উপরোক্ত উপরিউক্ত এবং উর্পযুক্ত

ড. মোহাম্মদ আমীন

উপরোক্ত উপরিউক্ত এবং উর্পযুক্ত

‘উপরি’ থেকে ‘উপর’ এবং তা থেকে উপরিউক্ত এবং উপর্যুক্ত। বাক্যে অব্যয় ও ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘উপরি (ঊর্ধ্ব+রি) শব্দ হতে ‘উপর

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

শব্দের উদ্ভব। কাজেই ‘উপরি’ সংস্কৃত শব্দ নয়, বাংলা শব্দ। ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধির ফলে ‘উপরোক্ত’ শব্দ গঠিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত “উক্ত (√বচ্ + ক্ত)” শব্দটি তৎসম।

সংস্কৃতঘেষা বৈয়াকরণগণ মনে করেন, একটি অতৎসম শব্দের সঙ্গে আরেকটি তৎসম শব্দের সন্ধি বিধেয় নয়। যেমন : বিধেয় নয় ব্রাহ্মণ শূদ্র সামাজিক সম্পর্ক, প্রেম-পিরিত। তাই বৈয়াকরণগণ এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বাংলা তথা শূদ্র ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত তথা ব্রাহ্মণ ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি না-করে সংস্কৃত ‘উপরি’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি করাই সমীচীন। সেক্ষেত্রে এই সন্ধির ফলে জাত শব্দটি হয় : উপরি-উক্ত বা উপরিউক্ত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে কেবল এই উপরিউক্ত শব্দটিকে প্রমিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সংস্কৃত ‘উপরি’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ‘যুক্ত (√যুজ্+ত)’ শব্দের সন্ধি করলে পাওয়া যায় : “উপরি+যুক্ত= উপর্যুক্ত’’। তাই বৈয়াকরণগণ, উপরোক্ত শব্দের পরিবর্তে উপরিউক্ত বা উপর্যুক্ত লেখা সমর্থন করে এই শব্দটিকে প্রমিত নির্দেশ করেছে। যদিও বাংলামতে, উপরোক্ত লেখা দূষণীয় হবে না। কারণ, বাংলা সংস্কৃত ভাষা নয়; আলাদা একটি ভাষা।

তাই বাংলা ব্যাকরণ এবং সংস্কৃত ব্যাকরণও এক নয়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “সংস্কৃত সন্ধির নিয়ম বাঙ্গালার পক্ষে খাটে না- বাঙ্গালা সন্ধির অন্য নিয়ম আছে”

Leave a Comment

অতলান্তিক থেকে আটলান্টিক, অপেরা, অয়ি-অয়ে, ওডিকোলন, আইওয়াশ

ড. মোহাম্মদ আমীন

অতলান্তিক থেকে আটলান্টিক, অপেরা, অয়ি-অয়ে, ওডিকোলন, আইওয়াশ

অতলান্তিক: অতলান্তিক সংস্কৃত শব্দ। এর ব্যুৎপত্তি হচ্ছে, অতল+ আন্তিক। সংস্কৃত ‘অতল’ শব্দের অর্থ— বিশেষণে তল নেই এমন, গভীর, অথৈ, অগাধ এবং বিশেষ্য পুরাণে বর্ণিত সাতটি পাতালের প্রথমটির তলদেশ। সুতরাং অতলান্তিক অর্থ যার তলদেশ অত্যন্ত গভীর। পৃথিবীতে এখনো এ নামের একটি মহাসাগর আছে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় Atlantic Ocean, এই সাগরের তলদেশ অত্যন্ত গভীর। মূলত ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত অতল + আন্তিক = অতলান্তিক সাগরই ইউরোপে Atlantic নামে পরিচিত। সংস্কৃত অতলান্তিক থেকে ইংরেজি Atlantic এবং তা থেকে Atlantic মহাসাগর নামের উদ্ভব।এর অর্থ: যার তলদেশ অত্যন্ত গভীর। 

অপেরা: ইতালীয় অপেরা (Opera) শব্দের বাংলা গীতিনাট্য। এর উদ্ভব ইতালিতে। পরবর্তীকালে তা সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এটি পাশ্চাত্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় গীতিনির্ভর বিশেষ ধরনের নাটক। এটি পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি প্রধান শাখা। অভিনয়, পোশাকসজ্জা এবং কখনো কখনো নৃত্য সহকারে মঞ্চে গীতিনাট্য পরিবেশন করা হয়। সহজ কথা, সংগীত-প্রধান নাটককে অপেরা বা গীতিনাট্য বলা হয়।অপেররার কাহিনি ও চরিত্রের সঙ্গে সমন্বয় করে সংগীত চয়ন করা হয়। শকুন্তলা বাংলা ভাষার প্রথম অপেরা বা গীতিনাট্য।

অয়িঅয়ে: ফারসি অয়ি থেকে অয়ি-অয়ে কথার উদ্ভব। এর অর্থ— (অব্যয়ে) ভক্তি, প্রেম বা স্নেহসূচক সম্বোধনবিশেষ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:

অয়ি ভুবনমনোমোহিনী, মা,
অয়ি নির্মলসূর্যকরোজ্জ্বল ধরণী জনকজননিজননী।

ওডিকোলন: সুগন্ধি সুরাসার বিশেষ। ওডিকোলন শব্দের অর্থ কোলন নদীর জল। ফরাসি ভাষায় নামকরণ হলেও এ সুরভিত নির্যাসটি প্রথম জার্মানির কোলন নদীর কোলন শহরে প্রস্তুত হয়। তাই নাম ওডিকোলন বা কোলন নদীর জল। কথিত হয়, কোলন নদীর জল ছাড়া এটি হয় না।

আইওয়াশ: ইংরেজি আইওয়াশ অর্থ (বিশেষ্যে) প্রতারণা, ছলনা, বাগাড়ম্বর, তালিকার অন্তর্ভুক্ত স্বতন্ত্র বস্তু।

#subach

 

Leave a Comment

লুচ্চা লোচ্চা লুচি ও লুচ্চামি; তুঙ্গস্থান: বৃহ্সপতি এখন আমার তুঙ্গে, ভিস্তি বনাম ভিস্তিওয়ালা

ড. মোহাম্মদ আমীন

লুচ্চা লোচ্চা লুচি ও লুচ্চামি; তুঙ্গস্থান: বৃহ্সপতি এখন আমার তুঙ্গে, ভিস্তি বনাম ভিস্তিওয়ালা

তুঙ্গস্থান: বৃহ্সপতি এখন আমার তুঙ্গে: প্রত্যেকটি গ্রহের একটি করে উচ্চ বা তুঙ্গক্ষেত্র আছে। রবির তুঙ্গস্থান মেষরাশি; চন্দ্রের তুঙ্গস্থান বৃষরাশি; এভাবে, মঙ্গলের তুঙ্গস্থান মকর; বুধের তুঙ্গস্থান কন্যা; বৃহস্পতির তুঙ্গস্থান কর্কট; শুক্রের তুঙ্গস্থান মীন; শনির তুঙ্গস্থান তুলা; রাহুর তুঙ্গস্থান মিথুন ও কেতুর তুঙ্গস্থান ধনু। রাশির জন্য গ্রহ তুঙ্গে থাকা শুভফলপ্রদ। বৃহস্পতি (শুভগ্রহ) কর্কট রাশিতে অবস্থান করলে এ রাশির জাতক বলতে পারে: ‘বৃহস্পতি আমার এখন তুঙ্গে’। মানে খুব ভালো অবস্থানে আছে, দিনকাল ভালো যাচ্ছে। জ্যোতিষীরা কিন্তু হাতের তালুতেও বৃহ্স্পতির দেখা পায়।

ভিস্তি বনাম ভিস্তিওয়ালা: ভিস্তি ফারসি শব্দ। ভিস্তি থেকে ভিস্তিওয়ালা। অভিধানমতে, ভিস্তি অর্থ— ১.পানি বহনের জন্য চর্মনির্মিত এক প্রকারের থলি, মশক। ২.মশকে করে পানি বহনকারী; মশকে পানি সরবরাহকারী; ভিস্তিওয়ালা। অর্থাৎ ভিস্তি ও ভিস্তিওয়ালা সমার্থক। “জুতা আবিষ্কার” কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—
“তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিকো চলে কিস্তি।”

এখানে ভিস্তি মানে ভিস্তিওয়ালা, ভিস্তি তো আর ছুটতে পারে না। এখন কেউ মশকে পানি সরবরাহ করে না। অভিধানে বর্ণিত মশকও নেই। তাই বর্তমানে ভিস্তি ও ভিস্তিওয়াল শব্দদুটোর প্রচলন নেই। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ফারসি ভিস্তি অর্থ— (বিশেষ্যে) অধুনালুপ্ত জলবহনের জন্য ব্যবহৃত মেষাদি পশুর চামড়ার তৈরি থলি, মশক; মশক ভরে জল সরবরাহ যার পেশা।

লুচ্চা লোচ্চা লুচি ও লুচ্চামি: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, লুচ্চা হিন্দি উৎসের শব্দ। বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হিন্দি লুচ্চা অর্থ— চরিত্রহীন, লম্পট। লুচ্চার সমার্থক লোচ্চাপ্রয়োগ: যে দেশের ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও আমলাদের অধিকাংশ লম্পট সে দেশের অধিকাংশ জনগণও লম্পট। মাথা ঘুরলে পা স্থির থাকতে পারে না। অধুনা বাংলায় লুচ্চা শব্দটি দিয়ে মেয়েলোলুপ কিংবা মেয়েদের প্রতি যৌন বাসনায় লোলুপ পুরুষদের প্রকাশ করার অধিক প্রবণতা লক্ষণীয়। যেমন: শালা একটা লুচ্চা, মেয়ে দেখলে আর ঠিক থাকতে পারে না। সংস্কৃত লোচিকা থেকে উদ্ভূত লুচি অর্থ— (বিশেষ্যে) ময়দার তৈরি তেল বা ঘিয়ে ভাজা পাতলা ও ছোটো পুরি। লুচ্চার সঙ্গে লুচির খাওয়াগত সম্পর্ক থাকলেও চরিত্রগ বা আচরণগত কোনো সম্পর্ক নেই।

ড. মোহাম্মদ আমীন, কোথায় কী লিখবেন, বাংলা বানান প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

অন্তিমকাল বনাম অন্তিমদশা; শনাক্ত না কি সনাক্ত: নিমোনিক

ড. মোহাম্মদ আমীন

অন্তিমকাল বনাম অন্তিমদশা; শনাক্ত না কি সনাক্ত: নিমোনিক

অন্তিম: সংস্কৃত অন্তিম (অন্ত+ইম) অর্থ— (বিশেষণে) শেষ (অন্তিম যাত্রা); মৃত্যুকালীন (অন্তিম ইচ্ছা)। শব্দটির অর্থ— শেষ বা চূড়ান্ত প্রভৃতি হলেও বিশেষত মত্যুকালীন বা মুমূর্ষু প্রভৃতি সম্পর্কিত বিষয় প্রকাশে শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

অন্তিমকাল: সংস্কৃত অন্তিমকাল (অন্তিম+কাল) অর্থ— (বিশেষ্য) মৃত্যুকাল, শেষ সময়। অন্তিমকাল শব্দটি সময় বা কাল নির্দেশক। কোনো অবস্থার বা ঘটনার বা ঘটার শেষ সময় বা শেষ কাল নির্দেশ করার জন্য শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি

অন্তিমদশা: সংস্কৃত অন্তিমদশা (অন্তিম+দশা) অর্থ— (বিশেষ্যে) মুমূর্ষু অবস্থা। এটি অবস্থা বা ঘটনা বা প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে।

অন্তিম অবস্থা: অন্তিম অবস্থা বাগ্‌ভঙ্গির অর্থ— (বিশেষ্যে) মুমূর্ষু অবস্থা, শেষ দশা, অন্তিম দশা। অর্থাৎ, অন্তিমদশা ও অন্তিম অবস্থা সমার্থক। কিন্তু অন্তিম শব্দটি অবস্থা থেকে ফাঁকে রেখে বসে।

নিমোনিক: সম-মেরুতে বিকর্ষণ। তাই অ-বর্ণ সহ্য করতে পারে না অ-বর্ণকে। এজন্য অন্তিম ও অবস্থা ফাঁক রেখে লিখতে হয়। অন্তিমকাল সময় সম্পর্কিত, কিন্তু অন্তিমদশা বা অন্তিম অবস্থা ঘটনা সম্পর্কিত। অন্তিমকালে অন্তিমদশা— প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম।

শনাক্ত না কি সনাক্ত: শুবাচ সাম্প্রতিক বানান

শনাক্ত ইদানীং বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। যুদ্ধকালীন সহিংস নেতার মতো করোনাভাইরাস প্রায় অপরিচিত শনাক্ত শব্দটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে তুলে দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন করেন শনাক্ত না কি সনাক্ত। শব্দটির প্রমিত বানান শনাক্ত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে (২০১৭ খ্রি.), বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ফারসি শনাক্ত শব্দের অর্থ পরিচিতি নিশ্চিতকরণ।

নিমোনিকসূত্র: বানান কীভাবে মনে রাখবেন? বিদেশি শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয় না। তাই শনাক্ত বানানে মূর্ধন্য-ষ হবে না। বাকি থাকে স আর শ। তাহলে দন্ত্য-স নয় কেন? বর্ণমালায় সবার আগে তালব্য-শ। রোগী চিকিৎসার জন্য গেলে আগে শনাক্ত করা হয়। তারপর শুরু হয় সেবা। এজন্য শনাক্ত বানানে তালব্য-শ। অতএব, লিখুনশনাক্ত’; লিখবেন নাসনাক্ত

উৎস: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

পাংকু: অর্থ উৎপত্তি প্রয়োগ

ড. মোহাম্মদ আমীন

পাংকু: অর্থ উৎপত্তি প্রয়োগ

পাংকু বা পাংক সাধারণত উদ্ভট, উচ্ছৃঙ্খল, বাজে, বেমানান, রীতিবিরুদ্ধ, বেহায়াপনা, উগ্র, অত্যাধুনিক, অত্যাধুনিকতার নামে দেশীয় সংস্কৃতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রত, ব্যতিক্রমী, নতুন ধারার প্রতি আগ্রহী, প্রচলিত জীবনধারার বদলে নতুন জীবনধারা প্রতিষ্ঠায় প্রাণন্তকর, দ্রুত পরিবর্তনকামী, সাধারণ্যে চোখে অগ্রহণীয় প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে; মূলত  নিন্দার্থে ব্যবহৃত অভিধান বহির্ভূত কিন্তু বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। 

পাংক বা পাংকু  শব্দটি চীনা পাং কং বা পাং কুং হতে আগত একটি প্রাচীন চৈনিক শব্দ। প্রাচীন চৈনিক পুরাণে উল্লেখ আছে— ঈশ্বর প্রথম যে মানব সৃষ্টি করেছেন তাঁর নাম ছিল পাং কং বা পাং কুং। পাং কং এসে দুনিয়ার তাবৎ পূর্বকার পরিবেশকে বদলিয়ে নতুন সজ্জায় সজ্জিত করার প্রবল উদ্যোগ নেন। তিনি পৃথিবীতে আসার পরপরই রাতারাতি পৃথিবীকে বদলিয়ে নিজের  ইচ্ছেমতো সজ্জায় সজ্জিত করার কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন।  পৃথিবীর প্রথম মানব পাং কং-এর সঙ্গে আধুনিক পাংক বা পাংকুর কার্য ও আচরণগত মিল থেকে শব্দটি বর্ণিত অর্থ ধারণ করে।

পাংক শব্দটি আমেরিকায় বহুল প্রচলিত একটি অনানুষ্ঠানিক (informal) শব্দ। শব্দটি Punk বানানে প্রচলিত। আমেরিকান পাংক শব্দটি চায়নিজ পাং কং হতে উদ্ভূত। উপমহাদেশে পাংক বা পাংকু শব্দটি চায়না থেকে আসেনি। আমেরিকা থেকে এসেছে। আমেরিকায় শব্দটি প্রচলিত হওয়ার পরই এটি উপমহাদেশে আসে। আমেরিকা থেকে এলেও আমেরিকান পাংক ও বাংলা পাংকু পরস্পর সমার্থক। Go ahead. Make my day, punk. ‘ডার্টি হ্যারি’ সিনেমার একটি বিখ্যাত উক্তি। পাংকু জামাই নামের একটি বাংলা ছায়াছবি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায়।  প্রণয়নাট্য প্রকৃতির এই চলচ্চিত্রটির রচনা ও পরিচালনায় ছিলেন আবদুল মান্নান।

#subach

Leave a Comment

চকলেট এলাচ: চকলেট শব্দের উৎস

ড. মোহাম্মদ আমীন

চকলেট এলাচ: চকলেট শব্দের উৎস

চকলেট শব্দের উৎস:  কোনো বিকল্প না দিয়ে প্রশ্ন করা হলো— চকলেট কোন ভাষা থেকে এসেছে? কিংবা চকলেট কোন ভাষার শব্দ? সঠিক উত্তর— ফরাসি। কারণ, চকলেট শব্দটি ফরাসি মূলে সৃষ্ট এবং ফরাসি প্রভাবিত লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কার শোকোলাটল(xocolatl) হতে উদ্ভূত। এই বক্তব্যের উৎস কী? উৎস হলো বাংলা

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান। আচ্ছা, যদি চারটি বিকল্পের মধ্যে ফরাসি ও মেক্সিকান রেখে প্রশ্ন করা হয়— চকলেট নিচে বর্ণিত কোন উৎসের শব্দ? সঠিক ‍উত্তর— ফরাসি। এখন, বিকল্প চারটি উত্তরে যদি ফরাসিকে বাদ দিয়ে বাকি তিনটির মধ্যে একটি মেক্সিকান রেখে প্রশ্ন করা হয়— চকলেট কোন উৎসের শব্দ? উত্তর— মেক্সিকান। কারণ? শব্দটি ফরাসি মূলে ফরাসি ভাষা প্রভাবিত হলেও জন্ম হয়েছে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে বর্তমান মেক্সিকোর তৎকালীন অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের নাহুয়ান (Nahuan) বা অ্যাজটেনা (Aztecan)-ভাষীর মুখে।

এলাচ: শিবকালী ভট্টাচার্যের মতে, এলাচ এসেছে দ্রাবিড় ভাষা থেকে। বেদে এর উল্লেখ নেই। সুশ্রুত সংহিতার সূত্রস্থানে পাওয়া যায়— ‘দ্রাবিড়ীনাং ফলং’।  এটিই হচ্ছে  এলাচ। এই ব্যাখ্যা যথার্থ বলে মনে করা হয়। কারণ—  প্রধানত দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় অঞ্চলে এর চাষা হয়।। এলাচ গাছের গোড়া থেকে যে পুষ্প দণ্ড বের হয় তাকে দেখে মনে হয় যেন এলিয়ে শুয়ে আছে। দ্রাবিড় ভাষায় এই অবস্থাকে বলে ‘এলা’। সেই পুষ্প দণ্ডেই ফুল এবং পরে এলাচ ফল জন্মে – তাই এর নাম এলাচ। যারা বাংলা অর্থ— শুয়ে আছে।

এলাচ দুই রকমের: বড়ো এলাচ এবং ছোটো এলাচ। দুই রকমের এলাচ দুই রকমের গাছে ফলে। বড়ো এলাচ গাছগুলি দেখতে আদা গাছের মতো, তবে পাতাগুলি একটু বেশি লম্বা ও চওড়া। স্যাঁতসেঁতে পাহাড়ি অঞ্চল এই গাছের বাড়-বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। বিভিন্ন ধরনের রান্নায় এলাচ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দামি মসলার দিক থেকে এলাচের স্থান দ্বিতীয়। এলাচ যেমন ঝাল জাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হয়, তেমনি মিষ্টি জাতীয় খাবারেও ব্যবহার করা হয়। এটি পরিপাকের উন্নতি ঘটায়, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, কিডনি-র স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আয়ূর্বেদ চিকিৎসায়ও এলাচ ব্যবহার করা হয়।

#subach

 

Leave a Comment

তপসিল, সংবিধানের তপসিল, জমির তপসিল, তপসিলি ব্যাংক

ড. মোহাম্মদ আমীন

তপসিল, সংবিধানের তপসিল, জমির তপসিল, তপসিলি ব্যাংক

তপসিল তপসিলি: তপসিল আরবি উৎসের শব্দ। বাক্যে বিশেষ্যে হিসেবে ব্যবহৃত তপসিল অর্থ— জমির চৌহদ্দির বিবরণ; বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রণীত তালিকা যেমন: সংবিধানের তপসিল, নির্বাচনের তপসিল,  বিশেষ গ্রন্থের তপসিল। ইংরেজিতে schedule তপসিল শব্দের একটি প্রতিশব্দ। তবে সব তপসিল সিডিউল নয়। যেমন জমির চৌহদ্দির বিবরণ শিডিউল নয়। তপসিল থেকে তপসিলি। এটি বিশেষণ। এর অর্থ— তপশিলভুক্ত; তালিকাভুক্ত। যেমন: তপশিলি সম্প্রদায়, তপসিলি ব্যাংক, তপসিলি সংস্থা, তপসিলি বিষয়।

সংবিধানর তপসিল: সংবিধানের তপসিল কথায় বর্ণিত তপসিল অর্থ—  বিশেষ্য উদ্দেশ্যে প্রণীত তালিকা বা schedule।  বিশেষ্য উদ্দেশ্যে যেসব ঐতিহাসিক  ঘোষণা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংবিধানে আবশ্যকীয় বিবরণ হিসেবে যুক্ত বা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সেসব বিষয়কে সংবিধানের তপসিল বা schedule বলা হয়।

ড. মোহাম্মদ আমীন

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের তপসিল: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭টি তপিসিল রয়েছে। যেমন:

প্রথম তপসিল[৪৭ অনুচ্ছেদ]— অন্যান্য বিধান সত্ত্বেও কার্যকর আইন।  পূর্ববঙ্গ, পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের কিছু কিছু আইনের কার্যকারিতা-বিষয়ক।

দ্বিতীয় তপসিল: [রাষ্ট্রপতি নির্বাচন−সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন]— ১৯৭৫ (১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২নং আইন)-এর ৩০ ধারাবলে দ্বিতীয় তপসিল বিলুপ্ত।] কারণ, এখন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয় না।

তৃতীয় তপসিল [শপথ ও ঘোষণা,সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ]—রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাতেন প্রধান বিচারপতি। পঞ্চদশ সংশোধন পাস হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করান স্পিকার। রাষ্ট্রপতি যাদের শপথ পাঠ করার তাঁরা হলেন— প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি। স্পিকার শপথ পাঠ করান— রাষ্ট্রপতি ও  সংসদ সদস্যদের।  প্রধান বিচারপতি শপথ পাঠ করান— সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের, সকল নির্বাচন কমিশনার, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য।

চতুর্থ তপসিল[১৫০() অনুচ্ছেদ; ক্রান্তিকালীন অস্থায়ী বিধানাবলি]— এ তপসিলের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো: সংবিধান প্রণয়নের পূর্বে যাঁরা বিভিন্ন পদে (রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার) অধিষ্ঠিত ছিলেন—সংবিধান রচিত হওয়ার পর  অনুরূপ পদ নতুন সংবিধানমতে পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান পদে অধিষ্ঠিত থাকা-বিষয়ক।

#subach

 

Leave a Comment

হরিলুট, হরিলুট কথার উদ্ভব

ড. মোহাম্মদ আমীন

হরিলুট, হরিলুট কথার উদ্ভব

শুবাচি অসিত দাস তাঁর ‘নামধামের উৎসকথা গ্রন্থে লিখেছেন, “বহুল প্রচলিত হরিলুট কথাটির আদি রূপ ছিল হরির লুস। লুস কথাটির প্রাচীন অর্থ ভোজন।”
পরবর্তীকালে হরির লুস কথাটি হয়ে যায় হরিলুট। কিন্তু, এমন হওয়ার কারণ কী? প্রধান কারণ— লোকনিরুক্তি। হরিলুট কথাটি লোকনিরুক্তির কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের মুখে এসে হরিলুট হয়ে গেছে। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ অভিধানেও লুস কথাটির অর্থ দেওয়া হয়েছে ভোজন। সে হিসেবে হরির লুস অর্থ— হরির ভোজন।
.
মূলত হরি বা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিবেদিত অর্ঘ্য বা ভুজ্যি, মিষ্টি প্রভৃতি প্রসাদ ভক্তদের দিকে ছুড়ে দেওয়ার দীর্ঘ সংস্কার হরির লুস নামে প্রচলিত ছিল। লুস শব্দর অর্থ, যে ভোজন তা অধিকাংশ বাঙালি জানত না। তারা দেখত— যা হরির লুস নামে পরিচিত তা অসংখ্য লোকজন লুটেরার মতো হুড়োহুড়ি করে লুটিয়ে নিচ্ছে। এখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। লুটের মতো যার শক্তি বা লোকবল বেশি সে অধিক পাচ্ছে। যারা নিরীহ তারা কিছুই পাচ্ছে না। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। এমন ঘটনা লুটের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। তাই সাধারণ মানুষের কাছে লুস কথাটি হয়ে যায় লুট। ফলের হরির লুস হয়ে যায় হরির লুট বা হরিলুট।
.
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত হরি ও বাংলা লুট শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হরিলুট অর্থ— (বিশেষ্যে) হরি সংকীর্তনের পর ভক্তদের মাঝে হরির নামে বাতাসা প্রভৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার সংস্কার। এটি নেতিবাচক নয়। অভিধানে যাই থাকুক না কেন, বর্তমানে হরিলুট শব্দটি নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহৃত হয়। অধুনা এর আলংকারিক ও বহুল প্রায়োগিক অর্থ— জোর যার মুল্লুক তার, সরকারকা মাল, দরিয়ামে ঢাল। অর্থাৎ, সেই বেশি ভোগ করতে পারবে, যার শক্তি বেশি। যার শক্তি ও ক্ষমতা নেই সে ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মেটানোর সুযোগও পাবে না।
তেলাপোকার দৌঁড় আর ইুঁদরের খুট,
সরকারি টাকাপয়সার চলছে হরিলুট।
.
উৎস: পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment

অলিক না কি অলীক, লাল সালাম, পান্ডা, মাঝিমাল্লা ও মাল্লা

ড. মোহাম্মদ আমীন

অলিক না কি অলীক, লাল সালাম, পান্ডা, মাঝিমাল্লা ও মাল্লা

অলিক না কি অলীক: শব্দটির বানান অলীক। ঈ-কার অপরিহার্য। অলীক (√অল্‌+ঈক) তৎসম শব্দ। এর অর্থ— (বিশেষ্যে) মিথ্যা, অসত্য; কপাল, ললাট, ভাগ্য এবং (বিশেষণে) কাল্পনিক। তবে অলিকুল বানানে ই-কার। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, অলিকুল (অলি+কুল) অর্থ— (বিশেষ্যে) ভ্রমরের ঝাঁক, ভ্রমরকুল।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

মাঝিমাল্লা ও মাল্লা: মাঝি ও মাল্লা শব্দের মিলনে মাঝিমাল্লা শব্দের উদ্ভব। বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা মাঝিমাল্লা অর্থ: মাঝি ও তার সহকর্মী। নৌযানের মাঝি এবং মাঝিকে নৌ পরিচালনার কাজে সহায়তাকারীদের একত্রে মাঝিমাল্লা বলা হয়। আরবি মল্লাহ্ থেকে উদ্ভূত মাল্লা অর্থ: (বিশেষ্যে) নৌকার মাঝি বা তার সহযোগী, মাঝির সহযোগী, নাবিক।

পান্ডা: মন্দির বা আশ্রমের সেবায়েতগণকে ‘পাণ্ডা’ বলা হয় কেন?” মন্দির বা আশ্রমের সেবায়েতগণকে পাণ্ডা বলা হয় না; পান্ডা বলা হয়। তাঁরা ‘পান্ডা’ বলে তাঁদের পান্ডা বলা হয়। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, হিন্দি পান্ডা অর্থ— (বিশেষ্যে) তীর্থস্থানের পূজারী; (ব্যঙ্গে) প্রধান ব্যক্তি। নেপালি পান্ডা অর্থ ভালুকজাতীয় সাদাকালো রঙের লাজুকপ্রকৃতির ছোটো প্রাণী।

লাল সালাম: লাল সালাম ( red salute ) বা লাল সেলাম কথাটি বিপ্লবী স্লোগান, দলীয় বিপ্লবী অভিবাদন, শ্রদ্ধা নিবেদনমূলক অভিব্যক্তি, সমর্থকদের প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসা জ্ঞাপন প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত অভিবাদন হিসেবে কথাটির প্রয়োগ সর্বাধিক। অনেক সময় বিশেষ বার্তা, বাণী বা ইঙ্গিত প্রদান কিংবা বিশেষ নির্দেশ জ্ঞাপনের জন্যও ব্যবহার করা হয়। রক্তের রং লাল। বিপ্লবে রক্তপাত হয়, প্রয়োজনে রক্ত বা জীবন দানের শপথ নিতে হয়। তাই লাল দ্বারা বিপ্লব বোঝানো হয়। এজন্য বিপ্লবীদের পতাকার রংও লাল। কোনো কমিউনিস্ট নেতা মারা গেলে তাঁর সম্মানার্থে surkh salam শব্দটিও ব্যবহার করা হয়। ফারসি surkh শব্দের অর্থ লাল। এটা দক্ষিণ এশিয়া— বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কমরেড বা কমিউনিস্টগণ বলে থাকেন। কমিউনিস্টদের মধ্যে পরস্পর প্রাত্যহিক অভিবাদন হিসেবেও কথাটি ব্যবহৃত হয়। এখন কমিউনিস্ট ছাড়াও উদারপন্থি অনেক রাজনীতিক দলের সমাবেশে কথাটি শোনা যায়।

#subach

Leave a Comment

কে কখন আলাদা ও কখন পৃথক বসে; তাই বনাম তা-ই

ড. মোহাম্মদ আমীন

কে কখন আলাদা ও কখন পৃথক বসে; তাই বনাম তা-ই

আপনাকে যেতে বলেছে কে?” এই বাক্যে প্রথম কে, বিভক্তি এবং দ্বিতীয় কে, সর্বনাম। কে কে দেশের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করতে চাও?” এই বাক্যে কে কে সর্বনাম এবং জীবন-এর সঙ্গে যুক্ত কে বিভক্তি। অনুরূপ: তাকে কে এখানে আসতে বলেছে?

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

() সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হলে কে আলাদা বসে। যেমন: তোমার বাবা কে তা আমি জানতাম না। এখানে কে শব্দটি সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বাবা থেকে পৃথক বসেছে। সাধারণত প্রশ্নবোধক বাক্যে কে শব্দটিকে পূর্ববর্তী শব্দ থেকে ফাঁক রেখে লেখার বহুল প্রয়োগ লক্ষণীয়। যেমন: আপনি কে? তোমরা কে কে যাবে? তুমি কে?
(প্রশ্নবোধক হোক বা না হোক বিভক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হলে কে পূর্ব শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে। যেমন: আপনাকে যেতে হবে। তোমাকে আমার চাই। মা, আমাকে ডাকছ? দেশকে ভালোবাস, জাতিকে সেবা দাও। মামাকে দেখতে যাবে না হাসপাতালে? আপাকে ডাকব?

তাই: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘তাই’ শব্দের তিনটি পৃথক ভুক্তি দেখা যায়। প্রথম ভুক্তিমতে, সংস্কৃত ‘তদ্‌’ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত ‘তাই’ শব্দের অর্থ— সেই বস্তুই, সেই কাজই এবং তাহাই শব্দের চলিত রূপ। যেমন: রাতে বিড়াল দেখল ছেলেটি, তাই দেখে ভয়ে সে অজ্ঞান। যা চাইছি তাই দিতে হবে। আমার তাই প্রয়োজন। তাই যদি না পাই তো আমার যা-ইচ্ছে তাই করব। দ্বিতীয় ভুক্তিমতে, সংস্কৃত ‘তস্মাৎ’ থেক উদ্ভূত ও বাক্যে অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত ‘তাই’ শব্দের অর্থ— সুতরাং, সে জন্য। যেমন: ক্লাস ছিল, তাই যেতে পারিনি। তাই তোমারে দেখতে এলেন অনেক দিনের পর। তৃতীয় ভুক্তিমতে, তাই শব্দের অর্থ শিশুর করতালি, হাত তালি প্রভৃতি। যেমন: তাই তাই তাই, মামার বাড়ি যাই/ মামি করছে দুভাত নাক ডুবিয়ে খাই।

তা-ই: অভিধানে ‘তা-ই’ বানানের কোনো শব্দ নেই। অনেকে ‘তা-ই’ শব্দটি ‘তাহাই’ শব্দের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে আবশ্যকতা কিংবা বাধ্যবাধকতা বা জেদ, গুরুত্ব ইত্যাদি প্রকাশে ‘তাই’ এর স্থলে ‘তা-ই’ ব্যবহার করে থাকেন। যারা এটি ব্যবহার করেন তাদের অভিমত— জোর দেওয়ার জন্য ‘তা-ই’ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ‘তা-ই’ শব্দটি অনাবশ্যক। ‘তাহাই’ শব্দের চলিত রূপ ‘তাই’। সুতরাং, ‘তা-ই’ শব্দটি নিরর্থক এবং অপ্রয়োজনীয়।

উদহারণ: যা চাইছি তাই (তা-ই) দিতে হবে। আমার তাই (তা-ই) প্রয়োজন। তাই যদি না পাই তো আমার যা-ইচ্ছে তাই (তা-ই )করব। এখানে ‘তাই’-এর স্থলে তা-ই লেখা সমীচীন নয়। অতএব, লিখুন ‘তাই’। ‘তা-ই’ লিখবেন না। ‘তা-ই’ আদৌ সংগত বানান নয়।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment