রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেননি

ড. মোহাম্মদ আমীন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেননি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জলিল সাহেবের প্রশ্ন: বলো তো, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখন মৃত্যুবরণ করেছেন?
মেধাবী প্রার্থী রহমত বললেন, রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেননি। বিশ্বকবির ওপর এমন বিদঘুটে দোষারোপ উচিত নয়। তিনি বাঁচার জন্য কত চেষ্টা-তদ্‌বির করেছেন, কত চিকিৎসা করিয়েছেন— তা আমরা সবাই জানি।তাঁর মতো লোক অযথা কেন আত্মহত্যা করতে যাবেন?
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

জলিল সাহেব বললেন, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই আগস্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেছেন। সামান্য একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছ না। তুমি তো লেখাপড়া কিছুই জান না। তো, পরীক্ষায় এত ভালো ফল করলে কীভাবে?

রহমত বললেন: স্যার, পরীক্ষায় আমি জ্ঞানের কিছু লিখিনি, যা লিখলে পরীক্ষক ভালো নাম্বার দেবেন কেবল তাই লিখেছি। ইতিহাস বলছে— রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেননি। তিনি নিজেও মৃত্যবরণের কথা কখনো স্বীকার করেননি।অযথা তাঁর বদনাম করা হচ্ছে।
জলিল সাহেব বললেন: রবীন্দ্রনাথ কি এখনো জীবিত আছেন? কী আবোল-তাবোল বলছ? তুমি কী রহমত পাগল হয়ে গেছ?
রহমত: স্যার, ‘বরণ’ শব্দের অর্থ কী?
জলিল সাহেব অভিধান খুলে বললেন, ‘বরণ’ শব্দের অর্থ দেখা যাচ্ছে— সাদরে গ্রহণ, সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা, মান্য ব্যক্তিকে অভ্যর্থনা (জামাইবরণ), স্বেচ্ছায় স্বীকার বা ভোগ (কারাবরণ), প্রার্থনা, মনোনয়ন, নির্বাচন প্রভৃতি।
রহমত: স্যার, ‘বরণ’ শব্দের অর্থরাজির মধ্যে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুকে ‘বরণ’ বলার মতো কিছু কি আছে?
হতাশ গলায় জলিল সাহেব বললেন, এমন কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না।
রহমত: রবীন্দ্রনাথ কি মৃত্যুকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন— যেমন তিনি সাদরে গ্রহণ করেছিলেন, নোবেল পুরস্কার এবং নাইট উপাধি? তিনি কি মৃত্যুকে এমনভাবে বরণ করেছিলেন— যেমনি তাঁকে বরণ করা হতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সভায় – – -?

সূত্র: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

বঙ্গাব্দের প্রবর্তক: শশাঙ্ক না আকবর

ড. মোহাম্মদ আমীন

বঙ্গাব্দের প্রবর্তক: শশাঙ্ক না আকবর

বাংলা নববর্ষ বা বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা কে? কেউ বলেন গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক আবার কেউ বলেন সম্রাট আকবর। আবার কেউ বলেন, তাঁদের একজনও না; বঙ্গাব্দ অনেক প্রাচীন। প্রাচীন নিয়ে বিতর্ক চলছে না। চলছে শশাঙ্ক আর আকবর নিয়ে। দুপক্ষের যেদিকে আমি মত দিই— অন্য পক্ষ নাখোশ হবেন। অনেকে জঘন্য ভাষায় অশালীন উক্তিও করে বসবেন। আসলে আমি জানি না, বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্ক না আকবর না অন্য কেউ। তবে বঙ্গাব্দের অন্তর্ভুক্ত মাসসমূহের নাম দেখে মনে হয়— এগুলো অনেক পুরানো। – – – নামসমূহ শুধু আকবর নয়, শশাঙ্কেরও বহু পূর্বে প্রচলিত বিভিন্ন গ্রন্থ ও শিলালিপিতে পাওয়া যায়। গুপ্ত যুগে প্রচলিত সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। – – -বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। নিচে কিছু প্রশ্ন রাখলাম তা থেকে আপনিই বের করে নিন বঙ্গাব্দের প্রবর্তক— শশাঙ্ক না আকবর?
শিবমন্দিরে বঙ্গাব্দ: বঙ্গাব্দ শব্দটি আকবরের শাসনামলের চেয়ে বহু শতাব্দী প্রাচীন দুটি শিব মন্দিরে পাওয়া গিয়েছে। – – – আকবর বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হলে তা কীভাবে সম্ভব? – – – ।

বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠায় শশাঙ্ক তথ্য: – – – শশাঙ্কপক্ষীয়দের অভিমত এখন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ। ২০২৩ থেকে ১৪২৯ বাদ দিলে পাওয়া যায় ৫৯৪। অর্থাৎ ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দ

বামা থেকে হায়াৎ মামুদ, ড. মোহাম্মদ আমীন, নির্মলেন্দু গুণ

ছিল বঙ্গাব্দের প্রথম বছর। – – – শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল মতান্তরে ১৪ই এপ্রিল স্বাধীন শাসক হিসেবে গৌড়ের (বঙ্গ) সিংহাসনে আরোহন করেন। – – – সিংহাসনে আরোহনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি বঙ্গাব্দ চালু করেন। সৌর বিজ্ঞানভিত্তিক হিসেবে অনুযায়ী ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল বা ১৪ই এপ্রিল সোমবার, সূর্যোদয়ের সময়ই বঙ্গাব্দের সূচনা।

বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠায় আকবর তত্ত্ব: আকবরপক্ষীয়দের অভিমত, খাজনা আদায়ের সুবিধা এবং রাজ্যাভিষেককে স্মরণীয় করে রাখা জন্য ১৫৮৪ খ্রিষ্টব্দে সম্রাট আকবর তাঁর শাসনামলের ২৯তম বর্ষে তারিখ-ই-ইলাহি নামের সৌর বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী ফসলি সন হিসেবে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেন। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৯৬৩ হিজরিতে আকবর দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন। – – -সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৯৬৩ হিজরিকে ৯৬৩ বঙ্গাব্দ ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জী প্রবর্তন করেন। – – – খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে হোক বা রাজ্যাভিষেককে স্মরণীয় করে রাখার জন্য হোক— বঙ্গাব্দ ১ বর্ষ থেকে শুরু না করে ৯৬৩ থেকে শুরু করা হলো কেন? ৯৬৩ বর্ষকে আকবরের চেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি ধরার কোনো জোরালো কারণ আছে কি?
আকবরের অভিষেক: ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৩ বছর বয়সে আকবর দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন। ওই সময় বা তারিখ বা বর্ষ থেকে বাংলা সন প্রবর্তন হলে পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ ১৪ বা ১৫ই এপ্রিল না হয়ে ১৪ই ফেব্রুয়ারি হওয়া কথা। কিন্তু ১৪ই ফেব্রুয়ারি হলো না কেন?
বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠাসম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য: আকবরের আমলে রচিত প্রামাণ্য গ্রন্থ “আইন-ই-আকবরি”। এই গ্রন্থে গ্রন্থে ভারতবর্ষ-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন বর্ষপঞ্জীর ধারাবাহিক বিবরণ রয়েছে, অথচ আকবরের বঙ্গাব্দ বা ফসলি সন প্রবর্তনের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই । – – – আকবর যদি বাংলা সনের প্রবর্তক হতেন, তাহলে আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে তা উল্লেখ করা হয়নি কেন? গোপন রাখার কারণ কী? – – –
মাসের নামকরণ: সম্রাট আকবর ছিলেন ফারসিভাষী মুসলিম। তিনি বাংলা জানতেন না। সংস্কৃতের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। তাঁর আমলে রাজকীয় তত্ত্বাবধানে ছোটো-বড়ো যা কিছু হয়েছে সে সবের নাম ফারসি ভাষা, পরিবারপরিজন, প্রিয় মানুষ, প্রভাবশালী আমাত্য বা ইসলামি সংস্কৃতিভিত্তিক হয়েছে। তাহলে কেন বঙ্গাব্দের বার মাসের নাম সংস্কৃত ভাষায় নামায়িত পৌরাণিক দেবীর নামানুসারে করেছেন? ওই বারো দেবী আকবরের কাছে কী কারণে প্রিয় হয়ে উঠেছিল?
ধর্ম ও সংস্কৃতি: মুসলিম শাসক-প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের স্বতস্ফূর্ত উচ্ছাস এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়। কিন্তু বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানে দেখা যায় তার বিপরীত। মুসলিম শাসক আকবর বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হলে এমন হওয়ার কারণ কী?
ফসলি সন: আকবর পক্ষীয়দের বক্তব্য, রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে আকবর বঙ্গের জন্য ফসলি সন হিসেবে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেছিলেন। – – – বঙ্গাব্দ ফসলি সন নয়। যদি ফসলি সন হতো তাহলে বৈশাখ দিয়ে শুরু করা হতো না। শুরু করা হতো অগ্রহায়ণ বা ফসল উঠে এরূপ অন্য কোনো মাস দিয়ে। – – -বৈশাখ মাসে কোনো ফসল উঠে না। এই মাসে রাজস্ব আদায়ের জন্যও অনুকূল নয়। – – -ফসলি সন হলে কেন বৈশাখকে প্রথম মাস করা হলো?
বঙ্গে আকবরের নিয়ন্ত্রণ ও বঙ্গাব্দ: আকবরে পক্ষদের অভিমত, ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গাব্দ প্রবর্তিত। এসময় বাংলার খুব সামান্য অংশ মোগলাধীন ছিল। ১৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে গৌড়রাজ্যে বা বঙ্গদেশে মোঘলদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। – – -নিয়ন্ত্রণ প্রাপ্তির দশ বছর পূর্বে আকবর কেন রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে আওতাবহির্ভুত এলাকার জন্য বঙ্গাব্দ চালু করবেন? আকবর কি এত বোকা ছিলেন? – – –
এগারো সুবা বাদ কেন: – – –আকবরের সাম্রাজ্য বারোটি সুবায় বিভক্ত ছিল। যথা: – – -। তিনি ১১টি সুবা বাদ দিয়ে কেবল বাংলার জন্য কেন একটি আলাদা বর্ষপঞ্জী করলেন? অন্যান্য সুবাহ কী দোষ করেছিল? সেখান থেকে কি খাজনা আদায় করা হতো না? সেখানে কি ফসলি সনের প্রয়োজন ছিল না?
পহেলা বৈশাখের ভারতবর্ষীয় বিস্তার: – – –দক্ষিণ এশিয়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং বাংলাদেশের অনেক অবাঙালি উপজাতি বিভিন্ন নামে ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পহেলা বৈশাখ পালন করে থাকে। তাদের এই ধর্মীয় উৎসবের বয়স অনেক ক্ষেত্রে সহস্র বছরের অধিক। আকবর যদি ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করে থাকেন তো ওই সব এলাকায় কীভাবে এর আগে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান পালন করা হতো? – – –
পহেলা বৈশাখ ও হালখাতা: নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর আমলে হালখাতার সূচনা। রাজস্ব আদায়ের জন্য তিনি এই খাতা প্রচলন করেন।

বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল শুদ্ধীকরণ: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল কারণ ও প্রতিকার

বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল ও শুদ্ধীকরণ: প্রশ্ন নং ১১৯ থেকে ১৪৩

বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল, শুদ্ধীকরণ ও উত্তর: প্রশ্ন নং ৯১ থেকে ১১৮

হেডা অণ্ড লিঙ্গ: অণ্ডকোষ লিঙ্গ ও জ্ঞানচর্চা

Leave a Comment

ৎ: আস্ত-ত বনাম খণ্ড-ত: ৎ-বিধি; উচিত বনাম উচিৎ

ড. মোহাম্মদ আমীন 

ৎ: আস্ত-ত বনাম খণ্ড-ৎ: ৎ-বিধি; উচিত বনাম উচিৎ

বানানে খণ্ড-ত ( ৎ ): খণ্ড-ত হলো ‘ত’ বর্ণের হস-চিহ্ন যুক্ত ( ত্ )-এর রূপভেদ। ৎ ব্যবহারের কয়েকটি নিয়ম নিচে দেওয়া হলো:
(১) বাংলায় তৎসম শব্দের অন্ত্যবর্ণ হিসেবে খণ্ড-ত এর ব্যবহার দেখা যায় । যেমন সৎ , মহৎ , অর্থাৎ , হঠাৎ , ঈষৎ , শরৎ , তাবৎ , জগৎ , যকৃৎ , বিদ্যুৎ ।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

(২) কোনো কোনো শব্দের শেষে বর্ণেে খণ্ড-ত-এর বিকল্পে ‘দ’ হয় । যেমন শরৎ > শরদ্ , ( তবে শরদ্ শব্দটি প্রচলিত নয় ) পর্ষৎ > পর্ষদ্ , উপনিষৎ > উপনিষদ্ , বিপৎ > বিপদ্ ।

(৩) কোনো প্রত্যয়ের অন্তবর্ণ খণ্ড-ত হলে ওই প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দের শেষে স্বভাবতই খণ্ড-ত হয় । যেমন অভিজিৎ ,ইন্দ্রজিৎ ( জিৎ ) পথিকৃৎ , পুণ্যকৃৎ ( কৃৎ ) কদাচিৎ , কিঞ্চিৎ (চিৎ ) জলবৎ , পুত্রবৎ , (বৎ) কৃষিবৃৎ , জ্যোতির্বিৎ (বিৎ ) অগ্নিসাৎ , আত্মসাৎ (সাৎ )

(৪) যেসব শব্দের শেষে খণ্ড-ত-এর বিকল্প হয় না সে শব্দের সঙ্গে ষষ্ঠী বা সপ্তমী বিভক্তি কিংবা কোনো প্রত্যয় যুক্ত হলে খণ্ড-ত পরিবর্তিত হয় । যেমন জগৎ> জগতের, শরৎ> শরতের, মহৎ> মহতের ।

(৫) যে সব শব্দের শেষে খণ্ড-ত-এর বিকল্প হয়, সেগুলোর সঙ্গে ষষ্ঠী বা সপ্তমী বিভক্তি কিংবা কোনো প্রত্যয় যুক্ত হলে খণ্ড-ত বর্ণের জায়গায় ‘দ’ হয় । যেমন পরিষৎ > পরিষদের, উপনিষৎ > উপনিষদের, পর্ষৎ > পর্ষদের ।

(৬) বিদেশি শব্দের বাংলা বানানে সর্বদা ‘আস্ত-ত’ বসবে; খণ্ড-ৎ নয়। তৎসম শব্দের বানানে ‘ত’ ও ‘খণ্ড-ৎ’ উভয়ের ব্যবহার আছে। তবে বিদেশি শব্দের বানানে কোথাও ‘খণ্ড-ৎ’ হবে না। সবসময় ‘আস্ত-ত’ ব্যবহৃত হবে। যেমন: আখেরাত, আদালত, আমানত, আয়াত, কিসমত, কুদরত, কেয়ামত, কৈফিয়ত, খেসারত, জালিয়াত, তফাত, তবিয়ত, দস্তখত, দৌলত, নসিহত, ফেরত, বজ্জাত, বেহেশ্ত, মওত, মজবুত, মতলব, মেহনত, শরবত, শরিয়ত, শাহাদত, সওগাত, সুন্নত, হিম্মত, হেফাজত প্রভৃতি।

আস্ত-ত বনাম খণ্ড-ত
বাংলা বর্ণমালায় ‘খণ্ড-ৎ’ ও ‘আস্ত-ত’ ভিন্ন বর্ণ হিসেবে দেখানো হলেও ‘খণ্ড-ৎ’ প্রকৃতপক্ষে ‘ত’-এর খণ্ডিত রূপ। খণ্ড-ৎ সাধারণত শব্দের আগে বসে না, মধ্যে বা শেষে বসে। তবে কিছু বিদেশি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে শব্দের শুরুতে ‘খণ্ডৎ’-এর ব্যবহার দেখা যায়। যেমন : ৎসাহাস (একজন জার্মান লেখক)।
‘খণ্ড-ৎ’ বর্ণের সঙ্গে স্বরচিহ্ন অর্থাৎ /অ আ ই ঈ উ ঊ এ ঐ ও ঔ/ যুক্ত হয় না। তাই খণ্ডৎ এর উচ্চারণ হলন্ত। তবে খণ্ড-ৎ এর সাথে রেফ্ যুক্ত হতে দেখা যায়। যেমন: ভর্ৎসনা।
কোনো শব্দে ‘খণ্ড-ৎ’ না কি ‘আস্ত-ত’ বসবে সে বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হলে এবং কোনো অভিধান দেখারও সুযোগ না থাকলে খণ্ড-ৎ না বসিয়ে ‘আস্ত-ত’ বসালে ভুলের আশঙ্কা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। বিদেশি শব্দের বেলায় আস্ত-ত/ ও /খণ্ড-ৎ/ এর ব্যবহার এককালে সমভাবে প্রয়োগ করা হতো। প্রমিত বানানে বিদেশি শব্দে ‘আস্ত-ত’ ব্যবহার করা হয়। যেমন : মতলব, হিম্মত, ইজ্জত, কেয়ামত, তফাত, জিয়ারত, হযরত, দস্তখত, বহুত প্রভৃতি।
বিদেশি শব্দের বাংলা বানানে সর্বদা ‘আস্ত-ত’ বসবে; খণ্ড-ৎ নয়। তৎসম শব্দের বানানে ‘ত’ ও ‘খণ্ড-ৎ’ উভয়ের ব্যবহার আছে। তবে বিদেশি শব্দের বানানে কোথাও ‘খণ্ড-ৎ’ হবে না। সবসময় ‘আস্ত-ত’ ব্যবহৃত হবে।
যেমন: আখেরাত, আদালত, আমানত, আয়াত, কিসমত, কুদরত, কেয়ামত, কৈফিয়ত, খেসারত, জালিয়াত, তফাত, তবিয়ত, দস্তখত, দৌলত, নসিহত, ফেরত, বজ্জাত, বেহেশ্ত, মওত, মজবুত, মতলব, মেহনত, শরবত, শরিয়ত, শাহাদত, সওগাত, সুন্নত, হিম্মত, হেফাজত প্রভৃতি।

খণ্ড-ৎ, অনুস্বার(ং) এবং স্বরচিহ্ন

কোনো শব্দের বানানে বিদ্যমান ‘খণ্ড-ৎ’ বা অনুস্বার (ং)-এর সঙ্গে স্বরচিহ্ন বা প্রত্যয় যুক্ত হলে ‘খণ্ড-ৎ’ পরিবর্তন হয়ে ‘ত’ এবং অনুস্বার পরিবর্তন হয়ে ঙ হবে। যেমন:
  • জগৎ: জগতে, জাগতিক,
  • বিদ্যুৎ: বিদ্যুতে, বৈদ্যুতিক,
  • ভবিষ্যৎ: ভবিষ্যতে,
  • আত্মসাৎ: আত্মসাতের,
  • সাক্ষাৎ: সাক্ষাতে, সাক্ষাতের,
  • রং: রঙের,
  • সং: সঙের প্রভৃতি।
সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
.

উচিত বানানে খণ্ড-ত (ৎ) হয় না কেন?

উচিত (√উচ্+ত) সংস্কৃত শব্দ। বাক্যে সাধারণত বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত উচিত শব্দের অর্থ — যোগ্য, যথাযথ প্রভৃতি। এটি ত-প্রত্যয় সাধিত শব্দ। তাই বানানে আস্ত-ত অনিবার্য।

শব্দটির শেষ বর্ণ উচ্চারণে হসন্ত। তাই ‘খণ্ড-ৎ’ হবে না কি ‘আস্ত-ত’ হবে তা নিয়ে সংশয় লেগে যায়। অনেকে ‘উচিত’কে তৎক্ষণাৎ কুৎসিত করে দেন হঠাৎ খণ্ড-ৎ বসিয়ে।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি

উচিত বানানে খণ্ড-ৎ দেবেন না, সর্বদা আস্ত-ত দেবেন। কেন খণ্ড-ৎ দেবেন না তা আগে বলেছি।

এখন দেখুন নিমোনিক:
খণ্ডিত কোনো কিছু উচিত হতে পারে না। সম্পৎ আছে বলে গিন্নির জন্য বাজার থেকে হঠাৎ করে খণ্ডিত শাড়ি নিয়ে এলেন, কী বিপৎ হবে বুঝতে পারছেন?
খণ্ড-ৎ মূলত আস্ত-ত এর অর্ধাংশ। খণ্ডিত বলে খণ্ড-ৎ বর্ণটি উচিত বানানের জন্য খণ্ডিত শাড়ির মতো অনুচিত। তাই উচিত বানানে অনুচিত খণ্ড-ৎ দিতে নেই। উচিত বানানে হঠাৎ করে হঠাৎ বানানের খণ্ড-ৎ না দিয়ে তফাত বানানের আস্ত-ত দিন।
যদি খণ্ড-ৎ এর প্রতি আপনার খুব বেশি আগ্রহ থাকে তাহলে আপৎ, বিপৎ, সম্পৎ প্রভৃতি বানানে খণ্ড-ৎ দিতে পারেন। এতে আপনার বিপদ না হলেও বিপৎ হবে না। তবে উচিত বানানে খণ্ড-ৎ দিলে আপনার আপৎ ও বিপৎ দুটোই হতে পারে।
খণ্ডিত জিনিস কেউ পছন্দ করুক বা না করুক আপনার কোনো প্রিয়জন পছন্দ করবে না। উচিত জায়গায় উচিত বর্ণ দিন।
এতবার উচিত দেখলেন, আর ভুল হবে কি?
সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।
নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল ও শুদ্ধীকরণ: প্রশ্ন নং ১১৯ থেকে ১৪৩

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল ও শুদ্ধীকরণ: প্রশ্ন নং ১১৯ থেকে ১৪৩

২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র (সেট নং ৪, পৃষ্ঠা ২) থেকে

লাল রঙ দিয়ে ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে।

১১৯. প্রশ্ন: উত্তর আটলান্টিক চুক্তির কত নম্বর ধারায় যৌথ নিরাপত্তার ধারণাটি ব্যক্ত হয়েছে?
(ক) আর্টিকেল ২     (খ) আর্টিকেল ৩
(গ) আর্টিকেল ৪     (ঘ) আর্টিকেল ৫

১২০. প্রশ্ন: আন্তর্জাতি সম্পর্কের কোন তত্ত্বটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী ভূমিকার বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা প্রদান করে?
(ক) উদারবাদ     (খ) বাস্তববাদ
(গ) মার্ক্সবাদ     (ঘ) কোনোটিই নয়

১২১. প্রশ্ন: হিলি স্থল বন্দরটি বাংলাদেশের কোথায় অবস্থিত?
(ক) বিরামপুর, দিনাজপুর (খ) ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর
(গ) হাকিমপুর, দিনাজপুর (ঘ) পাঁচ বিবি, জয়পুর হাট

শুদ্ধীকরণ:
পাঁচ বিবি> পাঁচবিবি [ উপজেলার নামটি এভাবে নিবন্ধিত।]
জয়পুর হাট> জয়পুরহাট [জেলার নামটি এভাবে নিবন্ধিত।]

১২২. প্রশ্ন: ঢাকা থেকে পূর্বদিকে অবস্থিত একটি স্থানের সাথে দ্রাঘিমার পার্থক্য ৪৫০। ঢাকার সময় মধ্যাহ্ন ১২.০০ টা হলে ঐ স্থানটির স্থানীয় সময় হবে —
(ক) সকাল ০৯.০০ টা     (খ) বিকাল ০৩.০০ টা
(গ) সন্ধ্যা ০৬.০০ টা     (ঘ) রাত ০৯.০০ টা

শুদ্ধীকরণ:
০৯.০০ টা> ৯.০০ টা ০৩.০০ টা> ৩.০০ টা
০৬.০০ টা> ৬.০০ টা ০৯.০০ টা> ৯.০০ টা
[দ্র. বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান, পরিশিষ্ট গ; বাংলা তারিখ ও সময়।]

১২৩. প্রশ্ন: কোন দুটি প্লেটের সংযোগস্থল বরাবর মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থিত?
(ক) ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান     (খ) ইন্ডিয়ান ও বার্মিজ
(গ) ইন্ডিয়ান ও আফ্রিকান        (ঘ) বার্মিজ ও ইউরেশিয়ান

১২৪. প্রশ্ন: উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে ট্রপোমন্ডলে বায়ুর ক্রমহ্রাসমান তাপমাত্রা হল
(ক) ৫.৫০ সেলসিয়াস/কিলোমিটার     (খ) ৬. ৫০ সেলসিয়াস/কিলোমিটার
(গ) ৭. ৫০ সেলসিয়াস/কিলোমিটার     (ঘ)৮. ৫০ সেলসিয়াস/কিলোমিটার

শুদ্ধীকরণ:
ট্রপোমন্ডলে> ট্রপোমণ্ডলে [‘মণ্ডল’ বানানে ‘ণ’ অপরিহার্য।]
হল> হলো

১২৫. প্রশ্ন: দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে (কপ ২৮) মূল ফোকাস ছিল —
(ক) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে হ্রাসকরণ
(খ) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক
(গ) ওজোন স্তর ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক
(ঘ) মরুকরণ প্রক্রিয়া হ্রাসকরণ।

শুদ্ধীকরণ:
জলবায়ু বিষয়ক> জলবায়ুবিষয়ক [‘-বিষয়ক’ সর্বদা পূর্ববর্তী বাক্যের সঙ্গে সেঁটে বসে; বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান, পৃষ্ঠা: ৯৯৩]
সংরক্ষণ বিষয়ক> সংরক্ষণবিষয়ক; নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক> নিয়ন্ত্রণবিষয়ক
মরুকরণ> মরূকরণ [চ্বি-প্রত্যয়-সহ করণ কৃত ভবন ভূত প্রত্যয় যুক্ত হলে উ-কার থাকলে ঊ-কার হয়। যেমন: ঋজু কিন্তু ঋজূকরণ; লঘু, কিন্তু লঘূকরণ]

১২৬. প্রশ্ন: নিরক্ষীয় তল থেকে উত্তর মেরুর কৌণিক দূরত্ব বা উৎপন্ন কোণ কত?
(ক) ১৮০০     (খ) ৩৬০০     (গ) ৯০০     (ঘ) ০০

১২৭. প্রশ্ন: জাপানিজ শব্দ ‘সুনামি’ এর অর্থ কী?
(ক) বিশালাকৃতির ঢেউ (খ) সামুদ্রিক ঢেউ
(গ) জলোচ্ছ্বাস (ঘ) পোতাশ্রয়ের ঢেউ

শুদ্ধীকরণ:
‘সুনামি’ এর> ‘সুনামি’-এর [ষষ্ঠী বিভক্তি হিসেবে ব্যবহৃত ‘এর’ আগে হাইফেন অপরিহার্য। এটি সাধারণত ‘র’ ধ্বনি হয়ে সংশ্লিষ্ট পদের সঙ্গে সেঁটে বসে। বিশেষ কারণে ‘র’ ধ্বনিকে ‘এর’ বানানে মূল পদ হতে পৃথক রাখতে হলে আগে হাইফেন (-) অপরিহার্য। নইলে বিভক্তি (এর) সর্বনাম হয়ে যায়।]
‘জলোচ্ছ্বাস’ বানানে ব-কার (চ্ছ্ব) স্পষ্ট নয়।

১২৮. প্রশ্ন: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয় কোনটি?
(ক) মরুকরণ (খ) বন্যা
(গ) সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি (ঘ) ভূমিকম্প

শুদ্ধীকরণ:
মরুকরণ> মরূকরণ [প্রাগুক্ত]
সমুদ্র পৃষ্ঠের> সমুদ্রপৃষ্ঠের

১২৯. প্রশ্ন: বন্যা নিয়ন্ত্রণে সাধারণ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত নয় কোনটি?
(ক) নদী খননের মাধ্যমে পানি পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা
(খ) নদী শাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা
(গ) নদীর দুই তীরে বনাঞ্চল সৃষ্টি করা
(ঘ) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা।

শুদ্ধীকরণ:
পরিবহন> পরিবহণ [পরি+√বাহি+অন]
নদী শাসন> নদীশাসন
বিকল্প চারটি উত্তরের ক ও ঘ উভয় সঠিক হতে পারে।

১৩০. প্রশ্ন: নিচের কোনটি কৃষি আবহাওয়াজনিত আপদ (Hazard)?
(ক) ভূমিকম্প (খ) ভূমিধ্স (গ) সুনামি (ঘ) খরা

১৩১. প্রশ্ন: Which of the following words cab be used as a verb?
(ক) mobile    (খ) sugar    (গ)media    (ঘ) sand

শুদ্ধীকরণ: এখানে ‍দুটি শুদ্ধ বিকল্প রয়েছে।

১৩২. প্রশ্ন: In which sentence `like’ is used as a preposition?
(ক) He likes to eat fish
(খ) He laughs like his father does
(গ) He climed the tree like a cat
(ঘ) Like minded people are necessary to start a business

শুদ্ধীকরণ:
চারটি বিকল্প বাক্যে ফুলস্টপ প্রয়োজন।

বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল শুদ্ধীকরণ: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল কারণ ও প্রতিকার

বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল ও শুদ্ধীকরণ: প্রশ্ন নং ১ থেকে ৩০

বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল, শুদ্ধীকরণ ও উত্তর: প্রশ্ন নং ৯১ থেকে ১১৮

হেডা অণ্ড লিঙ্গ: অণ্ডকোষ লিঙ্গ ও জ্ঞানচর্চা

#subach

Leave a Comment

সস্তার তিন অবস্থা

ড. মোহাম্মদ আমীন
সস্তার তিন অবস্থা— এই তিন অবস্থা কী?
এই তিন অবস্থা হচ্ছে— আ আ এবং আ = আও! আহা! এবং আহ্!
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

প্রথম ‘আ’ হচ্ছে আনন্দ, দ্বিতীয় ‘আ’ হচ্ছে আহাম্মকি এবং তৃতীয় ‘আ’ হচ্ছে আফসোস। এবার তিন অবস্থার ব্যাখ্যা দিচ্ছি।

মাহমুদ সাহেব বাজারে গেলেন ইলিশ কিনতে। দাম বেশি বলে না-কিনে ফেরত আসছেন। কিছুদূর আসার পর দেখলেন পথে এক লোক ইলিশ বিক্রি করছেন। দাম বাজারের অর্ধেকের চেয়েও কম। তার কাছ থেকে মাহমুদ সাহেব মাঝারি সাইজের এক হালি ইলিশ দুই হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিলেন। বাজারে এ সাইজের ইলিশ কিনতে লাগত কমপক্ষে তিন হাজার ছশ টাকা। চোখের পলকে ষোলোশ টাকা লাভ। আনন্দে মাহমুদ সাহেবের মন ফুরফুরে হয়ে গেল। এটি সস্তার প্রথম অবস্থা।
.
সস্তা না পেলে মাহমুদ সাহেব একটা ইলিশই কিনতেন। তখন খরচ হতো মাত্র নয়শ টাকা। কিন্তু সস্তা বলে আনন্দের আতিশয্যে আহাম্মকি করে দুই হাজার টাকায় চারটা কিনে নিলেন। এটি আহাম্মকি।
.
ইলিশ হাতে আনন্দিত মন নিয়ে কয়েক পা এগোনোর পর মনে পড়ে গেল ছোটো শালির কথা। মাছওয়ালার কাছ থেকে আরো দুটো ইলিশ কিনে শালির বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। এটিও আহাম্মকি। এরূপ আহাম্মকিকে আতিশয্যিক আহম্মকিও বলা যায়। এটি সস্তার দ্বিতীয় অবস্থা।
.
বাসায় ঢুকে বউয়ের হাতে মাছের থলে তুলে দিয়ে আনন্দচিত্তে বাথ রুমে ঢুকলেন মাহমুদ সাহেবে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাথ রুমের দরজায় আঘাত। অসমাপ্ত অবস্থায় বের হয়ে দেখলেন, বউয়ের এক হাতে ইলিশের থলে অন্য হাতে বটি। বাসা দুর্গন্ধে ভরে গেছে। কিছু বলার আগে বউ ইলিশের থলেটা মাহমুদ সাহেবের দিকে ছুড়ে দিয়ে বললেন, পচা মাছগুলো পুরো বাসাকে গন্ধময় করে দিয়েছে। এক্ষুনি ফেরত দিয়ে এস। নইলে তোমাকে এই বটি দিয়ে মাছে মতো – – -।
মাহমুদ সাহেব আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বললেন, ইলিশ পচা হলেও খাওয়া যায়।
বউ বললেন, আরে আহম্মক, এগুলো ইলিশ মাছ নয়, চৌক্কা।
তখনই রিং করলেন মাহমুদ সাহেবের শালি, দুলাভাই আপনার মাছের গন্ধে বাসায় থাকা যাচ্ছে না। আমার স্বামী বমি করে দিয়েছে। এমন অপমানটা না-করলেই কী হতো না?
সূত্র: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment

বিসিএস ভাইভা পরীক্ষায় পরিবর্তন আসছে: পিএসসির ভাইভা পরীক্ষায় পরিবর্তন

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিসিএস ভাইভা পরীক্ষায় পরিবর্তন আসছে: পিএসসির ভাইভা পরীক্ষায় পরিবর্তন

পিএসসির পরীক্ষা-পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র-প্রণয়ন, প্রশ্নপত্রের ভুল বা অসংগতি ও দুর্বলতা, উত্তরপত্র যাচাই, ভাইভা, গোপনীয়তা রক্ষা প্রভৃতি নিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান জনাব সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল। তিনি পিএসসিকে সবদিক দিয়ে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার চেষ্টায় বদ্ধপরিকর। তাঁর একটাই কথা, “যেভাবে হোক সমুদয় সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। পিএসসিকে জনগণের কাছে নিখুঁত আস্থার অতুলনীয় স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য আমি যে-কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।”

বললাম, ভাইভা-পরীক্ষা এখনো মান্ধাতার আমলের। এর পরিবর্তন নিয়ে কী ভাবছেন? তিনি বললেন, “ভাইভা পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন আসছে। একে বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের নিয়োগ-প্রক্রিয়ার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য নেওয়া হয়েছে যুগোপযোগী বিভিন্ন ব্যবস্থা। কার্যকর হবে আগামী ভাইভা থেকে।” 

“কীরকম ব্যবস্থা?” আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “ ভাইভাতে মৌখিক প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে আনা হবে বৈশ্বিক বিবেচনায় উপযুক্ত পরিবর্তন। কেবল সংখ্যা বা তথ্য জানার প্রশ্ন বাদ দিয়ে এমন প্রশ্ন করতে হবে যাতে শুধু মুখস্থবিদ্যা নয়, একই সঙ্গে প্রার্থীর সার্বিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা আর অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। যেন উত্তরের মধ্যে পরিস্ফুট হয় প্রার্থীর

বাম থেকে ড. মোহাম্মদ আমীন, সোহরাব হোসাইন, চেয়ারম্যান, পিএসসি

বাচনভঙ্গির স্বরূপ, দেশপ্রেম, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, দর্শন, স্বকীয়তা, হার্দিক মনোবৃত্তি প্রভৃতি। এমন প্রশ্ন করতে হবে, যাতে পরক্ষার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি কেমন তার পরিচয় পাওয়া যায়। এজন্য ‘কোন দেশের রাজধানী কোথায়’ কিংবা ‘কোন সাহিত্যিকের জন্ম তারিখ কী’ বা ‘কোন তারিখ কী ঘটেছিল’ প্রভৃতি-জাতীয় কেবল তথ্যভিত্তিক উত্তর-প্রাপ্তিমূলক প্রশ্নকে নিরুৎসাহিত করা হবে। বরং প্রশ্ন করতে হবে, ওই তারিখ ওই ঘটনা ঘটার কারণ, স্বরূপ প্রভৃতি।  যেমন: ‘‘বাংলাদেশের রাজধানী কোথায়?’’ এমন প্রশ্ন না করে উচিত হবে ‘ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় কী সুবিধা বা কী অসুবিধা হচ্ছে’’-  এমন বিশ্লেষণ-প্রকৃতির প্রশ্ন করা। … নেতার জন্ম কত তারিখ এমন প্রশ্ন করা করা উচিত হবে না, উচিত হবে ‘‘… নেতার সামগ্রিক জীবনের কোন অবদানকে শ্রেষ্ঠ মনে হয়’ ইত্যাদি প্রশ্ন।

“ক্যাডার পছন্দ নিয়ে প্রশ্নের প্রকৃতি কেমন হওয়া উচিত?” এই প্রশ্নের উত্তর চেয়ারম্যান মহোদয় বললেন, অনেক সাক্ষাৎকারগ্রহীতা প্রশ্ন করেন, আপনার প্রথম পছন্দ বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার। ডিসির কয়েকটি কাজ বলুন তো! এমন প্রশ্ন নিতান্তই অযৌক্তিক। ওই প্রার্থী হয়তো কখনও ডিসিকে দেখেনওনি; অধিকন্তু  তাঁর কাছ থেকে এমন কোনো অভিজ্ঞতাও চাওয়া হয়নি। তাঁর কাছে প্রশ্ন করা যেতে পারে, ‘‘আপনার মতে বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা কেমন..।’’ অনেকে প্রার্থীর ক্যাডার পছন্দ নিয়ে মন্তব্য করে বসেন;  এই ক্যাডার তো ঘুসের..। এমন প্রশ্ন খুবই গর্হিত। এসব প্রশ্ন করা যাবে না। বিসিএস পরীক্ষায় যে পদসমূহে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর কোনো অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় না সেসব পদে অভিজ্ঞতাজনিত প্রশ্ন করা যাবে না। 

সাক্ষাৎকারপ্রার্থী ও সাক্ষাৎকারগ্রহীতার পারস্পরিক প্রভাবিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বললেন, এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে,  যাতে ভাইভা-পরীক্ষায় পরীক্ষকের প্রভাবিত হওয়ার কিংবা পরীক্ষককে প্রভাবিত করার সকল কৌশল রোধ হয় এবং এমন কাজ করার কোনো সুযোগ না থাকে। ভাইভাকে এমন কৌশলে আর এমন পদ্ধতিতে সজ্জিত করার চেষ্টা করছি যাতে, সাক্ষাৎকারপ্রার্থী ও সাক্ষাৎকারগ্রহীতা কেউ প্রভাবিত হওয়ার কিংবা কেউ কাউকে প্রভাবিত করার সুযোগ না পায়। ভাইভা পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে সাক্ষাৎগ্রহীতা জানতে পারেন তিনি কোনো বোর্ডে পড়েছেন। সাক্ষাৎকারপ্রার্থী ও সাক্ষাৎকারগ্রহীতার পারস্পরিক আচরণেও পরিবর্তন আনা হবে। সাক্ষাৎকারগ্রহীতাকে সার্বিকভাবে সাক্ষাপ্রার্থীর সঙ্গে বন্ধুসুলভ অমায়িক আচরণ করতে হবে। প্রার্থীকে স্বাগত জানিয়ে বোর্ড-চেয়ারম্যান সুহৃদজনের আচরণ দিয়ে তাঁকে স্বাভাবিক করে তুলবেন। যাতে তাঁর মনে কোনো ভীতি বা জড়তা না থাকে। থাকলেও তা আলোচনা করে স্বাভাবিক করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই প্রার্থীরাই আমাদের উত্তরসুরী।  আমি তাঁদের যে ব্যবহার দেব, সে ব্যবহারই ভবিষ্যতে আমার বা আমার স্বজনরা পাবে। আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরই নির্মাণ করতে হবে।

তিনি আরও বললেন, মানুষ মানবীয় স্বভাবে বিভূষিত জীব। তার মধ্যে যেমন আছে স্নেহ-প্রেম, তেমনি আছে হিংসা-দ্বেষ। যেমন আছে ভালো, তেমনি আছে মন্দ। কারও প্রতি সে অনুরক্ত আবার কারও প্রতি বিরক্ত। কেউ তার শত্রু আবার কেউ তার বন্ধু। শুধু পরিচিতদের মধ্যে নয়, অপরিচিতদের মধ্যেও নানা কারণে এমন সম্পর্ক ঘটতে পারে । অপিরিচিতদের মধ্যে সাধারণত যে কারণে এসব ঘটে তন্মধ্যে ধর্ম-বর্ণ, কর্ম বা পেশা, জন্মস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অধীত-বিষয় প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব বিষয় নিয়ে কারও প্রতি কারও স্নৈহিক দুর্বলতা বা বিরূপ মনোভাব থাকতে পারে; থাকতে পারে বিদ্বেষ কিংবা স্নেহাশেষ। কারও হয়তো কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম-বর্ণ, জেলা, পেশা কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি স্নেহ বা ঘৃণা থাকতে পারে। আবার থাকতে পারে অতিরিক্ত মমতা। এমন অনুভূতির উন্মেষ রোধ করার জন্য প্রার্থীকে এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। “প্রিয় ব্যক্তি কে” এমন প্রশ্ন করাও অনুচিত হবে। আপনার প্রিয়জন আমার জন্য ঘৃণারও হতে পারে। প্রার্থীর নামের সঙ্গে মেধার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই নাম জিজ্ঞাসা অহেতুক। নামের মাধ্যমে ধর্মীয় পরিচয় পাওয়া যায়। ধর্মীয় বিষয়ে কারও অনুভূতি প্রবল থাকতে পারে। তদ্রূপ প্রার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিষয়, জেলা ইত্যাদির সঙ্গেওে মেধার সম্পর্ক নেই। অথচ এর মাধ্যমে প্রার্থী ও পরীক্ষক উভয়ের মধ্যে বিরূপ বা সন্তুষ্টির নানা কারণ ঘটতে পারে।

সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ‘তুমি’ সম্বোধন করা সমীচীন হবে না। তাঁকে ধমক দেওয়া বা তাঁর প্রতি দুর্ব্যবহারকে অনুচিত মনে করা হবে। সাক্ষাৎগ্রহীতাদের এসব বিষয় হতে বিরত থাকতে হবে। আমরাও একদিন ভাইভা-বোর্ডে প্রার্থী ছিলাম। এটি অবহেলা করা যাবে না। অনেক সাক্ষৎকারগ্রহীতা প্রার্থীর ক্যাডার-পছন্দ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এমন মন্তব্যপ্রদান সাক্ষৎগ্রহীতার জন্য অনুচিত বলে গণ্য করা হবে।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন যেভাবে হয়

বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল ও শুদ্ধীকরণ: প্রশ্ন নং ১ থেকে ৩০

#subach

Leave a Comment

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন যেভাবে হয়

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন যেভাবে হয়

আজ ৫/৫/২০২৪ খ্রি. তারিখ  সোমবার পিএসসির চেয়ারম্যান-সহ কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে প্রশ্নপত্র তৈরিতে জটিলতা ও ভুল প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। আলাপ হচ্ছিল পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তরপত্র যাচাই, ভাইভা প্রভৃতি বিষয়ে। আলাপচারিতায় কথাপ্রসঙ্গে পিএসসির চেয়ারম্যান জনাব সোহরাব হোসাইন বললেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই পরীক্ষার হলে উত্তরপত্র থেকে পরীক্ষার্থীর পরিচয়-জ্ঞাপক অংশটি পৃথক করে ফেলা হয়। তখন উত্তরপত্র দেখে এটি কার উত্তরপত্র তা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থী (নিজের লেখা দেখে) ছাড়া আর কারও চেনার কোনো উপায় থাকে না। ওই উত্তরপত্রে কেবল একটি কোড নম্বর থাকে। ওই কোড নম্বর কেবল কম্পিউটারই শনাক্ত করতে সক্ষম।
.
এরপর উত্তরপত্রসমূহ মূল্যায়নের জন্য যথাযথ গোপনীয়তা অবলম্বন করে প্রথম পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়। পরীক্ষক উত্তরপত্রে কোনো দাগ বা নম্বর দিতে পারবেন না। তিনি কেবল  প্রতিটি উত্তরের বিপরীতে প্রাপ্ত নম্বর পৃথক কাগজে লিপিবদ্ধ করে পিএসসিতে পাঠাবেন। এরপর ওই উত্তরপত্র দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়। তিনিও প্রথম পরীক্ষকের মতো একইভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে পৃথক কাগজে প্রতিটি উত্তরের বিপরীতে প্রাপ্ত নম্বর লিপিবদ্ধ করে পিএসসিতে পাঠান। উভয় পরীক্ষকের প্রদেয় নম্বরের গড় যা আসে তাই হলো সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর ওই বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর।স্বাভাবিকভাবে দুজন পরীক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন। তবে প্রথম দুই পরীক্ষকের প্রদেয় নম্বরে ২০%-এর অধিক তফাত থাকলে ওই উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়।
.
“ভাইভা পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন আসছে।” জানালেন চেয়ারম্যান মহোদয়। চেষ্টা করা হচ্ছে এমন ব্যবস্থা নিতে যাতে ভাইভা-পরীক্ষায় পরীক্ষকের প্রভাবিত হওয়ার কিংবা পরীক্ষককে প্রভাবিত করার সকল কৌশল রোধ করা যায়। পরিবর্তন আনার চেষ্টা হচ্ছে সাক্ষাৎকারপ্রার্থী ও সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীর পারস্পরিক আচরণেও। ইতোমধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ‘তুমি’ সম্বোধন করা সমীচীন নয় মনে করা হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ধমক দেওয়া বা দুর্ব্যবহার করা কিংবা কারও ক্যাডার-পছন্দ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য প্রভৃতি সাক্ষৎগ্রহীতার জন্য অনুচিত বলে গণ্য করা হবে। কেবল তথ্য জানার প্রশ্ন বাদ দিয়ে এমন প্রশ্ন করতে হবে যাতে শুধু মুখস্থবিদ্যা ছাড়াও পরক্ষার্থীর সার্বিক বিশ্লেষণ ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। যেন উত্তরের মধ্যে পরিস্ফুট হয় প্রার্থীর বাচনভঙ্গির স্বরূপ, দেশপ্রেম, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি। এমন প্রশ্ন করতে হবে, যাতে পরক্ষার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি কেমন তার পরিচয় পাওয়া যায়। এজন্য কোন দেশের রাজধানী কোথায় কিংবা কার জন্ম তারিখ কী প্রভৃতি-জাতীয় কেবল তথ্যনির্ভর প্রশ্নকে নিরুৎসাহিত করা হবে।  যেমন: ‘‘বাংলাদেশের রাজধানী কোথায়’’ এমন প্রশ্ন না করে করা উচিত হবে ‘ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় কী সুবিধা বা অসুবিধা হচ্ছে’’-  এমন বিশ্লেষণ প্রকৃতির প্রশ্ন।

Leave a Comment

হেডা অণ্ড লিঙ্গ: অণ্ডকোষ লিঙ্গ ও জ্ঞানচর্চা

ড. মোহাম্মদ আমীন

হেডা অণ্ড লিঙ্গ: অণ্ডকোষ লিঙ্গ ও জ্ঞানচর্চা

এক দেশের গালি, আরেক দেশের বুলি। হেডা (Heda) একটি প্রাচীন শব্দ। এটি এমন একটি শব্দ যা পৃথিবীর প্রায় সকল প্রধান ভাষায় পাওয়া যায়। প্রাচীন যে কটি শব্দ এখনও অত্যন্ত জনপ্রিয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় তন্মধ্যে হেডা অন্যতম। প্রাচীন তামিল ভাষায় শব্দটির অর্থ: পাল (গবাদি পশুর)। সংস্কৃত, প্রাকৃত বা দ্রাবিড় ভাষায় লেখা প্রাচীন শিলালিপি গ্রন্থে শব্দটির অর্থ দেখানো হয়েছে— এমন একজন ব্যক্তি যে গবাদি পশুর পাল নিয়ে তাদের বিক্রি করার জন্য ঘুরে বেড়ায়। ভালোবাসা, প্রেম, আনন্দ, স্নেহ, অনুরাগ প্রভৃতি হিসেবেও অধুনা শব্দটির প্রয়োগ দেখা যায়।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ইউরোপ আমেরিকায় Heda নামের অনেক মহিলা আছে। মেয়ে শিশুর নাম হিসেবে হেডা (Heda) বেশ জনপ্রিয়। যেমন: হেডা হপার (Hedda Hopper)। হেডা হপার (২রা মে ১৮৮৫— ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬) ছিলেন একজন জনপ্রিয় মার্কিন কলামিস্ট, লেখিকা ও অভিনেত্রী। তাঁর আসল নাম এন্ডা ফারি। ‘হেডা হপার’ কথার ‘হেডা’ অর্থ: বন্ধুত্বপূর্ণ, প্রশান্তিদায়ক, ভাগ্যবান, উপযুক্ত, সক্রিয়। বালিকার নাম হিসেবে শব্দটির জার্মান বানান Hedda এবং হিব্রু বানান: Hedy। যেমন: Hedy Lamarr।
.
সাধারণভাবে হেডা কথাটি বাক্য, ভাষা ও উদ্দেশ্যভেদে— ভাগ্যবান, আধুনিক, আনন্দদায়ক, বন্ধুত্বপূর্ণ, স্বাভাবিক, অস্থির, উদার, উপযুক্ত, মনোযোগী, গুরুতর, সক্রিয়, রাগান্বিত, রাগ, ক্রোধ, অভিমান প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। রোমান্স (Romance) ভাষায় দৈহিক বা মানসিক অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য হেডা (Heda) শব্দটি ব্যবহার করা হতো। এখনও অনেক ভাষায় এই অর্থে শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়।
প্রাচীন জার্মান, গ্রিক ও হিব্রু উদ্ভূত হেডা (heda) অর্থ যুদ্ধ, লড়াই, সংগ্রাম। কন্নড়-ইংরেজি অভিধানমতে, heda অর্থ: এর, তে, পেছনে। হেডা ( Heda) নামের একজন রাম ও রাবণের মধ্যকার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সুতরাং, পৌরাণিক চরিত্র হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। আই লাভ হেডা ( I Love Heda) নামের একটি লোগো রয়েছে। ভালোবাসার গভীরতা, কল্পনা সীমার বিস্তৃতি, কর্মক্ষেত্র বা স্কুলে আকর্ষণীয় উপস্থাপনা, প্রচারমূলক মগ, সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন, ব্যাজ, আমন্ত্রণ, ব্যানার এবং বিভিন্ন ফোল্ডারে এই লোগো ব্যবহৃত হয়। হেডা (Heda) নাম দিয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান।

বাংলায় শব্দটি অপশব্দ বা গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় গালি বা বিরক্তি বা তুচ্ছার্থে হেডা শব্দের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। তখন এর অর্থ: যোনি। বন্ধুদের মধ্যে কৌতুক বা উপহাস কিংবা নৈকট্যিক বুলি হিসেবেও শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। তখন এটি গালি নয়, বন্ধত্বময় বুলি।
কোথাও যে ভালোবাসা, কোথাও সে চড়
কোথাও সে বিরক্তি, হতভাগা পর।
কোথাও যা চুমো আবার, কোথাও তা গুলি
এক দেশের গালি তো, আরেক দেশের বুলি

অণ্ডকোষ লিঙ্গ ও জ্ঞানচর্চা

অর্কিড একটি ফুল। এটি সৌন্দর্য, আনন্দ, পরিচর্যা, নান্দনিক রসবোধ এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। অনেকের কাছে নামটি নিজেই একটি মাধুর্য। গ্রিক orchis থেকে অর্কিড শব্দের উদ্ভব। যার অর্থ অণ্ডকোষ (লিঙ্গমূল)। ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে অণ্ডকোষ বা অর্কিড ফুলের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়। গ্রিক ভাষার অর্কিড, মধ্যযুগে ইংরেজি ভাষায় বলকওয়ার্ট নামে পরিচিত ছিল। ইংরেজি bullocks থেকে শব্দটি এসেছে। এর অর্থ অণ্ডকোষ বা লিঙ্গমূল। আধুনিক ইংরেজি শব্দ balls এর প্রাচীন রূপ beallucas। এর অর্থও অণ্ডকোষ বা লিঙ্গ।
.
অ্যাভোকাডো বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি ফল। বাংলাদেশেও ফলটি পরিচিত। স্পেনিশ aquacate থেকে অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে অ্যাভোকাডো শব্দের উদ্ভব। স্পেনিশরা, মেক্সিকান ahuakati থেকে শব্দটি গ্রহণ করে। এর অর্থও অণ্ডকোষ বা লিঙ্গ (penis)। ফলটি দেখতে অণ্ডকোষের মতো। তাই আজটেকরা এর নাম দেন ahuakati বা অণ্ডকোষ।
পেন্সিল (pencil) শব্দের প্রাচীন অর্থ উটের পশমে তৈরী নরম তুলি, যা দিয়ে শিল্পীরা ছবি আঁকেন। এর সঙ্গে ‘pen’ ও ‘penis’ শব্দের গঠনগত এবং অর্থগত মিল রয়েছে। ‘pencil’ কিন্তু ইংরেজি শব্দ নয়। চতুর্দশ শতকের প্রথম দিকে ফরাসি ‘pincel’ থেকে ইংরেজি ‘pencil’ শব্দের সৃষ্টি। ল্যাটিন penicillus থেকে pencil শব্দের উদ্ভব। এর প্রায়োগিক অর্থ রংতুলি বা পেনসিল হলেও প্রকৃত অর্থ penicillus। বাংলায় যার অর্থ, ক্ষুদে লেজ। স্মতর্ব্য, ল্যাটিন ভাষায় ‘ছোট লেজ’ মানে ‘শিশ্ন’ বা লিঙ্গ। কারণ শিশ্ন দেখতে ছোটো লেজের মতো। তাই অনেক পুরুষকে পরুষ বলে।
.
অতএব, জ্ঞানের বাহন পেনসিল শব্দের মুল অর্থ শিশ্ন বা লিঙ্গ। ইংরেজি ভাষার শব্দ penis এর বাংলা শিশ্ন বা লিঙ্গ। শব্দটিকে দুই ভাগ করলে হয় pen is । যার সোজা বাংলা, এটি একটি কলম এবং অন্তর্নিহিত অর্থ জ্ঞান, সৃষ্টির ধারক, জ্ঞানচর্চা, জ্ঞানের সাধনা প্রভৃতি। কারণ কলম ছাড়া জ্ঞানের সাধনা ও সৃষ্টির বিকাশ সম্ভব নয়, যেমন সম্ভব নয় লিঙ্গ ছাড়া। অতএব জ্ঞানসাধনার মৌলিক দণ্ড pencil/ pen শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থও শিশ্ন, লিঙ্গ বা অণ্ডকোষ। ইংরেজি musk শব্দটি বাংলায় বহুল প্রচলিত কস্তুরী শব্দের তুল্য। musk সংস্কৃত ‘মুষ্ক’ শব্দের পরিবর্তিত রূপ। সংস্কৃতে মুষ্ক অর্থ অণ্ডকোষ বা লিঙ্গ। ইংরেজিতে pick শব্দের অর্থ ‘বাছাই’।বাছাই মানে চিন্তা ভাবনা করে গ্রহণ করা। তাই এর গুঢ়ার্থও জ্ঞানসাধনা। নরওয়েজিয়ান ভাষায় শব্দটির অর্থ ‘শিশ্ন’ বা লিঙ্গ। ইংরেজি fitter ফিটার শব্দের অর্থ এমন একজন দর্জি যিনি মাপানুযায়ী কাপড় কাটেন। কিন্তু নরওয়েজিয়ান ভাষায় ফিটার শব্দের অর্থ ‘নারীর যৌনাঙ্গ’।
.
যিশু খ্রিষ্টের কাছে যে তিন জ্ঞানী উপহার এনেছিলেন, তাদের মাগি রোমান বানান magi (ম্যাগি) বলা হয়। প্রাচীন পারসিক পুরোহিতমণ্ডলকেও মাগি বলা হতো। শব্দটির উৎসার্থ, সৃষ্টি তাড়নায় বিধৌত নান্দনিক পরিজ্ঞান। যার সাধারণ অর্থ শিশ্ন। বাংলায় মাগি শব্দের মূল অর্থ নারী কিন্তু এখন যৌনকর্মী।
.
সূত্র : বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

হেডম হেডাম হ্যাডম হ্যাডাম, রামরাজত্ব

ড. মোহাম্মদ আমীন
হেডম হেডাম হ্যাডম হ্যাডাম

‘হেডম’ সাঁওতালি বা মুন্ডারি উৎসের দেশি শব্দ। অর্থ (বিশেষ্যে) মুরোদ/মুরদ, সামর্থ্য, সক্ষমতা, যোগ্যতা, বাহাদুরি, পৌরষত্ব, বীরত্ব, তেজ, হিম্মত, দাপট। আদিবাসীরা বীরত্ব প্রকাশের

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

জন্য ‘হেডম’ শব্দটি প্রয়োগ করত (এক লালু মুন্ডার হেডমের কাছে সুন্দরবনের সব বাঘ নস্যি ছিল)। শব্দটির প্রয়োগের সেই ইতিবাচকতা এখন আর নেই।

‘হেডম’-এর এখন আগের সেই ‘হেডম’ নেই। ‘হেডম’ অধুনা ‘হেডম’ হারিয়ে হেডমহীনতা প্রকাশে ব্যঙ্গর্থে অধিক ব্যবহৃত হয়। সামর্থ্য বা ক্ষমতা কিংবা যোগ্যতা নেই, কিন্তু ভাব দেখায়— এমন কাউকে ব্যঙ্গ, উপহাস বা নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
  • মেজর জেনারেল ইব্রাহিম বললেন, আমেরিকাকে ধমক দেওয়ার হেডম নেই সরকারের ।
  • আমাদের গীতা ম্যাডাম বলতেন, নারীবাদ মানে হেডম দেখানো নয়।
  • ফকিন্নির পোলা হেডম দেখাতে আসে আমার কাছে।
  • হেডম ছাড়া মরদ/ হাজ ন-গরি আঁরা দিন বঁই থাকে ঘরত (ড. মোহাম্মদ আমীন, আমার বেড়া ঘেরা ঘর)।
‘হেডম’ আঞ্চলিক শব্দ। অঞ্চলেভেদে এর চারটি বানান দেখা যায়। যেমন: হেডম, হেডাম, হ্যাডম, হ্যাডাম। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শব্দটির প্রয়োগ দেখা যায়।

রামরাজত্ব 

‘রামরাজত্ব’একটি দ্বন্দ্বার্থক বা বিপরীত অর্থদ্যোতক শব্দ। যেসব শব্দের অর্থ একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক কিংবা বিপরীত অর্থও ধারণ করে তাদের দ্বন্দ্বার্থক বা বিপরীত অর্থদ্যোতক শব্দ বলে। যেমন: অপরূপ। এর অর্থ অতি সুন্দর এবং অতি কুৎসিত। অনুরূপ, অগণ্য, দারুণ, পর্যাপ্ত, ফাজিল।
রাম হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। হিন্দু ধর্মগ্রন্থসমূহে তাঁকে অযোধ্যার রাজা বলা হয়েছে। রাম সূর্যবংশে (ইক্ষ্বাকুবংশ; পরবর্তীকালে রাজা রঘুর নামানুসারে রঘু বংশ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একদল বলে, রামের শাসন ছিল সুখ ও শান্তিতে পূর্ণ। আরেক দল বলে, সুখ-শান্তি ছিল রাম ও তাঁর অনুগতদের জন্য, বিরোধীদের জন্য নয়। বিরোধীদের মতে, রামের শাসন ছিল স্বেচ্ছাচারের শাসন।
‘রাম’ ও ‘রাজত্ব’ মিলে রামরাজত্ব (রাম+রাজত্ব)। এর শাব্দিক অর্থ রামের রাজত্ব। বাংলা একাডমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, তৎসম ‘রামরাজত্ব’ অর্থ (বিশেষ্যে) ১. সুখ ও শান্তিপূর্ণ রাজত্ব। ২. (আল.) স্বেচ্ছাচারের রাজত্ব।
  • দেশ সুখ আর শান্তিতে ভরপুর, কোথাও কোনো অভাব নেই— এ যেন রামরাজত্ব। আহ্ কী শান্তি!
  • যার যেমন ইচ্ছে তেমন করছে; কোনো প্রতিকার নেই; অসহ্য এক রামরাজত্ব চলছে।
  • জিনিসপত্রের দাম বেড়ে আগুন, নিশ্বাসের মতো বিদ্যুৎ যায় আর আসে; রাস্তায় হাঁটা যায় না হকারের জ্বালায়; কী এক অসহনীয় রামরাজত্ব চলছে দেশে! হে রাম, কোথায় তোমার সেই ঐশ্বর্যভরা রামরাজত্ব থেকে এক চিলতে শান্তি ছুড়ে দাও-না!

সূত্র: পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

ঘটি-বাঙাল রেষারেষি

ড. মোহাম্মদ আমীন

ঘটি-বাঙাল রেষারেষি

জ্যোতিভূষণ চাকী তাঁর ‘বাগর্থকৌতুকী’ গ্রন্থে লিখেছেন, “ঘটি-বাঙালের পারস্পরিক রেষারেষি সুপ্রাচীন। এ-বাংলা ও-বাংলাকে তেমন প্রীতির চোখে দেখত না। বিয়ে শাদির ব্যাপারও এড়াতে চেষ্টা করত।” সরহপাদের একটি দোহায় আছে-
বঙ্গে জায়া নিলেসি পরে
ভাগেল তোহর বিণাণা।

অর্থাৎ বঙ্গে (পূর্ববঙ্গে) যখন বিয়ে করেছিস তোর বুদ্ধিসুদ্ধি সব লোপ পেল বলে (বিণাণা চিত্তবান অর্থাৎ সু-চেতনা)। ভুসুকপাদেও দেখছি –
আদি ভুসুক বঙ্গালী ভইলী
ণিঅ ঘরণি চণ্ডালী লেলী।

অর্থাৎ ভুসুক বঙ্গালীকে যেদিন নিজের গৃহিণী করলেন সেদিন তিনি বাঙালি বনে গেলেন অর্থাৎ বঙ্গালসুলভ ভ্রষ্টাচারের ফাঁদে পড়লেন। চণ্ডাল হয়ে গেলেন এতদিনের ভালো মানুষটি।
ভারতীয় জি-বাংলা চ্যানেলে প্রচারিত ‘বয়েই গেল’ নাটকে ঘটি-বাঙালি রেষারেষির কিছু চিত্র পাওয়া যায়।
ঘটি এসছে ‘বন্দ্যঘটী’ থেকে। আদি রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণদের উপাধি ছিল ‘বন্দ্যঘটী’। ‘বন্দ্যঘট’ গ্রামের নাম থেকে ‘বন্দ্যঘটী’ উপাধি এসেছে। বন্দ্যঘটে বাস যার সে ‘বন্দ্যঘটীয়>বন্দ্যঘটী’। ‘বন্দ্যঘট’ এর অপভ্রংশ বাঁড়র (বন্দ্যঘট> বন্দহড়>বন্দঅড়>বাঁড়ড়> বাঁড়র)। বাঁড়ুর্জে বা বাঁড়ুজ্জে- এর উৎপত্তিও বাঁড়র থেকে। ঘটী প্রথমে কেবল রাঢ়দেশীয় ব্রাহ্মণকেই বোঝাত, ক্রমে তা শুধু রাঢ়দেশে বা পশ্চিমবঙ্গ অর্থে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে। অর্থেও অবনমন ঘটে। প্রাদেশিক প্রতিযোগিতাজনিত ঈর্ষায় শব্দটি ক্রমশ তাচ্ছিল্যমিশ্রিত বিদ্রূপার্থে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
ঘটিদের অভিযোগ, পূর্ববঙ্গের লোকেরা প্রাচীনকাল থেকে শ-কে হ বলে আসছে। এ নিয়ে একটা সংস্কৃত শ্লোকও আছে: শতায়ুরিতি বক্তব্যে হতায়ুরিতিবাদিনঃ। মানে, ‘শতায়ু হও’ বলতে গিয়ে বাঙাল বলে দিয়েছে: হতায়ু হও।
এমন রেষারেষির মধ্যেও এক বাঙালের সঙ্গে এক ঘটির বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
ঘটি বলল, তোমরা শালাকে হালা এবং সংস্কৃতকে হংস্কৃত বল কেন?
বাঙাল বলল, আমরা তো হালাকে হালা আর হংস্কৃতকে হংস্কৃতই বলি, তোমরা হুনতে হালা আর হংস্কৃত হুনো। তোমাদের কানে হোনার হমস্যা আছে।
ঘটি বলল, ঠিক আছে বাবা, তুমি শতায়ু হও।
বাঙাল খুশি হয়ে বলল, তুমিও তাহলে হতায়ু হও।
ঢাকার মেয়ে অঞ্জনা কলকাতায় পড়ে। তার সহপাঠী রঞ্জন। একদিন রঞ্জন বলল, অঞ্জনা, আপনার ঢাকা জায়গাটা আমার দেখার খুব সখ। অনেক চেষ্টা করেও দেখার সুযোগ হয়নি। দেখাবেন কি?
অঞ্জনা বলল, আমারও শখ আপনার ধর্মতলাটা দেখার। আপনারটা আগে দেখান। তারপর আমারটা দেখাব।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page