সপরিবার আমন্ত্রিত বনাম সপরিবারে আমন্ত্রিত

ড. মোহাম্মদ আমীন

সপরিবার আমন্ত্রিত বনাম সপরিবারে আমন্ত্রিত

পোস্ট:https://draminbd.com/সপরিবার-আমন্ত্রিত-বনাম-স/

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত সপরিবার (সহ+পরিবার) অর্থ (বিশেষণে) দারাপুত্রকন্যাদি-সহ। এটি বিশেষণ। তাই বিশেষ্যকে বিশেষায়িত করার জন্য সপরিবার শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন: সপরিবার বেঁচে থাক যুগযুগ। সপরিবার উচ্চশিক্ষিত হওয়া বড়ো কঠিন।

সপরিবারে: সপরিবারে (স.সপরিবার+ বা.এ) তৎসম নয়। এটি সংস্কৃত ‘সপরিবার’ এবং বাংলা ‘এ’ সহযোগে গঠিত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সপরিবারে অর্থ স্ত্রী-পুত্রকন্যা সমবিভ্যহারে। যেমন: সপরিবারে আমন্ত্রিত। সপরিবারে তিনি জাপান গিয়েছেন। অনেক মনে করেন, সপরিবারে শব্দটির প্রয়োগ ব্যাকরণসম্মত নয়। এমন ধারণা নিতান্তই অজ্ঞতাপ্রসূত। প্রথমে মনে রাখতে হবে, সপরিবার বিশেষণ, কিন্তু সপরিবারে ক্রিয়াবিশেষণ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান উভয় শব্দকে ভিন্নার্থে ও ভিন্ন পদে প্রমিত নির্দেশ করেছে। ওই অভিধানে উদাহারণ দিয়েছে: সপরিবারে আমন্ত্রিত। সুতরাং ‘সপরিবারে আমন্ত্রিত’ কথাটি শুদ্ধ। বরং বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে ‘সপরিবার আমন্ত্রিত’ কথাটি অশুদ্ধ ধরা যায়। কারণ বিশেষণকে আহ্বান করা হয় না। বিশেষণধারীকে আহ্বান করা হয়।

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

কুশপুত্তলিকা, পোয়াবারো, বিরাদারানে ইসলাম, রোজনামচা, খেরো ও খেরো খাতা

ড. মোহাম্মদ আমীন

কুশপুত্তলিকা, পোয়াবারো, বিরাদারানে ইসলাম, রোজনামচা, খেরো ও খেরো খাতা

কুশপুত্তলিকা: কুশ+পুত্তলিকা। কুশ দিয়ে তৈরি হয় যে পুতুল। কুশতৃণে বা শরপত্রে রচিত পুত্তলিকা। যার দাহ হয়নি বা মুখাগ্নি পর্যন্ত হয়নি এবং যার অস্থি পাওয়া যায়নি তার কুশপুত্তলিকা দাহ করতে হয়। কুশপুত্তলিকা শব্দটি এখন রাজনীতির ক্ষেত্রে বেশ প্রচলিত। তবে যারা কুশুপুত্তলিকা দাহ করেন তারা জানেন না যে, এটি প্রাচীন মানুষের নিদান।

পোয়াবারো: ‘পোয়াবারো’ শব্দের অর্থ— সম্পূর্ণ অনুকূল, পরম সৌভাগ্য। পাশা খেলার একটা দান হতে শব্দটির উদ্ভব। পাশা খেলার একটা দান হল ‘পোয়াবারো’। ছক্কার গুটি ফেলে কোনো চালে যদি পরপর ৬+৫+১ অথবা ৬+৬+১ দান পড়ে সেটাই ‘পোয়াবারো’ দান নামে পরিচিত। পাশা খেলায় ‘পোয়াবারো’ দান পাওয়া হলো জয়সূচক দান পাওয়া। জয় ও সৌভাগ্যের সঙ্গে জড়িত বলে পোয়াবারো দানটি ‘পোয়াবারো’ শব্দরূপে বাংলা বাগ্‌‌ভঙ্গিতে উঠে এসেছে।

বিরাদারানে ইসলাম: শব্দটা হলো— বিরাদারানে ইসলাম। ফারসি বিরাদার শব্দের অর্থ— ‘ভাই’। ফারসিতে প্রাণীবাচক শব্দের শেষে ‘আন’ যুক্ত করে তাকে বহুবচনে রূপান্তর করা হয়।  শব্দটির অর্থ দাঁড়ায়— ‘ইসলামের ভাইয়েরা’।

রোজনামচা: ফারসি রোজনামচা অর্থ (বিশেষ্যে) প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার লিখিত বিবরণ, দিনলিপি, দিনপঞ্জি, রোজনামা, ডায়ারি। যার ইংরেজি প্রতিশব্দ diary।

খেরো: হিন্দি খারুয়া হতে পাওয়া খেরো অর্থ মোটা সুতোয় বোনা লাল রঙের কাপড়বিশেষ যা সাধারণত লেপ তোশক তৈরি ও বই খাতা বাঁধাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়। শিশুদের হাত বা পায়ের অলংকারকেও খেরো বলা হয়।

খেরো খাতা: বাংলা খেরো খাতা অর্থ (বিশেষ্যে) লাল কাপড়ে বাঁধাই-করা খাতা। নানান বিষয় টুকে রাখার খাতা। দোকানে এমন খাতা দেখা যায়। কথাটির দুটি বানান দেখা যায়- খেরোখাতা ও খেরো খাতা। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান [প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬] লিখেছেখেরো খাতা‘। অশোক মুখোপাধ্যায়ের সংসদ বানান অভিধান [পরিবর্ধিত তৃতীয় সংস্করণ ২০০৯-এর তৃতীয় মুদ্রণ ২০১৩] লিখেছে খেরোখাতা। আমরা বাংলা একাডেমির খেরো খাতা লিখব।

#subach

Leave a Comment

গোঁড়া গোড়া; ভিড় ভীড়: ভিড় বানান নিমোনিক

ড. মোহাম্মদ আমীন

গোঁড়া গোড়া; ভিড় ভীড়: ভিড় বানান নিমোনিক

গোঁড়া: বাংলা গোঁড়া শব্দের অর্থ— (বিশেষণে) কোনো বিষয়ে অন্ধবিশ্বাসী, রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন, একগুঁয়ে, অত্যধিক পক্ষপাতযুক্ত। যে নিজের মতবাদ ছাড়া

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি

অন্য সবার মতবাদকে বাতিল করে দেয়; কারো মতবাদকে সহ্য করে না, ভিন্ন মতাবলম্বীকে ঘৃণা করে, হেয় করে, অপস্থ করে, অকল্যাণ কামনা করে তাদের— গোঁড়া বলে। ইংরেজিতে যাদের orthodox বলা হয়। গোঁড়া শব্দের আর একটি অর্থ স্ফীত নাভিযুক্ত। এর বানানে চন্দ্রবিন্দু অনিবার্য।

গোড়া: বাংলা গোড়া অর্থ— (বিশেষ্যে) মূল, সূত্রপাত, ভিত্তিমূল, মূল কারণ, সান্নিধ্য প্রভৃতি। এই গোড়ায় চন্দ্রবিন্দু নেই।

নিমোনিক: কীভাবে মনে রাখবেন কোনটায় চন্দ্রবিন্দু? গোড়া গাছের নিচে থাকে, কিন্তু চাঁদ থাকে আকাশে। তাই মূল বা গাছের গোড়া অর্থদ্যোতক গোড়া বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই।

ভিড় বানান নিমোনিক

ভিড় দেশি শব্দে। দেশি শব্দে ঈ-কার হয় না। তাই ভিড় বানানে ই-কার। দেশি না বিদেশি তা জানব কীভাবে? ফলে ই-কার আর ঈ-কার নিয়ে গন্ডগোল লেগে যায়। তাই একটা নিমোনিক লাগে। ভিড় অর্থ বহু লোকের বিশৃঙ্খল সমাবেশ, লোকসমাগম, জটলা। এমন ভিড়ে এগিয়ে যেতে হলে সামনে হাত দুটো ছাতার মতো প্রসারিত করে রাখতে হয়। মনে করুন ভিড় বানানের সামনের ই-কার ভিড়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সামনে প্রসারিত হাত বা ছাতা। তাই ভিড় বানানের আগে ছাতারূপী ই-কার দিতে হয়। পেছনের ঈ-কার নয়। 

উৎস: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

 

 

Leave a Comment

ম-ম বনাম মম: মম চিত্তে

ড. মোহাম্মদ আমীন

ম-ম বনাম মম: মম চিত্তে

: বাক্যে অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত  অর্থ— গন্ধে আমোদিত এমন ভাব। বিশেষণে ম-ম শব্দের অর্থ— গন্ধে আমোদিত।

ফুলের গন্ধে - করছে চারদিক।
- গন্ধ,
ইচ্ছেমতো পোলাও খাব দরজা করে বন্ধ।

মম:মম’ হচ্ছে সংস্কৃত অস্মদ্‌ শব্দের ষষ্ঠী বিভক্তির প্রথমার রূপ। বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত মম অর্থ— আমার। মম শব্দটি কাব্যে ব্যবহৃত হয়। গদ্য রচনায় আদৌ এর ব্যবহার নেই।

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে (রবীন্দ্রনাথ)।
মম একহাতে বাঁকা বাঁশের বাশঁরী, আর হাতে রণতূর্য (নজরুল)

প্রয়োগ:

“ম-ম গন্ধে, স্নিগ্ধ এই সন্ধে
মম হাতে হাত রেখে প্রিয় মোর বন্ধে।”

#subach

 

Leave a Comment

ব্যাবহারিক না কি ব্যবহারিক: ব্যাবহারিক বনাম ব্যবহারিক

ড. মোহাম্মদ আমীন

ব্যাবহারিক না কি ব্যবহারিক: ব্যাবহারিক বনাম ব্যবহারিক

প্রসঙ্গ: ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. থেকে সদ্যপ্রকাশিত ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র গ্রন্থের ব্যাবহারিক বানান। ব্যবহারিক নয় কেন, কেন ব্যাবহারিক? বাংলা ব্যাকরণমতে, প্রারম্ভে ‘অ-কার’-যুক্ত কোনো শব্দের সঙ্গে ‘ইক-প্রত্যয়’ যুক্ত হলে সাধারণত ওই শব্দের

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

বানানের প্রথম বর্ণের ‘অ-কার’ পরিবর্তিত হয়ে ‘আ-কার’ হয়ে যায়। যেমন:

  • অর্থ+ইক= আর্থিক।
  • বর্ষ+ইক= বার্ষিক।
  • পরিশ্রম+ইক= পারিশ্রমিক।
  • নন্দন+ইক= নান্দনিক।
  • সময়+ইক= সাময়িক।
  • তেমনি, ব্যবহার+ইক= ব্যাবহারিক।

আগে ব্যবহারিক বানান প্রমিত ছিল, তৎসঙ্গে ব্যাবহারিক বানানও প্রমিত হিসেবে অভিধানে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, ‘ব্যবহারিক’ বানানটি অধিক প্রচলিত ছিল। কিন্তু, বাংলা একাডেমির সর্বশেষ অভিধান (প্রথম প্রকাশ: ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ) ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ গ্রন্থে একমাত্র ব্যাবহারিক শব্দকে প্রমিত করা হয়েছে; ব্যবহারিক শব্দকে ওই অভিধানে স্থানই দেওয়া হয়নি। অতএব, বাংলা একাডেমি হতে প্রকাশিত সর্বশেষ অভিধানমতেে, এই প্রসঙ্গে একমাত্র প্রমিত বানান হলো, ব্যাবহারিক

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

আকাশ পাতাল না কি আকাশপাতাল

ড. মোহাম্মদ আমীন

আকাশ পাতাল না কি আকাশপাতাল

আকাশপ্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে – – -। ‘আকাশ পাতাল’ নয়, আকাশপাতাল। আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, আকাশপাতাল শব্দই প্রমিত। কেন তা নিচে নিমোনিক বিধিতে দেখুন—
.
সাধারণ বিধি: সমাসবদ্ধ হলে ‘আকাশ’ শব্দটি সাধারণত ক্রিয়া বা ক্রিয়াবিশেষ্য ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শব্দ/পদ বা শব্দাংশের সঙ্গে সেঁটে বসবে। যেমন: আকাশকুসুম, আকাশচারী, আকাশচিত্র, আকাশচুম্বী, আকাশছোঁয়া, আকাশজাত, আকাশদীপ, আকাশদুহিতা, আকাশপট, আকাশপথ, আকাশপ্রদীপ, আকাশবিহার, আকাশভ্রমণ, আকাশকণ্ডল, আকাশযান, আকাশযুদ্ধ প্রভৃতি।
.
বাক্য: আকাশপ্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে, আমার নয়ন দুটি –
বিশেষ বিধি: তবে আকাশ শব্দের পর ক্রিয়া বা ক্রিয়াবিশেষ্য কিংবা ক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শব্দ বা পদ থাকলে তা ফাঁক রেখে বসবে। যেমন: আকাশ থেকে পড়া, আকাশ ধরা, আকাশ ভেঙে পড়া, আকাশ হাতে পাওয়া, আকাশে তোলা প্রভৃতি।
.
বাক্য: আকাশ মেঘে ঢাকা শাওন ধারা ঝরে – – -।
এখানে মেঘ শব্দটি ঢাকা ক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই আকাশ শব্দের সঙ্গে সেঁটে না বসে পৃথক বসেছে।

উৎস: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

উপরোক্ত উপরিউক্ত এবং উর্পযুক্ত

ড. মোহাম্মদ আমীন

উপরোক্ত উপরিউক্ত এবং উর্পযুক্ত

‘উপরি’ থেকে ‘উপর’ এবং তা থেকে উপরিউক্ত এবং উপর্যুক্ত। বাক্যে অব্যয় ও ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘উপরি (ঊর্ধ্ব+রি) শব্দ হতে ‘উপর

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

শব্দের উদ্ভব। কাজেই ‘উপরি’ সংস্কৃত শব্দ নয়, বাংলা শব্দ। ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধির ফলে ‘উপরোক্ত’ শব্দ গঠিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত “উক্ত (√বচ্ + ক্ত)” শব্দটি তৎসম।

সংস্কৃতঘেষা বৈয়াকরণগণ মনে করেন, একটি অতৎসম শব্দের সঙ্গে আরেকটি তৎসম শব্দের সন্ধি বিধেয় নয়। যেমন : বিধেয় নয় ব্রাহ্মণ শূদ্র সামাজিক সম্পর্ক, প্রেম-পিরিত। তাই বৈয়াকরণগণ এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বাংলা তথা শূদ্র ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত তথা ব্রাহ্মণ ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি না-করে সংস্কৃত ‘উপরি’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি করাই সমীচীন। সেক্ষেত্রে এই সন্ধির ফলে জাত শব্দটি হয় : উপরি-উক্ত বা উপরিউক্ত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে কেবল এই উপরিউক্ত শব্দটিকে প্রমিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সংস্কৃত ‘উপরি’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ‘যুক্ত (√যুজ্+ত)’ শব্দের সন্ধি করলে পাওয়া যায় : “উপরি+যুক্ত= উপর্যুক্ত’’। তাই বৈয়াকরণগণ, উপরোক্ত শব্দের পরিবর্তে উপরিউক্ত বা উপর্যুক্ত লেখা সমর্থন করে এই শব্দটিকে প্রমিত নির্দেশ করেছে। যদিও বাংলামতে, উপরোক্ত লেখা দূষণীয় হবে না। কারণ, বাংলা সংস্কৃত ভাষা নয়; আলাদা একটি ভাষা।

তাই বাংলা ব্যাকরণ এবং সংস্কৃত ব্যাকরণও এক নয়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “সংস্কৃত সন্ধির নিয়ম বাঙ্গালার পক্ষে খাটে না- বাঙ্গালা সন্ধির অন্য নিয়ম আছে”

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

অতলান্তিক থেকে আটলান্টিক, অপেরা, অয়ি-অয়ে, ওডিকোলন, আইওয়াশ

ড. মোহাম্মদ আমীন

অতলান্তিক থেকে আটলান্টিক, অপেরা, অয়ি-অয়ে, ওডিকোলন, আইওয়াশ

অতলান্তিক: অতলান্তিক সংস্কৃত শব্দ। এর ব্যুৎপত্তি হচ্ছে, অতল+ আন্তিক। সংস্কৃত ‘অতল’ শব্দের অর্থ— বিশেষণে তল নেই এমন, গভীর, অথৈ, অগাধ এবং বিশেষ্য পুরাণে বর্ণিত সাতটি পাতালের প্রথমটির তলদেশ। সুতরাং অতলান্তিক অর্থ যার তলদেশ অত্যন্ত গভীর। পৃথিবীতে এখনো এ নামের একটি মহাসাগর আছে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় Atlantic Ocean, এই সাগরের তলদেশ অত্যন্ত গভীর। মূলত ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত অতল + আন্তিক = অতলান্তিক সাগরই ইউরোপে Atlantic নামে পরিচিত। সংস্কৃত অতলান্তিক থেকে ইংরেজি Atlantic এবং তা থেকে Atlantic মহাসাগর নামের উদ্ভব।এর অর্থ: যার তলদেশ অত্যন্ত গভীর। 

অপেরা: ইতালীয় অপেরা (Opera) শব্দের বাংলা গীতিনাট্য। এর উদ্ভব ইতালিতে। পরবর্তীকালে তা সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এটি পাশ্চাত্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় গীতিনির্ভর বিশেষ ধরনের নাটক। এটি পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি প্রধান শাখা। অভিনয়, পোশাকসজ্জা এবং কখনো কখনো নৃত্য সহকারে মঞ্চে গীতিনাট্য পরিবেশন করা হয়। সহজ কথা, সংগীত-প্রধান নাটককে অপেরা বা গীতিনাট্য বলা হয়।অপেররার কাহিনি ও চরিত্রের সঙ্গে সমন্বয় করে সংগীত চয়ন করা হয়। শকুন্তলা বাংলা ভাষার প্রথম অপেরা বা গীতিনাট্য।

অয়িঅয়ে: ফারসি অয়ি থেকে অয়ি-অয়ে কথার উদ্ভব। এর অর্থ— (অব্যয়ে) ভক্তি, প্রেম বা স্নেহসূচক সম্বোধনবিশেষ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:

অয়ি ভুবনমনোমোহিনী, মা,
অয়ি নির্মলসূর্যকরোজ্জ্বল ধরণী জনকজননিজননী।

ওডিকোলন: সুগন্ধি সুরাসার বিশেষ। ওডিকোলন শব্দের অর্থ কোলন নদীর জল। ফরাসি ভাষায় নামকরণ হলেও এ সুরভিত নির্যাসটি প্রথম জার্মানির কোলন নদীর কোলন শহরে প্রস্তুত হয়। তাই নাম ওডিকোলন বা কোলন নদীর জল। কথিত হয়, কোলন নদীর জল ছাড়া এটি হয় না।

আইওয়াশ: ইংরেজি আইওয়াশ অর্থ (বিশেষ্যে) প্রতারণা, ছলনা, বাগাড়ম্বর, তালিকার অন্তর্ভুক্ত স্বতন্ত্র বস্তু।

#subach

 

Leave a Comment

লুচ্চা লোচ্চা লুচি ও লুচ্চামি; তুঙ্গস্থান: বৃহ্সপতি এখন আমার তুঙ্গে, ভিস্তি বনাম ভিস্তিওয়ালা

ড. মোহাম্মদ আমীন

লুচ্চা লোচ্চা লুচি ও লুচ্চামি; তুঙ্গস্থান: বৃহ্সপতি এখন আমার তুঙ্গে, ভিস্তি বনাম ভিস্তিওয়ালা

তুঙ্গস্থান: বৃহ্সপতি এখন আমার তুঙ্গে: প্রত্যেকটি গ্রহের একটি করে উচ্চ বা তুঙ্গক্ষেত্র আছে। রবির তুঙ্গস্থান মেষরাশি; চন্দ্রের তুঙ্গস্থান বৃষরাশি; এভাবে, মঙ্গলের তুঙ্গস্থান মকর; বুধের তুঙ্গস্থান কন্যা; বৃহস্পতির তুঙ্গস্থান কর্কট; শুক্রের তুঙ্গস্থান মীন; শনির তুঙ্গস্থান তুলা; রাহুর তুঙ্গস্থান মিথুন ও কেতুর তুঙ্গস্থান ধনু। রাশির জন্য গ্রহ তুঙ্গে থাকা শুভফলপ্রদ। বৃহস্পতি (শুভগ্রহ) কর্কট রাশিতে অবস্থান করলে এ রাশির জাতক বলতে পারে: ‘বৃহস্পতি আমার এখন তুঙ্গে’। মানে খুব ভালো অবস্থানে আছে, দিনকাল ভালো যাচ্ছে। জ্যোতিষীরা কিন্তু হাতের তালুতেও বৃহ্স্পতির দেখা পায়।

ভিস্তি বনাম ভিস্তিওয়ালা: ভিস্তি ফারসি শব্দ। ভিস্তি থেকে ভিস্তিওয়ালা। অভিধানমতে, ভিস্তি অর্থ— ১.পানি বহনের জন্য চর্মনির্মিত এক প্রকারের থলি, মশক। ২.মশকে করে পানি বহনকারী; মশকে পানি সরবরাহকারী; ভিস্তিওয়ালা। অর্থাৎ ভিস্তি ও ভিস্তিওয়ালা সমার্থক। “জুতা আবিষ্কার” কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—
“তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিকো চলে কিস্তি।”

এখানে ভিস্তি মানে ভিস্তিওয়ালা, ভিস্তি তো আর ছুটতে পারে না। এখন কেউ মশকে পানি সরবরাহ করে না। অভিধানে বর্ণিত মশকও নেই। তাই বর্তমানে ভিস্তি ও ভিস্তিওয়াল শব্দদুটোর প্রচলন নেই। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ফারসি ভিস্তি অর্থ— (বিশেষ্যে) অধুনালুপ্ত জলবহনের জন্য ব্যবহৃত মেষাদি পশুর চামড়ার তৈরি থলি, মশক; মশক ভরে জল সরবরাহ যার পেশা।

লুচ্চা লোচ্চা লুচি ও লুচ্চামি: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, লুচ্চা হিন্দি উৎসের শব্দ। বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হিন্দি লুচ্চা অর্থ— চরিত্রহীন, লম্পট। লুচ্চার সমার্থক লোচ্চাপ্রয়োগ: যে দেশের ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও আমলাদের অধিকাংশ লম্পট সে দেশের অধিকাংশ জনগণও লম্পট। মাথা ঘুরলে পা স্থির থাকতে পারে না। অধুনা বাংলায় লুচ্চা শব্দটি দিয়ে মেয়েলোলুপ কিংবা মেয়েদের প্রতি যৌন বাসনায় লোলুপ পুরুষদের প্রকাশ করার অধিক প্রবণতা লক্ষণীয়। যেমন: শালা একটা লুচ্চা, মেয়ে দেখলে আর ঠিক থাকতে পারে না। সংস্কৃত লোচিকা থেকে উদ্ভূত লুচি অর্থ— (বিশেষ্যে) ময়দার তৈরি তেল বা ঘিয়ে ভাজা পাতলা ও ছোটো পুরি। লুচ্চার সঙ্গে লুচির খাওয়াগত সম্পর্ক থাকলেও চরিত্রগ বা আচরণগত কোনো সম্পর্ক নেই।

ড. মোহাম্মদ আমীন, কোথায় কী লিখবেন, বাংলা বানান প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

অন্তিমকাল বনাম অন্তিমদশা; শনাক্ত না কি সনাক্ত: নিমোনিক

ড. মোহাম্মদ আমীন

অন্তিমকাল বনাম অন্তিমদশা; শনাক্ত না কি সনাক্ত: নিমোনিক

অন্তিম: সংস্কৃত অন্তিম (অন্ত+ইম) অর্থ— (বিশেষণে) শেষ (অন্তিম যাত্রা); মৃত্যুকালীন (অন্তিম ইচ্ছা)। শব্দটির অর্থ— শেষ বা চূড়ান্ত প্রভৃতি হলেও বিশেষত মত্যুকালীন বা মুমূর্ষু প্রভৃতি সম্পর্কিত বিষয় প্রকাশে শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

অন্তিমকাল: সংস্কৃত অন্তিমকাল (অন্তিম+কাল) অর্থ— (বিশেষ্য) মৃত্যুকাল, শেষ সময়। অন্তিমকাল শব্দটি সময় বা কাল নির্দেশক। কোনো অবস্থার বা ঘটনার বা ঘটার শেষ সময় বা শেষ কাল নির্দেশ করার জন্য শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি

অন্তিমদশা: সংস্কৃত অন্তিমদশা (অন্তিম+দশা) অর্থ— (বিশেষ্যে) মুমূর্ষু অবস্থা। এটি অবস্থা বা ঘটনা বা প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে।

অন্তিম অবস্থা: অন্তিম অবস্থা বাগ্‌ভঙ্গির অর্থ— (বিশেষ্যে) মুমূর্ষু অবস্থা, শেষ দশা, অন্তিম দশা। অর্থাৎ, অন্তিমদশা ও অন্তিম অবস্থা সমার্থক। কিন্তু অন্তিম শব্দটি অবস্থা থেকে ফাঁকে রেখে বসে।

নিমোনিক: সম-মেরুতে বিকর্ষণ। তাই অ-বর্ণ সহ্য করতে পারে না অ-বর্ণকে। এজন্য অন্তিম ও অবস্থা ফাঁক রেখে লিখতে হয়। অন্তিমকাল সময় সম্পর্কিত, কিন্তু অন্তিমদশা বা অন্তিম অবস্থা ঘটনা সম্পর্কিত। অন্তিমকালে অন্তিমদশা— প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম।

শনাক্ত না কি সনাক্ত: শুবাচ সাম্প্রতিক বানান

শনাক্ত ইদানীং বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। যুদ্ধকালীন সহিংস নেতার মতো করোনাভাইরাস প্রায় অপরিচিত শনাক্ত শব্দটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে তুলে দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন করেন শনাক্ত না কি সনাক্ত। শব্দটির প্রমিত বানান শনাক্ত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে (২০১৭ খ্রি.), বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ফারসি শনাক্ত শব্দের অর্থ পরিচিতি নিশ্চিতকরণ।

নিমোনিকসূত্র: বানান কীভাবে মনে রাখবেন? বিদেশি শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয় না। তাই শনাক্ত বানানে মূর্ধন্য-ষ হবে না। বাকি থাকে স আর শ। তাহলে দন্ত্য-স নয় কেন? বর্ণমালায় সবার আগে তালব্য-শ। রোগী চিকিৎসার জন্য গেলে আগে শনাক্ত করা হয়। তারপর শুরু হয় সেবা। এজন্য শনাক্ত বানানে তালব্য-শ। অতএব, লিখুনশনাক্ত’; লিখবেন নাসনাক্ত

উৎস: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment