কথা— ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না: কথার অপর নাম অযথা

ড. মোহাম্মদ আমীন

কথা— ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না: কথার অপর নাম অযথা

১. প্লিজ, আপনার স্ত্রীর নাম্বারটা দিন।

আমার স্ত্রী কি গাড়ি, যে নাম্বার থাকবে?

সরি।

২. মা বললেন, তোমার ডিমটা অনেক্ষণ ধরে টেবিলে পড়ে আছে। ঠান্ডা হয়ে যাবে, খেয়ে নাও।

ছেলে বলল,  ওটা আমার ডিম নয়। 

কার ডিম?

মুরগির ডিম। মানুষ কি ডিম পাড়ে?

সরি।

৩. অনেক দিন পর আমেরিকা থেকে রিং করল জাভেদ, কেমন আছ?

বাংলাদেশ থেকে বন্ধু আরিফ বলল, তুমি ফোন দাও না কেন? ফোন দেওয়ার কথা ছিল না?

ফোন দেব, চিন্তা করো না।

তাহলে একটা আইফোন দিও। আমেরিকায় নাকি আইফোন বেশ সস্তা।

সরি। ফোন নয়, রিং দেব।

রিং মানে আংটি, আংটি দেবে?

না।

ফোন করব।

তাই বলে।

৪. স্বামী বললেন, এত চিল্লাচিল্লি করছ কেন?

স্ত্রী বললেন, তোমার মেয়ের সব মাংস কুকুরে খেয়ে ফেলেছে।

পড়ার রুম থেকে মেয়ে বলল, বাবা, আমার মাংস নয়, গোরুর মাংস।

সরি।

৫. হোটেল বয় বললেন, আপনি গোরু, খাসি, মুরগি না কি মাছ?

ক্রেতা বললেন, আমি গোরু, খাসি, মুরগি-মাছ কিছুই না।

তাহলে আপনি কী?

মানুষ।

বয় বললেন, সরি, স্যার — আমাদের হোটেলে নরমাংস পাওয়া যায় না।

৬. প্রকাশক শ্যামল পালের অফিসে দুপুরের খাওয়ার খাচ্ছিলাম। এক টুকরো মুরগির মাংস আমার পাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, মাংসটা নিন।

ধন্যবাদ, খাব না, আমি বললাম।

খুব স্বাদ পাবেন। শ্যামল পাল বললেন, “আপনার ভাবির হাতের মাংস।

আমি বললাম, আমি ভাবির হাতের মাংস খাই না।

এমন আরও আছে। জানা থাকলে বলুন।

৭. দরজার কড়া নড়ছে – টক টক টক। নিশ্চয় কোনো আগন্তুক।

গৃহস্বামী চিৎকার দিলেন, কে?
আমি, বাহির থেকে আগন্তুকের গলা ভেসে এল।
গৃহস্বামী বললেন,  আমি কে?
 আগন্তুক বললেন, তুমি কে তার আমি কি জানি? 

৮. ভাত খেয়েছ?

 খেয়েছি।

কী দিয়ে খেয়েছ?

হাত দিয়ে ।

আরে ভাই, আমি জানতে চাইছি- মানে কী কী দিয়ে খেয়েছ?

আমার হাত, আমার আঙুল, আমার দাঁত, আমার জিহ্বা – এসব দিয়ে আর কী!

৯.  বাবা বললেন, ওই শোনো ঘণ্টা পড়ে গেছে, তাড়াতাড়ি করো। 

কী পড়ে গেছে?

ঘণ্টা।

ঘণ্টা  পড়ে না, ঘণ্টা বাজে।

সরি।

১০.  নজরুল কোথায়? কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ (১৮৮৯-১৯৭৩) হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে বললেন।

 শৈলজানন্দ বললেন, পায়খানায় গেছে।

নজরুল পেছন থেকে এসে বললেন, পায়খানায় নয়, যায়খানায় গিয়েছি।

এরপর কোথায় যাবে?

পায়খানায়, মানে খাবার টেবিলে। 

কী বলো, এসব?

নজরুল বললেন, যেখানে শরীরের খানা  যায় সেটি পায়খানা আর শরীর যেখানে খানা  সেটি পায়খানা।

১১. আপনি কী করেন?
পাশের সিটে বসা ছেলেটি  বলল, আমি গাই।
ও আপনি গাই! তো কতটুক করে দেন?
কতটুকু করে দিই মানে?
 বললেন আপনি গাই, তাই কতটুক করে দুধ দেন জানতে চাইছি।
আমি গাই মানে,গান করি।

সরি।

১২. বাবা ঢাকা যাবেন।  ছেলে গেছে বাবার জন্য টিকেট আনতে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল ছেলে আসে না।

বাবা বিরক্ত হয়ে মোবাইল করল ছেলেকে, তুমি এখন  কী করছ?

টিকেট কাটছি।

খবরদার, তুমি আমার টিকেট কেটো না।

তোমার  টিকেট যে আমি কেটে ফেলেছি।

হারামজাদা, টিকেট কেটে ফেললে আমি ঢাকা যাব কীভাবে?

১৩. কোথায় যাচ্ছ?

বিয়ে খেতে?

কী খেতে? 

 বিয়ে খেতে।

মানুষ ধান খেতে যায়, পাট খেতে যায়, কচু খেতে যায়, শসা খেতে যায়; বিয়ে খেতে যায় কীভাবে?

এই খেত শস্য খেত নয়। বলছি বিয়ে খবি।

বিয়ে কী করে খাবে?

বিয়ে খাব না।

কী খাবে?

বিয়ের  নেমন্তন্ন খাব।

তাই বলো।

১৪.  তোমার বাবা কোথায়? 

চুল কাটতে গেছেন।

 তোমার বাবা নাপিতগিরি শুরু করল কখন থেকে?

সরি, না মানে – বাবা চুল কাটাতে গেছেন।

তাই বলো।

১৫.   রহিম চেয়ারম্যান  পাড়ার ভবঘুরে ছেলেটাকে থানায় এনে ওসি সাহেবকে বললেন, একে আটকান।

 এ কী করেছে?

নদীতে কুলি ফেলে দিয়েছে, একটা নয়, তিন তিনটা।

ওসি সাহেব ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি নদীতে কয়টা কুলি ফেলেছ?

তিনটা।

ওরা কোথায়?

নদীর জলে ভেসে গেছে।

তাহলে তোমার মৃত্যুদণ্ড অবশ্যম্ভাবী। কুলিগুলো নিশ্চয় এতক্ষণে মরে গেছে।

ভবঘুরে জসিম বলল, আমার কুলি মানুষ কুলি নয়।

কী কুলি?

মুখের কুলি।

১৬. আমার কথাটা ধরো। আখেরে লাভ হবে।

কথা কি ধরা যায়?

 ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না।

১৭. মজনু তুমি এখন বাজারে যাবে?

হ্যাঁ, বাবা।

এখন যেয়ো না।

কেন?

সূর্যটা এখন তো ঠিক মাথার ওপর।

কই, আমার মাথায়  কোনো সূর্য নেই। বাবা, ইদানীং তুমি বেশ মিথ্যুক হয়ে গেছ।

১৮. হ্যালো !

– হ্যালো !
– সরি, দোস্ত, মনে হয় রিং করে ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।
ঘুম কি  ভঙ্গুর কাচের পাত্র যে, ভেঙে যাবে। 
১৯. স্যার, ঘণ্টা পড়ে গেছে। 

ঘণ্টা কী সিঁদুর গাছে আম যে, পড়ে যাবে। বলো, ঘণ্টা বেজেছে ।

 

 ২০. বাবা: তাড়াতাড়ি খেয়ে পড়ার টেবিলে বোসো।

ছেলে: টেবিলে কি বসা যায়?
২১. অনেক হয়েছে, এবার ঘুমিয়ে পড়ো।
ঘুমিয়ে কি পড়া যায়?
২২. ধরো x=৫ y=৬।।
এগুলো কীভঅবে ধরব?
২৩. আজানা পড়েছে।
কোথায় পড়েছে?

Leave a Comment

মার্কিন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন শব্দের উদ্ভব

 ড. মোহাম্মদ আমীন

মার্কিন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন শব্দের উদ্ভব 

ইউনাইটেড্ স্টেইটস অফ্ আমেরিকা (United States of America ) বা সংক্ষেপে ইউনাইটেড স্টেটস বা ইউ.এস (US) বা ইউএসএ (USA) নামে পরিচিত উত্তর আমেরিকার দেশটি ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ বা শুধু ‘যুক্তরাষ্ট্র’ নামে পরিচিত। ১৫০৭ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান মানচিত্রকর মার্টিন ওয়াল্ডসিম্যুলার বিশ্বের একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন। ওই মানচিত্রে তিনি ইতালীয় আবিষ্কারক ও মানচিত্রকর আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারে পশ্চিম গোলার্ধের নামকরণ করেন “আমেরিকা”। অর্থাৎ আমেরিকা হচ্ছে একজন ব্যক্তির নাম।

১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জুলাই “unanimous Declaration of the thirteen united States of America” নামের একটি ঘোষণাপত্র “Representatives of the united

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

States of America” কর্তৃক গৃহীত হয়। ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর দ্বিতীয় মহাদেশীয় কংগ্রেসে আর্টিকলস অফ কনফেডারেশন বিধিবদ্ধকরণের মাধ্যমে ‘আমেরিকা’ নামটি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। এই আর্টিকেলে বলা হয়েছে: “The Stile of this Confederacy shall be ‘The United States of America.'” সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে the United States নামটি প্রামাণ্য। অন্যান্য প্রচলিত নামগুলো হচ্ছে : the U.S., the USA, ও America। দেশটির কথ্য নামগুলো হলো the U.S. of A. ও the States।

আমরা দেখলাম, ব্যক্তিনাম ‘আমেরিকা’ থেকে দেশটির নাম চয়িত হয়েছে। কিন্তু ‘আমেরিকা’ নামটি কীভাবে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় ‘মার্কিন’ হয়ে গেল তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমেরিকান শব্দটি ইংরেজি American হতে উদ্ভূত একটি স্থাননাম। গবেষণায় দেখা যায়, আমেরিকান শব্দের ‘আ’ ঝরে গিয়ে ষোড়শ শতক থেকে শব্দটি মেরিকান’ রূপে উচ্চারিত হতে থাকে। যার অপভ্রংশ হচ্ছে মার্কিন Markin. এটি এখন বাংলায় বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। এবার বাংলায় মার্কিন শব্দের অর্থ কী তা দেখা যাক।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে স্থাননাম হিসেবে শ্রেণিকৃত  ‘মার্কিন’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে  : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত কোরা সুতোর তৈরি মোটা কাপড়বিশেষ প্রভৃতি। অন্যদিকে বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হলে ‘মার্কিন’ শব্দটির অর্থ হয় : যুক্তরাষ্ট্র সম্বন্ধীয়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত প্রভৃতি।  অভিধানে স্থাননাম হিসেবে চিহ্নিত হলেও আমেরিকা বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র  প্রকাশে ‘মার্কিন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় না। 

 দেশনাম হিসেবে মার্কিন শব্দটি এককভাবে ব্যবহৃত না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে। ফলে সে এখন বাংলায় আমেরিকার মতোই প্রভাবশালী একটি শব্দ।  যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন প্রায় ৯৮.৩ লাখ বর্গকিলোমিটার (৩৭.৯ লক্ষ বর্গমাইল) এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি।  সামগ্রিক আয়তনের হিসেবে এটি বিশ্বের তৃতীয় বা চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র। আবার স্থলভূমির আয়তন ও জনসংখ্যার হিসেবে  বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং প্রভাবশালী দেশ। বিশ্বে এমন লোক খুব কম আছেন যিনি আমেরিকা চেনেন না  বা ‘আমেরিকা’ নাম শুনেননি। প্রসঙ্গত, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, মার্কিনদেশ শব্দের অর্থ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিনি অর্থ আমেরিকার অধিবাসী বা ওই দেশ উৎপাদিত কাপড়। 

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

পোস্ট: পোস্ট শব্দের বাংলা: ফেসবুক পোস্ট শব্দের বাংলা

ড. মোহাম্মদ আমীন

পোস্ট: পোস্ট শব্দের বাংলা: ফেসবুক পোস্ট শব্দের বাংলা

ফেসবুকে পোস্ট হিসেবে যেসব লেখা, চিত্র, অডিও-ভিডি বা অন্যকিছু প্রকাশ করা হয় সেটার বাংলা কী অনেকে জানেন না। ইংরেজি পোস্ট (post) শব্দ দিয়ে তা প্রকাশ করা হয়। অথচ ফেসবুকে ব্যবহৃত ইংরেজি ‘পোস্ট’ শব্দের একটি সুন্দর বাংলা আছে- যা ইংরেজি পোস্ট শব্দের চেয়ে অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট, কার্যকর অর্থদ্যোতক, শ্রুতিমধুর এব সহজ। শব্দটি হচ্ছে : যযাতি।

ইংরেজি post শব্দের অর্থ ডাকঘর, খাম, আসন, কর্মচারীর পদ, ডাকগাড়ি, গঁজ, বাণিজ্যস্থল, কর্মচারীর চাকুরি, নির্দিষ্ট খানা, নির্দিষ্ট অবস্থানস্থল, আড্ডায় স্থাপন

ড. মোহাম্মদ আমীন

করা, ডাকঘরে দেওয়া, ডাকব্যবস্থা, ডাকবক্স, ত্বরা, পিছনে, পরে, পত্র প্রেরণ করা প্রভৃতি ছাড়াও আরও অনেক কিছু হতে পারে। কিন্তু যযাতি শব্দের অর্থ অনেক সুনির্দিষ্ট এবং ব্যুৎপত্তি বিবেচনায় বেশ প্রাসঙ্গিক। বাংলার অনেক শব্দের মতো ‘যযাতি’ শব্দটিও ভারতীয় পুরাণ থেকে প্রাসঙ্গিক ঘটনার অনুকূল পরিক্রমায় সৃষ্ট একটি অর্থবহুল শব্দ। এখন ‘যযাতি’ শব্দটি কীভাবে সৃষ্টি হলো এবং কেনই বা ফেসবুক প্রসঙ্গে ইংরেজি ‘পোস্ট’ শব্দের বাংলা অর্থ ‘যযাতি’ হলো তা বিশ্লেষণ করা যাক :

ভরতীয় পুরাণ শব্দটির উৎস। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে– চন্দ্র বংশের মহারাজা ‘যযাতি’  হচ্ছেন নহুষের পুত্র এবং পাণ্ডবদের অন্যতম আদিপুরুষ। যযাতির দুই স্ত্রীর ছিল- দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানী ও দৈত্যরাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠা। দেবযানীর অজ্ঞাতে যযাতি শর্মিষ্ঠার সঙ্গে মিলিত হন।  বিষয়টি দেবযানী শুক্রাচার্যকে বলে দেন। শুক্রাচার্যের অভিশাপে যযাতি অকালে জরাগ্রস্থ বা নপুংসক হয়ে যান। চার পুত্রের মধ্যে শুধু কনিষ্ঠ পুত্র যযাতির জরা নিতে রাজি হলেন। পুরুকে জরা দিয়ে যযাতি সহস্র বছর যাবৎ ভোগ, প্রজাপালন এবং ধর্ম-কর্ম করলেন। তারপর পুরুকে রাজত্ব দিয়ে বনবাসে চলে গেলেন। সেখান থেকে কিছুকাল পরে সুরলোকে গমন করলেন।

সুরলোকে থাকাকালীন আত্মপ্রসংসা করায় ইন্দ্রের আজ্ঞায় তিনি স্বর্গচ্যূত হন। তবে, ভূতলে না পরে যযাতি কিছুকাল অন্তরীক্ষে অষ্টক, প্রতর্দন, বসুমান বা বসুমনা ও শিবি – এই চারজন রাজর্ষির সঙ্গে বিবিধ ধর্মালাপ করে কালাতিপাত করতে থাকেন।তাঁরা সবাই ছিলেন যযাতির কন্যা মাধবীর পুত্র। ধর্মালোচনা কালে মাধবী ও গালব মুনি এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এবং সকলে নিজেদের তপস্যার কিছু ভাগ যযাতিকে দান করায় তিনি আবার স্বর্গে ফিরে যেতে পারলেন। কথিত হয়, তাদের এই অবস্থান ছিল আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তারের আন্তরীক্ষক ক্ষেত্র। তাদের চিন্তাভাবনা বা ধর্মালাপ কোনো কঠিন বস্তুতে লিখিত হতো না। এগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে অন্তরীক্ষে লিখিত হতো এবং যযাতি বিশেষ কৌশলে লেখাগুলোকে প্রয়োজনীয় চিহ্নাদি-সহ  অন্তরীক্ষেই সংরক্ষিত করে রাখতেন। এখান থেকে তিনি তার প্রার্থনা এবং সম্মিলিতি ধর্মীয় ভাবনা স্বর্গালোকে প্রেরণ করতেন। যযাতির চিন্তা, ধর্মালাপ ও লেখা স্বর্গালোকে প্রেরণকে সাধারণভাবে বলা হতো- যযাতি।

অন্তরীক্ষ অনুকূল হলে যখনই ইচ্ছা তখনই যযাতি, অন্তরীক্ষে বসবাসকারী রাজর্ষিবর্গ এবং এমনকি স্বর্গমত্যের অনেকেও ওই লেখা দেখতে পেতেন। অন্তরীক্ষে সম্পাদিত যযাতির  লেখালেখি এবং তা সংরক্ষণ ও পরিশেষে যযাতির স্বর্গারোহণের সঙ্গে বর্তমান ফেসবুক-সহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদত্ত পোস্ট-এর মিল থাকায় বাংলায় এর নাম করা হয়েছে যযাতি।

#subach

Leave a Comment

নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে

ড. মোহাম্মদ আমীন

নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে

নিথুয়া শব্দের অর্থ কী? শব্দের অর্থ বলা কঠিন। কেননা, বাক্যে বসে কোনো শব্দ পদে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত তার অর্থ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কেননা, বাক্যই শব্দের প্রায়োগিক রূপ তথা পদের অর্থকে পদার্থে গিয়ে সুনির্দিষ্ট করে দেয়। সর্ববোধ্য ও বহুল প্রচলিত ‘বলি’ শব্দ দিয়ে বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া যায় : “বুড়ো বলীর বলি দেখে বলি/ জীবনটা বলি ছেড়া, সময়ের বলি।”

ছড়ার লাইন দুটোয় একটি ‘বলী’ ও চারটি ‘বলি’ আছে। এবার দেখুন এদের অর্থ- প্রথম বলী শব্দের অর্থ: বলবান বা শক্তিশালী; দ্বিতীয় বলি শব্দের অর্থ: চামড়ার

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

কুঞ্চন রেখা; তৃতীয় বলি শব্দের অর্থ; বলা, উচ্চারণ করা; চতুর্থ বলি শব্দের অর্থ: কানের মাকড়ি বা অলঙ্কার এবং পঞ্চম বলি শব্দের অর্থ: যজ্ঞাদিতে নিবেদনযোগ্য বস্তু বা হত্যাযোগ্য জন্তু। সুতরাং, কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে ‘বলি’ অর্থ কী, তো আমি কী জবাব দেব? সেক্ষেত্রে প্রশ্নকর্তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য সবগুলো অর্থ বলে যেতে হবে। অতএব, একটা বিষয় পরিষ্কার যে, শব্দের সুনির্দিষ্ট অর্থ জানতে হলে তা বাক্যসহ উপস্থাপন বাঞ্ছনীয়। কারণ পদের অর্থ সুনিদিষ্ট, শব্দের অর্থ নয়। একটি শব্দ বাক্যে বসে অনেক অর্থে দ্যোতিত হতে পারে। শব্দকে একটি ধাতু (যেমন লোহা) হিসেবে কল্পনা করুন। একটি ধাতু দিয়ে অনেক বস্তু তৈরি করা যায়; কিন্তু পদ হচ্ছে ওই ধাতু দিয়ে তৈরি নির্দিষ্ট কোনো বস্তু। এবার নিথুয়া শব্দের প্রয়োগ-সাপেক্ষে অর্থ কী দেখা যাক। কবি লিখেছেন এবং গায়ক গেয়েছেন:

“নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে
ধর বন্ধু আমার কেহ নাই
তোল বন্ধু আমার কেহ নাই
চিকনো ধুতিখানি পরিতে না জানি
না জানি বান্ধিতে কেশ,
অল্প বয়সে পিরীতি করিয়া
হয়ে গেল জীবনেরও শেষ
প্রেমেরও মুরলি বাজাতে নাহি জানি
না পারি বান্ধিতে সুর।”

এবার এই গানে বর্ণিত ‘নিথুয়া’ শব্দের অর্থ কী দেখে নিই। ‘’নিথুয়া শব্দটি বাংলা একাডেমির কোনো অভিধানে নেই। হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ গ্রন্থেও পাইনি। বিশ্বনাথ জোয়ারদারের ‘অচলন্তিকা’তেও  দেখলাম না। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বাংলা একাডেমী বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান গ্রন্থেও শব্দটি স্থান পায়নি। অথচ, এটি তত অপরিচিত শব্দ নয়। ধারণা করা হয় ‘নিথুয়া’ একটি বহুল প্রচলিত আঞ্চলিক শব্দ, কালক্রমে যার ব্যবহার বিরল হয়ে গিয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের সংগ্রামমুখর জীবনে অথই, নিথুই, নিথুয়া, নিদয়, নিধুয়া শব্দসমূহ লোকগীতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছেও বহুল পরিচিত ছিল। ‘নিথুয়া’ শব্দটি এসব শব্দেরই প্রতিনিধি।

অনেকগুলো প্রাচীন অভিধান ও গ্রন্থ  ঘেঁটে আমি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, তা হচ্ছে – “থুয়ে (থুয়ে : অক্রি রেখে) থেকে থুয়া শব্দের উদ্ভব। এ থুয়া শব্দের সঙ্গে ‘নি-’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে নিথুয়া (নি+থই+আ>নিথুয়া ) নিতুয়া বা নিধুয়া শব্দ গঠিত হয়েছে। এর সম্প্রসারিত এবং প্রায়োগিক অর্থ : যে কোনো কিছু থুয়ে (রেখে) যায় না, যার পেটে পতিত হলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে না, বিশাল নির্জন প্রান্তর, নিষ্ঠুর, সর্বনাশা, যার ক্ষুধার অন্ত নেই, ভয়ের স্থান প্রভৃতি। আবার এও মনে করা হয়, নিষ্ঠুর অর্থে ব্যবহৃত আঞ্চলিক ‘নিদয়’ শব্দ থেকে ‘নিথয়/নিতয়/’ এবং তা থেকে ‘নিথুয়া/নিতুয়া, নিধুয়া’ শব্দের উদ্ভব। যার অর্থও নিথুয়া শব্দের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে। আর একটি উৎস হতে পাওয়া যায়, ‘থই’ শব্দের সঙ্গে ‘নি-’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘নিথই’ এবং তা থেকে ‘নিথুয়া/নিধুয়া’ শব্দের উদ্ভব। সেক্ষেত্রে ‘নিথুয়া’ শব্দের অর্থ হয় অথই, তলহীন, অতল প্রভৃতি। দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় দেখতে পাই, ‘নিথুয়া’ শব্দের অর্থ নেই থই যার এবং প্রথম ব্যাখ্যায় পাই ‘নিথুয়া’ অর্থ থুয়ে না যাওয়া। অনেকে মনে করেন, শব্দটির বানান ‘নিতুয়া’, যেটিই হোক- অর্থ কিন্তু অভিন্ন। এবার গানের কথার সঙ্গে এবার অর্থগুলো মিলিয়ে নিতে পারি:

নিথুয়া পাথারে, নেমেছি বন্ধুরে
ধরো বন্ধু আমার কেহ নাই।
তোল বন্ধু আমার কেহ নাই।
অর্থাৎ আমি অথই/ নিষ্ঠুর/তলহীন সাগরে/ জনমানবহীন প্রান্তরে নেমেছি/পড়েছি, বন্ধু আমাকে ধরো, সাহায্য করো আমার কেউ নেই, বন্ধু আমাকে তোলো (আমি ডুবে যাচ্ছি/ আমি হারিয়ে যাচ্ছি), আমার একমাত্র ভরসা তুমি, আমার ( একমাত্র তুমি ছাড়া) কেউ নেই।

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

প্রবাদ, সাহিত্য-প্রবাদ: বাংলা ভাষার প্রথম সাহিত্য-প্রবাদ: বিসিএস বাংলা: প্রিলিমিনারি ও ভাইভা

ড. মোহাম্মদ আমীন

প্রবাদ, সাহিত্য-প্রবাদ: বাংলা ভাষার প্রথম সাহিত্য-প্রবাদ: বিসিএস বাংলা: প্রিলিমিনারি ও ভাইভা

সাহিত্য-প্রবাদ অভিজ্ঞতার আলোকে লোকমুখে সৃষ্ট বাণী। বাণী বা প্রবাদের জন্যই ভাষা এবং পরবর্তীকালে সাহিত্যের সৃষ্টি। তাই ভাষা সৃষ্টির প্রথম বাণী বা কথাটিই ছিল প্রবাদ। ভাষা সৃষ্টির সূচনায় কথাই ছিল সাহিত্য এবং সাহিত্যই ছিল কথা। সংগত কারণে প্রথম সাহিত্য-প্রবাদ কোনটি তা জানা যায় না। বাংলা ভাষার জন্য কথাটি আরো কঠিনভাবে সত্য। আর্য আগমনের অনেক পূর্ব হতে বিদ্যমান আদি বাংলা ভাষার অস্তিত্ব, আর্য আগমনের পর হতে বিলুপ্ত হতে শুরু করে। ভারতবর্ষের অধিবাসীর মুখের ভাষা বাংলাকে সংস্কার করে গড়ে তোলা হয় সংস্কৃত। পরবর্তীকালে সংস্কৃতপ্রেমীদের কাছে বাংলায় হয়ে যায় সংস্কৃতের জননী/বোন। কলম আর ক্ষমতা থাকলে কী না হয়! যাই হোক, পণ্ডিতবর্গের মতে, ‘বৌদ্ধগান ও দোহা’য় ব্যবহৃত প্রবাদগুলোই বাংলা ভাষার প্রথম সাহিত্য প্রবাদ। এরূপ কয়েকটি প্রবাদ হলো :

১. হাথেরে কাঙ্কাণ মা লোউ দাপণ। (৩২ নম্বর পদ)। অর্থ: হাতের কঙ্কণ আছে কি নেই তা দেখানোর জন্য দর্পণের দিকে না তাকানো।

২. আপণা মাংসেঁ হরিণা বৈরী। (৬ নম্বর পদ)। অর্থ: হরিণ তার নিজের মাংসের জন্যই নিজের শত্রুস্বরূপ।

৩. হাড়ীত ভাত নাঁহি নিতি আবেশী। (৩৩ নং পদ)। অর্থ: হাঁড়িতে ভাত নেই অথচ নিত্য অতিথি আসে।

৪. দুহিল দুধু কি বেণ্টে যামায়। অর্থ: দোয়ানো দুধ কি বাঁটে প্রবেশ করে।

৫. সরস ভণস্তি বর সুণ গোহালী কিমো দুঠ্য বলন্দেঁ। (৩৯ নম্বর পদ)। অর্থ: দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।

Leave a Comment

দাদখানি চাল

ড. মোহাম্মদ আমীন

দাদখানি চাল

দাদখানি অতি উৎকৃষ্ট মানের এক প্রকার চাল। চালটির নাম কীভাবে দাদখানি হলো? কথিত হয়, বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান দাউদ খান (১৫৭৩-১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দ)-এর আমলে বঙ্গদেশে এ চালের চাষাবাদ শুরু হয়। সুলতানের দরবারে চালটির বেশ চাহিদা ছিল। দাউদ খান নিজেও চালটি পছন্দ করতেন। তাঁর প্রাত্যহিক খাবার টেবিলে   এই চালের ভাত আবশ্যিকভাবে থাকত। ফলে এর নাম হয়ে যায় দাউদখানি চাল। যার অপভ্রংশ দাদখানি চাল। শিশুকালে পড়া কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার (১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দ ; ১২ কার্তিক ১২৭৩ বঙ্গাব্দ – ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ ; ১২ আষাঢ় ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) এর কাজের ছেলে কবিতায় বর্ণিত ‘দাদখানি চাল’ এখনও স্মৃতিকে উদ্বেল করে তোলে।

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।

বাহবা বাহবা – ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।

ওই তো ওখানে ঘুড়ি ধরে টানে, ঘোষদের ননী;
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি!
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!

এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যত কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।

সূত্র: বাংলা সাহিত্য ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহা, ড. মোহাম্মদ আমীন, আগামী প্রকাশনী।

#subach

Leave a Comment

বিপদমুক্ত নয়, বিপন্মুক্ত: বিপদমুক্ত ভুল বানান, শুদ্ধ বানান বিপন্মুক্ত

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিপদমুক্ত নয়, বিপন্মুক্ত: বিপদমুক্ত ভুল বানান, শুদ্ধ বানান বিপন্মুক্ত

 ‘বিপদ হতে মুক্তি বা পরিত্রাণ পেয়েছে’ এমন অর্থ প্রকাশে ‘বিপন্মুক্ত’ ও ‘বিপদমুক্ত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘বিপন্মুক্ত’ শব্দের নির্মাণচিত্র হলো : বিপদ্+উন্মুক্ত = বিপন্মুক্ত। যার অর্থ বিপদ হতে ‍মুক্তি বা পরিত্রাণ পেয়েছে এমন। যেমন : ঘূর্ণিঝড় দূরে সরে গেছে, উপকূলীয় অঞ্চল এখন বিপন্মুক্ত। ডাক্তার বললেন, রোগি এখন বিপন্মুক্ত।

বিপদমুক্ত শব্দটি বিপন্মুক্ত শব্দের পরিবর্তে অভিন্ন অর্থ প্রকাশে ব্যবহার করা হলেও ব্যাকরণ এবং বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ‘বিপন্মুক্ত’ শব্দটিই শুদ্ধ

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

এবং প্রমিত। তবে বাংলায় ‘বিপন্মুক্ত’ শব্দে দ্যোতিত অর্থ প্রকাশে বিপদমুক্ত শব্দটির বহুল প্রচলন লক্ষণীয়। অথচ, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে বিপদমুক্ত শব্দটিকে স্থানই দেওয়া হয়নি। এতে বোঝা যায়, বাংলা একাডেমির কাছে ব্যাকরণই প্রধান, ভাষাভাষী নয়।  শব্দের জনপ্রিয়তা ও প্রচলন  উপেক্ষাকারী এমন ব্যাকরণ নির্ভর অভিধান, অভিধান নয়, অবিধান। এমন অবিধান বেশি দিন টিকে না।

হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়-সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির রচিত অভিধানেও বিপদমুক্ত শব্দটি পাওয়া যায় না। বৈয়াকরণদের মতে, বিপদমুক্ত শব্দটি আদৌ বিপন্মুক্ত নয়। তাঁদের মতে, শব্দটির জন্মের ঠিক নেই।  এটি অসিদ্ধ এবং প্রতিবন্ধী।

প্রতিবন্ধী হোক বা অসিদ্ধ হোক, বিপদমুক্ত শব্দটি ‘বিপন্মুক্ত’ শব্দকে বিতাড়িত করে  বিপদ হতে মুক্ত হয়ে বাংলার সর্বত্র হরদম ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রসার এত ব্যাপক যে, অসিদ্ধ বিপদমুক্ত শব্দের কাছে সিদ্ধ বিপন্মুক্ত শব্দটি আসলেই মারাত্মকভাবে বিপদগ্রস্ত। সংস্কৃত ভাষার অনুকরণে নির্মিত বাংলা ব্যাকরণের নিয়মানুসারে বিপদমুক্ত শব্দ অসিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু বাংলা ভাষার শব্দ হিসেবে বিপদমুক্ত শব্দটি সম্পূর্ণ সিদ্ধ এবং বাংলায় এর জন্মও যথাযথ।

অধুনা বিপদমুক্ত শব্দটির প্রচলন এত ব্যাপক এবং জনপ্রিয়তা এত বিস্তৃত হয়ে পড়েছে, যে শব্দটির প্রসার ও ব্যবহার রোধ করার সাধ্য কারো নেই। তাই বাংলা একাডেমির উচিত, সংস্কৃত অনুকরণে সিদ্ধ-অসিদ্ধ বিবেচনা না করে ‘বিপন্মুক্ত’ শব্দের পাশাপাশি বাংলা শব্দ হিসেবে বিপদমুক্ত শব্দকেও অভিধানে সসম্মানে স্থান দেওয়া। নইলে একাডেমির অভিধান  কেবল  ‘বিপন্মুক্ত’ নিয়ে জনপ্রিয়তার অভাবে নিজেই বিপদগ্রস্ত হয়ে থাকবে সবসময়।

অভিধান দোকানের মতো। দোকানের পণ্য দোকানদারের ভোগের জন্য নয়, সাধারণের ভোগের জন্য।  সাধারণ জনগণ যে দোকানের পণ্য বেশি ক্রয় করবে, সে দোকান ও দোকানদার তত বেশি সফল হবে। কিন্তু সাধারণ জনগণ যদি দোকানে তাদের প্রত্যাশিত পণ্য না-পায় তাহলে ওই দোকানের পণ্য কেবল দোকানদারের  ভোগ্যপণ্য হয়ে যাবে। ফলে অচিরে শেষ হয়ে যাবে দোকান, দেউলিয়া হয়ে যাবে দোকানদার।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

জয়ন্তী ও পূর্তি: কত বছরে কত জয়ন্তী, কত বছরে কত পূর্তি

#subach

Leave a Comment

মাতারি ও মাতা: মাতা থেকে মাতারি: মাতা বনাম মাতারি; জনীন ও মাতারি

ড. মোহাম্মদ আমীন

মাতারি ও মাতা: মাতা থেকে মাতারি: মাতা বনাম মাতারি; ; জনীন ও মাতারি

মাতারি কী?
মাতারি একটি আঞ্চলিক শব্দ। বাংলা একাডেমী বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানমতে এটি কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া ও ঢাকা অঞ্চলের শব্দ। তবে এসব অঞ্চল ছাড়াও বাংলাদশের আরো অনেক অঞ্চল; ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের বরাক উপত্যাকার বিভিন্ন এলাকায় মাতারি শব্দটি প্রায় একই অর্থে বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রচলিত আছে। এটি একটি প্রাচীন শব্দ। মৌর্য ও গুপ্ত যুগে মাতারি শব্দটি মাতা বা সংসারের প্রধান, সমাজের নেত্রী, কত্রী, পরিচালক, শ্রেষ্ঠ, নির্ভরক প্রভৃতি অর্থ দ্যোতিত করার জন্য ব্যবহৃত হতো। গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, বাংলার প্রাচীন যুগ থেকে মাতারি শব্দটি দিয়ে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার চালক বা প্রধান নারীকে নির্দেশ করা হতো। তবে শব্দটি এখন আগের সে অর্থ হারিয়ে ফেলেছে। দেখা যাক, কেন সে তার আদি অর্থ হারিয়েছে।

অনেকে মনে করেন, মাতারি শব্দটি কেবল তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত একটি নেতিবাচক শব্দ। কারো কারো মতে, এটি একটি গালি, অনেকে এটাকে গালি হিসেবে

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ব্যবহারও করে থাকেন। তাই সাধারণভাবে মাতারি শব্দটিকে তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আসলে বিষয়টি আদৌ তা নয়। মাতা শব্দের অর্থ মা, জননী, গর্ভধারিণী, মাতৃ বা কন্যাস্থানীয় নারী এবং মাতারি হচ্ছে মাতা-এর ধারক, সংসারের নেত্রী; মাতাঋষি। বৈয়াকরণদের অভিমত, মাতারি শব্দটি উপমহাদেশে আর্য আগমনের সময় প্রচলিত হয়েছে। ভাষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাতারি শব্দটি ফারসি মাদর এবং ইংরেজি মাদার থেকে অভিন্ন অর্থ নিয়ে বা অনুরূপ মর্যাদা নিয়ে আগত।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র মতে, মাতা শব্দের সঙ্গে রি যুক্ত হয়ে মাতারি (মাতা+রি) শব্দের উদ্ভব।এই রি হচ্ছে ঋষিরি। মাতা থেকে থেকে উদ্ভূত  মাতারি শব্দের অর্থ মাতা-ঋ; মাতা-ঋষি। মাতা শব্দ থেকে উদ্ভূত বলে উৎসকালে মাতারি (মাতাঋ) অতি সম্মানজনক শব্দ ছিল। বাংলা একাডেমী বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানমতে, মাতারি শব্দের অর্থ বয়স্ক স্ত্রীলোক, ঝি-চাকরানি, মা, চাচি, স্থানীয় মহিলা প্রভৃতি।বর্তমানে সাধারণ্যে শব্দটি যতই তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হোক না কেন, অভিধানে এখনো মাতারি শব্দটি মা অর্থ নির্দেশ করে। অধিকন্তু, আভিধানিক অর্থসমূহের কোনোটিই নেতিবাচক নয়, যদিও মাতারি শব্দকে নেতিবাচক মনে করা হয়। এমন মনে করার অন্যতম কারণ হচ্ছে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের পতন এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উত্থান।

মাতারি শব্দের নিহিত ও আদি অর্থ কী? মাতার দায়িত্বে যিনি নিয়োজিত থাকেন তিনিই মাতারি। মাতার ক্রিয়া, কৃ বা রি বা ঋষির কর্ম যে নারী বা রি(স্ত্রী)-এর ওপর ন্যস্ত তিনিই মাতারি। সেক্ষেত্রে একজন নারী মাতা না হয়েও মাতারি হতে পারেন। মাদার তেরেসা একজন মাতারি। তিনি কাজ কাজ করতেন, সেবা করতেন মানুষের এবং পশুপাখির- যেমন করেন বাড়ির ঝি-চাকরানি।বাবা না হয়েও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষ হতে পারেন সংসারের কর্তা। যেমন : আমার পিতামহ যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন তিনিই ছিলেন সংসারের কর্তা। যদিও সংসারের প্রধান অর্থদাতা ছিলেন বাবা। সেকালে সাধারণভাবে ‘নারী’ই হতেন সংসারের প্রধান, সমাজের সর্দার, সংসারের রক্ষক, সবার নির্ভরক। সুতরাং, মাতারি কেবল মাতা বা জননী নন, তারও অধিক।

প্রাচীন বাংলায় আদিবাসীদের পরিবার ছিল মাতৃপ্রধান, এখনো উপজাতীয় সমাজে তা দেখা যায়। তখন মা-ই ছিললেন সংসারের সর্বেসর্বা। সংসারের ঋ বা ঋষি; সংসারের সব কাজই মাকে করতে হতো। সংগত কারণে মাতাই ছিলেন মাতারি, মাতাই ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে সম্মানিত নারী, তাই তাকে বলা হতো মাতাঋষি বা মাতারি। পরবর্তীকালে আদিম মাতৃপ্রধান পরিবার ব্যবস্থার বিবর্তন এবং পিতৃপ্রধান সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করলে মাতারি শব্দটি তার আদি সম্মানজনক অর্থ হারাতে থাকে।

এ অবস্থায়, পিতৃপ্রধান সমাজ ব্যবস্থার প্রারম্ভিক প্রসারকালে পুরুষগণ নিজেদের শ্রেষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করে তাদের পূর্বতন নেতা ‘মাতারি’কে প্রতিহিংসাবশত ঝি-চাকরানি প্রভৃতি তুচ্ছার্থে ব্যবহার করতে শুরু করে। ফলে মাতারি শ্রেষ্ঠ হয়েও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের ঈর্ষায় পড়ে তার শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে ফেলে।

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

 

Leave a Comment

শুদ্ধ বানান: শুদ্ধ-অশুদ্ধ: বাংলা বানান: বিসিএস বাংলা বানান

ড. মোহাম্মদ আমীন

শুদ্ধ বানান: শুদ্ধ-অশুদ্ধ: বাংলা বানান: বিসিএস বাংলা বানান

  1. অংক নয়, অঙ্কতেমনি : অঙ্কন, অঙ্কুর, অঙ্গ।
  2. অংশীদারিত্ব নয়, অংশীদারত্ব
  3. অকষ্মাৎ নয়, অকস্মাৎ
  4. অচিন্ত্যনীয় নয়, অচিন্তনীয়
  5. অন্তর্ভূক্ত নয়, অন্তর্ভুক্ত
  6. আঙ্গুল নয়, আঙুল (কিন্তু অঙ্গুলি।)
  7. আতংক নয়, আতঙ্ক
  8. আমদানী নয়, আমদানি
  9. আদ্র নয়, আর্দ্র
  10. আস্তাকুঁড় নয়, আঁস্তাকুড়
  11. ইতিপূর্বে নয়, ইতঃপূর্বে (তবে ইতিপূর্বে অশুদ্ধ প্রয়োগ হিসেবে প্রচলিত)।
  12. ইতিমধ্যে নয়,  ইতোমধ্যে
  13. ইত্যকার নয়, ইত্যাকার
  14. ইদানিং নয়, ইদানীং
  15. ইয়ত্ত্বা নয়,  ইয়ত্তা
  16. উচিৎ নয়, উচিত (কিন্তু যাবত নয়, যাবৎ)
  17. উচ্চস্বরে নয়,  উচ্চৈঃস্বরে/ উচ্চ স্বরে
  18. ঊনিশ নয়, উনিশ (কিন্তু ঊনবিংশ)
  19. উপরোক্ত নয়, উপর্যুক্ত বা উপরিউক্ত
  20. উপলক্ষ নয়, উপলক্ষ্য (তেমনি উপলক্ষ্যে)
  21. একটি মাত্র নয়, একটিমাত্র
  22. একভূত নয়, একীভূত
  23. এক্ষুণি নয়, এক্ষুনি
  24. এতদ্বারা নয়, এতদ্দ্বারা (দ্দ+)
  25. এতৎউদ্দেশ্যে নয়, এতদুদ্দেশ্যে (তেমনি এতদুপলক্ষ্যে)
  26. এতদ্‌সত্ত্বেও নয়, এতৎসত্ত্বেও

সূত্র: সর্বশেষ সংশোধিত বাংলা শব্দের তালিকা, ড. মোহাম্মদ আমীন, প্রকাশক: এসআরপি; যোগাযোগ: ০১৭১২২৩০০৪৩, ০১৮১৯১৪০৯২৮

জয়ন্তী ও পূর্তি: কত বছরে কত জয়ন্তী, কত বছরে কত পূর্তি

 

Leave a Comment

বর্গীয়-ব ও অন্তঃস্থ-ব: উভয়ের পার্থক্য

ড. মোহাম্মদ আমীন

বর্গীয়-ব ও অন্তঃস্থ-ব: উভয়ের পার্থক্য

বাংলার সবচেয়ে মর্যাদাশীল বর্ণ কোনটি? ‘বর্গীয়। কেন? কারণ, বাংলা ও বাংলাদেশ নামের বানানের প্রথম অক্ষর হলো ‘বর্গীয় অধিকন্তু, মানুষের জন্মদাতা হিসেবে পরিচিত ‘বাবা’ নামের সম্বোধন-শব্দটির দুটি বর্ণই বর্গীয়। কোনো বর্ণের মর্যাদাশীল হিসেবে প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য— এর চেয়ে বেশি আর কী লাগে?বর্গীয় বর্ণের অবিকল চেহারার আর একটি পৃথক বর্ণ হচ্ছে অন্তঃস্থ। উভয় বর্ণের চেহারা ও নামে মিল থাকলেও উচ্চারণ, আচরণ এবং প্রায়োগিক বিষয়ে কোনো মিল নেই। আলোচ্য প্রবন্ধে এই দুটি  বর্ণের পার্থক্য বা অমিলগুলো কী তা আলোচনা করা হবে।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

বর্গীয়প-বর্গের (প ফ ভ ম) অন্তর্ভুক্ত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলা বর্ণ। আমাদের দেশের (বাংলাদেশ) নামের প্রথম অক্ষর হিসেবে এর একটি আলাদা মর্যাদা রয়েছে। অন্যদিকে, ‘বর্গীয়-ব’-এর অনুরূপ আকৃতির ‘অন্তঃস্থ-ব’ একটি পরাশ্রয়ী বর্ণ। বাংলা বর্ণমালার অন্তঃস্থ-বর্ণ সারিতে (য র ল ব শ ) এক সময় ‘অন্তঃস্থ-ব’ বর্ণটির অবস্থান ছিল, এখন নেই। বর্ণমালায় না-থাকলেও বাংলা শব্দগঠনে ‘অন্তঃস্থ-ব’-এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়।  এবার উভয় বর্ণের প্রায়োগিক ও উচ্চারণগত পার্থক্য কী তা দেখা যাক:

বর্গীয় স্বাধীন সত্তাবিশিষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ বর্ণ। এর ব্যবহার যেমন ব্যাপক তেমনি বৈচিত্র্যময়। এটি বাক্যে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, আবার অন্য বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়েও ব্যবহৃত হয়।  যেমন : বর, আবার, আবহাওয়া, আব্বা, উদ্‌বেল, অব্যয়, কম্বল, ব্যথা, ব্যাকরণ, ‍বুলবুলি, বাংলাদেশ ইত্যাদি। অন্তঃস্থ স্বাধীন বর্ণ নয়। স্বাধীন নয় বলে  এটি কোনো স্বাধীন সত্তারও অধিকারী নয়। বর্ণটি কেবল পরাশ্রয়ী  হিসেবে  অন্য বর্ণের আশ্রয় নিয়ে বাক্যে  ব্যবহৃত হয়। যেমন : দ্বিতীয়, অদ্বিতীয়, নিঃস্ব, স্বাধীনতা , স্বদেশি, স্বাগত, স্বজাতি প্রভৃতি।

বর্গীয় সর্বত্র এবং সর্বাবস্থায় সাধারণত তার মূল উচ্চারণ  অবিকৃত রেখে ব্যবহৃত হয়। এটি বর্ণচোরা নয়। বর্গীয়  স্বাধীনভাবেও ব্যবহৃত হয়; আবার, অন্য বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তব্যঞ্জনরূপেও ব্যবহৃত হয়। যেমন : বল, বারবার, তবলা, তাণ্ডব, উদ্‌যাপন, উদ্‌বোধন, কম্বল, কলম্বো, বল, বিহ্বল, অবিলম্বে প্রভৃতি। এসব শব্দে ব্যবহৃত ‘ব’ হলো অন্তঃস্থ। কারণ, এখানে বর্ণটি তার মূল উচ্চারণ অবিকৃত রেখে স্বাধীন সত্তা নিয়ে বিরাজমান। আবার উৎ, দিক্, বাক্, ঋক্, ইত্যাদি ব্যঞ্জন ধ্বনির পরে ব-ফলা এলে সেই ব উচ্চারণ হয়। এই ব হচ্ছে বর্গীয়।  যেমন : উদ্বেগ [উদ্ বেগ্], উদ্বোধন [উদ্ বোধন্], উদ্বাস্তু [উদ্ বাস্ তু], ঋগ্বেদ [ঋগ্ বেদ্], দিগ্বিজয় [দিগ্ বিজয়], দিগ্বিদিক [দিগ্ বিদিক্], দিগ্বলয় [দিগ্ বলয়], ইত্যাদি।

 ‘অন্তঃস্থ’  স্বাধীন সত্তাহীন। তাই এটি সবসময় অন্য বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দে ব্যবহৃত হয়। এর উচ্চারণও সুনির্দিষ্ট নয়।  শব্দে অবস্থানের ওপর তার উচ্চারণ নির্ভর করে।ব-হিসেবে অনুচ্চারিত ব-ফলাই সাধারণত অন্তঃস্থ-য।অন্তঃস্থ শব্দের প্রথম বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে সে অনুচ্চারিত থেকে যায়। যেমন : ‘শ্বাপদ’ (শাপদ)  দ্বিজ (দিজো), স্বভাব্ (শভাব), স্বয়ং (শয়োঙ্‌) প্রভৃতি। আবার, শব্দের প্রথমে যুক্ত হলে অনুচ্চারিত থেকে যায় : যেমন :  স্বকুল (শকুল), স্বচক্ষে (শচোক্‌খে), স্বত(শতো), স্বামী (শামি) প্রভৃতি। তেমনি- ক্বচিৎ, জ্বর, জ্বালানি, ত্বক, ত্বরান্বিত, দ্বি, দ্বিজ, দ্বারা, ধ্বংস, ধ্বনি, ধ্বজা, শ্বাপদ, শ্বৈত্য, শ্বেত, স্বপ্ন, স্বচ্ছন্দ, স্বভাব, স্বামী, স্বস্তি, স্বীকার, স্বাক্ষর, স্বল্প, ইত্যাদি।

কোনো শব্দে প্রথম বর্ণটি ব-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ হলে, ওই ব-ফলার উচ্চারণ কীভাবে হয় বা হয় না সে সম্পর্কে বাংলা একাডেমি বাঙলা উচ্চারণ অভিধানে [পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৯৯)-এর নবম পুনর্মুদ্রণ (২০১৬)] এরূপ নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে : “পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণ ‘ব’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত সে ব-ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না (তবে আদি বর্ণটির উচ্চারণে সামান্য ঝোঁক বা শ্বাসাঘাত পড়ে থাকে)। যথা : স্বাধিকার (শাধিকার্‌), স্বদেশ (শদেশ্‌), জ্বালা (জালা), ত্বক (তক্‌), শ্বাপদ (শাপদ্‌), শ্বাস (শাশ্‌), ধ্বনি (ধোনি), স্বামি (শামি), স্বাগত (শাগতো), * সংস্কৃতে এসব অন্তঃস্থ ‘ব্‌’-এর উচ্চারণ ছিল নির্ধারিত (যথা : সুয়াধিকার্‌, সুয়দেশ্‌, তুয়ক্‌, শুয়াশ্‌ ইত্যাদি)।”

অন্তঃস্থ যখন শব্দের মধ্যে বা অন্ত্যে কোনো বর্ণে আশ্রয় গ্রহণ করে, তখন ওই আশ্রয়দাতা বর্ণকে দ্বিত্ব দান করে। যেমন : দ্বিত্ব /দিত্‌তো/’ অন্বর্থনামা /অন্‌নর্‌থোনামা/,  বিশ্ব/বিশ্‌শো/, বিশ্বাস’ (বিশ্শাশ), ‘অশ্ব’ (অশশো)  প্রভৃতি। কিন্তু বর্গীয়-ব’ সবসময় এবং সর্বত্র নিজের উচ্চারণ অবিকল রাখে। অর্থাৎ আদ্য বর্ণের সাথে যুক্ত ‘অন্তঃস্থ কোনো ‘দ্বিত্ব’ সৃষ্টি করে না, কিন্তু অন্যত্র যুক্ত হলে দ্বিত্ব সৃষ্টি করে।অর্থাৎ শব্দের প্রথমে ব-ফলার উচ্চারণ না থাকলেও শব্দের মাঝে বা শেষে সাধারণত ব-ফলার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন, স্বাভাবিক [শাভাবিক্] শব্দে ব-ফলার উচ্চারণ না থাকলেও অস্বাভাবিক [অশ্ শাভাবিক্] উচ্চারণে ব-ফলার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব হচ্ছে। তেমনি, স্বীকার [শিকার] কিন্তু অস্বীকার [অশ্ শিকার], ধ্বংস [ধংশ] কিন্তু বিধ্বংসী [বিদ্ ধংশি], ধ্বজা [ধজা] কিন্তু জয়ধ্বজা [জয়োদ্ ধজা], স্বাগতম [শাগতম্] কিন্তু সুস্বাগতম [শুশ্ শাগতম্], দ্বীপ [দিপ্] কিন্তু বদ্বীপ বদ্ দিপ্], বিশ্বাস [বিশ্ শাশ্], নিশ্বাস [নিশ্ শাশ্], চত্বর [চত্ তর্], জব্বর [জব্ বর্], পক্ব [পক্ কো], বিশ্ব [বিশ্ শো], বিদ্বেষ [বিদ্ দেশ্], বিদ্বান [বিদ্ দান্] ইত্যাদি।শব্দের ভেতর হ এর সঙ্গে ব-ফলা এলে হ এবং ব কোনটাই উচ্চারণ হয় না। হ-এর পরিবর্তে আসে ও আর ব মহাপ্রাণতা লাভ করে। যেমন, বিহ্বল [বিওভল্], আহ্বান [আওভান্], জিহ্বা [জিওভা], ইত্যাদি।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment