মানুষকে নারী-পুরুষ এবং জাতি ও ধর্মনির্বিশেষে পরস্পর সহানুভূতিশীল করে তোলাই ছিল তার দর্শনের মূল। তিনি মনে করতেন, এটি নিশ্চিত করা গেলে বিশ্বশান্তি বহুলাংশে নিশ্চিত হয়ে যাবে। এসব নিয়ে তিনি বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতেন। তাই তাকে প্রথম মহিলা দার্শনিক বক্তা বলা হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সর্বধর্মের প্রতি সৌহার্দ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে সর্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার কাজ করতেন। বিদ্যমান কোনো ধর্মবিশ্বাসের প্রতি তার কোনো অশ্রদ্ধা ছিল না। সবার প্রতি তাঁর মমতা ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল। ৪১৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্য ভাগের এক দিনের কথা। প্রতিদিনের মতো ওই দিনও হাইপাতিয়া ধর্মীয় সহিষ্ণুতার উপযোগ নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এসময় স্থানীয় সিটি বিশপ সেন্ট ক্যারিলের নির্দেশে এক পাদ্রির নেতৃত্বে এক দল খ্রিষ্টান এসে তাকে ধরে টেনে হিচড়ে গির্জার ভিতর নিয়ে যায়। হাইপাতিয়া এমন জঘন্য আচরণের কারণ জানতে চাইলেন।

মূর্খ ধর্মবাজ বিশপ ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, বিজ্ঞান ধর্মবিরুদ্ধ, বিজ্ঞানী ধর্মনাশক, অধিকন্তু তুমি নারী। নারী হয়েও তুমি ধর্মবিরুদ্ধ কাজ করে যাচ্ছ। তোমাকে বাঁচিয়ে রাখলে যিশু কষ্ট পাবেন।পবিত্র তিন আত্মার নির্দেশ এসেছে তোমাকে হত্যা করার। আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার নির্দেশে মৃত্যুদণ্ড দিলাম। এরপর এক ঝাঁক ধর্মবাজ হাইপাতিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চরম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এক দিন পর তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে রোমান সম্রাট দুঃখ প্রকাশ করে হাইপাতিয়াকে “দর্শনের জন্য শহিদ” আখ্যায়িত করেন। বর্তমানে হাইপাতিয়া নারীজাগরন আন্দোলনের বিশ্বপথিকৃৎ।

#subach

Leave a Comment

ধর্ষণ অবহেলিত একটি কারণ: ধর্ষণ কেন করে

ধর্ষণ অবহেলিত একটি কারণ: ধর্ষণ কেন করে

ড. মোহাম্মদ আমীন

‘ধর্ষণ’ এক ধরনের যৌন আক্রমণ।  বাংলাদেশে ইদানীং এই আক্রমণটা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে, বেড়ে গেছে ধর্ষণের সঙ্গে হত্যা। ধর্ষনের প্রকৃতিও নিষ্ঠুর, ছাত্র ধর্ষণ করছে শিক্ষার্থীদের। ধর্ষণের মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর হচ্ছে শিশুধর্ষণ। বাংলাদেশের গত  এক বছরে এমন একটা দিন যাইনি, যেদিন এক বা একাধিক শিশু ধর্ষিত হয়নি। নারীদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশের ১৪টি দৈনিক পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে বলছে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১০৫০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর আগের বছর সংখ্যাটা ছিল আরো বেশি। তবে, পত্রিকায় আসেনি এমন ধর্ষণের সংখ্যা আরো বেশি। কারণ, ধর্ষণের বিষয়টি অধিকাংশ লোকই সামাজিক কারণে গোপন রাখতে চায়। প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মোট ১ হাজার ২৫১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তন্মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২২৪ জন নারী ও শিশু। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৮ জনকে।  ধর্ষণসহ অন্যান্য নির্যাতনের মোট ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ২৩৫টি।

একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে প্রতি পাঁচ মিনিটে একটি করে ধর্ষণ হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতিঘণ্টায় ১২ জন, প্রতিদিন ২৮৮ জন এবং প্রতিবছর ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯২ জন ধর্ষিত হচ্ছে। ধর্ষণ শুধু ধর্ষিতকে নয়,  একই সঙ্গে তার আত্মীয়-স্বজনের জীবনেও নানা মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।  প্রতিধর্ষণের সঙ্গে ধর্ষিতের পরিবার-পরিজন এবং আত্মীয়-স্বজন মিলে গড়ে ৬৭ জন আত্মীয় নানাভাবে নানা প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হন। সে হিসেবে বছরে ৭ কোটি ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৪ ব্যক্তিকে একটি ধর্ষণের জন্য লজ্জিত, আক্রান্ত, অপদস্থ বা সামাজিক হয়রানির শিকার হতে হয়। সুতরাং, ধর্ষণ যে, সমাজের জন্য একটি অত্যন্ত মারাত্মক হুমকি সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড়ো আজব বিষয় হলো, ধর্ষণ-অপরাধে ধর্ষিতা নিরপরাধ হলেও তাকে এমনভাবে থাকতে হয়, যেন সেই অপরাধী। কোনো মেয়ে ধর্ষিত হলে পুরুষের চেয়ে মেয়েটাকে  বেশি লজ্জায় পড়তে হয়। এ এক উদ্ভট সমাজ, উদ্ভট ব্যবস্থা। ধর্ষণের অনেকগুলো কারণ আছে, তবে  যে কারণটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনার দাবি রাখে, সেটিই নানা কারণে উপেক্ষিত। এটি ধর্ষণ-অপরাধ বিস্তারের অন্যতম কারণ।

যেসব দেশে বৈধ যৌনালয় নেই বা প্রয়োজনের তুলনায় কম সেসব দেশে ধর্ষণ বেশি হয়। মধ্যপ্রাচ্যেও এখন প্রচুর বৈধ যৌনালয় আছে। যে জনপদে পায়খানা থাকে না, সেই জনপদ পুরোটাই মলে মলে মলে ভরে যায়। অসহনীয় হয়ে উঠে মানুষের জীবন। তাই যৌন ব্যবসায় পৃথিবীর আদিম ব্যবসায় হিসেবে গড়ে উঠেছিল। যে লোক যৌনালয়-বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়, দেখা গেছে- সেই প্রথম এর প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়। যৌন-তাড়না অনেক সময় মল-ত্যাগের তাড়নার চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠে। বৈধ ও নির্দিষ্ট যৌনালয়ের অভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে এখন অসংখ্য বাসাবাড়ি যৌনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত, বাড়ছে যৌনাপরাধ।যৌন অপরাধকে কমিয়ে আনার লক্ষে  বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন ব্যবস্থার প্রচলন আছে। এ প্রসঙ্গে  মুতাহ বিবাহের কথা উল্লেখ করা যায়। 

মানুষ নিশ্চিত মনে পবিত্র হয়ে প্রার্থনা গৃহে যায়। তাই প্রার্থনা গৃহ নির্মাণের আগে প্রযোজন পায়খানা গৃহ এবং ধৌতস্থান নির্মাণ। সাধারণত এটিই করা হয়ে থাকে।  নিবিষ্ট প্রার্থনার জন্য প্রত্যেককে মলের চাপমুক্ত হয়ে প্রার্থনা গৃহে ঢুকতে হয়। নইলে নিজের সঙ্গে সঙ্গে অন্যের প্রার্থনায়, এমনকি প্রার্থনাগৃহও অপবিত্র হয়ে যাওয়া আশঙ্কা থাকে। যৌন আবেগ প্রবল হয়ে গেলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়, ঠিক যেমন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে  পেটে প্রকৃতির ডাক পড়লে।  এসময় উপযুক্ত জায়গা না-থাকলে হিতাহিত মানুষ যত্রতত্র মল ত্যাগ করতে পারে। তখন দূষিত হয়ে পড়ে পরিবেশ।  বিষয়টি আমাদের খুব গভীরভাবে চিন্তা করে দেখা এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

#subach

Leave a Comment

ডেঙ্গু শব্দের অর্থ: ডেঙ্গু কী এবং কেন: ব্যুৎপত্তি, উৎপত্তি

ডেঙ্গু শব্দের অর্থ: ডেঙ্গু কী এবং কেন: ব্যুৎপত্তি, উৎপত্তি

ড. মোহাম্মদ আমীন

 “ডেঙ্গু” শব্দের আদি উৎস সম্পর্কে গবেষকগণ নিশ্চিত নন, যদিও রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বলা হয়, শব্দটির উৎস সোয়াহিলি(Swahili)। সোয়াহিলি শব্দবন্ধ “কা-ডিঙ্গা পেপো” থেকে ‘ডেঙ্গা’ শব্দের উদ্ভব। প্রসঙ্গত, “কা-ডিঙ্গা পেপো” শব্দবন্ধের অর্থ, দুষ্ট আত্মার কারণে সৃষ্ট রোগ। আফ্রিকান লোকজন মনে করত, এই রোগটি দুষ্ট আত্মারা ছড়ায়। অনেকের মতে, শব্দটির অর্থ “জলীয় বিষ” এবং ‘হাড়ভাঙ্গা’। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ‘ডিঙ্গা’ এসেছে স্পেনীয় শব্দ Dengue থেকে। যার অর্থ ছিল, খুঁতখুঁতে, সবাধানি, স্পর্শকাতর প্রভৃতি। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগিরা সাধারণত খুঁতখুঁতে বা অতি সাবধানি হয়ে পড়ত। তাই রোগটির নাম হয় Dengue। তবে, জাতিভেদে রোগটির লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন দেখা যেত। যেমন, ওয়েস্টইন্ডিজের ক্রীতদাসরা এ রোগে আক্রান্ত হলে ভঙ্গিমা ও চলন ডান্ডি বা নৌকার মতো হয়ে যেত। তাই রোগটি “ডান্ডি জ্বর” নামেও পরিচিত ছিল।

অনেকের মতে, ডেঙ্গু শব্দের অর্থ, “break-bone”। সুতরাং, ডেঙ্গু জর অর্থ “break-bone fever”। পেশী ও হাড়ে যন্ত্রণা এ জ্বরের অন্যতম লক্ষণ বলে রোগটির নাম হয় “break-bone fever”। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের ফিলাডেলফিয়ার মহামারীর উপর লিখিত ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দের প্রতিবেদনে পদার্থবিদ বেঞ্জামিন রাশ প্রথম “break-bone fever” কথাটি ব্যবহার করেন। ডেঙ্গুর জন্য ব্যবহৃত অন্যান্য শব্দের মধ্যে “ব্রেকহার্ট ফিভার” এবং “লা ডেঙ্গু” উল্লেখযোগ্য। প্রবল রোগের জন্য ব্যবহৃত শব্দের মধ্যে “ইনফেকচুয়াস থ্রম্বোসাইটোপেনিক পার্পারা”, “ফিলিপাইন”, “থাই হেমোরেজিক ফিভার” এবং “সিঙ্গাপুর হেমোরেজিক ফিভার” অন্যতম।তবে, যেসব দেশে এ রোগটি প্রথম দেখে ছড়িয়ে পড়ছিল সেসব দেশে রোগটি ‘ডেঙ্গু’ নামে অভিহিত হতো। তাই নানা নামের মধ্যে ডেঙ্গু নামটিই মুখ্য হয়ে উঠে। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের পর ডেঙ্গু জ্বর শব্দটির ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়।

প্রসঙ্গত, সম্ভাব্য ডেঙ্গু জ্বরের ঘটনার প্রথম বিবরণ পাওয়া চীনে। জিন বংশের (২৬৫-৪২০ খ্রিষ্টাব্দ) আমলে এক চীনা মেডিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়ায় “জলীয় বিষ” নামের একটি নতুন রোগের কথা বলা হয়, যা উড়ন্ত পতঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ রোগটি উড়ন্ত পতাকা হতে সৃষ্ট, কিন্তু তা যে মশা সেটি নিশ্চিত ছিল না। মূলত, ওই রোগটিই ছিল আধুনিক ডেঙ্গু। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে “এডিস ইজিপ্তাই” মশার পরিবাহিতা নিশ্চিত হয়।

#subach

Leave a Comment

উলঙ্গ না হয়ে উপায় নেই যার: মুখোশ বহুরূপী

উলঙ্গ না হয়ে উপায় নেই যার

ড. মোহাম্মদ আমীন

সাধারণ অর্থে যা দিয়ে মানুষ মুখ ঢাকে, ঢেকে রাখে– সেটিই মুখোশ, যাকে বলা যায় মুখাবরণ। এর আর একটি অর্থ কপটতা। কিন্তু মুখোশধারী শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ : এমন জীব, যে নানা কৌশলে বিভিন্ন কারণে নিজের প্রকৃত রূপ ঢেকে রাখে; ঢেকে রাখার জন্য নানা আবরণ ব্যবহার করে। এটি অনেকটা বর্ণচোরা ও বহুরূপী শব্দের সমার্থক। সাধারণত শব্দগুলো নিন্দার্থে ব্যবহৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে এ শব্দগুলোর অর্থকে জীবনে প্রয়োগ করে মানুষ খ্যাত হয়, পূজিত হয়। মুখোশধারী ও বর্ণচোর বা বহুরূপী না হলে কোনো মানুষই সভ্য সমাজে কখনো স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতো না, হয়নি; হয়তো হবেও না। মুখ-ঢাকা যদি কপটতা হয়, তাহলে শরীর-ঢাকা মহাকপটতা, কিন্তু মনুষ্য সমাজে এই মহাকপটতা দীর্ঘ ব্যবহারের কারণে মহা-গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে। মুখোশহীন চলাফেরা করার জন্য দার্শনিক ডায়োজেনেসকেও নিন্দিত হতে হয়েছে। পশুরা যদি পোশাক পরে কেমন হবে? অথচ এই পোশাক পরেই মানুষ তার আসল রূপ ঢেকে রাখে, রাখছে। শরীরে একটা ক্ষত হলেও মানুষ ওই স্থান অন্যকে দেখাতে লজ্জা পায়, ঢেকে রাখে। কিন্তু প্রয়োজনে খুলে রাখে মহাসমারোহে।

মন্দ জিনিস বা বিষয় মানুষ অন্যের কাছে গোপন রাখে। মানুষ এমন একটা জঘন্য ও উদ্ভট জীব, যে পোশাক দিয়ে নিজের শরীরের অনেক অংশকে মন্দ বা লজ্জাস্থান বানিয়ে দিয়েছে।লজ্জাস্থান কী? অনাদিকাল থেকে সাধারণের চোখের আড়ালে রাখার জন্য ঢেকে রাখতে রাখতে মানুষ নিজের শরীর যে অংশটাকে

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিবেকহীনের মতো জঘন্য স্থানে পরিণত করেছে, সেটিই লজ্জাস্থান। কোন পশু নিজের শরীরের প্রতি এমন অবিচার করেনি। পোশাক মানুষের সবচেয়ে প্রিয় মুখোশ। যা সবাই পছন্দ করে। পশু আর মানুষের প্রধান তফাত– মানুষ পরে এবং পড়ে; পশু পরে না; পড়েও না। মানুষ মাত্রই পোশকাধারী তথা আবরণধারী; মুখোশধারী ও বহুরূপী, কিন্তু পশু সাধারণত মুখোশধারী ও বহুরূপী নয়। মানুষ আর পশুর দৃশ্যমান পার্খক্যের মধ্যে প্রথম ও প্রধান বিষয় পোশাক। মুখোশ ধারণ করেই মানুষ প্রথম পশু থেকে নিজের সুস্পষ্ঠ পার্থক্য ঘোষণা করে। তাই মুখোশধারী বা পোশাকধারী না হলে মানুষ, প্রকৃত অর্থে আর মানুষ থাকে না। মনুষ্য শিশু উলঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়, কিন্তু উলঙ্গ মানুষকে কি স্বাভাবিক মানুষ বলা হয়? হয় না; তাহলে উলঙ্গ জন্মগ্রহণকারী শিশু কীভাবে স্বাভাবিক শিশু হয়? নিশ্চয় উলঙ্গ মানুষের মতোই অস্বাভাবিক। আসলে প্রকৃতি সব মানুষকে অস্বাভিক করে পাঠায়; এজন্য মানুষকে বলে পতিত জীব। পশু কিন্তু পতিত জীব নয়। তাদের ধর্মগ্রন্থে এমন কোনো কথা লেখা নেই।

সবচেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে মানুষ যত খ্যাত ও প্রভাবশালী হয়, তার পোশাক তথা মুখোশের বাড়াবাড়িটা তত প্রকট হয়ে উঠে। সম্রাট আর সাধারণ মানুষের পোশাকের দিকে নজর ‍দিলে বিষয়টা অনুধাবন করা যায়। মানুষের ব্যক্তিত্ব, প্রভাব, ধন আর মর্যাদা মুখোশেই ফুটে উঠে। এজন্য শেখ সাদীর মতো বিখ্যাত মানুষকেও অপদস্থ হতে হয়েছে, উপযুক্ত পোশাক না পরলে অনেক স্থানে ঢোকা যায় না; ঢাকা ক্লাবে ঢোকা যায় না। ন্যাংটো হয়ে থাকলে তো কথায় নেই। শেখ সাদি কমদামী পোশাক পরেছিলেন, যদি মুখোশহীন হয়ে যেতেন, তো কী হতো? আমি পৃথিবীতে অনেক বড়ো বড়ো নেতা, ধনী, খ্যাতিমান ব্যক্তি দেখেছি, কিন্তু মুখোশহীন মানে উলঙ্গ কাউকে দেখিনি। যদিও তারা অনেক জায়গায় অনেক কারণে উলঙ্গ হয়– ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। এমন কপটতা কেবল মানুষেই আছে। মানুষ মাত্রই বহুরূপী বা বর্ণচোর। যে যত দক্ষ বহরূপী, সে তত খ্যাত, পুণ্যবান এবং পূজনীয়। অবতারদের দিকে তাকান, তাকান রাজনীতিবিদ আর ধর্মগুরুদের দিকে; তাকান আমার দিকে; দেখবেন- সবাই বর্ণচোর। যে ব্যক্তি নিজের পরিবারের সদস্যের জন্য উদার-ধনী, সে ব্যক্তি অসহায় প্রতিবেশির জন্য দীনহীন-কৃপণ।

পশুরা সাধারণত বহুরূপী বা বর্ণচোর নয়; যদিও কিছু কিছু প্রাণী অপরিহার্য কারণে- শিকার বা আত্মরক্ষার খাতিরে রং বদলায়। মানুষ কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়, তার রং বদলের ধরন এত মারাত্মক যে, মানুষও মানুষকে চিনতে পারে না। স্ত্রী রং বদলায় স্বামীর কাছে; স্বামী, স্ত্রীর কাছে; পিতা, পুত্রের কাছে এবং পুত্র, পিতার কাছে। যে লোকটি বসের কাছে বিড়াল, সে লোকটি অধস্তনের কাছে অধঃস্তন সিংহ; যে নারী স্বামীর কাছে বাঘিনি, সে নারী প্রেমিকের কাছে রাধা। যে পুরুষ স্ত্রীর সামনে নপুংসক, সেই পুরুষ আহ্বান-সনদে লুচ্চা কুকুর। যে মানুষের কাছে নিজের শিশু সন্তানের মল স্বাভাবিক, সে একই মানুষের কাছে বৃদ্ধ মা-বাবা বা অন্যের মল ভয়ঙ্কর দূষণ, দুঃসহ ভীষণ।

এত বহুরূপী জীব আর নেই। মানুষ বহুরূপী আচরণে এমন অভ্যস্থ হয়ে গেছে যে, বহুরূপী না-হয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর। বহুরূপী না হলে ওই মানুষটা পাগল আখ্যায়িত হয়। তার স্থান মনুষ্য সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে। তাকে কেউ স্থান দেওয়া দূরে থাক, একটা জীবনসঙ্গীও পায় না সে। উলঙ্গকে, কে জীবনসঙ্গী দেয়? কে জীবনসঙ্গী হবে উলঙ্গের? উলঙ্গ কোনো নারী-পুরুষের সঙ্গে কেউ দাম্পত্য জীবন গড়তে চায় না। অথচ দাম্পত্য জীবন গড়ার আসল উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে উলঙ্গ না হয়ে কোনা উপায় নেই।

#subach

Leave a Comment

চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার

চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার

ড. মোহাম্মদ আমীন

১. চন্দ্রবিন্দুর উপস্থিতি-অনুপস্থিতি দুটোই শুদ্ধ বলে প্রচলিত থাকলে ওইসব শব্দে চন্দ্রবিন্দু দেবেন না। তবে, এই প্রসঙ্গে প্রমিত বানান রীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে। উদাহরণ: ইঁট নয় ইট। কাঁচি, হুঁশিয়ার, জাহাঁপনা প্রভৃতি শব্দের বানানে চন্দ্রবিন্দু না দিলেও চলে, কিন্তু বাংলা একাডেমি চন্দ্রবিন্দু দিয়েছে। তাই চন্দ্রবিন্দু যুক্ত বানানই প্রমিত।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

২.বিখ্যাত বা সম্মাননীয় ব্যক্তির নামের পরিবর্তে ব্যবহৃত সর্বনাম পদে এবং সম্মানসূচক অর্থে ব্যবহৃত শব্দের বানানে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা হয়। যথা: ‍কুমকুম বাবু একজন আদর্শ শিক্ষক। তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল অতি উত্তম। ছাত্ররা তাঁকে সম্মান করত। অনুরূপভাবে সম্মানার্থে ‘এঁরা, ওঁরা, ওঁকে, ওঁ, এঁ, এঁদের, তাঁদের, তাঁকে, উঁহাদের, যাঁদের, এঁর’ প্রভৃতি। ন-যুক্ত সর্বনামে ন নিজেই চন্দ্রবিন্দুর কাজ করে। তাই এখানে চন্দ্রবিন্দু নিষ্প্রোয়জন। যেমন: ইনি, তিনি, যিনি।

৩. যেসব সংখ্যাবচক শব্দের নাসিক্য উচ্চারণ হয় সেসব শব্দের বানানে চন্দ্রবিন্দু বসে। যেমন: পাঁচ, পঁচিশ, পঁচানব্বই, পঁয়তাল্লিশ, পঁচাশি ইত্যাদি। প-দিয়ে শুরু হওয়া সব সংখ্যাবাচক শব্দের বানানের প্রারম্ভিক প-য়ে চন্দ্রবিন্দু হবে।

৪. কিছু কিছু ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়াবাচক শব্দে চন্দ্রবিন্দু বসে। যেমন: কাঁদা, কাঁদানো, দাঁড়া, দাঁড়ানো, খোঁজা, বাঁধা, বাঁধানো, কাঁপা, কাঁপানো। সংযোগমূলক ক্রিয়াপদের বানানেও চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার হয়। যেমন: চাঁদা তোলা, ফাঁক করা, খোঁচা দেওয়া, ছেঁকা দেওয়া, উঁকি দেওয়া, ফাঁসি খাওয়া ইত্যাদি।

৫. ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত ‘অ ঈ ঊ ঐ ঔ’ ধ্বনির সঙ্গে চন্দ্রবিন্দু যুক্ত হতে দেখা যায় না। তবে ‘অ্যা আ ই উ এ ও’ প্রভৃতি স্বরবর্ণের সঙ্গে চন্দ্রবিন্দুর স্বাধীন ব্যবহার রয়েছে। যেমন: অ্যাঁ, আঁইশ, আঁক, আঁকিবুকি, আঁখি, আঁচ, আঁটা, আঁটি, আঁচাআঁচি, আঁতাতঁ, আঁদার-পাদাঁর, ইঁচড়, ইঁদারা, উঁকি, উঁচু, উঁহু, এঁকে, এঁকেবেকে, এঁটেল, এঁড়ে, ওঁছা ইত্যাদি।

৬. কিছু কিছু শব্দের প্রথমে ‘য-ফলা+আ-কার (্যা) যুক্ত বর্ণে চন্দ্রবিন্দু হয়। যেমন: ক্যাঁচক্যাঁচানি, চ্যাঁচানি, চ্যাঁচাম্যাচি,চ্যাঁচারি, ত্যাঁদড়, ত্যাঁদড়ামি, হ্যাঁ, হ্যাঁচকা, হ্যাঁগা প্রভৃতি।

৭. শব্দের সূচনায় চন্দ্রবিন্দু যুক্ত শব্দের য-ফলা সর্বদা আ-কার নিয়ে বসে। ক্যাঁক, ক্যাঁকক্যাঁক, ক্যাঁচক্যাঁচনি,ক্যাঁচরম্যাচর, খ্যাঁকশিয়াল, খ্যাঁচম্যাচ, ঘ্যাঁচ, ঘ্যাঁট, ঘ্যাঁচড়ানো, ছ্যাঁক, ছ্যাঁকা, ছ্যাঁচড়া, ছ্যাঁচানো, ছ্যাঁৎ, থ্যাঁতলা, ত্যাঁদড়, ট্যাঁ, ট্যাঁক, ট্যাঁকঘড়ি, ট্যাঁস, ঢ্যাঁঢামি, ঢ্যাঁড়শ, ঢ্যাঁড়া,

৭.বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত কিছু বিদেশি শব্দে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার প্রচলিত আছে। যেমন:

আরবি- তাঁবু, তাঁবে, তুঁত, হুঁকা;

ফারসি- জাহাঁপনা, জাঁহাবাজ, পিঁয়াজ, ফাঁদ, ফাঁশ, বাঁদি, র‌্যাঁদা, হুঁশ, হুঁশিয়ার;

তুর্কি- কাঁচি, বোঁচকা;

ফরাসি- আঁতাঁত, দাঁতাত, রেনেসাঁস।

ইংরেজি- কৌঁসুলি, জাঁদরেল, রেস্তোরাঁ, রোঁদ।

পর্তুগিজ- পেঁপে।

হিন্দি- আঁধি, কাঁচা, খাঁচা, খাঁজ, গঁদ, গাঁইতি, গাঁজা, ছাঁচি, ছাঁট, ঝাঁক, ঝুঁকি, টুঁটি, দোঁহা, ফেঁকড়া, বাঁদি, ভোঁতা;

৮. আধুনিক প্রমিত বানানে বর্তমানে গুটিকয়েক শব্দ ছাড়া বিদেশি শব্দে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা হয় না। যেমন: হুঁশিয়ার, রেস্তোরাঁ।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

বাজেট : লাল ব্রিফকেস কালো হলো যেভাবে

বাজেট : লাল ব্রিফকেস কালো হলো যেভাবে

ড. মোহাম্মদ আমীন

: আপনার নিষ্ঠা আর দেশপ্রেমে আমি মুগ্ধ। উত্তরণে আনন্দিত।

: এক্সিলেন্সি, আমি কৃতজ্ঞ, শ্রদ্ধায় আনত।আপনার সমর্থন আমার পাথেয়। : : : : আপনার আচরণ আর সততা অতি উত্তম। সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব মুগ্ধকর। আপনি, আজ আমার সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ “চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার’ পদে অধিষ্ঠিত হলেন। স্বাগত এবং অভিনন্দন।

মহারানি ভিক্টোরিয়ার কথায় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত “চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার” উইলিয়াম ইওয়ার্ট গ্ল্যাডস্টোন অভিভূত। আনত চোখে কৃতজ্ঞতা ঢেলে বিনীত গলায় বললেন, মহানুভব মহারানি, আমার প্রতি আপনার আস্থাকে আমি জীবনের মতো যত্নে লালন করব। গড়ে তুলব সন্তানের মতো পরম মমতায়; শ্রদ্ধা করব মহীয়ান পূর্বপুরুষদের প্রদত্ত নৈবদ্যের মতো পরম আভিজাত্যে– আমার জাতীয় সংগীতের মতো নিবিড় ভালোবাসায় :

“God save our gracious Queen!

Long live our noble Queen!

God save the Queen! ”

মহারানি ভিক্টোরিয়া একটা লাল ব্রিফকেস গ্ল্যাডস্টোনের হাতে দিয়ে বললেন, এটি আপনাকে নয়, “চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার”কে দিলাম।

হালকা লাল রঙের ব্রিফকেসটির উপর মহারানির সোনালি রঙের রাজকীয় প্রতীক ঝকঝক করছে মহিমান্বিত ঔজ্জ্বল্যে।

প্রমিতা বলল, এটা কয় তারিখের ঘটনা?

: ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে এপ্রিল, রাত ৮.০০ টা।

অনুসিন্থিয়া বললেন, গ্ল্যাডস্টোন কোথায় এবং কখন জন্মগ্রহণ করেছেন?

: ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে ডিসেম্বর লিভারপুলের ৬২ রডনি স্ট্রিটে। মারা যান ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে মে ওয়েলসে।

মহারানি ভিক্টোরিয়ার আসল নাম কী? প্রমিতা জানতে চাইল।

: আলেকজান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়া। তিনি ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ শে মে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে জুন থেকে ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ২২ শে জানুয়ারি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত মোট ৬৩ বছর ২১৭ দিন ব্রিটেনের রানি ছিলেন।

চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার কী? অনুসিন্থিয়া বলল।

: আমরা যাকে অর্থমন্ত্রী বলি, তিনিই “চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার”।

আর একটা কথা, গ্ল্যাডস্টোন ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে এপ্রিল থেকে ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছর অর্থমন্ত্রী ছিলেন। প্রতিবারই তিনি মহারানির দেওয়া লাল ব্রিফকেসে বাজেটের কাগজপত্র ভরে সংসদে গেছেন।

তাঁর পর কে অর্থমন্ত্রী হলেন? প্রমিতা বলল।

: হাগ চাইল্ডার্স। তিনি ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জুন পর্য়ন্ত তিন বছর অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনিও গ্ল্যাডস্টোনের লাল বিফ্রকেস নিয়ে সংসদে গেছেন বাজেট বক্তৃতা দিতে। এরপর অর্থমন্ত্রী হলেন মিখাইল হিক্স বিচ। হিক্স, ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ শে জুন থেকে ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনিও বাজেট বক্তৃতায় যাওয়ার সময় গ্ল্যাডস্টোনের লাল ব্রিফকেস নিয়ে গেছেন। তারপর অর্থমন্ত্রী হলেন স্যার উইলিয়াম হ্যারকোর্ট । তিনি ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই অগাস্ট থেকে ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ শে জুন পর্যন্ত একই ব্রিফকেস নিয়ে বাজেট বক্তৃতা দিতে গিয়েছেন। হ্যারকোর্ট এর পর ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন থেকে ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই অগাস্ট পর্যন্ত হিক্স বিচ আবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি আট বারই গ্ল্যাডস্টোনের লাল ব্রিফকেস নিয়ে বাজেট বক্তৃত দিতে গেছেন।এরপরের অর্থমন্ত্রীরাও একই ব্রিফকেস নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় গেছেন। এভাবে এই ব্রিফকেসটি নিয়ে বাজেট বক্তৃতা-প্রদান ঐতিহ্য ও আচরণ প্রিয় ব্রিটেনবাসীর অনিবার্য ঐতিহ্য হয়ে গেল।

গ্ল্যাডস্টোনের কী হলো? অনুসিন্থিয়া প্রশ্ন করলেন।

গ্ল্যাডস্টোন ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই অগাস্ট থেকে ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২রা মার্চ পর্যন্ত বারো বছর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বলা হয়, লাল ব্রিফকেসের ভাগ্যে তাঁর এত বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার সৌভাগ্য হয়েছে।

কিন্তু এটা তো লাল ব্রিফকেস; এখন কালো ব্রিফকেস নিয়ে যায় কেন?

: কয়েক যুগ ব্যবহারের কারণে লাল রঙ উঠে কালো হয়ে গেল।

রানির দেওয়া লাল ব্যাগও কালো হয়ে গেল? প্রমিতা বিস্ময় দিয়ে প্রশ্ন করলেন।

: রানিও তত দিনে বুড়ি হয়ে গেছেন। শরীরের জৌলুশ লাল ব্রিফেকেসের আবরণের মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

অনুসিন্থিয়া বলল, এখন ওই ব্রিফকেসটি কোথায়?

: মনে হয়, ব্রিটেনের বর্তমান অর্থমন্ত্রীরাও ওই একই ব্রিফকেস নিয়ে বাজেট বক্তৃতা দিতে যান। ব্রিফকেসটি যত পুরানো হচ্ছিল, তত কালো হচ্ছিল, যত কালো হচ্ছিল, তত চকচক করছিল। এজন্যই বলা হয়, ওল্ড ইজ গোল্ড। আসলে, নতুন একটা ব্যাগ কিনে অযথা অর্থ খরচ করতে চাইনি তারা।

অনুসিন্থিয়া : আমরা কেন কালো ব্রিফকেস ব্যবহার করি? পৃথিবীর অনেক দেশে তো নানা রঙের ব্রিফকেস ব্যবহার করা হয়?

আমি বললাম, প্রভুদের অনুকরণ। ব্রিটেনেও এখন বাজেট বক্তৃতায় কালো ব্যাগের পরিবর্তে নান রঙের ব্যাগ নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রমিতা বলল, আপনি অর্থমন্ত্রী হলে কী রঙের ব্রিফকেস নিয়ে বাজেট বক্তৃতা দিতে যাবেন?

:কোনো ব্যাগই নেব না। কয়েকশ মাত্র পৃষ্ঠা, ওগুলো নিতে কি ব্রিফকেস লাগে? তাহলে তো আমাদের শিক্ষার্থীদের স্কুলে বই ভয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিনিট্রাক লাগবে, কী বলো?

Leave a Comment

জনাব ও জনাবা

জনাব জনাবা

ড. মোহাম্মদ আমীন

‘জনাব’ সম্মানজ্ঞাপক শব্দ। ব্যক্তির নামের পূর্বে শব্দটি সম্মান ও ভদ্রতা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেকে মহিলাদের নামের পূর্বে ‘জনাব’ এর স্ত্রীবাচক পদ হিসাবে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মানুসারে ‘আ’ যুক্ত করে ‘জনাবা’ লিখে থাকেন। এটি রীতিমতো অপমানজনক। ‘জনাবা’ শব্দের অর্থ ঋতুমতী নারী। এ
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
অবস্থায় কোনো নারীর নামের আগে ‘জনাবা’ লেখা ওই নারীর পক্ষে কত লজ্জাকর ও অপমানজনক তা সহজে অনুমেয়। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা
অভিধান’ অনুযায়ী ‘জনাব’ শব্দটি নারীপুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তির নামের পূর্বে ব্য
বহার করা যায়। তবে কারও নামের পূর্বে সৈয়দ, খান, খন্দকার বা অন্য কোনো পদবি থাকলে ‘জনাব’ লেখা সমীচীন নয়। আমরা বাংলাতে কোনো পুরুষকে ‘জনাব’ বলে সম্বোধন করব, একইভাবে কোনো মহিলার নামের পূর্বেও সম্মানসূচক শব্দ হিসাবে ‘জনাব’ ব্যবহার করব। তবে কোনো অবস্থাতে ‘জনাবা’ নয়। ‘জনাব’ এর পরিবর্তে ‘বেগম’ লেখা যায়। স্মর্তব্য, আরবি বা ফারসি ভাষার লিঙ্গান্তরের নিয়ম বাংলা ভাষার মতো নয়।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ) অনুযায়ী ‘জনাব’ অর্থ : ব্যক্তিনামের পূর্বে ব্যবহৃত সম্মানসূচক শব্দ, মহাশয়, শ্রী। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’-এ জনাব সম্পর্কে লেখা আছে : “জনাব [জনাব্] বি সম্মানসূচক ‘মি.’ ও ‘শ্রী’-র পরিবর্তে সাধারণভাবে নারীপুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তিনামের পূর্বে ব্যবহৃত; সম্মানসূচক সম্বোধনবিশেষ; মহাত্মা; মহাশয়; মাননীয়; ভদ্রলোক; sir। জনাবে আলি, ~ আলী বি (সম্বোধনসূচক) মান্যবর; মহামান্য; Your Excellency। {শব্দটি মূলত আরবি হলেও ফারসি ভাষাতেই এটি বহুল ব্যবহৃত, আ. জনাব جــنــب}”। বর্ণিত অভিধান দুটোর কোনোটাতে ‘জনাবা’ শব্দ নেই।

http://www.alokitobangladesh.com/tasauf/2015/01/24/119592 ] – সাইটে উল্লেখ আছে, “জনাবের স্ত্রীরূপ জনাবা হয় না; তাই জনাবা অন্য শব্দ হবে, যার অর্থ হবে নাপাক বা অপবিত্র।” http://www.ittefaq.com.bd/…/pathok-ov…/2014/11/29/17425.html ] সাইটে বলা হয়েছে : আরবি ভাষায় ‘জনাবা’ একটি সুনির্দিষ্ট শব্দ।যার অর্থ গর্ভবতী শূকর। অতএব এবার ভেবে দেখুন, কোনো মহিলার নামের আগে ‘জনাবা’ লিখবেন কি না। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর ‘যথাশব্দ’ নামের ভাব-অভিধান (২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ) পুস্তকে ‘জনাবা’ শব্দকে মিজ, মোসাম্মাৎ, শ্রী, -মতী, -যুক্তা প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে অভিন্ন দেখিয়েছেন। তিনি ভুলবশত এটি করেছেন। যা আদৌ যথার্থ্য নয়।

 #subach

সূত্র : বাংলা ভাষার মজা, . মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment

আম জাতীয় ফল কেন

আম জাতীয় ফল কেন

ড. মোহাম্মদ আমীন

আমাদের জাতীয় বৃক্ষ কী?

শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তরে প্রমিতা বলল, আম গাছ।

কিন্তু কেন? শিক্ষক জানতে চাইলেন।

প্রমিতা বলল : আম, শিশুদের, যুবদের, বুড়ো-বুড়ি আর কচাকচি সবার প্রিয়। যেমন মিষ্টি তেমন সর্বলভ্য; সারা দেশে পাওয়া যায়। খেলে কোনো অসুখ হয় না। জসীম উদ্দীন “আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা” কবিতায়, আম খেয়ে সুখ পাওয়ার জন্য মামার বাড়ি যাবার কথা বলেছেন আমাদের :

“ঝড়ের দিনে মামার দেশে

আম কুড়াতে সুখ

পাকা জামের শাখায় উঠি

রঙিন করি মুখ।”

শিক্ষক বললেন, এ তো ‘আম’-এর কৃতিত্ব। আম গাছ কী করল?

প্রমিতা বলল : আমটা তো স্যার জন্মই দিয়েছে “আম গাছ”।

শিক্ষক বললেন, ছেলের দায় তো বাপকে দেওয়া যায় না। তোমরা দুনিয়াটা উলটে দেবে বুঝি, মা?

ফরিদ বলল: মেয়েরা, স্যার, সববময় দুনিয়াটা উলটে দিতে চায়; যত্তো সব!

প্রমিতা বলল : ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই এপ্রিল যশোর জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার ভবেরপাড়া গ্রামের আমের বাগানে, মুকুলিত আম গাছের ছায়ায়, আম গাছ থেকে ঝরে-পড়া শুকনো পাতার উপর বসে, আম গাছের পাতার হাওয়া খেয়ে আমাদের কৃতি সন্তানগণ বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করেছিলেন। আম গাছ আমাদের দেশের প্রথম সরকার গঠনে ছায়া দিয়েছিল, আশ্রয় দিয়েছিল, বাতাস দিয়েছিল, বিছানা দিয়েছিল, অন্য গাছ কি দিয়েছে? এখন ওই আমবাগানই মুজিবনগর, জাতির পিতার নামে নামায়িত। তাই “আম গাছ’ আমাদের জাতীয় বৃক্ষ। সৃষ্টি, ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধের ঐশ্বর্য।

ফরিদ বলল : না স্যার; সে ঠিক বলেনি। আমার বাবা বলেন —-

শিক্ষক : তোমার বাবা কী বলেন?

মেয়েরা সবসময় বেশি কথা বলে। আম গাছ নিয়ে মাজেদা যা করল-এত কথা কী স্যার!

তুমি বলো, তাহলে? শিক্ষক বললেন।

ফরিদ বলল : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”- গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত। এখানে, “আম গাছের” কথা আছে। বিশ্বকবি কিন্তু, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বহু আগে আম গাছের গুণকীর্তন করে গেছেন। কেবল আম-বনের ঘ্রাণই বিশ্বকবিকে পাগল করে দিয়েছিলেন। গাইব কি স্যার, ক-লাইন?

গাও, শিক্ষক বললেন।

“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,

মরি হায়, হায় রে—।”

প্রমিতা বললেন, রবীন্দ্রনাথ আরও গেয়েছেন :

“ও মঞ্জরী, ও মঞ্জরী, আমের মঞ্জরী ,

আজ হৃদয় তোমার উদাস হয়ে

পড়ছে কি ঝরি

ঝরি ঝরি ঝরি।”

শিক্ষক বললেন : তোমাদের সবার কথা ঠিক; তবে, আরও কারণ আছে।

কী স্যার? শিক্ষার্থীরা সমস্বরে চিৎকার দিলেন।

শিক্ষক বললেন : মুক্তিযুদ্ধে শপথেও আম গাছের কথা উল্লেখ আছে। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩জুন জুন পলাশির আমের বাগানে লর্ড ক্লাইভের কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর আমাদের স্বাধীনতার সূর্য অস্ত গিয়েছিল। এই অস্তমিত সূর্যই আবার ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগরে জেগে ওঠার হাসিতে চোখ মেলেছিল উদয়মান সূর্যের লালাভ মাধুর্যে। তাই, আম গাছ আমাদের জাতীয় বৃক্ষ।

ফরিদ বলল : তখন ছিল জুন মাস। গাছে-পাকা আম। আমগুলো ঝরে পড়ছিল গাছ থেকে, আম নয়, যেন পলাশির যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী একেক জন সৈন্য।

প্রমিতা বলল, আর স্যার দেখুন, এপ্রিল মাসে গঠিত হয়েছিল মুজিবনগর সরকার; তখন আম গাছ ছিল মুকুলে মুকুলে ছেয়ে, নুইয়ে। মুকুল নয়, যেন আমাদের স্বাধীনতার সূর্যের অগণিত পরিস্ফুটন।

 #subach

Leave a Comment

দেয়া নেয়া: দেয়া শব্দের অর্থ মেঘ: নেয়া; নেয়ার নেয়ে

দেয়া নেয়া: দেয়া শব্দের অর্থ মেঘ: নেয়া; নেয়ার নেয়ে

দেয়া

দেয়া শব্দের অর্থ দেওয়া (give) নয়, দেয়া শব্দের অর্থ মেঘ, আকাশ প্রভৃতি। 

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : 
ছায়া ঘনাইছে বনে বনে,গগনে গগনে ডাকে দেয়া
কবে নবঘন-বরিষণে, গোপনে গোপনে এলি কেয়া।”

কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন :

রিম্ ঝিম্ রিম্‌ঝিম্‌ ঘন দেয়া বরষে
কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে।”

এসো হে সজল শ্যাম-ঘন দেয়া
বেণু-কুঞ্জ-ছায়ায় এসো তাল-তমাল বনে
এসো শ্যামল ফুটাইয়া যূথী কুন্দ নীপ কেয়া।” 

বাক্যে ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃতদেওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে :  give, কোনোকিছু প্রদান করা, উপহার প্রদান প্রভৃতি। যেমন: তাকে একটি বই দেওয়া হলো। আঞ্চলিক বা কথ্য ভাষায় দেওয়া অর্থে  দেয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়। তবে তা প্রমিত রীতিতে ব্যবহার করা আদৌ সংগত নয়। কোনোকিছু বহন করা বা গ্রহণ করা, ক্রয়া করা প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে নেওয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়।  যেমন :  আমার কিছু বই নেওয়া দরকার। বিমানের টিকেট নেওয়া হলো। অন্যদিকে নেয়া হচ্ছে নেওয়া শব্দের আঞ্চলিক রূপ, যা প্রমিত রীতিতে ব্যবহার করা অসংগত।

অসংগত হলেও চলিত রীতিতে  দেওয়া অর্থে দেয়া এবং নেওয়া অর্থে নেয়া শব্দের প্রয়োগ  এত বহুল যে, অনেক খ্যতিমান কবি-সাহিত্যিকদের লেখাতেও  এই অসংগত বানান হরদম দেখা যায়। বিখ্যাত ‘দেয়া নেয়া’ ছবির কথা এখনো মনে ভাসে, হার্দিক মমতায়, এখনো আমি দেখি সেই গভীর আবেগে। এই নিবন্ধে আমি দেয়া ও  নেয়া শব্দের ব্যাকরণিক  অর্থের বিশ্লেষণ করেছি মাত্র। তবে, প্রচলন ব্যাকরণের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অনেক বেশি প্রভাবশালী। অধুনা দেয়ানেয়া বহুল প্রচলিত  শব্দ। তাই এদের এখন অশুদ্ধ বলে দাবিয়ে রাখা যাবে বলে মনে হয় না। যাকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, তাকে অশুদ্ধ বলে লাভ কী?

নেয়ার নেয়ে নেয়ে
নেয়ার: নেয়ার দেশি শব্দ। উচ্চারণ— নেআর্‌। অর্থ— খাটের পৃষ্ঠদেশে বুননের জন্য কাঠের পাটাতনের পরিবর্তে ব্যবহৃত মোটা সুতোয় বোনা চওড়া ফিতে; যেমন: নেয়ার খাট। পাজামা, সালোয়ার প্রভৃতি কোমরে আটকানোর জন্য ব্যবহৃত ফিতাকেও ‘নেয়ার’ বলা হয়।সুতরাং, “তিনি নেয়ার জন্য এসেছেন।” কথার অর্থ — তিনি খাটের ফিতের/ কোমরে পোশাক বাঁধার ফিতের জন্য এসেছেন।
নেয়ে: অভিধানে নেয়ে শব্দের দুটি ভুক্তি। একটি এসেছে সংস্কৃত স্নান থেকে এবং অন্যটি এসেছে নাবিক থেকে। সংস্কৃত স্নান থেকে উদ্ভূত নেয়ে হলো— ‘স্নান করার পর’ বাগ্ভঙ্গির অসমাপিকা ক্রিয়ার একটি রূপ। নেয়ে খাও বাবা, ঘাম ঝরছে গা থেকে। সংস্কৃত নাবিক থেকে উদ্ভূত নেয়ে অর্থ (বিশেষ্যে)— নৌকার মাঝি, যে নৌকা চালায়, নৌকা চালানো যার পেশা।
“খরবায়ু বয় বেগে, চারি দিক ছায় মেঘে,
ওগো নেয়ে, নাওখানি বাইয়ো।” (রবীন্দ্রনাথ)

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment